সম্মিলিত কবিতা সংখ্যা- (২য় পর্ব)

Signature Poetry Collection (Part 2)




ভ্রম


রুচিনির্ভর মাঠে শীতের ছিমছাম সবজিগুলো দেখো আর আঁকো

চিত্রচর্চা করতে এসে স্মৃতির ভাণ্ডার থেকে তুলে আনতে হয়

অসংখ্য মুখ, দেহান্তরের দলিত দশা।

ফুলের প্রতীকে থাকে কাম-গন্ধ!

তোমার ক্যানভাস তাকে কতটা মান্যতা দেয়?


ভাবো-দূরে স্মৃতি-নির্ভর ডাকঘর

রাশি রাশি চিঠির নিচে চাপা পড়া প্রাপক

ভাবের প্রাবল্যে বিবাদ, ক্রোধে ছেয়ে যাচ্ছে বিবেক বুদ্ধির বাতায়ন।


স্বেচ্ছাচারী হওয়া ভালো তাই বলে পেলবতা পরিহার করে

কেন তুমি আঁকতে গেলে উথাল-পাতাল দুর্ভিক্ষ-দশা,

দেশভাগ, দাঙ্গা, শরণার্থীর স্রোত?


ভুট্টা খেতের কাজ শেষে পিঠে ঝুড়ি বেঁধে

মেঘের আদর নিয়ে বাড়ি ফিরছে মেয়েটি

তাকে আঁকতে গিয়ে সূর্য ডুবে গেল!


মন খারাপ হলে বুঝে নেবে

যেটুকু খারাপ সেটুকু ভ্রম, সেটুকুই ইলিউশান।




অশ্রু ও জল সম্পর্কিত 


হাত থাকলে ঘাম মোছা যায় 

হৃদয় না থাকলে চোখের জল মোছা যায় না


চোখের জল বলতে আপনি বোঝেন 

কয়েক ফোঁটা  অশ্রু 

যা সাগরের লোনা  পানির মতো নিরর্থক 

অন্তত আপনার কাছে 


আপনার কাছে জলের কোনো মূল্য নেই 

লোনা জলের তো নয়ই 


বৃষ্টি মুখর দিনে আপনি কখনো বাইরে পা বাড়ান না 

জানালা বন্ধ করে রাখেন 

যাতে বৃষ্টি-কণা আপনার চিবুক ছুঁতে না পারে


আপনি যখন স্নান ঘরে যান

চাবুক মেরে মেরে জলকে ক্রীতদাসের মতো

আপনার সেবায় নিয়োজিত করেন 


কেবল তৃষ্ণার্ত হলেই আপনি এই গোলাম জলের কাছে নতজানু হন


আমার সারা জীবনের সৎকর্ম ঈশ্বরের পায়ের কাছে রেখে বলি – তিনি যেন আপনাকে  

নিরন্তর তৃষ্ণার্ত রাখেন।






কাল মহাকাল


জনম ভরিয়া তারে কাছে পামু– এমন আশায়

পাটক্ষেত বাদ দিয়া নিছিলাম ‘বিবাহের বিধি’–

সমাজ বড়োই নোঙরা নির্মাণ , তার প্রতিনিধি

হ’য়ে আমি নিজেরে বাঁধিয়া রাখি সোনার খাঁচায় ।


তথাপি তাবিজ তুমার ভিজানো সোনা-রূপা-জল


পান করি অনায়াসে শুয়োপোকা– বিষকাঁটা তার


চুলকায়্যা হইছি তো চোখকানা , দুনিয়া আঁন্ধার ।

ভালোবাসা এমনই– ডাঁহা মিথ্যা বাসনার ফল !


তারে কই ভালোবাসা– অন্তরে-বাহিরে যে জ্বালায়


কথা কয় , শীত নাই , গায়ে তার যে-নিন্দার কাঁথা–


আমি যারে বুক দেই– সে আমারে দেয় নীল ছুরি


কেনো এই বনবাস-পরবাস– কিসের আশায়


বুক পেতে নিছি আমি কতো– শত জনমের ব্যথা

অমোঘ মৃত্যুরে কোলে নিয়া একা– ভুল পথে ঘুরি ।




ভবঘুরে : ঙ ~>


~


পরিব্রাজক  = { মানুষ × প্রজাতি }  { পূর্ব ও পরে } ~>


অসীম শূন্য উদ্যান ফেটে গিয়ে ~ আলো হয়ে ওঠলো 

কঠিন তরল বায়ুবীয় ~ অদৃশ্য দৃশ্য ~ ঙ 

সূর্য ~ লতা পাতা গুল্ম ~ কামশাস্ত্র ~ সূত্র 

সরণ ত্বরণ মন্দন  ~ বিশৃঙ্খল ~ স্পন্দন 


মহাজাগতিক ঘড়িতে

গত বা আগামী ~ এক আপেক্ষিক ~ ঘোড়া 


মাং মন্দির ~ গম্বুজ ফোটা শব্দে উত্তাল ধারা ~>





উদাসী মন


মন তুলিতে গাঁ ঘেষে থাকে প্রকৃতির ছায়া

উদাস করা দুপুরে গড়ে গড়ে যায় কবিতার পান্ডুলিপি

পলকে সলকে সন্ধ্যো বেলা লোকালয় থেকে দূরে

অন্তরের কূল যে ভাঙ্গে তীব্র প্রলয়ে

সামীহীন স্মৃতি ভরে জীবন ব্যারাকে

মনের আনাচে কানাচে অযথা কোলাহল থামে

বুক ভরে নিঃশ্বাস নেই

সবুজ আর নীল বাগানে

স্বচ্ছ আনন্দ ধারা নিমেষে বয়ে যায় ভালোলাগায়

মেঘের চিলেকোঠায় নক্ষত্রে বাস

ক্লান্ত মায়া উড়ে যায় শোঁ শোঁ অনুভবে

শান্ত শুভ্রতা আলো ছড়ায় বিরান বন্দরে

দিগন্তের দ্বীপে

তীব্র প্রবল বাতাসে খুলে যায় মনের দরজা

তখনও সুনিপুন স্লিদ্ধ শান্ত আমার কবিতা।






দৃষ্টির ভিতর বাহির


তবুও আমি সত্যের দেখা পাই

পৃথিবী ভরা মিথ্যের বেসাতি যখন তোমাদের লজ্জিত করে

আমি শুধু ফুলের কুড়ি দেখি।

অমাবস্যার জঞ্জাল শংকিত করে তোলে সমুদ্র স্রোত

পূবালী বাতাস গতি হারায়

আঁধারের গুহায় নেয় আশ্রয়।

জোনাকির ভীরু আলো ইতিউতি ঘোরে

বৃষ্টিমুখর সন্ধ্যার আঁধার তাতে দূর হয় না

অন্যমনস্ক পথিকের শুধু একটু সাহস যোগায়।

নক্ষত্রের দল আসে নেবে পৃথিবীর বুকে

শরতের নীল আকাশে সাদা মেঘ ভাসে

শান্তির পায়রা নেয় শ্বাস

মুক্ত বাতাসে ।





অদৃশ্য


অদল বদল করার কথা,তাও হলো না

দীর্ঘ সময় কেটে গেলো আপন মনে

আমার ঘরে স্তুপ হয়েছে জমে জমে

হয়তো তোমার ঘরেও এমন দৃশ্য আছে

কিন্তু অদল বদল করা হলো না তো!


হিসেব কষে অনেক কিছুই যায় না করা

তৈরী করা প্ল্যানগুলি যায় মাঠে মারা

কার হাতে সব? কে যে নিয়ে খেলা করে

তুমি আমি কেমনে দেখি সেই বাজিকর?

অষ্ট প্রহর খেলাচ্ছে যে সূতোর টানে।!


যতোই ভাবি উল্টে দিবো পাল্টে দিবো

সময় মতো সব কিছু যে স্থবির হবেই

ভবিতব্য এটাই যেনো,পৌছোনো তো-

যায় না সেই হাতের কাছে,অদৃশ্য এক

সূতোর খেলা অনুভবেই যায় য়ে পাওয়া।


স্তুপ পড়ে থাক স্তুপের মতো,করার কী আর

আছে বলো, সময় হলেই উল্টে যাবে-

অদল হবে বদল হবে এ হাত থেকে 

ও হাত হয়ে নিজের স্থানে  নিজেই যাবে

আমরা শুধু দেখেই যাবো সূতোর খেলা।





এপিঠ ওপিঠ 


ক্ষত বিক্ষত দিন কখনো মধুর হয়ে উঠে প্রাণ প্রিয় স্পর্শের তারুণ্যে।


বসন্ত বাতাসে কাঁটাগুল্মে ফোঁটে সৌরভ মাখানো পুষ্পের রূপসী মাখা পাপড়ি। 


অতপর ছেড়ে যায় প্রান্তিক  ক্ষয়িষ্ণু জীবনের শেষ বিশ্বাসের প্রান্তর।


অন্তর ক্রন্দনে নত,নিরব কোন শোক যন্ত্রণা, 

দগ্ধ হৃদয় পোড়ে নিরবে নিভৃতে, 

নিস্তব্ধতায় জমে থাকে দীর্ঘশ্বাসের ভারী বাতাস। 


অচেনা ধীরস্থির প্রয়াসে প্রতি প্রহরে মিলিয়ে যায় সোনালী প্রভাত,

অন্ধকার আকাশে ছেয়ে থাকা কালোমেঘ আহবানে মুখর করে বিষন্ন সুখ বাসর।


হৃদয়ে একোন তরঙ্গের পাহাড়, জমে থাকা ব্যথাতুর নিরব আকুতি যা শুধু নিজস্ব,একান্তই নিজস্ব--






এইটে হইলেক পিতিমীর শেষ্টু কবিতা!


