মাসুদ মুস্তাফিজের কবিতা

Poetry of Masud Mustafiz


প্রয়োজনপক্ষ


আমি তো বিবিধ শঙ্কায় নিজের সাথে নিজেই পাপ করছি

আগ্নির ভেতর প্রাচীন সমুদ্র রোপন করে চোখেরমন সংগুপ্তছায়ার হরিণীর মাতালভঙ্গি

আর বৃষ্টির সঞ্চয় নিয়ে শরীরের তীর আমি আত্নানাশে যাই অনন্তলের ঘুমে

এ সব আমার স্বপ্নের পাপ এ সব আমার রেশমিবাতাসের প্রতীক্ষামুখর অসুখ

হৃদয়ের মুদ্রা ভাগ্য ফিরিয়ে আনে মায়াবিছায়ার অনুজ্ঞ আলোর প্রপঞ্চময় শব্দে

এখন রাত্রিই আমার ছন্দ এখন রাত্রিই আমার দিনের ছাদ সুন্দরের বিরহীবোতাম

এই গুজবের ভেতর আমার মৃত্যু হলো আমারি ত্বকে তোমার নামাঙ্কিত বিছানাশষ্যায়

এখন গেঁথেরাখা অভিমানি শব্দশাসনগুলো কাব্যের মরমীব্যাকুল স্মৃতির শীতকাল

হে প্রগাঢ় নিরবতা হে আমার জলের ভাষামেঘ-প্রয়োজন আজ নিজেরই বিরুদ্ধে!

নৈ:শব্দের যুগ্ন-অন্ধকার ভ্রমণ দূর্লক্ষ্য দূরালোকে লোকসব প্রায় ঘুমন্ত অহম হয়ে যাচ্ছে

আমি তো তোমার নেশা আমি নিজের সাথে চলা মিহিছন্দ দুপুর জ্ঞানধর্মের বারান্দা

বিশ্বাসকে প্ররোচনা করে এনে দিলে আশ্চর্য বৃষ্টির বিকেল ভালোবাসার চেতনাসমুদ্র-

এইসব বিবিধ জন্মে আমার ক্ষণকাল শঙ্কার জগন্ময় পাপসমূহ-

পাখির কান্নায় ভরে যায় নদীর খুনে আমার লোকালয় আমার সমগ্র পাপের সর্বনাশস্বর্গ!




হ্যানরি মুরের সাথে কিছুটাজীবন


এক জীবনে হ্যানরি মুরের সাথে জীবন আমার ছেড়ে যাওয়া আমার চেনা অচেনা এই

শহরের লিগামেন্ট পরিত্যাক্ত পথে বাড়ি ফিরি সন্ধ্যার নদীতে আর ছায়াকল্পনার ভেতর আমার

আদিম শরীর ন্যুয়ে পড়ে স্বপ্নে হৃদয়ের গলিতে পা রেখে নিজেকে চিনে উঠতে পারি

না-- কেমন অচেনা মানুষে সবকিছুই অপরিচিত স্মৃতির বাস্তবতা চারিদিকে নৈঃশব্দের

কোলাহল একটা শালিকপাখি ঘুমন্ত শীতকে পাহারা দিচ্ছে আর আমি প্রতিনিয়ত জন্ম

নিচ্ছি নতুন পৃথিবীর অচেনা আত্নায় এই পাখিসংবাদ পুরূষগাছে কয়েকটা

পুরুষমৌমাছির আলাপচারিতা মাতাল গ্রীষ্মের পানশালায় ঢুকে পড়ে

এখন র‌্যাঁবোর জন্যে রাত খরচ করতে করতে নির্জন ব্রোথেলে যেতে পারি

না--এতোটুকু অশ্লীলসুখ কী আমাকে করূণার ছায়া দিতে পারে না!




