সম্মিলিত কবিতা সংখ্য- (৩য় পর্ব)

 

Signature Poetry3



নীল ভাঁটফুল


উপেক্ষা-মিনারে ফোটে

নীল ভাঁটফুল

হলুদ সন্ধ ̈ার পাশে

তোমাকে দেখেছি বহুদিন হলো,

তুমুল বৃষ্টির ছাঁটে খোঁপা খুলে গেলে

হাতে রেখে দিয়ো একটা বকুল

একটি জলের রেখা ধরে দেখো

নেমে যাবে আয়ু...





মধু-ফুলের মা


মা, ফরশা ভাতের মুচা নিয়ে খাঁটি চোখে চেয়ে আছেন; তার মিঠা-

মাখা পান খয়েরের হাসি—

ওম-পালকে, সব ছানাপুনাদের আগলে রাখতেন।

আমরা প্রতিদিন তার একটা করে পালক ছিঁড়েছি; অথচ-

তিনি ফলভার, নত ও বিব্রত হয়েছেন।

দুর্বিসহ পৃথিবী ঠুলে-ওঠলেই পুরো পরিবার মায়ের বুকের কার্পাসে ঢুকে পড়ি;

আমাদের নিত্য চুনকাম, ব্যর্থ-শ্রাবণের কোটি কোটি বাষ্প-

মেঘ আরও ঘন হয়ে ওঠে—

এই রক্তঋণকে হেলা করে, ঘুণে ধরা পৃথিবীর নিঠুরতাকেই জয় করেছি!

ডোরা ভাঙা পথে চঞ্চল চিহ্ন ধরে তিনি চলে যাচ্ছেন, তাকে ছুঁতে না পেরে

কত ফণি মনসার খোপ,

বদল-শ্রাবণের গাঁথুনি মেখেছি পালকে।

পৃথিবীর লোভী-

শর্করা পিঠে মায়ের মহাপ্রাণ দুলছে—আস্তে আস্তে মহাজাগতিক ধুলোয় মিশে যাচ্ছেন

 তিনি।






অনন্ত ঘূমের ওপারে


একদিন পৃথিবীর আয়ূ শেষ হ'য়ে যাবে

যখন ঘূমাবো আমি অনন্ত ঘূমে

পৃথিবীও ঘূমাবে তখন

আমি নেই ব'লে


আসলে লয় নয় শেষ, নয় প্রলয়ও নয়

যখন আমার প্রস্হান সারা হবে

সেই ক্ষণে পৃথিবীও থেমে যাবে

বন্ধ হ'বে সময়ের হিসেবনিকেশ


তখনো শরীর ছেনে বুকে প্রচন্ড চাপ নিয়ে  

মিছিলের অনন্ত অভ্যন্তরে ভ'রে নিজেকে নিয়ে

নিজেকে সাজাই মেঘরাঙা পোষাকে

অতল অন্তরালের বাঁষি বাজাই আনমনে

সুরের শুক্লপক্ষে আঁকা 

নিজের অবয়ব

যখন প্রস্হানই মূল উদ্দেশ্য

আমাদের চির সুন্দর মুক্ত পাদপীঠে


এই যাবার আগে কতবার গিয়েছি চ'লে

হেমন্তের গান শুনে

সেতার সরোদ বা  রশীদ খানের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে

মোহর মাসির কন্ঠাসৃত রবীন্ত্রষঙ্গীতে

আর বারংবার প্রেমে ব্যর্খ পরাজিত হ'য়ে


এখনও ডুব সাঁতারে দেখে নিই তারা সব

কেমন আছে

তাদেরও কি এইসব ভেবে ম'ন ছেয়ে থাকে

মেঘমেদুরঘনশ্যামে তারাও কি খোঁজে

প্রাত্যহিক জীবনে কৈশর যৌবনের প্রেমার্থের

যতো মানে

ইফাত শাকি সিলভিয়া রডেনড্রেন্ট হ'য়ে

দেখে এ জনের আদিখ্যেতার তামাশা অপার


অথচ তামাশা নয় আর্তী

এখন যামিনী শেষের অন্ধকারে আরও অন্ধকারে

নিমজ্জিত হ'তে হ'তে ব্যর্থতার অপরাধের

শেষ ক্ষমা চেয়ে নিই

যদি তাদেরও আগে চ'লে যাই হুট ক'রে সকল

দুয়ার এঁটে


তখন ডিশেপসান টেবিলে শিক্ষার্থিরা কাটছে--

হৃদয়পুরে যেয়ে নিশ্চিত থমকে দাঁড়াবে

হৃদয় অলিন্দে কত ছবি কত গান

আর আঁকগুলো অসামপ্ত ছবিতে


আমাকে নেবেনা কেউ আমি ছাড়া কষ্মিনকালে

এইভেবে পূর্ণাঙ্গ দিয়েছি সঁপে সময়ের কাছে

ভাবনা নিজের জন্য নয়

যারা কাছে হৃদয়ের নিকট সন্নিকটে

তারা যদি কাঁদে(?) 

ব্যথার প্রলেপ নিয়ে চ'লে যাবো দিগ্বলয়ের কাছে


তাদের চুড়ির টুংটাং আওয়াজ উষ্মা ঘৃনা(!) ব্যথা

বিব্রততা তখন কি জন্মাবে

তাদের ভালোবাসা উত্তরের খেপে

পৃখিবীর আয়ু শেষ হয়না

কেবল আমরা তাকে কেটে ছিড়ে বেঢপ রূপ ক'রে

নিজের স্তরে নামিয়ে

জল্পনা কল্পনার আঁক কসে ছিড়ে ফেলে উড়িয়ে দিই

সমস্ত কাগজ ( পুরোনো প্রেম পত্রও তাতে আছে)

আছে হরেক রূমাল

যার ভাঁজে গোলাপ পাপড়ি অশ্রু ভুলোনা আমায়


সব সাথে  নিবো নীলআমন্ট্রঙ্গের মতো ছুটে যাবো

দিগ্বলয়ের ওপার থেকে ফিরবো আবার

নবজন্মে অথবা  অন্ধকারের ওপারে রেডিয়েন্ট

আলো জ্বলে 

জলের ফসফরাসের মতো


সব মিথ্যা প্রশাধনের নির্জলা মিথ্যার আবয়বে

তুমি আমি সে

সবাই শুন্য

পৃথিবীর আয়ু শেষ হবেনা কেবল পরিবর্তন

প্রেমের অরণ্যে আমরাই ফিরে আসবো বায়বীয়

অথবা এই শেষ, সার হয়ে করবে হলকর্ণণ

জীবনের তুমূল অধ্যায়ে


লিপির ভালোবাসার মতো সিলভিয়া রডেনড্রেন্টের

ঘৃনা আর অভিমান

রেখে দেরাজে এখন তোমরা না খোলো

আমার মৃত্যুরে পরে পন্চাশ পেরুলে

উল্টো গুনে নাম জঁপ করে কাঁদবে

ভালোবাসা ভরে





কলুষিত কুরবানি


পশুর সাথে পাল্লা দিয়ে যদি আমিত্ব বাড়ে

তোমার কুরবানি পুড়ে তবে তোমারই অহংকারে।

ঘরের পশুর সাথে মনের পশুকে যদি

কুরবানি দিতে না পারো

অযথায় কেনো তবে পশুকে জবাই করো?