আমি অমুক, আমি তমুক; আমি হিন্দি-চুল, আমি ঘরের কোনের ময়লা ঝুল; আমি পিতিমির শ্রেষ্টু মানুষ, আমার নাই কুনু দুষ; আমার সমালোচনা করলে তুমারে পারলে কাঞ্চা চিবাইয়া প্যাডের মইদ্দে করমু হজম, আর আমার প্রশংসা করে আমার জন্য টেহা খরচ করলে তুমিও হইবা পিতিমির শ্রেষ্টু মানুষ- তয় আমার চেয়ে এট্টু কম;


আমিই সব, বাকিসব মিছা, আর আমিই অইলাম গা একমাত্তুর হাছা; আমি জায়গা, সুযোগ ও স্বার্থ বুইজা সরকাররে পশ্চাতে খোঁচা মারি, আবার তাল ঠিক রাখতে গিয়া বিরোধীদের কমজোরী-শিশ্ন তুইলা গাইল পাড়ি;


আমি তো মহাজ্ঞানী তাই সবার করি সমালোচনা, তয় যে আমার চে’ জ্ঞানী, শক্তিধর, যে পুঁজির দণ্ডধারী হিসেবে ম্যারিকার সাদাবাড়ির উচ্চাসনে আসীত ও বসিত তাদের তো আর বদনাম করতাম ফারি না- তাই “তেউল্লা মাতায় ত্যাল দিয়া” করি তার শুদু সু-আলোচনা…;


তয়, তারে আলুরবস্তা দেওয়া আর ল্যাং মারার ষড়যন্ত্র করার লগেলগে মাঝেমইদ্দে এট্টু কচুর খোঁচা দিয়ে নিজেরে চুশিল বইলা চিল্লাই উডি, উডতে অয়, হেইডা কি বুচচো? না বুঝলে না বুচ্চো! “বুঝলে বুঝপাতা, না বুঝলে তেজপাতা!


-এই হানেই আইটকা আছি, এর বায়রা কইলাম যাইতাছি না, গোড়ায় গলদ থাকায় দুই চোকে আন্দার বইলা এইসবের বায়রা যাইবার নতুন পত খুঁইজা পাইতাছি না!





নষ্ট পোড়া চাঁদ


জমিয়ে রাখি ঘামরোদ, ধুলো রং, তেতো জল

জমিয়ে রাখি ভাঙা রাত, নক্ষত্র আঁধার.

তুলে রাখি শৈশবী শুকনো কাজল

তুলে রাখি ছেঁড়া মেঘ, কান্না রাধার।


না পেয়েও পেয়েছি ভেবে লিখে রাখি প্রেম

লিখে রাখি মনীরা খানম, লিখে রাখি হেম

কিছুই ফেলি না, রেখে দিই নষ্ট পোড়া চাঁদ

রেখে দিই- না রাখা কথার কষ্ট নিনাদ।


ঢেকে রাখি পুষে রাখা পাথুরে হৃদয়

ঢেকে রাখি মুখরতা নির্জনতার

ঢেকে রাখি মরা নদী, নিশি ডাকা ভয়

ঢেকে রাখি জলে ঢাকা দিঘি ও পাথার।





অসম্ভবের পেছনের সত্য


সারারাত্রি তুমি হেঁটে গিয়েছিলে

সেই অদ্ভুত পুকুরপাড়ে,

যারা যারা দেখেছিলো একসাথে দুটো ময়ূর,

তার কিছুক্ষণ পর কালো ছায়া

নিজেকে নিজে যেমন খুঁজে পায়,

অত:পর যোগ দেয় স্মারক পরিচয়ে

যেমনটি আর দেখা যাবে না এক মহাকালে।

তৃতীয় পক্ষের চোখ পড়েছিলো একক সত্ত্বায়

কিন্তু রাত্রি চলে গেল

তবুও কিছুই হলো না আয়োজনের।

তোমাদের বিশ্বাসে ভুল ছিলো

যেমন ভুল করেছিলো এথেন্সবাসীরা

সক্রেটিসকে হেমলক পান করিয়ে…

এই অবিস্মরণীয় পৃথিবীর সবদিক মুক্তো ছড়ানো।

তুমি কি সেসবের কিছু খুঁজে পেয়েছো?





জলের কান্না

 

ঘুমের ভিতর ছায়া,ছায়ার ভিতর আমি

নিঃশব্দে হেঁটে চলি,দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয় পথ

দৃষ্টি সীমার বাইরে যেতে যেতে......

চোখের পাতায় জ্বলে উঠে  আদিম ইতিহাস

হাহাকারে কাঁদে মন।

প্রিয় নদীর কাছে যাই-

একটি ইলিশ ডিম পেড়ে যেতে যেতে

স্রোতে মিশিয়ে যায় বেদনার বিলাপ

অজস্র পোনামাছের কলরবে

আন্দোলিত হয় জেলের মন।

এভাবেই রোজ কতশত আনন্দ জলে মিশে যায়

কতশত জলের কান্না জলেই ভেসে যায়!





দুধ


ওলানে যা আছে তা তরল, সকল শ্রেণীর গুণাগুণযুক্ত।

ঈষদুষ্ণ এ-পদার্থ তার মুখে তুলে দেয় যে জ্বালাবে বংশের প্রদীপ।   

জ্বালানি হিসাবে কাজে দেয় যারা চায় একে জীবন-চাকায়। 

নিষ্পেষিত বা গুঁড়োরূপেও এর ভূমিকা উজ্জ্বল। 

এসবে দূরত্ব বজায় রাখে মামলতে যাদের ঘাটতি। 

 

মিষ্টিঘরে এর উপস্থিতি আবশ্যক এক উপাদানরূপে,

একে ছাড়া চোখেই দেখে না কারিগর; 

দই, ঘোল, ঘি-রূপ ধারণ করে মোরব্বা, পোলাও, বিরিয়ানি,

পরোটা, সেমাইসহ কোথায় সে নেই ?  ঘ্রাণেও বাগযন্ত্রে জল।  


কাশের বনের রং কেন তার গায়ে নাকি সে ধার করেছে ওর থেকে? 

গন্ধরাজ, বক, ভাঁট, জুঁই, তারাফুল হয়ে কেন নিজেকে জানান দিচ্ছে,

না বনজেরাই তার রঙে একাকার হয়ে মিলিয়েছে গলা ? 

জাতীয় প্রতীক হয়ে একইভাবে হাসে কেন বাড়ির অদূরে জলাশয়ে ? 

কপোত, গাংচিল, সারস, ময়ূরী তার রঙে  সেজে 

খায়, ঘোরে, নাচে, উড়ে বেড়াতেও যায় কেন এদিকে ওদিক ?

মেঘেরাও কি এতটা দূর থেকে একে ভালোবেসে  মেলছে  

দুগ্ধফেননিভ মেলছে পাখা ?

পূর্ণিমাও কেন সাদা-বিজ্ঞাপন দেয় মাসে মাসে  

নাকি এরা খয়ের খাঁ ?





ডুবসাঁতার-৬


আমার মা যখন গাইতো 'আমার সকল দুখের প্রদীপ'প্রায়ই উঁচুতে গিয়ে গলা খুলতো না মা-র, গলা বুজে আসতো। আমার মনে হতো মা কাঁদচ্ছে গানে গানে। মা কি কখনো গলা খুলে গাইতে পেরেছে...

'আমার মুক্তি আলোয় আলোয়'

আমার বাবার খুব বাগানের শখ। বাহারী গোলাপের কালেকশনে কেবল কোথাও মা নেই!আমার বাবা যে রাতে সন্ন্যাস নিতে ঘর ছাঁড়লো সেই রাতে মা ও বদলে নিলো জীবন

রাত্রি মেখে শোক চোখের চতুর্পাশে,সংসারে প্রিয় মুখের শহরে, প্রিয় অধরে-আঁখিতে আশ্রয় লিখে মা তারপর থেকে 'বিনোদিনী'।

আমার ডাকটিকিট জমানোর খুব শখ। পচিঁশ বছর আগে জেনকিন্স আমায় দিয়েছিলো ছোট্ট দোকান টিকিটের ভিড়। দোকানটা কি আজো আছে? আজো কি কেউ ডাকটিকিট কেনে? আমার খাতা জুড়ে দেখি দেশ-বিদেশের টিকিট ছবি বদলে সেঁটে নিয়েছে আতঙ্ক, জঙ্গিবাদ। ওখানেও প্রেম নেই।

আমাদের ডাকটিকিট,ডাকটিকিট সময় উড়ে গেছে।সময়ের গোপন ঠোঁটে জেগে আছে বিনিদ্র চুম্বন!জীবন অংকে আমরা তিন তিনটি সরল রেখা কেবল ত্রিভূজ হয়ে বেঁচে আছি বুকের ভেতর শূন্যতার বৈভবে কোচবিহার রাজবাড়ী...





ক্ষয়িষ্ণু যৌবনের স্তুতি


বোঁটা আলগা ফলের ন্যায়,

নিম্নগামী যৌবন স্ফুলিঙ্গের পারদচাপ।

প্রকৃতির নির্মম সত্যের প্রতিপাদ ডিগ্রেডেশন

কেবল বার্তা দেয় ক্ষয়ের কিংবা বিনাশের।


ধরনীর আরেক ধ্রুব সত্য হলো,

যোগ্যতমের জয়, কিংবা

অভিশপ্তদের বিনাশ সাধন।

যা, পক্ষপাতদোষে দুষ্ট আজগুবি কার্য।


পেঁজা তুলোর মতো হালি মেঘমালারা,

নক্ষত্রসভায় স্বজাত চেনায়,

অন্যের অস্তিত্বের বিনাশ সেধে,

স্বঅস্তিত্ব বহাল রাখায়।


আকাশের নক্ষত্রগুলোর ন্যায়,

সবুজ সায়রের নামী-বেনামী অযস্র 

রঙিন ফুলগুলারেও একদিন ঝরে যেতে হয়,

অবিসংবাদিত ধ্বংস কিংবা মৃত্যুর

অকাট্য যজ্ঞের সাধনে।


প্রাণিকুলের যৌবনেরও কালের পরিক্রমায়

অমোঘ সুন্দর ভাবে বিলুপ্তি ঘটে,

তবে অন্য রুপে আশ্রিত হবার বায়নানামা করে।

ঠিক আহার যেমন ক্ষুধার অস্তিত্ব স্তিমিত করে,

পেটপুজোর আনুষ্ঠানিকতায় নিজ উপযোগ সেধে।




দুরাশার দীর্ঘ আখ্যান


পথে পথে অসুরের অসীম দেমাক


ক্লান্ত, অবসন্ন

সুবোধ পথিক।

তবুও পথিক ভাবে বার বার :

শান্তিরা ফিরবে;

ফিরে আসবেই

এখানে আবার।

বিষবৃক্ষের কুসুমগুলো ঝরে যাবে একদিন

ভরে যাবে মানবিক জল,

একের ফুলেরা হবে সকলের ফল।


২.

