তখন আইন থাকলেও পাগালা নদীতে পাখিশিকার করা যেতো, বালিহাঁস, সিল্লি, বনমোরগ,
শ্যামকালিয়া, লালসিরা, চা, ছখা-ছখি। আমার দাদার অর্থাৎ প্রয়াত ডা. গিয়াসউদ্দিন উদদীন
সাহেবের বিলেতের তৈরী জেকাডো বন্ধুক যা আমার বড় চাচাকে অথারাইজড করে গেছেন। আর আব্বার
চেকোস্লোভাকিয়ার তৈরি ব্রোনো ’২২ বোরের রাইফেল তো, টেলিস্কোপ লাগার কারণে আনাড়ি হাতে
দূরের পাখি অনায়াসে শিকার করা যেতো।
নদীতে বিষাক্ত সাপও থাকতো আবার বিষবিহিন সাপও থাকতো। মাছাল্লাদ নামে ভয়ংকর
বিষাক্ত সাপও থাকতো। এই সাপটি ভয়ংকর রাগী এবং তেড়ে দংশন করতো। আমি ও আমার বন্ধু বিজন
একসাথে নৌকার ওপর থেকে পাখি শিকার করছি। বিজনের বাড়ী পাবনার সুজানগর। বহুদিন যোগাযোগ
নেই। হঠাৎ এসেই শিকার করার জন্য ঘোর তাগাদা। একেতো নাচুনে বুড়ি তার ওপর ঢোলির তাল।
যাকগে, বিজন কীভাবে বন্ধু হলো তা পরে বলা যাবে। দুজন মাঝি রয়েছে। নৌকাটা মাঝাড়ি আকারের।
দশ-বারোটি চা পাখি শিকার করেছি। সবই বন্দুক দিয়ে। বন্দুকের ছোররা গুলি,
ডাবল বি কার্টিজ। আর একটি গাছে বসা শ্যামকালিয়া রাইফেল দিয়ে মেরেছি। শ্যাম কালিয়া মৎসভুক
পাখি। গায়ে ও মাংশে এই পাখি প্রচণ্ডভাবে মৎসগন্ধা। মাঝ নদীতে দুটো গড়ূর দেখতে পেলুম
হঠাৎই। একটি গড়ুর উড়ে গিয়ে পড়ে গেলো কুচুরিপানার দামের ওপর। আহাসান মাঝি বলল কাকা হাড়গিল্লাকে
সাপে ক্যাট্যাছে!! খেল জইমা গেছে কাকা! বলে বড় লগি গেড়ে দিয়ে মাঝ নদীতে নৌকা থামিয়ে
বলল দ্যাখেন কাকা তামাসা! সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চাশ ষাটটি গড়ূর পাখি জমায়েত হয়ে বিচিত্র ভাবে
চিৎকার করতে লাগলো কুচুড়ি পানার দঙ্গলের ওপর । এবং আহত হওয়া গড়ূড় পাখিটিকে কেন্দ্র
করে বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি করে ঘুরতে লাগলো। ঘুরতে ঘুরতে একসময় আহত পাখিটিকে সুস্থ করেই
তুলল এবং সে পাখা দাপিয়ে সুস্থ হয়ে উঠে দাঁড়ালো।
আমরা এরূপ কাণ্ডকারখানা দেখে তাজ্জব হয়ে গেলাম বটে। আমি বন্ধুকটা তাদের দিকে তাক করতে
আহাসান বাধাদান করে বলল “এইটা হাড়গিল্লা (গড়ূড়) মারলে রইক্ষ্যা নাই। ছিঁড়া খ্যায়া লিবে
বাপ”
বাড়ি আসলাম। তখন দিবাকরের আলোকচ্ছটা মৃয়মান হতে লেগেছে। গোধূলির আবেশে বিকেল
অবশ হতে লেগেছে। পাখিরাও নীড়ে ফিরছে ক্লান্ত হয়ে।
পাখি দেখে বাড়িতে সবাই আনন্দে গদগদ। কিন্তু ঘটনা শুনে আমার দিদি বললেন “গড়ুর
পাখিকে সাপের বিষ লাগেনা আর চরম অন্যায় করেছিস শ্যামকালিয়া পাখিটি শিকার করে।” এইটা
মা পাখি। এর বাচ্চা আছে। বাচ্চা গুলি ইয়াতিম হয়ে গেলো রে হতচ্ছাড়া! তারপর আমি কখনো
পাখি শিকার করিনি।
0 Comments