কুরবানির নামে তোমার এ বড়ত্ব প্রকাশ

কুরবানি নয় শুধু মানবতাকেও করে বিনাশ।

কুরবানির মাংসে ছিল যাদের অধিকার

তাদের বঞ্চিত করে তুমি হেরেছ আবার।

অকাতরে যে পশু দিয়েগেল জান

তার কাছে তুমি শেষে হলে কুরবান।

মনের পশুত্বকে জবাইকে দিলে কুরবানি

তবেই কবুল হবে তোমার পশু কুরবানি।






সে এক চঞ্চল পাখি 


শিশিরবিন্দু পায়ে মেখে হেঁটে যায় 

মন হয় অবাক করা দামি অলংকার 

আমাদের প্রেম ভাবনাগুলো শৈশব আনন্দের সরল উপমা

তেজী নদীপাড়ে হেসে উঠে গুচ্ছ গুচ্ছ কাশফুল  

সবুজ অরণ্য নীলাভ আকাশ জেগে উঠে রাত্রি শেষে 


অশ্বত্থের পাতায় পাতায় হাত রেখে কথা কয় 

কবিতা লেখে চতুর্দিকে শিল্প আছে 

যদি বুকে তৃষ্ণা রাখা যায়

সে এক সত্যিকার চোখ খোলা আত্মভোলা চঞ্চল পাখি।





চেয়েছি স্বপ্নের বাগানটিকে


ব্রহ্মপুত্র তীরে স্বপ্নের বাগানটি আমার।

এক রাতে দেখলাম চোর ঢুকছে এর দেয়াল বেয়ে।

ভয়ে গলা কাঠ, ভাবছি, কীভাবে জাগাব

মালি, ফুল-ফল, পাখি আর দারোয়ানকে।

এখনও তো সময় হয়নি, বুলবুলির গান ধরার,

কাঠ বিড়ালির লাফিয়ে এগাছ ওগাছে যাওয়ার।

ভীষণ ভয়ার্ত তবু চিৎকার দিলাম: জাগো, চোর পড়েছে বাগানে!

কিন্তু এতটুকু শব্দ বেরলো না গলা দিয়ে।

চারপাশ ঘিরে বাকি রাত দৌড়ালাম, ছুটলাম।

অবশেষে কখন যে, ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম

পাশের কৃষ্ণচূড়া গাছটির নিচে।

সকালেই দারোয়ান এলো-ফুলস্তূপের নিচে

প্রথমেই আমাকে আবিষ্কার করল:

আরে কবি, তুমি এখানে ঘুমোচ্ছ কেনো?

তোমার ওপর এত ফুলই বা কোথা থেকে এলো?


:আমার খুবই শীত করছিল। শুধু এতটুকু মনে আছে।


:তাহলে বাগানের এত ফুল তোমার ওপর কে রাখল?

বুলবুলি উড়ে এসে বলল: আমি।

কাঠ বিড়ালি ডিগবাজি খেয়ে বলল: আমি।

:তাহলে চোর কী নিলো?

:কিছুই নেয়নি, আমি দেখে এসেছি। বললো দারোয়ান।

:তাহলে কি ওরা বাগানের বুকের খুব গভীরে যেখানে তার হৃদয়-হাত দিয়েছিলো?

:বাগানের হৃদয়ে কী আছে নেবার মতন?

: ভালোবাসা। ভালোবাসা নিয়ে গেলে আমরা যে দেউলিয়া হয়ে যাব।






তোমার পরশ


নকশী মনের বুনন গিঁটে যত্নে রেখে হাত

বাঁধলে তুমি গোপন সুরে প্রেমের ধারাপাত।

রঙিন সুতোই আঁকলে আঁখি হরিণ বনে নেমে

কাজল টিপে চাঁদের বদন হাসছে থেমে থেমে ।

সোনায় মোড়া বুকের জমিন সুখের পাশে ডেকে

পাতালপুরে জ্বালাও আগুন অসুখ যত রেখে ।

নদীর মত বাঁকের শাখায় নরম কোটির দেশে

একটু থেমে দাও নামিয়ে অরূপ জগত শেষে ।

সবুজ নাকি সাদা-কালোয় মিশেল আকার খানি

নীলের আকাশ যায় ছাপিয়ে মেঘেরই প্রাণ-পানি।

ভাসলে হাজার স্বপ্ন রঙিন পুলক আবেশ মাখা

বাহুর বেণী জড়িয়ে ওড়াই জুলফি-চিবুক পাখা।

বাঁধলে জমিন হীরের ফুলে আঙুল ডগায় ছুঁয়ে

ভালোবাসার পাহাড় নামে মধুর আকাশ চুঁয়ে।

দুখের যতো সারথী স্রোত ডুবলো ভাটার চরে

চোখের বানে মরলো পাখি ঘর হারানোর ডরে।

কিন্তু একি মন সারথী চললো হাওয়াই ভেসে

আমায় পুরো ডুবিয়ে গেল জোয়ারই ডাক এসে।

বিরান ছিল আমার হৃদয় তোমায় দেখার আগে

তোমার কোমল পরশ একি -ঢাকলো অনুরাগে।





ডাহুক ডাকে নিঝুমপুরে


চাঁদের গায়ে জোৎস্নার আলো চুঁইয়ে দিলাম

পদ্যের গায়ে সত্যভাষণ জড়িয়ে দিলাম

তোমায় আরও নিবিড় করে পাইয়ে দিলাম

এখন তুমি কেমন আছ বল?


এক বিকেলের জড়িয়ে যাওয়া অঙ্গুরীয়

জলের বুকে কাঁপতে থাকা বাড়িটিও

অপেক্ষাতে নিভতে থাকা দিনের আলো

এখনতো আর জ্বালায়নাকো বড়ো।


দারুণ তোড়ে বাতাস এল তার সাথে যে ধূলিটিও

ধূলির সাথে স্বপ্নটিও শবের সাথে কাফনটিও

হারাওনিতো, কফিনটিতে জুড়ে দেবার পেরেকটিও?

এই তো পেলে বেঁচে থাকার আগুনটিরে, বল?


হৃদয় শিখায় প্রদীপ জ্বেলে ঝড়ের রাতে পথের শেষে

অনেক করে ভালোবেসে শূন্য ঘরে সুবাস ঢেলে

গায়ের রংটি আলো করে নিবিড় হয়ে একলা রাতে

কেউ তো এসে দাঁড়ায় কাছে, বল?


হাড় হা-ভাতের গদ্যগুলো মুখর সকল পদ্যগুলো

অঙ্গে জড়ায় শাড়িটিও, নাকছাবিটির বৈশাখিও

ঝড়ের গায়ে উড়িয়ে দিলাম। ভালোবাসার ক্লান্তিটিও

নিলাম করে, এখন তুমি ভালোই আছ, বল!


তবু কেন আঁধার দেখি তোমার চুলের অন্ধকারে?

ডাহুক ডাকে, ভরদুপুরে তোমার বুকের নিঝুমপুরে?

মুখের ছাঁদে মাতাল বাতাস কেমন যেন নেশায় টলে?

ভরা কলস হাতের কাছে তবু কেন সুরাখ ডাকে?


ডুব  সাঁতারে আর, কতদূর যাবে, বল। 





আত্মপক্ষ সমর্থনীয় বৈপরীত্ব


দৃশ্যের যত কাছে অদৃশ্যেরা

ম্রিয়মান, সেখানেই উৎপত্তি

ভাঙ্গনের দুর্বার গতি।

 

শ্বাসরুদ্ধকর প্রতিযোগিতার

অন্তরালেও থাকে চতুর

অদৃশ্যের নিখুঁত কারুকাজ।

যে ভাবে এই ঘুমন্ত নগরীর

সুমসাম নীরবতা শুষে নেয়

নীলাভ জোৎস্না

আর প্রকৃতি প্রতিনিয়ত

চরম আশ্বাসে করে

গর্ভধারণ।

 

উদ্দাম-মাতাল-বেপোরোয়া হাওয়া

আমার নেশাকে করে আরো ত্বরাণ্বিত।

কল্পনাগুলো কল্পনাতেই নিজেদেরকে

সাজিয়ে নেয়

বাস্তবতার দৃশ্যপটে।

মাতৃত্বের মমতা নিয়েও কোকিল কখনো বাঁধেনা নীড়। 






জাতিস্মর


ইউক্যালিপটাসের ছায়া আজও সেদিনের মতো রোমান্টিক

স্বপ্ন ফেরীর দেশে যাওয়ার ইচ্ছেটাই কেবল কফিনবন্দী

মোনালিসার হাসিতে আজ ব্যবধানের একক কথা বলে

শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসবের আবির হয়েছে বিবর্ণ 

ছাতিম বনের ঝরা পাতারা মাটির বুকে ব্যর্থতা উজার করে

হৃদয়ের জ্বালানিতে হৃদয় পুড়ছে সময়ের নাট‌ মন্দিরে শুয়ে

তবুও সাদা পাতা দেখলেই কলম ওর প্রেমে পরে বার বার

অক্ষরে অক্ষরে সাড়া শরীর ভালোবাসায় ভরিয়ে দেয় 

মমির মুখেও হাসি ফোটে কবিতার সাইক্লোনের ছোঁয়ায়

ইচ্ছে করে রামধনুর থেকে একটা রঙ ধার করি গোধূলিতে...