শুভবাদী স্বপ্ন দেখছেন ?

ভাবছেন গাজা একদিন জান্নাতুল ভূমি হবে !

সুদানের শিশুরা ফিরবে

শৈশবের মাঠে !

সভ্যতা ফিরে যাবে সুরম্য বাগদাদে !

আফগান লেবানন একদিন স্বর্গোদ্যান হবে !

কোনো অলৌকিক পাখি এসে

সমাধান করে দেবে রোহিঙ্গার দেশ !


সিটমহলের মানুষগুলো লাল না কি হলুদ,

সেই পরিচয়

লিখে দেবে কারা ?

নগরবাসির খাদ্যের জন্য নিবেদিত পশুমাংসেও

লেখা থাকে গরু-মহিষের পরিচয়,

অথচ, এমন মানুষ আছে পৃথিবীতে, যাদের

পরিচিতির কোনো ছিল-প্যাডই নাই !

জন্মমাটিতেই কোণঠাসা,

কোণাকুনি বসা

যারা হরিজন;

জনকের ধুলোমাখা ঘর

একদিন পর হয়ে যায়,

পরিচিত কৃষ্ণচূড়াদের রঙ, রক্ত হয়ে ফেরে

যাদের বুকের আঙিনায়,

সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে যারা লঘুত্বের কালিমাখা

সেইসব ভাগ্যহত জনদুঃখ ঘোচাবে কি কেউ ?

মোছাবে কি অসহায় মানুষের চোখের পুকুরে

উপচে পড়া সেই আকুলতার ঢেউ ?


৩.

স্বপ্ন দেখে কোনো লাভ নেই।

গাজা যদি শান্ত হয়,


শান্ত কোনো জনপদ হবে গাজা;

অন্য কোনো শহরের

অন্য কোনো নিরীহ শিশুরা পাবে সাজা।

একটি আফগান তালেবান শূন্য হলে

জন্ম নেবে নতুন কাবুল;

পুড়ে যাবে ভিন্ন কোনো রমণীর


মোহনীয় বুকের পুতুল।

ওয়াশিংটন সুস্থ হলে

আরো কোনো নগরের উঠবে জেগে অসুস্থ খেয়াল,

বার্লিন প্রাচীর ভেঙে গড়ে ওঠে

অগণিত কোরীয় দেয়াল !

সিরিয়া-লেবানন নিভে গেলে

নতুন কোথাও আগুন উঠবে জ্বলে,

নতুন কোনো হিমালয়ের

বরফ যাবে গলে।

কোনো কোনো লঘুদের

সাময়িক স্বস্তি ফিরে এলে

অমায়িক গুরুদের হবে অপমান !

ভূমিপুত্রদের তাড়িয়ে দিতেই একদিন

গর্জে ওঠে নতুন কামান ।


৪.

তবু তুমি দেখছো স্বপন


সবুজ রঙের !

না, কোনো সঙ্ঘের দিকে চেয়ে লাভ নেই

সঙ্ঘরা কতো যে ঢঙের !

কতো ঢঙে অঙ্গ নাচে; নেচে-গেয়ে সারা

অঙ্গেরই রঙ্গমঞ্চে দ্বন্দ্বে দিশেহারা !


৫.

জানি, এরপরও ভুলতে চাও না তুমি নতুন দিনকথা

কবিতা-গানের ভেতর গুঁজে দাও স্বপ্নের নবীন বারতা।


গণ-আন্দোলনের জুতোর ভেতর আরামপ্রদ সুখতালুর মতন

নতুন কোনো গল্প রাখছো লিখে। মানব-বন্ধন

মিছিল শেষে দৈনিক গাছের পাতায়

তুমি এক সম্মানিত স্তম্ভকার ! মনের খাতায়

এঁকে যাচ্ছো সুদিনের ছবি।

তবু তুমি পারবে না, কবি !


৬.

পারবে না।

ক্যানোনা,

মানুষের ইতিহাস

বর্বরতারই বিজয়ের দাস !


বর্বরতার পক্ষেই সাক্ষ্য দ্যায় চিরদিন !

সভ্যতার ঋণ,

বর্বরতাকেই বার বার ডেকেছে হাতছানিতে।

যে যতো রক্ত ঝরাতে পেরেছে ধরণিতে,

শিশুহত্যায় যার যতো বেশি রঙিন হয়েছে হাত,

স্বার্থের প্রাসাদে যার যতো বেশি হয়েছে আঁতাঁত,

পরনারীসম্ভোগে দক্ষতার ভাঁড় পূর্ণ হয়েছে যার,

পরধন লুঠে যারা ভরেছে ভাঁড়ার,

যতো বেশি বিষ যারা ছুঁড়েছে বাতাসে,

যাদের অস্ত্রের কারিশমা এই ধরণিআকাশে

যতোটা উজ্জ্বল; জ্যোতির্ময়;

তাদেরই হয়েছে বিজয় !

বীরের পূজায়

তাদের জন্যেই, ধরিত্রী অর্ঘ্য সাজায় !

নতশিরে করে যে প্রণাম,

ইতিহাস লিখে চলে নাম

তাদেরই; পুনঃ পুনর্বার

আশা তবু করো যে আবার !


৭.

সেল্টিক, মাউরি, এ্যাযটেক...

সভ্যতা ? না কি বর্বরতার এক-একটি অতুল দলিল !


কেবল চেঙ্গিস খান নয়;

আরো কতো খান-পাঠানেরা বইয়েছে রক্তের সাগর সলিল !

সুসন্তানের আবির্ভাব কতো ধীর !

কুসন্তানের অভাব

কখনও হয়নি পৃথিবীর !


৮.

ভূমিপুত্ররাই আখ্যায়িত অসভ্য !

রাক্ষস-খোক্কস কিংবা দৈত্য-দানব,

চেহারার মতো তাদের সভ্যতাও কুৎসিত, কালো

বহিরাগতরাই একদিন

সভ্যরূপে এসে

জ্বালিয়েছে আলো...

এই তো পড়েছি ইতিহাসে !

চোখে ভাসে !

আপন জাতিসত্তার নয়,

অপর জাতিরই বিজয় ইতিহাস !

কী পরিহাস !

সভ্যতার উদয়ের নামে যারা

ডুবিয়েছে হরপ্পার চাঁদ;

ডাইনি নিধনের নামে

অগণিত নারীহত্যার বিনিময়ে

জননী সভ্যতা ধ্বংসে যারা পেতেছিল ফাঁদ;


তারাই তো বিশ্বজয়ী আজ !


দস্যু বলি, অথবা পশুই যদি বলি;

হত্যাকারীরা তো মানুষই।


মানুষকে মাছের মতন যারা মেরেছিল জালে,

তাদের চাইতে ভয়ঙ্কর জানোয়ার,

মর্তের মানচিত্রে ছিল না কখনও

হয়তো থাকবেও না কোনো কালে।


কতো-বা আর বলবো, বলো ?

সব কথা কি বলা মানায় !

সকল সত্য বলতে গেলে

সঙ্গোপন মরণ শানায় !


৯.

ওগো,

আশাবাদী দ্বিপদসকল !

আশরফি বিবেকের দল !

সামনেই তুমি অনেক গিয়েছ হেঁটে,

একবার পিছনে তাকাও ;

প্রাচীনের দিকে

পুরাণের দিকে


প্রথাবাঁধা ধর্মদের প্রসারের দিকে

মানবিক প্রশ্ন ছুঁড়ে দাও।


চেয়ে দ্যাখো,

যতটা সত্য, তার চেয়ে বেশি ছলনা

যতটা কল্যাণ, তারও চেয়ে কামনা,

আলোর মোড়কে ঢাকা অরূপ আঁধার,

প্রকৃত মনুষত্ববোধের প্রবল বাধার

করুণ সে গাথা,

মাথা

নত হয়ে আসে লাজে,

হৃদয়ের ভাঁজে

অরূপ সত্যেরা কাঁদে-হাসে,

চোখে ভাসে

শঠতার সুলভ ভুবন,

ভূমিকম্পাহত অট্টালিকার ধরনে

ধ্বসে পড়ে মানবিক মন।


১০.

তবু যে যুদ্ধ থামাবে,

বুদ্ধ হয়ে উঠবে ক’জন ?

সুজন না হলে দুজনেই রক্ত ঝরে,

তুমি একটা পাতায় খুঁজছো ন’জন !


ভুলে যাও পচানো সে বাত্ধসঢ়; ,

তোমার প্রভাত

হতাশার রঙে ঢাকা প্রতারিত ঠাঁই,

মনে রেখো,

মানুষের চেয়ে অধম, পামর

পৃথিবীতে নাই !


জেনে রেখো,

যতদিন পৃথিবীতে প্রথাগত ধর্ম আছে,

ধর্মের কলের তলে ভেকধারী জল আছে,

আত্মধর্ম মাথায় নিয়ে

পরধর্মকে পায়ে পেষার মন্ত্র আছে,

শিয়া-সুন্নি আর বামন-চণ্ডাল আছে,

ধর্মী-বিধর্মী আছে;

রাম-রহিম আর হার্বাটে-সোলেমানে

মিলনের বাধা আছে ;

জিহাদ-জায়নবাদ আছে,

জান্নাতের মোহ আর নরকের ত্রাস আছে;

যতদিন ক্ষমতার প্রাসাদের নিচে

জনতার খুন আছে,

দুর্নীতির বার্মুডায় সব নীতি মরে-বাঁচে,

সাম্রাজ্যবাদী দানব আর

যুদ্ধবাজ দেবতার পূজা আছে,


রাজাদের কাঁটাতারে

প্রজাদের প্রাণ নাচে;

ততদিন...