স্বপ্ন সরে গেল বাঁ-দিকে


কালা একগুচ্ছ বোলতা নির্সগ একদিন জোছনায় ভুমিকম্প তাপাঙ্ককে জল এবং সূর্য

খুলে দ্যায়

আমাদের ঘুমের পাশে স্বপ্ন জেগে ওঠে মেয়েলি গণতন্ত্রময় জীবনের বীজভান্ডার

সন্ধাকালের অন্তমিল নিয়ে আর সুদুরতা নিয়ে নিরালোকে প্রজাপতির স্বর্ণডানায়

ব্যথাতুর মেঘের রাত্রি যখন নিরালোকে থাকে

থাকে মন অগ্নিজল জনৈক ঈশ্বরের চুরুট নিবে যায়

এই তো অন্তরীক্ষ! উড়ে যায় ময়ূরের পাগলামি উড়ে যায় মন তলে অবতলে-

তন্ত্রোক্ত যোনিপুষ্পের সঙ্গমকাল থেকে বেরিয়ে লুকাস হাঁসদা এসে বললো-

এই ফুলে ক্ষুধা আছে এই ফুলে বিরহ আছে

চন্দ্রবেষ্টিত এক রোমান্টিক ফুলের বাগান থেকে স্পন্দিত মন্বন্তর পার হয়ে

সুখি সোরেন ফিমেল ইস্কুল থেকে বেরিয়ে বললো-এই ফুলে উর্বরতা আছে

এই ফুলে বীজ ও পুঁজি আছে রক্ত মাটির পাতাল থেকে প্রাচীন স্বপ্নবানবৃদ্ধ উঠে বলে

আমাকে নির্জন দাও আমাকে নীড় দাও হে অপরাজিত আলোফুল আমার!

যোগময় প্রাণ নেই স্বপ্নের ডান পাশে-




ঝর্নার পাশে- জাপানি ব্রা’র কাছে


সূর্যটা আমার আকাশ-নীলবসন্তের বিগত বালিয়াডি ঝড়

আমার মাটির দৃশ্যকে হৃদশোকে দুর্যোধন্য এ্যাক লজ্জ্বার

গনিকা হয়ে বরফজল হৃদবস্ত্র উষ্ণ করছে-

আমার অঙ্গে তখন শত বছরের গ্রহ-উপগ্রহের নিরন্তর গতি পারিজাত স্বপনে

চেয়ে দ্যাখি এই এ্যাক পৃথিবী ঘুরে ঘুরে বাসন্তি মেঘের রূমোলে স্নান করছি

সূর্যের সাথে

জাপনি ব্রা’র দৃশ্যালোক জোছনাজলে ঝর্না যাচ্ছে বরফ হোয়ে

সামান্য দেখার অতীত এখন প্রশ্নাতীত ভূগোলে শিল্পের বায়োলজি

বাঙলাকবিতার নায়িকারা আজ বর্ষা

বাঙলাকবিতার নায়িকারা আজ বৃষ্টি

বাঙলাকবিতার নায়িকারা আজ নদী

বাঙলাকবিতার নায়িকারা আজ সাগরিকা

আমি ঝর্নার পাশে শুয়ে জেনেছি-

বৃষ শব্দে বৃষ্টি নামে

বৃষ শব্দে ক্ষুধা বাড়ে

বৃষ শব্দে চোখ অগ্নিবেদের ধ্যানলোকে কবি প্রেমিকার জন্য অপেক্ষা করে!