ভাবের ঘরে ভাবনার সমাধি সাজাই সন্ধ্যার প্রদীপ জ্বেলে

আকাশের বুকে তারা আর স্যাটেলাইটের অবৈধ সহবাস

ছাব্বিশে জানুয়ারির প্যারেড গ্রাউন্ড আজ অ্যালবামে বন্দি

রাজপথের চওড়া ফুটপাতে স্বপ্ন গুলো জাতিস্মর হয়ে ঘোরে।





সময়ের কাল কেউটে সাপ


বৃহন্নলা বর্ষায় ভেসে আসা কালকেউটে সময়

গাভিন চাঁদের জোছনায়

ফোঁস ধ্বনি করে মারে সদন্ত ছোবল

বিষাগ্নি বৃষ্টিতে ভাসে হরিণী রাতের বুক।


সময়ের কাল কেউটে সাপ!

চিবিয়ে খাও গন্দম ফল

পান করো তহুরা শরাব

সন্ন্যাসী সূর্যের হাসি আর পোয়াতি চাঁদের জোছনায়

শুধু খুলে যাক বর্ধমান আলোর নদী।


শানিত সময়ের ছুরি কাটুক কাল কেউটে ফণা ...






আদিগন্ত ফসলের কবিতা 


আমার ঠাকুরদা একজন কৃষক ছিলেন

মাটিগন্ধা হাতে তিনি শস্য ফলাতেন 

ধানের কাছে হৃদপিণ্ড সমর্পণ করে 

তিনি শিশুর সারল্য নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন 

প্রতিটি ধান তখন কবিতা হয়ে উঠতো

আদিগন্ত মাঠ তখন কবিতার খাতা। 


আমার ঠাকুরদার মতো অমন কবি হয়ে উঠতে 

আমি কাউকে দেখিনি 

তিনি রবীন্দ্রনাথ জীবনানন্দের চাইতেও 

অনেক বড় কবি ছিলেন 

ঘাম শরীরে তিনি যখন লাঙল চষতেন 

মনে হতো জন্ম নিচ্ছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম কবিতা। 


অগ্রহায়ণে তিনি তার সোনালি কবিতাগুলো 

কাঁধে বয়ে এনে ঠাকুরমার হাতে তুলে দিতেন

ঠাকুমা পরম যত্নে কবিতার গন্ধ শুঁকতেন 

স্পর্শ করতেন ,রোদ্র মাখিয়ে রেখে দিতেন 

গোলাঘরের নান্দনিক মলাটে 

আমাদের গোটা বাড়িটাই হয়ে উঠতো 

অনিন্দ্যসুন্দর এক কবিতার বই।


আমার ঠাকুরদা শস্যগন্ধা কবি ছিলেন 

আমি তার অযোগ্য পৌত্র

দিনরাত শব্দের জট আঁকি

গ্রন্থের কাছে করি আত্মসমর্পণ 

প্রাজ্ঞ বিজ্ঞের কাছে ছুটে যাই 

কবিতা লেখার গোপন রহস্য জানতে 

অথচ আমার ঠাকুরদা ঘাম মাটি লাঙলেই 

লিখতে পারতেন আদিগন্ত ফসলের অমর কবিতা। 






কালো টিপ


সব থুতুই বেহিসেবি নয় বরং

কোনো কোনো থুতু

পূর্ণিমার চাঁদ বদনে আর্শীবাদ হয়ে ছড়িয়ে পড়ে

সোহাগী বাতাসে জোৎস্নার রঙ মাখানো বধুর

কালো টিপ বিমূর্ত বিষ্ময়

তারই আলপথ ধরে এগিয়ে যায় কামসূত্র

প্রেম তো সাধ্য বস্তু

যেখানে মনপুরুষ বসে উজানের গান গায়




বেদনার্ত সমুদ্র 


তোমার বাঁধা বেশ্যা হতেও  আপত্তি নেই একেবারে 

যদি হও কেবল আমারই খদ্দের। 

বিনিময় মূল্য কেবল চুম্বন। 

যতবার সঙ্গম চাইবে ততবারই 

বইয়ে দিতে হবে চুমুর প্লাবন। 

আর বলিহারি যাই বাপু!

তোমরাই বা বেশ্যা বলে কাউকে 

গালি দাও কোন হিসেবে? 

বেশ্যা তো সেই সৎ পেশাদার মানুষ 

যিনি টাকার বিনিময়ে তুলে দেন 

 পুরোটা সময় এবং শরীর।

এতটুকুও ফাঁকি দেন না তারা।

তারচেয়ে বরং পুলিশ বলে, প্রফেসর বলে

মন্ত্রী বলে গালি দাও।

বেশ্যা থাকুক এক সৎ, বেদনার্ত সমুদ্রের নাম।





তিনটি অণুকাব্য 


এক.

প্রথমত চাই পেট পুরে ভাত যত

বদলে খাটাও যত পারো তত

পেটের দায়ে যে কাজ পাই করি

দানাপানি পেলে টুটি কেন ধরি?



দুই.

কাজ পেলে তার পর না অভিজ্ঞতা

আমড়া কাঠের ঢেঁকি

পেট থেকে পাই কিস্তি শোধের তাড়া

এ দুনিয়া বোকা একি!



তিন.

দিন এনে দিন খেলে আপাতত বাঁচি

গতরে সতর ঢাকি

অভাব যখন দ্বারে সেসব কে ভাবে

কারো ইশারায় নাচি।






হেঁটে যাবে


কত কথা

ভালোবাসা অথবা মুহূর্ত

চৌরাস্তার মোড় দাঁড়িয়ে আছে একাকী

ল্যাম্পপোস্টের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে

নিবিড় উত্তাপ

সময় অসময় সব যেন পাল্টে যায়

পাল্টে যায় আগামীর শৈশব

আমাদের যত ব্যর্থতা

উড়িয়ে দেব...


ধূলিঝড় বুকে নিয়ে হেঁটে যাবে অগণিত জনগণ।







সুশিল্প মায়ায় জড়িয়ে থাক হৃদয় যুগল


যতই না না করো ততোই আগ্রহ বেশি

নিষিদ্ধ জিনিস আহা !

ডুবলে ডুবে  আপাদমস্তকে

না ডুবলে তীরের জলে জলোজল

কোনোটাই যায় না বিফলে


যুদ্ধে কোথায় কে জড়াচ্ছে জড়াক

শুধু চাই না রক্তপাত

ভালোবাসা নিয়ে চিনিমিনি...মানিনা

বিরাণ বসতি হৃদয় রক্তক্ষরণে

যুদ্ধ হোক মধুর ... সুমধুর...মধুরতম

রণাঙ্গণে কেবল একটি জোড় সংখ্যা থাকুক


আপত্তি নেই ভালোবাসার কাঙাল হতে

বার বার আদি ভূমি চাষে ফলবে

ভালবাসার নীলফুল

অপরাজিতার কাছে মানুষের দায় চিরদিনের

সুমধুর যুদ্ধে সুশিল্প মায়ায় জড়িয়ে থাক হৃদয় যুগল।






অভিযোগ


তোমায় চিনে রেখেছিলাম,

ভাটিয়ালিতে শয়ান দিয়েছি

ধানসমীপে পাওয়া তেজ,বীজ 

চাও তুমি গুচ্ছ গুচ্ছ, মায়া মান্দাস,

স্তব্ধতা,

এসবের জন্যই ইটকাঠ পোড়াই

এখন আমি গির্জার পেছনে,

মজুরের মতো লাল চোখ,

শ্রমিকের মতো পিঠে ডানা,

তারপর উন্মাদ হোলিখেলা,

ডালপালার ভস্ম নিয়ে লীলাভূমি,

আজন্ম আঘাত নিয়ে তুমি

এসেছো শস্য মাখাতে দেহে,

পিঠোপিঠি আমাদের কবর

আমাদের জ্বলেপুড়ে যাওয়া চিতা,

আমাদের পিন্ডি চটকে খাবে ডাকাতদল,

আমাদের পাতালরেলে কাটা দেহ,

আমাদের গাছতলার যৌবন,

এসবের পরিসংখ্যান রাখবো আমি,

তুমি গর্ভবতী হবে,

আমি জুয়াখেলায় হেরে যাব টাকা,

আমাদের চালাঘর আগ্নেয়গিরি,

আমদের লাভা ডিঙিয়ে বেঁচে থাকা।।






তোমার দেওয়া আগুণে ঘর পোড়ে না, মন পোড়ে


সাতসকাল বেলা  তুমি আগুণ দিলে

আমি বললাম আগুণ ধরেছে

তুমি বললে- ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন;