ততদিন ধরণিতে চলবেই

স্বার্থের সিঁদেল ক্রুসেড !

জ্বলবেই

অন্তহীন আগুনের গিরি !

মানুষের সিঁড়ি

সত্যের শিখরে হাঁটবে না

মানবসাগরে জাগবে না

শান্তির সুমধুর জল,

ততদিন

আমাদের

দূরভিসন্ধিতে ভরা সন্ধিচুক্তিগুলো

দলিলেই শুকোবে অমল।





সুলতান


গাঁয়ের টি-স্টলে এখন আমি বসে আছি

সন্ধ্যায়

যেমন অন্যান্য দিন বসি


শান্ত বনভূমি আর কোকিলের অপমৃত্যু কাগজে লিখে যেখানটায় বসে আছি

তার উল্টো দিকে বসে আছে এক বুড়ো

চোখ বড় বড়

মাথা থেকে ঘাড় বেয়ে নেমে আসা লম্বা খোলা চুল


বুড়োটাকে এই প্রথম আমি দেখছি হ্যা আগে কখনও দেখেছি বলে তো

মনে পড়ছে না

নিশ্চয় এই এলাকার না 

না কি দস্তয়েভস্কির পরিচিত কেউ


ঘন্টা দেড়েক ধরে ওকে দেখছি আর ওর টেবিলে চায়ের কাপ

চা

ঠান্ডা হতে হতে

এতক্ষণে নিশ্চয় জল হয়ে গেছে


লোকটা বোধ হয় বার দুয়েকের মতো চায়ের কাপে মুখ ঠেকিয়েছে

চা কি তেতো

বিশু কাকা কি চায়ে চিনি দিতে ভুলে গেছে


যা হোক লম্বামতো বুড়োটা আমাকে দেখছে

যখন ওর চোখে ধানক্ষেতের ঢেউ আর হেমন্তের আকাশ ভেসে চলেছে

হ্যা আমাকেই দেখছে

কয়েকবার সতর্কতার সাথে ও আমার দিকে তাকিয়েছে

আমি দেখেছি

কেন

আমি তো কখন চা-টা শেষ করেছি

এই চায়ের দোকান এই সামনের রাস্তা এই দু'পাশের বসতবাড়ি

অবলীলায় মুছে ফেলে

আর মোড়ের ঐ বাড়িটাকে তো তিন দিন দেখিনি আমি

কোথায় গেছিলো ও

কোন পাহাড়ে

ঐ মিষ্টি বিনম্র বাড়িটা

আচ্ছা ঐ একা লোকটা খ্যাপাটে পেইন্টার সুলতান না তো

যার ছবিতে স্বাস্থ্যবান চাষী আর জেলেদের অফুরান প্রাণপ্রাচুর্য

আর সুডোল দেহের সুন্দরী মেয়েদের নির্জন হ্রদ

আর কর্মচাঞ্চল্য 

ঐ মেয়েরা বাড়িতে মাছ কোটে ঢেঁকিতে পাড় দেয় পুকুরে শাপলা তোলেে

হ্যা ও তো সুলতান

আমাদের লাল মিয়া

ও তো আমার শেষ করা চায়ের ধোঁয়াগুলোকে

আবার ধরে এনে

টেবিলের ওপর ছেড়ে দেবে

আর সেটা তো আমার জন্য ভারি অস্বস্তিকর হবে

আর বিপজ্জনক





প্রার্থনা তোমার জন্য


দায়িত্বের অবসান ঘটুক

অবসান ঘটুক নিয়মের

কষ্টের সিঁড়ি বেয়ে কাছে আসুক

আদুরে সকাল।

তোমার হৃদয় গহীনে যে গোলাপিমুখ

বার বার মনে পড়ে

যাকে হৃদয় তৃষ্ণায় পান করো-

ফিরে আসুক হৃদয় আধিপত্যে

রাজত্ব করুক রাজসভায়।

যাকে আঙ্গুলে আংটি করে রাখো মমতায়

সে সময়ের পেন্ডুলাম হয়ে সার্বক্ষণিক

সঙ্গী হোক হাতের কব্জিতে-

তোমার ফিনিক্স পাখি হবার সাধ পূর্ণ হোক

গোপন প্রেমিকার অভিসারে-

রূপান্তর ঘটুক যান্ত্রিক জীবনের।

তোমার গোপন প্রিয়সির উঠোনে

ঝরে পড়ুক প্রেম প্রেম বৃষ্টি-

সেই বৃষ্টিতে ভিজে পরিশুদ্ধ হও

অবসান হোক সকল পাপের।





ভালোবাসার চিহ্নরেখা


ঘুম ভেঙেই শুনলাম দূর্ঘটনার গল্প

নুপুর ছিঁড়ে টুকরো করছে অবিরাম। 

ভালোবাসার চিহ্নরেখা

 মুচে দেবে, 

ভাসিয়ে দিবে প্রেমপত্র। 

যে পত্রে অর্থকষ্টে লিখেছিল

গভীরতম প্রেমের ধারাপাত। 


মাস খনেক আগে সংবাদ পেলাম

নতুন অতিথি হলো দূরের আকাশ

প্রেম রোগে আক্রান্ত হয়ে 

ভুল গেল মধুর স্মৃতি!


আহত প্রেমিক নেত্রবারি তে ডুবে যাচ্ছে 

করতলে সরে যাচ্ছে ক্রমাগত বটবৃক্ষের ছায়া! 

যে যায় ভেঙে যায়, চিহ্ন রেখা মুুচে দিয়ে

ভালোই থেকো দূরের আকাশ চন্দ্রাবতী তারা নিয়ে। 





পাড় ভাঙ্গা ঢেউ


আগের মত পাড় ভাঙ্গা ঢেউ আর 

জাগেনা মাসীমা, 

নেই সেই ছলাৎ ছলাৎ মন,

শ্যাম গতরে শ্যামের বাঁশির 

সুর বাজেনা আর

অনাদরে খুলে গেছে বিনুনির বুনন।


 চোখের কোনায় প্রেম জাগেনা আর

আগুন জলে শুধু,

মনটাযে চায় পুড়িয়ে দেই 

সব করে দেই ধু ধু।


দেহের বাঁকে ঢেউ ওঠেনা আর

ছন্দ হলো সারা,

তিরিশ বছর আগের আমি

শুধুই পাগলপারা...!





মায়া


সময়ের আবর্তে হারায় উম্মাদনা, দ্রোুহ, যৌবন

কমনীয় অবয়ব, প্রেমময় বোধ

পিছনে পড়ে থাকে শুধুই মায়া,

এক জীবনের যত অপারগতা

ঠাঁই পায় বুকের ভিতর

হৃদয় বলে কিছু কি আছে?

সবই অনুভূতির ছায়া, 

দূরে গেলে বুঝা যায়

পাশে থাকা মানুষের কদর

একাকীত্ব, হতাশার ভীড় 

শুন্যতার মিছিল চলে,

বস্তুত সবকিছু মায়া থেকেই

বেঁচে থাকায় যারা আসে,

প্রয়োজনে, সৃষ্টিধারা বহমানে

আগামীর দোলাচালে ।





পাটকল


আব্বায় তহন নামাজে দাঁড়ানো, তাকবির দিছে মাত্র।

পুলিশ আইসা কয়, জলিল কই? কই আছে শুয়ারের বাচ্চা?

আমার হাতে এক মুঠ কাঁচের গুলি, হাতে গুলেন্টি থাকলে মাইরা দিতাম।

তা'গো হাতে বন্দুক।

তকবির শ্যাষ কইরা, নিয়ত বাধছে আব্বায়।

নাওয়াইতুয়ান উছাল্লিয়া-লিল্লাহি তালা ছালাছা রাকাতাই সালাতিল মাগরিব ফারজুল্লাহি তালা মুতাজ্জিহান-ইলাজ্জিহাতিল কা-বাতিশ শরিফাতি আল্লাহু আকবার।

পিছন থেইক্যা খপ কইরা ধরলো দুইজন পুলিশ। আর দুইজন বন্দুক উচায়া কয়, শুয়োরের বাচ্চা, নেতাগিরি মারাও! একজন লাত্তি দিলো মাজায়। আব্বা রুকুর মতো কইরা অর্ধেক ভাইঙ্গা পরলো, আমি তাকায়া দেখলাম। আন্ধারে আব্বায় যেন, খোদার জমের সাথে খিচ দিয়া উঠলো, ছাড়েন, নামাজটা পরতে দেন।

নামাজ তোর পুটকি দিয়া দিমু, থানায় চল আগে। হিচকা টাকে কুরবানির খাসির কইলজ্যার মতো টান দিয়া বাইর কইরা নিয়া গেলো আব্বারে। আমি যেন টের পাইলাম না কিছু, যখন টের পাইলাম তখন আমার হাত থেইক্যা কাঁচের গুলি পইড়া ছরায়া গেছে... সন্ধ্যার আন্ধারে খুইজা পাইলাম না একটাও।

মায়, চিৎকার দিয়া পইরা আছে বারান্দায়। পাশের বাড়ির মতবর আইলো খানিক পর, আগেই কইছিলাম জইল্লা'রে, পাটকল গেলে তোর কি? কামলা আছিলি, পাটকল গেলে আমার ইটভাটা তো আছিলো! কি বড় নেতা আমার! কথা কানে গেলো না, এহন পইচা মর গা জেলে!

পাটকল, পাটকল, পাটকল, আমি কি আর এতো বুঝি! মারে জিগাইলাম, মা পাটকল কি?