ভয় হয়-ক্রমবাতাসের মাধুরীতে


রোদ ভালোবাসি।

তুমুল ভালোবাসার একবাক্স সোনালি রোদ্দুর তুলে রেখেছি ভবিষ্যতের জন্য- প্রোজ্জøল

মায়ায় চাঁদের খেরোপাতায়-আমি এ্যাক উদ্যমপরায়ণ স্বচ্ছল প্রেমিক। সঙ্খবদ্ধ জীবনের

বাতায়ন খুলে শালিকের যাতনা আর বেদনাকাতর চরিত্রে কাঁচভাঙা চুড়ির শব্দ ঝুরঝুর করে

ছড়িয়ে যাচ্ছে দশদিক-

তুমি থাকবে বলে যে বিছানায় ফুল ফোটে আমার শানুনামার জলসাঘরে রজনীগন্ধার

মোহন ঘ্রাণে আমাদের সে ঘুম জোনাকিঘুম । মৌন গোলাপগুলো ভাগ্যের রেখা

ধমনি বেয়ে মনপাখি হৃদয়বাঁধের যমুনায় হারিয়ে যায়! এই বিচ্ছেদের অতীত আর

প্যারাডাইসড স্বপ্নমুখরতা আমাদের তৃষ্ণার গভীর বুকে বসবাস করে বর্ণিল অন্ধকারে।

যতোটুকু তুমি আমার অর্থ কিংবা শরীরের রাষ্ট্র জোছনায় একাকি হচ্ছো ভাষার

সাধনায় আর দীঘলরাতের চোখের করিডোরে অভিমান ভুলে থাকা

কোনো ফুলের শিশির রক্তে! ধৃষ্টতার তোড়পারগুলো ঠোঁটের কোনে সায়াহ্নে সন্দেহের

ভাঁজে ঈশ্বর হয়ে ওঠে-


জলের সত্যে নিজের ব্যাকুলতায় দিনের পর দিন

ভুলতে দাও কেন আমার জলঢোঁড়া ভালোবাসা!

আমি তো তোমাকে কবিতা ছাড়া আর কিছুই দিতে পারি না গো সর্ম্পক!




ফুলশয্যার গাছ


গন্ধম নামক গাছটিকে আমি জানি না তাহারে আমি চিনি না-তাহার

গন্ধ রুপরস আর বাহারিফুল ফলের ভয়মিশ্রিত আর্কষণ নানাভাবে আমাকে

ভাবায়! হয়তো এই গাছটির ক্ষমতা সর্ম্পকে আমার ধারণা নেই-অথচ এই

গাছটি আমাকে দারুণভাবে চেনে--জেনেছি এর ঘ্রাণ অদৃশ্যের

সাতকাহন পৃথিবীকে মাতাল কোরেছে অবিস্মরীয়কাল থেকে। আরো

বুঝেছি গন্ধমগাছের নিষিদ্ধ ফল আদম-- হাওয়ার শাস্তিমিথ আর চিত্রকল্পে

ঈশ্বরের মধুরতায় বপন করা। আহা! কী বিস্ময়--গাছ নিষিদ্ধ নয় পাতা নয়

ফুলও নয়

মৃত্যুবোধের অমরতায় আবার যদি সেই গাছ পৃথিবীরবুকে পাওয়া যেতো

অপার সুখমিশ্রিত ভাবনায় তার ফুলসুবাসে আমি আরেক জীবন পেতাম

প্রিয় ফুলশয্যার রাতে!


নিজের ভেতর যতোটা উন্মাদ পুষি

আজ থেকে প্রায় পনের বছর ধরে গোলাপ ভেসে যেতে দেখছি-তার কয়েকটি

শব্দভাষা আর তার মায়াময় জ্যোৎস্নাামেঘের বৃষ্টি অন্যদিকে মুখরিত হচ্ছে

শব্দভাষ্যে লেখা ভালোবাসার আলো যদিও জানি ভাবনার কোনো উত্তরণ নেই এই

উন্মাদ রুপের বিভায়,প্রিয়কবিকে লেখা চিঠি অথবা যেভাবে বড় হচ্ছে

বাঙলাকবিতার ছন্দ কিশোরির উন্মাদবুকে খরাগ্রস্থ চাঁদের উত্তাপের

মাতালে

এ জীবনে অনেক হাত বদল হয়েছি- প্রেমের মিলন ঘটেছে বীজগণিত আর

পাটিগণিতের উচ্চশৈশবে তাই পুরুষ স্তবতায় স্থির আছি আজো ‘স্ব’র

শব্দকষে ‘স্বদেশ বাঙলাকবিতা’র অন্ধকার’ যেভাবে পুর্ণিমা আর রঙধনু

মিশিয়ে আকাশের রঙ বদলায় অসামান্য গোপনের খোঁজে স্মৃতির আঠায়

আঠায় ডুবে পুড়ছে

আজ থেকে প্রায় পনের বছর ধরে ভেসে যেতে দেখছি-এই মায়া কবির ভাষা

হাজার কবিতায় ভালোবাসার প্রাত্যহিক অভ্যেসের বিস্তারে অথচ একটাই

আকাশ কবিরা ভাগ হয়ে যায় প্রতিদিন

আজ থেকে পনের বছরের ভেসে যাওয়া সেই শুকনো ইচ্ছের গোলাপজল পুড়ে

যাচ্ছে বাঙলাকবিতার শরীরের ভাঁজে ভাঁজে


 মাসুদ মুস্তাফিজের আরও কবিতা

 মাসুদ মুস্তাফিজের গদ্য

Post a Comment

0 Comments