দ্রুত হট লাইন নম্বরও দিলে


আমি মৃদু হেসে বললাম, এই আগুণ

ফায়ার সার্ভিস কিংবা দমকল বাহিনীতে

নিভবে না, 

এমনকি স্বশস্ত্র বাহিনীর ওয়াটার ফোর্সও

পরাজিত হবে নিশ্চিত,


তুমি প্রশ্ন করলে কেন- 

আমি বললাম, তোমার দেওয়া আগুণে 

ঘর পোড়ে না, মন পোড়ে




দূরবাসীর গান


তুমি হয়ে যাও এক দুঃখী কবিতা,

কবিতায় কতখানি আর পায় কবি জীবনের সন্ধান—

শব্দের শরীরেও লেগে থাকে অপ্রকাশের দাগ।

লেগে থাকে প্রাচীন সময়ের ব্যথাদের স্বেদ।


শেষ বলে যেই তাকাই,

সমুখের কাছে—পশ্চাতে লেগে থাকে টান—

যেতে পারি না অমন শূন্যতায়,

ফেলে মায়ার অনুভূতি সেই৷


তারপর, ভাবলাম— এইসব পথে যেতে যেতে আর যত রোজ টালমাটাল পথ, 

আমার—

ঝলমলে চাঁদসভায় ডাকুক এই ব্যথাহত বুক—

কোনো সলিল সংহার।


তারও পর, ওপর থেকে মাবূদ আমার,

শোনায় যেন ঐশী বাণী—এভাবে ভেঙে যেতে নেই,

খান খান হতে নেই,

প্রস্তরখণ্ডের মতো ভারিক্কি বুকে ধরে দিতে হয় ধৈর্যের অমনও পরীক্ষা,

মানুষ তুমি, 

এভাবে অধীর, স্থবির হতে নেই,

হতে নেই এতটা অসহায়,

দেখো না, দিনের কাছে কেমনে আমি রাতকে লুকোই?


জানি, এভাবে হয় না শেষ,

সবুজের কাছে অবুঝ হয়ে পেতে রাখি কান,

বছরান্তে এসো—পৌষের প্রান্তরে;

আমার অবসরে শোনাতে সে দূরবাসীর গান।





স্রোত টানে


পোষ্য বেড়াল চেটেপুটে খায় থালা ও শিহরিত সময় 

থাবার তীক্ষ্ণ নখে বিদ্ধ বাতাস গুণিতক গৃহ পরিসরে 

অসংলগ্ন পোশাকে মুচমুচে সুস্বাদু সময় চাটে বেড়াল

অবশেষে বড়ো একটা হাই তোলে পা ছড়ায় বিকেলে

খুলতে খুলতে খুলেই ফেলি খসখসে চামড়া শরীরের 

ফোঁটা ফোঁটা কষ চুইয়ে নামে পরিচয়ে থাকে না কিছু

বদলে নেব চলিত সংবিধান পোষ্য বেড়াল ও সময়ের 

চিকচিক করে চোখজোড়া তুখোড় শব্দে বাক্যবিন্যাস

মানুষের কাছেই অবনত মানুষ সময়ের কথা বলে খুব 

জেগে ওঠে জনগণমন স্রোত এসে টানে জীবনে ঢেউ  





প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তি


প্রাপ্তিতে হয় না কিছু পাওয়া এ ধরায়

হারালেও জেনে রাখো কিছু না-হারায়।

প্রাণ তবু ছুটে যায় সমানে বাহিরে

অপানকে আনে টেনে সমানের ধারে।

কে আছে পেয়েছে যতো নিয়ে গেছে সাথে

কে সে হারানোর পর রয় শূন্য হাতে।

প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তি যতো মোহ ক্ষণিকের

জীবনের ক্যানভাস মুছে যায় ফের।

কিছুই আসিনি নিয়ে ধরার ধুলায়

যাবে না কিছুই সঙ্গে অন্ত্য দিনে হায়।

যা নিয়েছো মুঠি মুঠি ধরা হতে ধার

অন্ত্যে তা ফিরিয়ে দেবে কিশের বিকার?

না-চাইলেও প্রকৃতি চেয়ে নিবে সব

মাটির দেহের মায়া হয়ে যাবে শব!