মায় কয়, আমাগো ক্ষ্যাতের পাট দিয়া আমাগো জইন্য ফাঁসির দড়ি বানায় যেই কল, হেইডা অইলো পাটকল।





ঘুঘুরা জানে না 


ঘুঘুদের ঘরের ভেতরে সুখের বসন্ত

                                    জেগে থাকে,

এ বছর, সে বছর যায়-

বসন্ত দিব্যি সেঁটে থাকে

ঘুঘুদের ঘরের ভেতরে।

জাহাজের মতো ঘর, ট্রেনের মতন ঘর

উৎসবে উৎসবে থেকে যায় সবদিন।


ঘর থেকে কখনও কখনও 

কেউ কেউ বেরিয়ে আসে এদিক-ওদিক,

যেখানে যেখানে ফাঁদ কিংবা

ফাঁদের মতন কিছু পাতা 

সেইসব তুলে, নষ্ট করে দেয়।


মায়া-ফাঁদ ঘুঘুদের থেকেও ভীষণ,

মানুষ তা জানে, ঘুঘুরা জানে না।





তবুও তুমি আছো 


একলা আমি ভীষণ একা তিমির ঘন রাত

ভাবতে ভাবতে অস্থির আমি হয় না কেন্ প্রাত?

যখন ওঠে মনের ঘরে বিরহ্ তুফান ঝড়

দু-গাল বেয়ে অশ্রু নামে কেমনে করলে পর?


তোমার জায়গা বুকের ভেতর জনম জনম যেন রয়

প্রার্থনাতে কাঁদি আমি তোমার যেন্ হয় জয়।

ডানে-বামে বালিশ খালি বিছান ফাঁকা লাগে আর

শূন্য জীবন তুমি ছাড়া বইছি বেদনার ভার!


তৃষ্ণা বুকে নদীর কূলে যায় না তৃষ্ণা ওই জল

তুমি পাশে থাকলে আমার বাড়ে কেবল মনোবল। 

ছাইড়া তুমি যাইও না কো আমার ওপর দিয়ে দোষ

আমি তোমার-তোমারই আছি ফিরাও মনের হুঁশ। 





নীলাত্রিকে চুম্বনের পরে আমার আর কিছুই থাকে না


তোমাকে চুম্বনের পরে আমার আর কিছুই থাকে না।

বিকালটা হলুদ হয়ে যায়

সন্ধ্যাটায় রাত,

মধ্যরাতটা ভোর।

সবুজ পাতাটায় প্রজাপতি উড়ে।

চুম্বনের পরে নীল আকাশে ঘুড়ি, সুতা কেটে উড়ে।

গোধূলী বেলায় ধুলো উড়ে।

তোমাকে চুম্বনের পরে কালো ঠোঁটে দাগ উড়ে,

ঘুম হারিয়ে যায়

সকাল হারিয়ে যায়

চায়ের নেশা হারিয়ে যায়

প্রেমিকারা হারিয়ে যায়।

সমুদ্রে ঢেউ উঠে

বৃক্ষরা জেগে উঠে

দোয়েল শিস দিয়ে উঠে।

তোমাকেই চুম্বনের পরে মৃত করতোয়ায় জল উঠে

তোমাকে চুম্বনের পরে সমাধান হয় নীল ঢেউয়ের

তোমাকে চুম্বনের পরে সমাধান হয় মহাস্থান গড়ের

তোমাকে চুম্বনের পরে সমাধান হয় বেহুলার সংসারের

সমাধান হয় কালিদহ সাগরের।

নাীলাত্রি, সত্যি বলতে, তোমাকে চুম্বনের পরে

আমার আর কিছুই থাকে না।

না থাকে ভোরের আলো

না থাকে সন্ধ্যার আভা

দিনদিন হৃদয় ঘরের

জটিল অধ্যায় পেরিয়ে

শুভংকরের ফাঁকি নিয়ে

তোমার অপেক্ষায় আছি।





আমাদের বহির্মহল


বেঁচে আছি, স্মৃতি আর স্বপ্ন-জড়ানো সামিয়ানার ছায়ায়

তবুও অসংখ্য উপদ্রুত স্বপ্নের ভিতর দিয়ে একঝাঁক

বুনোহাঁস উড়ে যায়- ‘সতত ডানার মানুষ’ হয়ে বারবার

আমাদের কেজো দিনগুলো বেশুমার ছুটছে আর ছুটছে

কতসব ব্যর্থ চিৎকারের নিচে চাপা পড়ে থাকে- হৃদিতল

আমাদের শরীরের দোকান খুলে বসে থাকার অহর্নিশ

বারবার চাঁদমুখী রাতের অপেক্ষায় ঘোর লাগা জোছনায়

ধোঁয়াশার মাঠ থেকে ছুটে যাচ্ছি শহরের ইশারার মতো

এইসব আত্মতাড়িত প্রেম ছাপিয়ে যেতে যেতে, ক্ষয় নিয়ে

ঢুকে পড়ছি জিরাফ-জিজ্ঞাসায়, অথচ চোখের কোণজুড়ে

না-ঘুমানো ঘুম লেগে থাকে, মনের প্রান্তরে ভিড় বাড়ছে,

যেন ডুবে আছি মানুষের কুয়াশায়, অন্তর্দাহে এক বহির্মহল

নির্মাণে-ভাসানে, কেবলই বহুল বীজ ছড়িয়ে-রুইয়ে দিই

তাড়িত আত্মনিনাদ, বিস্মরণের কাছে বাঁচতে শিখি অনুদিন

এ-পিচ্ছিল সময়ে ক্ষয়িত হাড়ের কাছে ক্যাকটাস ফুল ফোঁটে,

বেদনারা ফোঁড়ার মতো বিষকাঁটার পাশে হাসে প্রতিভাসে...





জারজ নক্ষত্রের অশ্বারোহী ও স্নানঘরের যৌন সাপের ২য় কবর


অবিনশ্বর ট্রিপল টু এক্স দৈর্ঘ্যের ভিটামিন এ মার্কা কাচের গ্লাসে প্যানথারা বরফের কুচি পড়ে আছে  , কাপালিকের মতো একটা ধ্বংসস্তূপ ও পুংকেশরের থেকেও আরো ধাতব দুইজন রেতঃ বীজ সমর্পণকারী ঋষি নীলাভ অযোগবাহের লোহিত কণিকার রক্তস্রাব নিয়ে তৃতীয় শব ব্যবচ্ছেদ কারীদের প্যারাথাইরয়েডের ডোপামিন খাচ্ছে রাতের ভেতরে ডুবে থাকা লাল রক্তের মতো টকটকে রজনীগন্ধার শেকড় থেকে ,

একাকী শিব দ্বাদশ আদিত্য একাদশ রুদ্র অষ্টবসু অশ্বিনী কুমারদ্বয় মন্থন বৃষ্টির কাছে শৈলোৎক্ষেপ ভঙ্গিমায় শুয়ে আছে অ্যাবস্ট্রাক্ট উটের মতো বারুদের গাছ মুখে নিয়ে , সবাই নীলনদের মদ খেতে চাইছে একটা ন্যাংটো সাইকোটিক শরীর থেকে নষ্ট সর্পগন্ধার শিকড় টেনে হিঁচড়ে বের করার পর

আমার মাদকাসক্ত শরীরে ২৪ পূর্ণ একের তিন সাবানের ফেনা বিষের মতো গ্যাঁজলে উঠে বলে আমি স্নানরতা ধমনীর পাশে যাই ব্লাউজের হুক খুলে মানচিত্রের ধ্রুবতারা আবিষ্কার নেশায়  , পায়ে লেগে থাকে শ্মশানের ধুম্র ও উৎকৃষ্ট রেচনের দাগ

মৃত মানুষের ডান হাত আসলে পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র ধূসর পবিত্র ও সাত্ত্বিক উপাদান

আমি থাইল্যান্ড তক্ষকের থেকেও আরো ভিজে সফটওয়্যার বিদ্যুৎ রেখার নিচে আমার নিজের পূর্বপুরুষের উলঙ্গ ছবি আঁকছি চর্ম বিজ্ঞানের নিষিদ্ধ চারকোল দিয়ে , আমার পিতারা আমাকেই ছায়া ভেবে বিক্রি করে , আমি তাদের লিঙ্গ ধরে টানি পৃথিবীর বুকে ঝুলিয়ে আত্মহত্যায় উদ্রেগকারী এক একটা ছাগলের অণ্ডকোষ থেকে মহা পৃথিবীর অতি ধৈবত ক্ষত্রিয় অসুখ কিনে মৃত্যুর যোনির স্ত্রী নারীগুলোকে শুয়ে রেখেছি নিজের বিছানায় , প্রতিটি অশ্বারোহীদের আলাদা আলাদা অন্তর্বাসের নিজস্ব লাশটি কৌটো থাকে বলে রাত আড়াইটার সব আত্মারা পারলৌকিক জননাঙ্গের চারপাশে ছত্রাকের কসমিক বীজ রোপন করে যায় , কাগজের তৈরি জাহান্নাম থেকে পুরুষ লিঙ্গ কিসমিস কিনে বেশ্যালয়ে যাই পাতলা কাঁচে গলা দুটো কেটে ফেলি, রক্ত পরীক্ষা করি , থুথু পরীক্ষা করি , শুক্র পরীক্ষা করি , মূত্র যন্ত্রের গন্ধ পরীক্ষা করি

মৃত্যুর কোন আবৃত দশমিক নেই বলে আমার পাজামার ভেতরে উদ্ধৃতিপূর্ণ বিবৃতি মূলক রাশিচক্রের মাথায় একটি হত্যাকারীর আদিদৈবিক শিবালিক মরুভূমিতে হলুদ সাপেরা গর্ভাশয় ফেলে দিয়ে অবৈধ গর্ভসঞ্চার ঘটিয়ে লাল ভ্যানিলা ফ্লেভারের চকলেট খাচ্ছে সঙ্গমের তিরিশ মিনিট পূর্বে

দীক্ষিত তুলসী গর্ভে থাকা চটচটে শিরিন পদার্থের শুক্র-বীজটি শুকনো হতে হতে শালগ্রামের মানব বিন্দুটি সূর্যালোকের চতুর্থ নেত্র মন্ডল নিয়ে বক্সাইট কারখানায় আগুন কুপিয়ে মাংসের মতো বিনীতা নদী আবিষ্কার করল , শঙ্খচুড় মাঝে মাঝে হাসেন আর ছদ্মবেশে সঙ্গম দৃশ্য দেখেন




দুপুরের রোদের মতো


কে তুমি আমাকে ডাক নির্জন বটছায়ায়?