ট্রেন


তোমাদের ভাবনা তোমাদের স্বপ্নকে বাস্তবায়নে সেলুট করি

কৈশোরের ভালোবাসাকে এখন যৌবনে এনে ইমারত গড়া। 

এযে বড় কঠিন কাজ কেউ না জানুক, জানে কিন্তু কারিগর

অদৃশ্য প্রকৃতি পাহারা দিয়েছে দিন দিন প্রতিদিন বিশ্বাসে, 

এর মাঝে ভাঙ্গা গড়ার কত খেলা খেলেছে খেলোয়াড়। 

দুই দিকের গোলকিপার এক আত্মা খেলোয়াড়দের মাঠে

খেলেছে বেজায়, জীবনের গোল খায় সব খেলোয়াড়। 

সময় শেষে দর্শক তাকিয়ে থাকে, কোনো পক্ষই জেতে না

গোলকিপার দুজন দুই হাত তুলে সম্ভাষণ জ্ঞাপন করে। 

জীবনের চাকা গড়াগড়ি খায় বলের মতো, দাঁড়িয়ে থাকে, 

অবিচ্ছেদ্যভাবে অবিচল, আপন ধারায় আপন মহিমায়। 


দীর্ঘ সময় হবে পনের বছর একে অপরকে কথা দেওয়া

মাঝে অভিভাবকের কড়া নজর অপরিণত জীবন রক্ষায়। 

সেইখানেই ইতিহাস সৃষ্টি, যা দেখি আপাত দৃষ্টিতে অলক্ষ্যে

ভালোবাসার বীজ বপন হয় ঠিকই, রোপণও ঠিক তেমনি। 

প্রযুক্তির যুগে ভালোবাসা ওয়ান টাইম বক্স, খুলে ফেললেই

ব্যবহারের অনুপযুক্ত করে, অন্য ঘাটে নোঙর ফেলে-

সেখানেও মন টেকা দায়, বার বার ফেরারি মন ফেরি করে বেড়ায়। 


যারা আজও প্রেমকে করেছে সম্মান, সুযোগের সদ্ব্যবহার

না করে একটা ক্ষণকে উপলক্ষ্যে বেঁধেছে বন্ধন সবার তরে

এখনও পুব আকাশে সূর্য উঠে, হংস মিথুন খেলা করে-

আবেগে অভিমানে সব মিলে মিশে ঐক্যতানে সুর তোলে। 


যুগে যুগে প্রেম, ভালোবাসা অমর ও অক্ষয়,বেঁচে থাকে

মানুষে মানুষে যুগল বিশ্বাসে আমাতে তোমাতে আজীবন। 

থাক প্রতিশ্রুতি যা রেখে ছিলে সেই অবুঝ বয়সে অনুভবে

অনেক দিনের চাওয়া পাওয়া আজ মর্তে এসেছে পুষ্প বনে। 


যেখানে পুরাতনকে বিদায় জানিয়ে নতুনকে বরণের উৎসব

চারিদিকে হোলির রঙের ছটা প্রকৃতি নবরূপে সেজেছে আজ। 

বাড়তি রঙ বাহারি অলংকারের একেবারেই প্রয়োজন নেই

এমনি মায়াবী আবির রঙে চূড়ান্ত জীবনের হিসাব বর বউ, 

সাজে নিজেকে নতুন করে জানান দাও পৃথিবীতে আছি-

একেবারেই আটপৌরে বাঙালির বাঙালিয়ানা সাজে, 

গ্রহণ করো যতটুকু দিয়েছো, ঢের বেশি দিতে পারি কৃতজ্ঞতা ভরে। 






প্রয়োজনপক্ষ


আমি তো বিবিধ শঙ্কায় নিজের সাথে নিজেই পাপ করছি

আগ্নির ভেতর প্রাচীন সমুদ্র রোপন করে চোখেরমন সংগুপ্তছায়ার হরিণীর মাতালভঙ্গি

আর বৃষ্টির সঞ্চয় নিয়ে শরীরের তীর আমি আত্নানাশে যাই অনন্তলের ঘুমে

এ সব আমার স্বপ্নের পাপ এ সব আমার রেশমিবাতাসের প্রতীক্ষামুখর অসুখ

হৃদয়ের মুদ্রা ভাগ্য ফিরিয়ে আনে মায়াবিছায়ার অনুজ্ঞ আলোর প্রপঞ্চময় শব্দে

এখন রাত্রিই আমার ছন্দ এখন রাত্রিই আমার দিনের ছাদ সুন্দরের বিরহীবোতাম

এই গুজবের ভেতর আমার মৃত্যু হলো আমারি ত্বকে তোমার নামাঙ্কিত বিছানাশষ্যায়

এখন গেঁথেরাখা অভিমানি শব্দশাসনগুলো কাব্যের মরমীব্যাকুল স্মৃতির শীতকাল

হে প্রগাঢ় নিরবতা হে আমার জলের ভাষামেঘ-প্রয়োজন আজ নিজেরই বিরুদ্ধে!

নৈ:শব্দের যুগ্ন-অন্ধকার ভ্রমণ দূর্লক্ষ্য দূরালোকে লোকসব প্রায় ঘুমন্ত অহম হয়ে যাচ্ছে

আমি তো তোমার নেশা আমি নিজের সাথে চলা মিহিছন্দ দুপুর জ্ঞানধর্মের বারান্দা

বিশ্বাসকে প্ররোচনা করে এনে দিলে আশ্চর্য বৃষ্টির বিকেল ভালোবাসার চেতনাসমুদ্র-

এইসব বিবিধ জন্মে আমার ক্ষণকাল শঙ্কার জগন্ময় পাপসমূহ-

পাখির কান্নায় ভরে যায় নদীর খুনে আমার লোকালয় আমার সমগ্র পাপের সর্বনাশস্বর্গ!






হৃদয়প্রণিতজোছনা ওড়ে মাতামুহুরিজলে


মাছরাঙা স্বচ্ছসকালের জলে ঈশ্বরের আয়নায় ঘুমভাঙা স্বপ্নের সেই স্মৃতিস্নাত দিন

সেই সোনালি-রুপোলিদিন আমাদের শৈশবঘেরা কৈশোরের দুরন্তপনা এবং যৌবনের

জোছনাঘেরা মাছের ফিজিওলজি উল্লাসঘেরা রাত্রিযাপন আর পাহাড়ার ঝিঝি পোঁকার

ভালোবাসার শব্দ জমে আছে স্রোতে জমে আছে প্রমিত অস্তিত্বের জলের মায়াবী প্রেম।

পাখিরা একেঁছে আকাশের মুক্ত তারার সোহাগিরোদ, সোনালিধানের শীষের দোলায়িত

ধূ-ধূ বালুচর,রক্তাক্ত কুয়াশায় ঢাকা দূর্বাঘাসের পাড় নদীর কিনার কিংবা জলের

ঈশ্বরিমিথ। লোকালয়ের সাহসি চোখের কল্পনার রঙের স্রোতে ভেসে যায় আলোর

মেঘবালিকারা। হাজার দুয়ারির ফেলে আসা স্মৃতির বাগানে ময়ূরপঙ্খির মতো নৃত্যের

খেলা করে মাতামুহুরির বালুচর।

ভালোলাগা মুক্ত দখিনা হাওয়ার গোধূলী কাঁপিয়ে পার হই বেলাভূমির বুকে। প্রতীকীবর্ষার

স্রোতধারা চকোরিয়া স্নান দুপুরে অসংগতির জোয়ার। গ্রীষ্মের উত্তপ্ত গরমে

হাহাকারের কান্না। কী রোমান্টিক তোমার দিন বদলের মাতলামি প্রেমে মগ্নতায় বয়ে

চলে জলেরধারা হে আশাময়ী নদী আমার!

মাতামুহুরি আমাদের যৌবনমত্ত প্রাণের চোখে আঁকা অনাদিকালের ইতিহাস। অতপর

মাতামুহুরির পায়ের চাপে জীবন মগ্নতার চোরাবালিতে প্রাণের স্পন্দন বহে যায়

দিগন্তলাগোয়া ধূসরতায়। কতো জনজীবনের সুখ-দুঃখের জলাঞ্জলি প্রিয় বসতবাড়ির

মায়ের স্বর্গীয় ভালোবাসা-অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমির তীরে মাতামুহুরি ছড়িয়ে

আছে প্রিয় চকোরিয়ার অনিন্দ্য জীবন প্রচ্ছদে-






পিঠে বেতফুল দগদগে ক্ষত 


অপরের কবিতা এখন মিঠাই সহজ 

আমার কবিতা তিতা 

আমার কবিতা জলপুত্রময় 

তবু আমার কবিতা যা-তা। 


মা -কে নিয়ে এতবেলা হেঁটেছি অনেক 

মা-র মুখে তুলেছি আড়ং জ্যোৎস্না 

তাঁর আত্মাগিঁটে শুয়েছে বয়স 

আমি মা'র কোলে অগণন কান্না।  


সহজ কবিতা আমি কি লিখি না মধু 

মাঝি ও পাখির উত্তরাধিকার 

পিঠে বেতফুল দাগ দগদগে ক্ষত 

নালিশ জানাব মা'কে - তুমি করছ প্রহার। 


মা - কে নিয়ে যেকারো কবিতা সরলা স্বভাবে 

আমার কবিতা কি কঠিন? 

কেন যে কারণে - অকারণে দ্যাখো তাকে 

মা - কে মনে হয় দেশ  - আমার রুটিন। 


আহা! একটা দেশের এত পক্ষপাত 

সারা শরীর জ্বলছে বিষে 

সুখবারিধারা আজও নামে না বুকে 

তবু কবিতা গাইবে গান আমারই দূর্বাশীষে।  






যৌনতা বিষয়ক


সব সময় ভয় আর আতংক।এই বুঝি...

এই বুঝি ভেঙে পড়ে 

কাঁচের দেয়াল।

সাদা বেড়াল নিঃশব্দে হাঁটে।এঘর সেঘর।

হলুদপাতারা ঝরে পড়ে ঘাসে।

কখন কী হয়!


ভালোবাসি কে না জানে!এই যে হাতে হাত রেখেছি।ভিড়ের মাঝে

গোপন চোখাচোখি।দিবানিশি খুনসুটি।নদীর সঙ্গে তারার।

এর চেয়ে বেশি যৌনতা কি আছে?

কী আছে আর অধিক বেশি!


গসিপ ওড়ে আংশিক মেঘ রাতে।বাদুড়ের ঝাঁক।

আমি খুব ভয়ে ভয়ে থাকি।


এই বুঝি ছেড়ে গেলো হাতখানি!





শেখ হাসিনা


শত দারিদ্রতা, শত দুর্দষার মাঝে

তুমি দিয়েছো স্বপ্ন একেঁ

১৮ কোটি বাঙালির  চোখে।

আলোর বর্তিকা হাতে 

তুমি বিরামহীন ছুটে চলেছো গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে।

হে বঙ্গ জননী তুমি সাহসী পিতার যোগ্য কন্যে,

তোমার মায়ার পরশে বাঙালি জাতি ধন্যে।

তুমিই আছো আমাদের হাসি কান্নায়। 


তোমার তুলনা শুধু এক জন হাসিনায়।





আজ প্রেমের বিধবা দিন


তুমি সেই

যে লজ্জা থেকে খুলে নাও শরীর 

তারপর বিদ্ধ করো আরেক তুমি

চোখে দেখা যায় অজস্র গৃহকোন প্রেক্ষাপট 

চেনাপথের করিডোর পেরিয়ে চকচক করে

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাঙা পুল, জ্যোৎস্না বিলাস

তোমার তেল চটচটে বুকের ভেতরে কদমতলা

সেই তলায় বাঁশি বাজায় অচেনা হ্যামিলন

তার মোহন সুর লুট করে এক শরীর লজ্জা ।


সমস্ত ব্যথার অনুবাদ দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার হয়

বর্ণব্যঞ্জনের মুখরা ব্যানারে খোদিত-

আজ প্রেমের বিধবা দিন !


প্রতিধ্বনির জেরক্স কপিতে ভেসে ওঠে

অস্বচ্ছ কর্ণিয়ার মৌনজাল।





জং


বুকের ভিতর তালা রেখনা

তালাতে জং ধরবে।

একদিন বুকে ব্যাথা হবে।

বুকের ভিতর সপ্ন রেখ,জানালা রেখ।

আকাশ রেখ। সমুদ্র রেখ।

আযান রেখ।





বিপ্রতীপ রূপান্তর


কতো অদ্ভুত অনুতাপ,অনুতপ্ত দু'হাত-

ঘাতক দুই

 বা দুইশত 

বা দুই সহস্র হাতের মরমী বোধোদয়।

উদ্ধত অস্ত্রের নত হতে থাকা দৃষ্টি,

পাথুরে আর কট্টর ইটের পৃথিবীতে আনুগত্যের মতো শিলাবৃষ্টি,

সে অনাসৃষ্টি বড়ো বিপ্রতীপ;

বুলেটের বুকে ফুটে রক্ত

 আর কাঁদুনে উচ্ছ্বাসের শক্ত শক্ত মিথ!

মানব হৃদপিণ্ড বরং এলুমুনিয়ম,

মৌনতা বরং ত্বকে বসা ধারালো ফলা।

হাতুড়ির আকুতি পারিপার্শ্বিক সঙ্গতি রাখতেই লীন,

নইলে মেটালের ইন্দ্রিয় ঐ ধ্বনিকে দশগুণ করে স্মরণ করাতো কৃত পাপের বাচ্যার্থ,


বাঁচা তখন অসংঙ্গায়িত হয়তো অনর্থক হতো

আর আয়নার সামনে কাঁহাতক মন টেকে!





আমার ও ঈশ্বরের সাথে কথিত সস্পর্ক


প্রতিটি সন্ধ্যায় আমি যেনো মরে যাই-

সারারাত মৃত কচলাতে থাকি

আমার হাতে,নখে অন্ধকারের ঘ্রাণ

শরীরে কে যেনো মৃত লিখে যায়

আর মরে যাই-

এভাবে প্রতিদিন-ঘনঘন মরে যাই

ভোরে ঈশ্বরের বুড়ো আঙুলের ইশারায় জাগ্রত হই

ঈশ্বর ফের লেজ গুটিয়ে চলে যান আকাশে

একদিন ঘুমের ভেতর জিব্রীল আসে-

জিব্রীলের ডানা কথিত চাকু ধরিয়ে বলে

‘বেঁচে থাকলেই জটিল যন্ত্রণা

তারচে আসো-আসো আমি নিয়ে যাই আকাশে’

ঈশ্বরকে আমি চিনি জানি বেশ-

উনি ধর্ম বোঝেন না-উনি বোঝেন রক্ত

আমি দ্বীপ সরকার-হিন্দু না মুসলিম

উনি বরং আমার লাল রক্ত দেখে

জিব্রীল পাঠিয়েছিলেন

আমি জিব্রীলের ডানায় চরে আকাশে চলে যাই

সেই থেকে আমার আত্নীয় স্বজন

পৃথিবীর কবরে কবরে আমাকে খোঁজেন

আকাশ থেকে বৃষ্টি ঝরলেই কেবল আমাকে খুঁজে পান

অতঃপর সেই বৃষ্টিকে সন্তান ভেবে

জমিতে নতুন করে স্মৃতি বপন করেন






শিল্পী

  

 উপমা চুল খুলে এলে

 আমি ওর প্রেমে পড়ি,

 এই বসন্ত বাতাসে

 উড়ুক উড়ুক

          চুল তার

            উড়ে যাক অপার্থিব শাড়ি!


 শব্দের ঠোঁটে গান লেগে আছে

 ব্যঞ্জনার তবে কেন মাধুকরী?

  ছন্দ দোলাক মাজা

          উপলব্ধির আছে তীব্র তরবারি।


 এবার সঙ্গম হোক

 লীলাক্ষেত্রে বাজুক 

                 কাল্পনিক বাঁশি

   সম্মোহনের ভাষা হারিয়ে গেলে

  কাছে এসে ইঙ্গিতে বলুক: 

                      ভালোবাসি!






হলরেখা 


আমার প্রথম পরিচয় জগতের মিথ্যার সাথে 

আর এগুলো লেখা  শুধুমাত্র ময়ুরপঙ্খী


আমি কুটিকুটি করেছি স্বরবর্ণ আর ব্যঞ্জনবর্ণ


একটা ছুরিকাঘাত 

জগৎ আর দেবতার রৈখিক নৈঃশব্দ্যে 


যেন এক অবশ শিশু হলরেখার পাশে শুয়ে রয়েছে 

আর তার পিতা মাতারা ঘুরে বেড়াচ্ছে 


এক মা কৃষ্ণরক্ত দিয়ে আহ্বান করছে সূর্যকে


আমরা সন্ধ্যার প্রার্থনায় 

আমাদের প্রার্থনা হয়ে উঠবে একটা পাগলা পতঙ্গের মতো 

জাল বিস্তার করবে 

ঝুঁকে থাকবে 

অনুমতি দেবে আমাদের মাথাগুলো নবায়ন করতে 


কিছু রক্তাক্ত  ফোঁটা 

একটা এনডরয়েড ফোন 

আঙুল গুনে গুনে এগিয়ে যাবো 

যখন  আমরা একটি মাঠে স্বর্গকে নগরায়ন করবো 

তখন  চাঁদ হয়ে  উঠবে নরকের সমতুল্য 

যেন কালরাতে আমি মস্তক হাতে নিয়ে নরকের স্বপ্ন দেখছি 

আর যখন আমি স্বপ্ন থেকে বেরিয়ে আসছিলাম  

হাত থেকে মস্তকটা পড়ে গেল স্বপ্নের মধ্যে 


ছায়ার মধ্যে গোঙাচ্ছে ছায়া

যেমন দেখতে হয় রাত্রির বিকৃত মুখ 

লেজ মোটা করে শুয়ে আছে আকাশ 

যেন রাগি একটা জানোয়ারের প্রবেশ ঘটছে


দিনের গন্ধ পচছে একটি পাত্রে 


নক্ষত্রের তাঁবু গুলোর সারল্য

পৃথিবীর হিত বিপরীতে আমি কোনদিন কারুর জন্মানোর কান্না নিয়ে কথা বলবো না 

আর তুমি চোখ দিয়ে জড়ো করো  ভয়বিহবল দিগন্তগুলো

পুনরায় ফিরিয়ে নিয়ে এসো কবরের মতো দেখতে মহাশূন্যকে

তুমি দেখবে একটি হলরেখার মধ্যে কিভাবে ভরে রয়েছে  পিপীলিকারা 





পুরনো নিয়মে


পুরনো নিয়মে কেন বারবার ফিরে আসি ভ্রমে!