কে তুমি

নিশীথে সাইরেন বাজাও আমার হৃদয়ে?

এর তানে

মনের অলিগলি হয়ে ওঠে গোলাপের মাঠ

কে তুমি আমার আত্মদহনের ঔষধিপাত্র হও?

আমার দীর্ঘশ্বাস কেড়ে নাও

আমার দীর্ঘশ্বাস হয়ে ওঠে সুরধ্বনি ঘাট

কে তুমি হও আমার বিষণ্নতার শেষ আশ্রয়?

কে তুমি?

তুমি যে-ই হও

আর দূরে থেকো না---

নীরবতা ভেঙে এবার হাত দুটো বাড়াও

দুপুরের রোদের মতো

                   হয়ে ওঠো বেহেশতের নাও।





জরাগ্রস্ত গোলাপের মুখ


জরাগ্রস্ত গোলাপের মুখ বিম্বিত চৌদিকে

নদী চলে গেছে। পেছনে খোলস পড়ে আছ

সত্যের মতোন


যথেষ্ট সন্দেহ নিয়ে সত্য বিকলাঙ্গ

নিপাতনে সিদ্ধ মর্গে পড়ে আছি পঞ্চাশ বছর

চতুর্দিকে চাষ হচ্ছে কফিনের


ষড়যন্ত্রের ছয়টি যন্ত্রকে খোঁজতে গিয়ে

হারিয়েছে বিবিধ গোয়েন্দা সংস্থা আর

প্রত্নতাত্ত্বিকের দল


সুন্দরের পায়ে জীবন সুন্দর

সমর্পণে অকাট্য জেনেছি

ইশকের ময়দানে তবু ঘোর দেখা না দেখার


কতিপয় গুড়েবালির ভেতরে

এতোসব চোখের বালির সাথে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে

আঙ্গুল ফুলে কলাগাছের সমৃদ্ধ বাগান





দ্য লৌন এক্সপ্রেস


ধরো এইরকম

কইতে চাইতেছি তোমারে কথা


আকাশে বেদনার লু

চান্দের গায়ে বাড়ি খাইতেছে

দীর্ঘশ্বাসের দমক


ফালি ফালি কাটা পড়া জোসনারা

তড়পাইতেছে আসমানে

টুকরো টুকরো তাহারা ঝরে পড়তেছে

পথে

প্রান্তরে

বাদাবনে

একাকী ছাদে

বৃষ্টিতে

চিলেকোঠায়


এখন

এইখানে

এই ইস্টিশানে


যেখানে এখন ফাঁকা

শূন্যতার মতো দাঁড়ি টাইনা ছুটতেছে শেষ ট্রেন


ঝমঝম ঝমঝম…

ট্রেন; তুমি কার বুকে বাজতেছো হাহাকার?


ঘনায়মান ঘূর্ণিতে কেবলই থরথর

কাঁপতেছে মাটি

যেন বা হৃদয়


বাজায়ে সুতীব্র হুইসেল

শালবনের ভিতর দিয়া ওইদিকে যাইও না

এই ঘনঘোর আন্ধারে


ওদিকে এখন কোন ইস্টিশান নাই।


মহীনের ঘোড়াগুলি ঢুকে গেছে আরব্য রজনীর পাতায়

পৃথিবীর সব গল্প পুরে নিয়ে ঝোলায় হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা ওই চলে যায়!

বাঁশি তার বাজেনি এবার

তবু সুরের মুর্চ্ছনায় হারিয়েছে তার পিছু পিছু


ট্রেন;

কান্না করুণ ট্রেন

তুমি এখন থামবা কোথায়?





সম্পাদ্য


এখনও আঁধারের শরীর ছুঁয়ে মানুষ আঁধারেই ডুবে যেতে চায়।

যে মানুষ হৃদয়ের মাঝে তুলে রাখে আলোর দেহখানি-

সে কিনা অনিবার্যভাবেই আঁধারকে বুকের ভেতরে

কাছে ডেকে নেয়। যেমন পুষে রাখে মা তার সন্তানের মুখ,

তেমনই হাতড়ে চলে সংসারে একাকী জ্যামিতিক চিত্ররেখায়।

দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে আঁধারের সিঁড়িতে-

যে সিঁড়ি খইফোটা মুখের চিবানিতে পড়ে থাকে শোকের অক্ষরে।

অতি দ্রুত রংধনু রঙে ভেসে ওঠে প্রিয়ার খোঁপায়।

আলো আর আঁধারের গোপন চুক্তির অনন্ত চলার পথে-

ভাসিয়েছে মানুষ নৌকোয়, সংসারের অলিখিত বিধি আর বিধান।

তবু কিনা মানুষ, মনের ভেতরে পুষে রাখে আলোর আসর,

আর মনে মনে ভাবে, ভুল যেন ফুল হয়ে ফুটে ওঠে হৃদয় কোণায়।





বিয়ে বাড়ির গোলাপ


বিয়ে বাড়ি পার হওয়া এমন কিছু নয়।


লুব্ধ গেটের সামনে ফুটে আছে 

স্টাইলিশ তিনটি গোলাপ


বরপক্ষের এক যুবক 

এঁকে দিচ্ছে গোলাপের পোর্ট্রেট !


আমি কোনো পক্ষের নই 

আমার শুধু পার হয়ে যাওয়া


বিয়ে বাড়ি পার হওয়া এমন কিছু নয়

 

হাজার গোলাপের দিকে

আমার সাইকেল

ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে !





মিলিয়নেয়ারস স্পেশাল


করুণ বিউগলের সুরে কান্নার অপ্রাপ্তির জলসংবেদ জলটুঙ্গীর জলজাহাজ। মিলিয়নেয়ারস স্পেশাল বরফের শ্বেত শুভ্র জমিনে হয় পরাজিত। গভীর জলরাশি বিষাদের কিংবা কান্নার সহোদর !

 জন জ্যাকব অস্তর  শেষ  বিদায়ের গোধূলি প্রহরের  পাদটীকায়  ম্যাডেলিন ডিঙ্গি নৌকায় দেখে মৃত্যু এসে চুম্বন করে ভিজতে থাকে চোখগুলো বেদনার নীল সংগমে। হে আটলান্টিক ! তোমার পেটের ভেতর ধ্বংস হতে থাকে মিলিয়নেয়ার  স্পেশাল , জন জ্যাকব অস্তর ডুবতে ডুবতে ভাসার শেষ দৃশ্যের চিত্রনায়ক । আনসেন্সরড কিংবা আলবাট্রস পাখির গীত সন্ধ্যায়  ম্যাডেলিন অনন্ত প্রহরে লবনাক্ত চোখের জলে ভিজে তোমার চিদাকাশ ।





বিপ্রতীপ


খরাপ্রবণ হয়ে

যাপন করি বর্ষা

ক্রন্দনধ্বণি অথবা

ডাহুকের সিম্ফনি

নদীর কলতান

জল ছলছল

গোধূলিবেলার গান

করুণ বিউগল

কাটে সন্ধ্যা

গানের ঝরনাতলায়

চঞ্চলমতিরাত

ভীরু সন্তাপ

খোপায় জ্যোৎস্নার ফুল

আমার মরবিড মন

কোন সে লিরিক্যাল বিউটি

খুঁজে ফেরে

ইরাবতীর শহরে।





বিশ্ববিদ্যালয় -দুই 


আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয় পড়তাম, তখন গ্রামসুদ্ধ 

মানুষ স্বপ্ন দেখতো। 

এখন তোমরা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ো, গোটা দেশ দু:স্বপ্ন 

দেখে-


একটা দল কিভাবে ঘাড়ের উপ্রে বসে আলুপোড়া 

খেয়ে যাচ্ছে।





নারী


এক.

তোমার বৃস্টিভেজা শরীর

পরাজিত করে সকল সুন্দরকে।

আমি মানুষ বলেই হয়তো

সুন্দরের পুজারী-

তবে পুরুষ হতে চাইনি কখনো।


দুই.

তোমাতে খুঁজবো  তোমায়

কি আছে সাধ্য ?

বুঝতে  চাইনি কখনো

তুমিই  আরাধ্য।


তিন.

তুমি যখন চৈত্রখরা

তুমি যখন চাতক

বৃষ্টি হয়ে আসবো আমি

না হয় বলো ঘাতক।


চার.

তুমি আছ বলে আজও-

জেগে থাকে চাঁদ

তোমার জন্য  ফুলেরাও

কাটায়, নির্ঘুম রাত।


পাঁচ.

তুমি সামনে এলেই আমি

ধ্যানমগ্ন হয়ে যাই।

তোমাকে দেখলেই আমি

তপস্যার জপমালা গুনি।

কি করে বোঝাই তোমায়-

আমি তো আর সন্যাসী নই।।





ভুল অংক 


গাছের গায়ে গাছ, পাশে ও প্রদক্ষিণে 

ছেঁড়া মেঘের মতো সামান্য আলোয়

দীর্ঘ বৃক্ষ শরীরের ফুটনোটে 

জৈব সূত্র মেনে যাবতীয় 

মিশে যাচ্ছে প্রাণে অপ্রাণে 

অসংখ্য বছরের সঞ্চয় সংকলন 

তবু গ্রহণ আসে 

সিঁড়ি ভাঙা অংকে প্রলয় পার্বণ






বোধি


একটি প্রমিত মুখের খোঁজে

অমর্ত্য থেকে মর্ত্যে নেমে এসে যাযাবর হই

নদীর স্রোত ধরে যেতে যেতে পৌঁছাই সমুদ্রে

বাতাসের পলকা দেহে ভেসে অদ্রির নিবীতে

অলক মেঘের ভিড়ে রচনা করি পলকের নীড়।


একটি কাঙ্ধিসঢ়;ক্ষত মুখের ছবি মেলাতে মেলাতে

উর্বশী-অপ্সরাদের বাহুলতা কেটে

অমরাবতী হতে পতিত হই পললের সবুজ চত্বরে

প্রজাপতির ডানা ধরে কদমে কদম মিলিয়ে

চলে যাই ফুলের পাপড়িঘন বর্ণমেলায়।


একটি অচঞ্চল মুখের প্রশান্তি পেতে

হাত পেতে ধরে রাখি শ্রাবণের বৃষ্টি কিংবা

হেমন্তের পাকাধানের স্নানের শিশির

অজন্তার গুহাচিত্রে ফুটে ওঠা বিচিত্র মুদ্রা হতে

চলে যাই কুমারের মৃত্তিকামাখা প্রতিমাগৃহে।


একটি প্রমিত প্রণয়ের খোঁজে

ভিঞ্চিকে বলে-কয়ে মোনালিসাকে আড়চোখে দেখি

যামিনী রায়ের গোপীদের নৃত্যে বিহ্ধসঢ়;বল হই

একটি প্রমিত মুখের সন্ধানে ধ্যানের চতুর্থ যামে গিয়ে

খুঁজে পাই হরিৎ ও হরষিত কবিতার অবয়ব।





মুনশি বাড়ীর ছেলে


নবান্ন মৌসুমে আমাদের পাড়ার পুরুষেরা ধান কাটায় ব্যস্ত

মহিলারা ব্যস্ত পরিপাটি রোদে ধান শুকোতে আর ডোল পুরতে 

আমার জন্ম সেই সময়ে ছায়া যখন ছবির সমান।

হোমিওপ্যাথি পাশ করা রঞ্জিত ডাক্তার তখন

সাইকেল চেপে দূরের পথ মাপছিলেন।


আমি মুনশি বাড়ীর ছেলে- আজান কানে না পৌঁছলে

আমার জন্ম অসমাপ্ত থেকে যায়!

মুনশি বাড়ীর ইজ্জত কোথায় গিয়ে ঠেকে-

সে চিন্তায় রঞ্জিত ডাক্তার কাজটি করে ছিলেন

তখন কেউ বলেনি সে অপবিত্র।

আামার মুনশি বাবাও বলেছিলেন, ওতো মানুষ- আমাদেরই লোক।


আজ সাইরেন বাজাতে বাজাতে

রঞ্জিত ডাক্তারের বাড়ীটা ছাই করে দিলাম

আমাকে দেখে ডাক্তার কান্না খেয়ে বললেন,

বাজান তুইও?


মুনশি বাড়ীর ছেলেটি তখন সাপ হয়ে যায়!

স্মৃতিচরকা ব্যাকুলতায় মার মাথা মাটি স্পর্শ করে

আর রঞ্জিত ডাক্তারের মুখ ছবি হয়ে যায়।





দোসর


আমার বেদনাগুলো দুঃখভারাক্রান্ত আজ

ভীষণ আহত আর বিমর্ষ-দারুণ একা-সঙ্গীসাথীহীন

এতোদিন তুমি ছিলে

তোমার বেদনাগুলো গলাগলি করে ছিলো

যেনো একই গোত্রভূক্ত-সহোদরা-একই পরিবার

তুমি নেই

তোমার বেদনাগুলো নেই

আমার দুঃখগুলো বেদনার্ত, যাতনামলিন

তুমি ছিলে

তোমার দুঃখ ছিলো আমার দুখের সমব্যথী

দুঃখ দুঃখ খেলা নিয়ে-

আমাদের পুড়ন্ত জীবনে ছিলো চন্দনের ঘ্রাণ

আমাদের মন ছিলো ঝরা ফুলে ব্যথিত বাগান

দুঃখ ও বেদনা নিয়ে আমাদের ছিলো কিছু ব্যর্থ উপাদান

আজ তুমি নেই

আমার বেদনাগুলো বিরহী বাউল

আমার দুঃখগুলো ভেঙেছে দু’কূল।





তৃষ্ণা


খুব নিভৃতে তোমাকে বলছি, শোনো-

কারণ একথা সবচে’ মূল্যহীন,

তাবৎ পৃথিবী চক্ষু রাঙাবে জেনে

আমারও নেই আর রঙ্গীনোচ্ছল দিন।

এসে গেছি প্রায় যৌবন-শেষ প্রান্তে

সংসার আজ হয়েছে মেদবহুল

ভালবাসি বলে ঘানির জোয়ালে এঁটে

স্বজনরা পথ ঘেরাচ্ছে বর্তুল।

বাউন্ডুলেপনা কবেই গিয়েছি ভুলে

পুরোপুরি আজ নিপাট ভদ্রলোক

অথচ ভিতরে মরু সাহারার তৃষ্ণা

সঙ্গোপনে তোমাকেই খোঁজে চোখ।

দখিনা বাতাস, চৈত্রের খোলা মাঠ


আকাশে রূপালি দ্বাদশীর চাঁদ জেগে

আমাদের ঘিরে কোটি বসন্ত দোলে

তোমার অধরে হাসির টুক্ধসঢ়;রো লেগে।

অথবা সহসা সচকিত করে দিতে

হঠাৎ উছল হাসির ঝর্ণাধারা

যেন জোয়ারের দুকুল ভাসানো স্রোত

আমার মনের আকাশে আত্মহারা।

সেদিন যা কিছু পাওয়া ছিল সহজেই

চোখের ইশারা খুনসুটি কিবা হাসি-

আজ মনে হয় একান্ত দুর্লভ

স্বপ্নে শোনা চৌরসিয়ার বাঁশি।

মাঝে মাঝে বুকে জাগে এক হাহাকার

কোথা আজ তুমি! কাছে এসো প্রিয়তম

বিরহ-দহনে অন্তর পুড়ে খাঁক

মৃদু হেসে বল- “তুমিই অন্তরতম।”





ছন্নছাড়া


আমার বাড়ি তিনতল থেকে চারতল হলে

আমার কিচ্ছু যায় আসে না

আমার ব্যক্তিগত শুন্যতার অগ্নিদগ্ধ জীবনকে 

তোমাদের সমস্ত কৃত্রিম সামাজিকতায় নির্বাসন দিলে

আমার কিছুই যায় আসে না

আমার চারিত্রিক গোপনীয়তা প্রকাশ হলে

এতটুকুও ভ্রূক্ষেপ হয় না আমার

একাকীত্বর বড় কঠোর জীবনের পরম নিঃসঙ্গতা সর্বক্ষণ আমায় সঙ্গ দেয়


আমি তো খুশির ঘরে অঘোরএ

নিথর মাথা গুঁজে পড়ে থাকি

নির্জন নিস্তব্ধ ভাবনার মহাকাশে

কখনও পড়ে থাকি শবসজ্জার রৌজা আঁকড়ে

পড়ে থাকি এক কোণে চায়ের টেবিলে-

আবার কখনো কোরা কাগজের বুকে উপুড় হয়ে 

নিমগ্ন হই অক্ষর প্রবাহের প্রগাঢ়তায় শব্দসম্ভোগে


আমার ভালবাসা, বয়স সন্ধিক্ষণের প্রেম,

আমার আচরণ সমস্যা; কোন বন্ধুত্বের

মৃত্যুর উপত্যকা থেকে হেঁটে যায় না

আমি তো আমারই মতো

আমার প্রকৃত কোন বন্ধু নেই

নেই কোন অনুযোগ, কোনও দুঃখ

মানবিকতা হীন, নৈতিকতা হারা

বিশাল এ জন অরণ্যে


এখানে তো আমি, আমার, আমিত্বর

অহংকারের দুরন্ত গর্ভ জ্বালায় ভুগছে

যত পাপাসক্ত জীব

আমি-আমার করে সর্বক্ষণ ছুটছে মানুষ

সত্তার সম্মানে

আমি তো জেনেছি সার

অখল হৃদয়ের কাঁধে বয়ে বেড়াচ্ছি

মিথ্যে মমতার ভার


কেউই আমার নয়, কারোর ও যে নয় আমি

কিচ্ছুটি নেই আমার

দেহ আর দেহীটাও যে নিজের আমার নয়

এ কেবল হেলাফেলার শৃঙ্গার মত্ততার

অদৃশ্য দৈবসৃষ্টির উপহার


কে তুমি? আমি ই বা কে?


জীবন হাত ধরে নিয়ে এসেছিল

তাই ই এসেছি

মরণ কথা দিয়েছে,

আমাকে নিয়ে যেতে সে অঙ্গীকার বদ্ধ;

মৃত্যুর হাত ধরে একাই চলে যাব।





মা বলে ডাকি একবার


রাঁধতে বসলে

উনুনের পাশঘেঁষে বিড়ালটি ওম নেয়

আর মা'র সাথে কথা কয়; কখনো দুটির মধ্যে

আদর-সোহাগ হয়, অভিমান-খুনসুটি হয়।

আমার জন্যে তুলে রাখা ভাজা মাছখানা

বিড়ালটির মুখে ছুড়ে দিয়ে মা গাল পাড়েন- হতচ্ছাড়া

এবার বাড়ি এসে দ্যাখ!

অনেক দিন বাড়ি যাওয়া হয় না

দূর থেকে হলেও

আজ মা বলে ডাকি একবার!





কৃষ্ণ ছায়া


জানে সব বিগত আর অনাগত আমার শীতকাল। রোদ আসলে স্মৃতিচ্ছন্ন রসিকা প্রিয়ভাজন। পালায় প্রিয়ার মতো। ছায়ার আড়ালে ছড়ায় তার সুতির কোমল আমোদ। পুরোনো বাড়ির ছাদ হতে ভেসে আসেন আখতারি বাঈ। কালো জলে আলো খেলে -গৌর তরঙ্গলতা। বিহ্বল তুমি যমুনার ধারা, আরোগ্যের ঢেউ লয়ে চলো গরজে গৌরবে। তোমার জলে আজ কার স্নানের কথা ছিল, ঐ যেখানে গড়ে উঠেছে আমোদ পর্যটন।

ললিতা ডাকে। হাসিতে ওড়ায় অনন্ত নিয়তি, "সখি আয়, দেখি আমাদের ছায়া জন্মে কত ঘন কৃষ্ণ সে।" কুয়াশার চাদর ছিঁড়ে যায়। বেলা বয় বৃন্দাবনে। ওষ্ঠ তুলো রাধাজন্ম। তোমার পায়ে খেলা করে ছায়াঘন গোঠের রাখাল শিরোমণি।





গুচ্ছ কবিতা

তীব্র তাপদাহে

ক্লান্তিতে

ত্রিভুজ মোহনায়

ঠোঁট পেতে

খুঁজছি আদর

হয়ে বাঁদর! 