ও তবে ভ্রমণ নয়, মন নয়— ভাবনার রেশ

কোথায় হারিয়ে যায়? হারাহারি— কোনও এক সমে

শেষে যে সামিল হয়— অধিকন্তু মায়ের আদেশ


ভরসা যোগায়৷ খেলা? আমি সে-লেখার কাছে নত৷

অভ্যাসের দাস বটে— এ-ব্যতীত আর কীবা পারি!

দিবা ও নিশির মধ্যে দেখি এক অসম্ভব ব্রত

আলো ও আঁধারে তার শুয়ে আছে শত-শত ঝারি৷


সিঞ্চিত হৃদয়, স্বপ্নে: কেঁপে ওঠে শিরা-উপশিরা...

ফেরাতে পারি না ওই তথাগত, অনাগত ধ্বনি,

পুরনো নিয়মে-শমে, ধুলিমুঠি— সহজিয়া, কিরা

এই তো ভেবেছি৷ আর দুইচোখে সন্ধ্যা-শিরোমণি


গোধূলি জাগিয়ে একা— বসে আছি নিঝুম দাওয়ায়৷

পুরনো দিনের কথা ভেসে আসে নতুন হাওয়ায়...





সেদিন কেঁদেছি


সেদিন কেঁদেছিলাম নীরবে

খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে 

এক রত্তি চাঁদটি সাক্ষী ছিল ;

সাক্ষী ছিল সমুদ্রের ঢেউ।


সেদিন কেঁদেছিলাম অঝরে

বেলাতটে দাঁড়িয়ে 

বিষন্নতায় জড়েছিল অশ্রুজল

সাক্ষী ছিল সাদা কালো মেঘের দল।


সেদিন কেঁদেছিলাম শেষবার 

আঙিনায় গোলাপ ফুটেছিল যেবার 

বিষাদে ডেকেছিল পুরো আকাশ

সাক্ষী ছিল বোশেখের বিষন্ন বাতাস।





মাছি 


সিংহের নাকের কাছে বাঘের মুখের কাছে 

দেখতে পাবে ভনভন করে জ্বালাচ্ছে মাছি 

তা-ই কি মাছি খুব ক্ষমতাবান নাকি মহীয়ান?

তোমার স্বভাবে কেন মাছির অনুকরণ?

সাধারণ থাক তুচ্ছ হয়োনা

খ‍্যাতি ও ক্ষমতার লালসায় ক্ষত রক্ত পূঁজে

নাক মুখ ডুবিয়ে বসে যেয়োনা

জীবনের গান করো জীবাণুর বাহক হয়োনা।





রক্তাক্ত শিশুর দেহ


রক্তের মিছিলে ক্ষমতার রসায়নে হিংস্রতার 

দাবানলে জ্বলছে ফিলিস্তিনি গাজার বসতভিটা

ভাসমান ইসরায়লের বর্বরতায় নিক্ষিপ্ত গোলাবারুদে

কি নৃশংস জালিম আঘাতে রক্তাক্ত মানব সন্তানরা!


দানব ইসরায়লের রাক্ষুসে থাবার যন্ত্রণায় অকালে

ঝরে পড়েছে বাগানের কোমল ফুটফুটে, ফুলগুলো

আহত দৃশ্যএর মাঝে আমি চোখ রাখতে পারছি না!


মাসুম বাচ্চাদের ঝলসানো মুখমন্ডলে হারিয়ে গেছে

মানবতা! কিসের জন্য এই রাজত্বকাল?

কোন স্বর্গ লাভের জন্য এমন র্নিদয় মানব হত্যা? 


শেষ রাতের নিদ্রায় অন্তিমপাড়ে যেতে হবে কে জানতো?

তাহলে হয়তো নিরাপদে আশ্রয় খুঁজে পেতো দালানের

ভেরত লুকিয়ে থাকা আগামীর স্বপ্নবুনা পাখির বাসাগুলো।


ভোরের নামাজে সামিল হবার মসজিদ পর্যন্ত 

বিধ্বংস করেছে মানবতা বিরোধী ইসরায়ল বাহিনী

যেখানে শান্তির মোনাজাত হয় প্রার্থনার কাতারে

সেখানেও ছাড় দেয়নি জালিম ইসরায়েল!


অবুঝ শিশুর রক্তাক্ত দেহ বিছানায় ছটফট করছে

বাঁচার তাগিদে! মা-বাবা নিথর শরীর পড়ে আছে

প্রাণহীন! হাত নেই, পা নেই, কি নিদারুণ ইসরায়লের

নারকীয় হত্যাকান্ড


শান্তির দূত নিয়ে নিরব যারা সময়ের নিষ্ঠুরতায়

তোমাদের সময় আসছে এরচেয়েও ভয়াবহ! প্রস্তুত

থেকো, নতুন কোন ধ্বংসের ইতিহাস বিনির্মাণের জন্য।





কালো মেয়ে

   

            দীঘল কালো চুলগুলো তার

                  পড়েছে পিঠের পরে,

           খোলা চুলে লাগছে দারুন

                   স্নিগ্ধতা শরীর জুড়ে।


            চোখ দুটো তার ডাগর ডাগর

                     কাজল কালো আাঁখি,

            দেখতে তাকে লাগছে ভালো

                     তাইতো চেয়ে থাকি।


                ঠোঁটের কোনে কালো তিলে

                        লাগছে তাকে বেশ।

                 কালো মেয়ে হলেও তাকে

                        ভালোবাসি অনেক।


              বেণী বাঁধা চুলগুলো তার

                       দুলছে পিঠের পরে-

               মাথার পরে গোলাপ ফুলে

                         রুপ ঠিকরে পড়ে।


              কলসি কাঁখে চলছে মেয়ে

                     ময়নামতির ঘাঁটে

              পায়ের মলের শব্দে আমার

                      মন যে কেমন করে।


                 ঘাঁটের পরে সুন্দরীদের

                      অবাধ বিচরণ,

                 কালো মেয়ের ডাগর চোখে

                        হারায় আমার মন।।





শুধুই দীর্ঘশ্বাস 


দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সময়ের অবসান হবে 

-এই নিশ্চয়তাটুকু জেনে বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাস আশাহত প্রাণে 

রৌদ্রদগ্ধ দুপুর গড়িয়ে আসে মাহেন্দ্রক্ষণ

শামুকের মতো না গুটিয়ে স্বাধীনতা ফেরি করি মিছিলে মিছিলে 

অগ্রভাগে সেই মানুষটির দৃঢ় কণ্ঠ,-জনাকীর্ণ সমাবেশ 

দীর্ঘশ্বাস থেকে শ্বাস নেই বৈভবের ফোয়ারা উড়ে 

মাটি ও মানুষের স্বাধীনতা ফিরে পাবো দেশ ও দশে 

নিকষ আঁধার কেটে ভোর হবে সমস্ত  আলোর শহর 

অথচ সামান্য ব্যবধানে হায়েনার 

হিংস্রতা স্বাধীনতা ঘিরে 

পাথরের দেহে বিষমাখা নখের প্রহারে চলে শাসন-শোষণ 

সবুজের মাঠ হয় বিরান ভূমি 

স্বাধীনতার জখমে বিশ্রী ঘ্রাণ 

দেশ ভুলে সবাই ভালোবাসি দ্বেষকেই!