বৃষ্টিমুখর সন্ধ্যায়

সুমনা এসেছিল

ঘরে

দুয়ারে জমেছিল

থৈথৈ জল

ঘ্রাণে ঘ্রাণে সেজে

চুম্বনে মেতেছিল

ওরা দুজন!

কান পেতে আছি

চোখে ঘুম নেই

বুকে জমে আছে-

আকাঙ্খা বিস্তর।

চাঁদ ডুবে গেলে

চুপিচুপি ডাক দিও

মহুয়া সারথি! 

দুর্ভিক্ষের ভয়ে

শস্যদানা নিয়ে

মাঠে যাচ্ছি 

কাঁধে কোদাল

শাবল গাঁইতি আর

লাঙ্গলের তীক্ষ্ণ ফলা

চাষ দিয়ে

শস্য ফলাব

দেহের জমিনে!

তখনই বলেছিলাম

যেওনা

ওই বনের পাশে

আম গাছের ডালে

ভীমরুলের বাসা-

আমার কথা না শুনে 

সিঁদুর রঙের আম দেখে

ছুঁড়ে মারলে ঢিল!

এখন বুঝো

আমাকে না জানিয়ে

গোপনেআম খাওয়ার 

মজা!

হা হা হা...

ঘরের চালে একজোড়া চড়ুই 

উঠছে

নামছে...

শহরের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে  ক্যানভাসার ধ্বজভঙ্গ রোগের

অষুধ বিক্রি করছিল

বলছিল, 'যাদেরটা একদম খাড়ায়না,

একডোজেই লোহার মতন শক্ত হবে,

এটা চড়ুইয়ের খান্দানী পুরুষের অষুধ,চ্যালেন্স আপনি হবেন রমণীমোহন!'

চড়ুইয়ের এই কীর্তিদশা দেখে

আমার তো মনে হচ্ছে

যদি আমারও হতো এমন চড়ুই জীবন! কেন যে সেদিন কিনে আনলাম না মাত্র একশ টাকায় এমন মহা অষুধ,আহা!






ভ্রম 


সুবিধাজনক জায়গাটা হারিয়ে যাবার পর

কেউ ভাবেনি এবছর এতবেশী শীত পড়বে,

যে বছর বাবা মারা গেলেন 

এমন হাড়হিম শীত ছিল। 


বছর দুটোর মধ্যে কাকতালীয় মিল—

মহামারীর আগে ঘুমজেগে কুকুর কাঁদে, 

বুদ্ধিমান মানুষ কাঁদে না।

তাদের বিষম লাগে, ভ্রম হয়।

ভ্রম একটা ভয়ংকর বস্তু, সেটা অনেকেই জানে—

যারা জানেনা, তারা তার মধ্যেই থাকে।


সম্মুখ সারির লোকেরা বুঝে না 

কী হবে ভেবে কেন যেন অন্যকিছু হয়।





সহজলভ‍্য সৌন্দর্যের আড়ালে


মুখে লেগে থাকা সহজ সত‍্যি,

যখন খসিয়ে ফেলে পাঁপড়ি,

বেড়িয়ে পড়ে নৃশংস রূপ,

যা সহজলভ্য নয়,কঠোর কঠিন।


ঠোঁটে লেগে থাকা অমায়িক হাসি,

যখন আটকে যায় কন্ঠনালীতে,

হিংস্র আঁচড়ে ফালা ফালা হয়ে,

বুকের পাঁজরে বাসা বাধে মারণ রোগ হয়ে।


গালে লেগে থাকা সুন্দর সরলতা,

যখন আশ্রয় নেয় তিলের ছলনায়,

 সেলাই করা কাপড় থেকে উঠে আসে দীর্ঘশ্বাস,

হাওয়ায় মিলিয়ে যায় নারকীয় অট্টহাসি!





সংকট স্বীকারে নিয়ে


সংকেত ছড়িয়ে দেখি নাই কোনো জীবগণিত,

অনেকদিনের কাঁটাভাঙা মূল প্রবাহ থেকে

আমচরিত বৃষ্টিপাত আপাতত;

বরং

গাছ আমাকে শিখিয়েছে বন্দরে ঢুকে পড়া মুহূর্ত—


চারদিকে সব উৎসারিত নেমে যাচ্ছি একমাত্র!


কী আজ প্রত্যক্ষ করেছি

পরিসরের মেঘ, জল—ঘাসের গ্রীষ্মকাল নিয়মকানুন

করে?

দ্যাখো, দেয়ালে মানচিত্র এঁকে বর্ণনায় রেখেছিলাম

বনঅধিদপ্তরসহ পাখি উড়ার ইতিহাস

অন্তত আরো গৃহমখী পৃথিবীর পরে যদি

নেচে উঠতো হরিণশাবকের সমান শিশুর সরলতা—





কবিতার নবি


নাফের উজানে ভাসি  ইলিশ উদাস

ভাঙ্গা পাঁজরের দাঁড়ে টানি সর্বনাশ


তোমাকে দেখিনি কভু পড়েছি তোমায়

অধম বুকেও দেখো দুঃখরা ঘুমায়


ভিক্ষা দাও দীক্ষা দাও নিজ মাজহাবে

দস্যু হার্মাদ না হয় আমাকেও খাবে


ঈশ্বরের শিষ্য তুমি আলাওল কবি

বঙ্গোপসাগর তীরে কবিতার নবি

                  

টীকা:

নাফ-নাফ নদী

হার্মাদ-ভয়ংকর জলদস্যু




রায়টুটি পঁচাশিয়া আমার দুঃখ 


রায়টুটি পঁচাশিয়ায় আমার দুঃখগুলো ক্রমশ জমা হচ্ছে 

কালবৈশাখীর কী ঘন কালা আন্দার!

ঘনীভূত দুঃখেরা কোনো দূরত্ব বুঝে-না

ফুড়ুত ফুড়ুত কইরা উইড়া চইলা যায় কয়েক হাজার নটিক্যাল মাইল

দামোদর নদী কি ঈশ্বরচন্দ্রের দূরত্ব থামায়?

লাশকে কাঠের টুকরো ভাইব্যা দিয়াছি সাঁতার 

কোথায় রায়টুটি,কোথায় পঁচাশিয়া ইটনা?


আমি বেগানা এখন? তোমার কাছে?

কইলজার ভিত্তে আপলোড হইয়্যা বইসা আছি

কত বছর আগে! ম্যা-লা বছর।

কি দিয়া মুছবা, ডিলিট করবা কি দিয়া?

তোমার নতুন উঠোনের শূন্য আকাশে অনবরত ঝুলছি -

এই ধর শিমগাছ,লাউগাছ অথবা পাকা হলুদ পেপের লগে!

ও গো! আমারে দ্যাইখা এত ঘাবড়াইয়া যাও ক্যান?






তাঁরই কাছে যাবো 


তারি কাছে যাবো-

যে বালকের আক্ষেপ পালঙ্কে পুষ্পঋতু,


বিষাদের বৃক্ষরাজী থেকে 

তুলে এনে জীবনের ঘ্রাণ 

বোধের নির্বাক সেতারে কেন সে

বাঁধে বেদনার গান??


তাঁরই কাছে যাবো-আরো কাছে যাবো 

মুছে দিতে, খেলাপি ঋণের মতো পুষে রাখা 

প্রজ্ঞার পথে ছড়ানো শত অভিমান।





কোনো এক দিলপাশা গ্রাম 


একচক্ষু হুম্বাবা শুধু তাড়িয়ে ফেরে। নিয়তিও এক অতিকায় দৈত্য। মানুষ তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অপরাজেয় গিলগামেশ। অমরত্বের আশায় যে পাড়ি দিতে পারে মৃত্যু সায়র। যদিও মানুষ কখনো অমর হয় না। গল্পের গাঁওবুড়োর মতো কেবল মিথ্যা আশায় দিগন্তের শেষ পর্যন্ত খুঁজে যায় কোনো এক দিলপাশা গ্রাম। যেখানে থাকে সর্বশক্তিমান ও সব অপূর্ণ স্বপ্ন। উটের গ্রীবায় জমতে থাকা তৃষ্ণার মতো স্বপ্নরা যখন মরুভূমি হয়ে ওঠে, মানুষ দেখে মরিচীকার গোপন কিরিচ হাতে সেখানে বসে আছে সেই মনোবাঞ্ছা পূরণকারী। নাঙ্গেলীর কেটে ফেলা স্তনের মতো মানুষ যার হাতে তুলে দেয় আজন্ম লালিত সমস্ত স্বপ্ন। 


মানুষ অমরত্ব পেলে হয়তো স্বপ্নখেকো সেই ঈশ্বর হয়ে যেত।





বোধবৃক্ষের জানালায় বসে থাকে শীতের সকাল


বসন্তের শেষ বিকেলে যে কোকিলটি

বুড়ো শালিকের বাসায় ডিম দিয়ে যায়

আমরা তাকে আপাদমস্তক চিনে ফেলি

হারানো নুনের পটলাসহ

মনে মনে পড়ে নিই তাকে এবং

তার নখ-দন্ত ও সাগর সঙ্গমের

সমস্ত জীবন পাঠ।


মাঝে মধ্যেই আমি এবং আমরা

সকলেই সকলের অজান্তে

এ্যাডওয়ার্ড মোড়ের হাঁ-মুখো

বাক্সে পরিণত হই।

আমাদের পাছায় ঝুলানো,

সাইন বোর্ডে লিখে নেই__

"আমাকে ব্যবহার করুন"


Signature Poetry Collection (Part 2)


Post a Comment

1 Comments

  1. কবিতাগুলো কোনটা কার লেখা বোঝা মুশকিল।

    ReplyDelete