আহত স্বাধীনতার বুক ফুঁড়ে  শুধুই দীর্ঘশ্বাস বায়ান্ন থেকে একাত্তরে। 






শূন্যতা ছুঁয়েছে আজ


ঘন রাত্রির গভীরে থাকে গাঢ় অন্ধকার

নৈঃশব্দের পরম সন্ধিক্ষণে জেগে একা

আকাশ পাহারা দেই অনাবিল বিশ্বাসে।


হঠাৎই তুমি রাত্রির জমাট আধাঁর ডিঙিয়ে,

স্বপ্নচারী রাজকন্যা সেজে হৃদয়ের আকাশে

শুকতারা বেশে আবির্ভাব হলে সংগোপনে।


অবচেতন মন আনন্দে ডুঁকরে উঠলো,

পাওয়া না পাওয়ার অতীতকে নিমিষেই

পদদলিত করে তোমায় প্রতিশ্রুতি দিলাম

অনন্ত সময়ে অন্তহীন সান্নিধ্যে পাশে রবো।


প্রেমে পড়ার আনন্দে বিহ্বল এই আমি

ভুলে গেলাম সমস্ত পৃথিবী, সব বন্ধন।

প্রতিটি সময় এখন ভীষণ অস্থির অনুভব

বুকের গভীরে বুঝি শূন্যতা ছুঁয়েছে আজ।


মেঘে মেঘে কেটে যায় সাতটি মাস

বুঝতে পারি না তোমায়, খাপছাড়া ভাব

এড়িয়ে যাবার ভঙ্গিমা স্পষ্ট অবয়বে।

একদিন অবেলায়, দিন শেষে হলুদ বিকেলে

জানালে ঐসব ছেলেমানুষী আর সময়

অতিবাহিত করা ছিল শুধুই প্রগলপতা,

ভুলে যেও সব অনুযোগ ভুলে।


বেলাশেষে বিষন্ন বিকেল গড়িয়ে এলো রাত,

তাপহীন শুভ্র জোছনা মৃদু শিহরণ জাগিয়ে দুঃখকে নিমন্ত্রণ করলাম অকপটে।

বেদনা ছড়াল সমস্ত হৃদয়ের চারিপাশ।

যন্ত্রণার স্নানে ভেজা বেহিসেবী মন এখন

নিদারুণ অভিমান ধরে রাখে হৃদয়াকাশে।


এই বানিজ্যিক শহরে তুমিও বানিজ্য করলে

বিক্রির মূল্যে হয়ত একটু ঠকে যেতে,

কিন্ত বিনিময়ে পেতে এক আকাশ প্রেম

আর ভালবাসায় ভরা এক সমুদ্র। 




এইখানে বঙ্গশ্রেষ্ঠ জনপ্রাণ
(উৎসর্গঃ মাইকেল মধুসূদন দত্ত)


এখানে মাইকেলের মতো অজস্র জীবন চলে 
অথচ মাইকেল মধুসূদনকেই যেন যায় ভুলে
(২)
ঊনত্রিশে জুন আসলেই দরদ উতলে পড়ে-
অথবা পঁচিশে জানুয়ারি; হায়রে দুর্ভাগা জাতি!
(৩)
অনেক দিয়েছে, আমরা কতটুকু দিয়েছি তারে?
তারই কান্নায় এইখানে বর্ষাকালে বৃষ্টি হয়।
(৪)
তাকে ততটা অবমূল্যায়ন করা মানেই
পৃথিবী এতটা এতটাই জনপ্রাণিহীন
(৫)
কিন্তু চালাতে পারিনা জীবন আমার মতো
যে জীবন বহে চলি, বলতেই পারিনা আমার
একটাই তো জীবন যেন ধারে ধারে চলে
কিছুটা ঘৃণায়, কিছুটা টাটানো ভালোবাসায়
(৬)
কুড়ি হাজার প্রজাতি মৌমাছির যেমন ক্ষমতা নেই
আটশো কোটির অধিক মানুষেরও তেমন ক্ষমতা নেই
এমন মধু তৈরি করার- এ মধুর নাম কেশবপুরের মধুসূদন
এসো সময় থাকতে করি যত্ন; এতো বাঙলার বড় রত্ন।
(৭)
তার জীবনটাইতো ছিল মহাশিল্পমুগ্ধ,
কেন তার জীনন-মরণটাই হলো এতটা যন্ত্রণাদগ্ধ?
(৮)
তার রচনার সন্দর্ভমালায় ছিল নীতিগর্ভ
(৯)
ছিলেন বাঙালির সংস্কৃতি সত্যায়নের অনুপম দিশা
বাঘা বাঘা শিল্পীর জীবনদর্শনেই
 মিটিয়েছে জীবনের সুধা।
(১০)
মর্মায়তনে রেখেছিলেন মানবাত্মার সৌন্দর্যের তৃষ্ণা 
সাগরদাঁড়ি কপোতাক্ষের জলে 
আজ বড় পানির পিপাসা!

(১১)
সমাধি লিপিতেই জানিয়েছেন যে উদাত্ত আহবান;
দাঁড়াও, বঙ্গে! হে জনতা, হে বাঙালি, হে পথিক।
সময় থাকতে মাকে (দেশকে) চিনে নিও হে
না শৈশবে, না যৌবনে; আমৃত্যু যেন দেশ- দেশকেই ভালোবাসে।
(১২)
হে কবি আমরা বড় অভাগা, বুঝেও যেন কিছু বুঝি না 
মাটি ও মহাশূন্যের দিকে খালি ভাবগল্পের ঈশ্বর নাচে
(১৩)
মধুকে ভাবলে মধুর সময়ে বেশ খানিকটা ঘুরাঘুরি 
মধুকে ভুললে মধুর অস্তিত্ব মানে সাহিত্য হয় নীলপাখি।
(১৪)
সেদিনের সেই কাঠবাদামগাছ আজও হাঁটছে, ভাবছে 
মধুপল্লী থেকে বিদায়ঘাট ছুটছে, 
মাইকেল মধুসূদন দত্ত নতুন করে জাহাজে বসে
কপোতাক্ষের নবজোয়ারজলে শুয়ে শুয়ে বেশ আরামে
সাহিত্য উত্তেজনায় বাঙলা সনেটের বংশবৃদ্ধি করছে

তাইতে আজ আর ততটা তার বিদেশপ্রেম টানেনা

(১৫)
তীব্র শীতে শিশিরজলে ভিজিয়ে ভিজতে আসে এখানে
হাজার লোকের ভীড়ে, 
বাঙালির প্রথম আধুনিক পুরুষ যে,
জীবন সায়াহ্নে দেখা না পাওয়া মাকে দেখে
বিদায়ঘাটকে অবিদায় করে; 
রাজনারায়ণ ও মধুসূদন বুকে জড়াজড়ি করে
জাহ্নবী গঙ্গানদীর জলে না গিয়ে কপোতাক্ষে স্নান সারে
আর শুয়ে-বসে আমি- বঙ্গশ্রেষ্ঠসন্তানকে পড়ি-
"সতত, হে মধু, তুমি আছো বঙ্গজুড়ে!
সতত তোমার কথা ভাবি এ সময়ে 
সতত যেমন আজ আঁধারে আঁধার 
বোলে শুধু মিথ্যাবাণী- তুমি জ্বলজ্বলে। "

(১৬)
যে মধুসূদন স্বার্থছেঁড়া স্বার্থের কাঙাল 
সে মধুসূদন শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির দরকার। 

(১৭)
বাণীচিরন্তন তারচেয়ে সত্য চিরন্তন 
কে এমন আর বলতে পারে, বলতে পারে
"জন্মিলে মরিতে হবে, 

অমর কে কোথা কবে।"




শব্দের নৈঃশব্দ্য  


পৃথিবীর একপ্রান্তে মাটি খুঁড়ে

আমাকে কবর দিতে পারে যে হাওয়া; সে আজ

বাতাসে আয়ুর কথা লিখতে লিখতে

খুঁটে খাচ্ছে কিছু আলো।   


আমি অপেক্ষা করি… 


একটা দৃশ্য থেকে আরেকটা দৃশ্যের পাতা টেনে

ছিঁড়ে ফেলি ঝরে পড়া শব্দের নৈঃশব্দ্য; 

আমাকে খুন করে ফেলে গেলো যেসব পাখির ডাক

তারা আজ বাতাসের কাছে চিঠে লিখে

গুনে গুনে পা ফেলে দুপুরের বারান্দায়।  

____

Signature Poetry3






সম্মিলিত কবিতা সংখ্যা- ২য় পর্বের লিংক


Post a Comment

0 Comments