শঙ্খশুভ্র পাত্র-র ‘সন্ধ্যামণি শিরোনাম’ ও অন্যান্য কবিতা

'Sandhyamani Titular' and other poems by Shankhashubhra Patra



বামিহাল

 

বামিহাল, আমি তো বেহাল আছি ৷ নামী নই মোটে ৷

স্মৃতিধন্য ওই পার — পূর্বদেশ — আলোকিত নদী...

মনমেঘ উড়ে যায় ৷ পক্ষীডানা, স্বপ্নে নিরবধি

সীমানা পেরিয়ে সেকি আস্থা রাখে সম্পর্কের ঠৌঁটে ?

 

দীর্ঘায়িত রাস্থা, দিঘি, ডিঙিনৌকো, কত-কত মন

নীরবে অধির হয় — বর্ণমালা — আমি সেই সাঁকো

দু-চোখে নিবিড় করি ৷ বামিহাল, হাতে-হাত রাখো ৷

দ্যাখো এ-কবিতাখানি, তোমার শরীরে শিহরন

 

আনে কিনা, বাংলাদেশ, আমি আর কতটুকু বুঝি !

মুকুরে দেখিনি মুখ — প্রেম যেন ঝাপসা,বিধুর...

লতাময় কথা দোলে ৷ খুকুমণি আলতা-সিঁদুর

কী গহন, মায়াময় ! মননের এইটুকু পুঁজি

 

তাতে কি কবিতা হয় ? বলো তুমি, প্রিয় বামিহাল ?

আমিত্ব ভুলেছি ৷ রামী, চণ্ডীদাসে জাগে মহাকাল...

 

 

 

 

 

সন্ধ্যামণি শিরোনাম

 

কী এক নেশায় উলটে-পালটে দেখি তার নাম ৷

কতবার খাতায় এঁকেছি তার মায়াবী শরীর

ঘুমের আবেশে, স্বপ্নে ৷ মধ্যরাতে সেই নীলপরী

আমাকে দিয়েছে ফুল,ভালোবেসে —প্রাণের আরাম ৷

 

সে আসে নিঝুম পথে — চুপিচুপি কবিতা খাতায়

হানা দেয় অন্ত্যমিলে — ডানা মেলে স্তবকে-স্তবকে...

এইরূপে রূপ তার গড়ে ওঠে ভাবের আলোকে

নিগূঢ় বন্ধন — সেই চিরায়িত নকশিকাঁথায়

 

ফুল-পাখি-চাঁদ-নদী... প্রকৃতির আশ্চর্য বুনন

সময়ের অভিঘাতে এখনও মননশীল, ক্রিয়া...

কত গ্রীষ্ম, বর্ষা গেল—তবু কি ফুরোয় শারদীয়া ?

কাশে, নীলাকাশে তার অলৌকিক রহস্য-ভ্রমণ

 

শস্যের অধিক কৃপা, দরদিয়া, প্রাণ থেকে প্রাণে

সন্ধ্যামণি শিরোনাম, শিরীষের ডালপালা জানে ৷

 

 

 

 

চাঁদের-ওপিঠ

 

স্মৃতির পাতায় তুমি, সাদামাঠা, নিরুদ্বেগ ঢেউ

শ্যামল রঙের এক মায়াভূমি — বিজন পুকুর

তোমাকে মিলিয়ে দিতে একবার নাম নেব খুকু

অধিবাসে, নদীপাশে যদি না দাঁড়িয়ে থাকে কেউ ৷

 

আঁধার-জীবন,রূপ — লাড়া-মাঠে অস্থির বাতাস

ব্রেইলে লিখিত মন — ভাষাহারা, রুদ্ধশ্বাস জয়...

বিশুদ্ধ আগুনে "আমি" গুণহীন,ব্যর্থ পরিচয়

দগ্ধ করে বেঁচে আছি ৷দীর্ঘশ্বাসে যত হা-হুতাশ

 

ছাইভস্ম উড়ে যায় — ততোধিক প্রাণিত নূপুর

শ্রাবণের মেঘভারে — বিন্দু বিন্দু সুর, জলকণা

তাপিত হৃদয়ে যেন পিপাসার্ত, ক্ষুধার কল্পনা

জাঁ-পল সার্ত্রের মতো — কামরাঙা-বিষণ্ন দুপুর ৷

 

স্মৃতির পাতায় তুমি, মুকুলিত, স্পর্শের অতীত

দিয়েছিলে পূর্বাকাশ — অন্যপূর্ব চাঁদের-ওপিঠ...

 

 

 

 

জাগরূক

 

প্রমাণে নিপুণ তুমি ৷ কালো পিঁপড়ের মতো সারি-

সারি অক্ষরের দিকে আমার প্রণাম তথাগত...

অংকুরে মনোনিবেশ ৷ কমলিকা দত্ত সহজাত

কেমন এগিয়ে এসে হাসিমুখে হল ঘরবাড়ি !

অংকুরে মনোনিবেশ ৷কমলিকা দত্ত সহজাত

কেমন এগিয়ে এসে হাসিমুখে হল ঘরবাড়ি ৷

 

আলোকচিত্রের প্রতি আমাদের দুর্বলতা, সুখ

হয়ত আকাশ জানে ! রাধামণি... রাহি প্রকাশন...

উদয়-অস্তের মাঝে দিব্যরূপে ওই সংশোধন

কিভাবে বিভাব হয়ে আচমকা হল জাগরূক !

 

পার্থজিৎ জানে,  ও যে মাটির অতল, কালোসোনা...

একবার তাকালেই ধ্যান হয় যেন রক্তজবা

সবুজেই কী অবুঝ...মায়ের চরণে এত প্রভা ?

কবিতা কোথায় যায় ! পল্লবিত, সূর্য-আলোচনা

 

প্রতিটি ভোরের বুকে এঁকে দেয় রাঙা-তরবারি ৷

প্রমাণে নিপুণ তুমি, জাগরূক ৷ শুক আর শারি...

 

 

 

 

 

বিশেষ দ্রষ্টব্য

 

নিদ্রাহীন মধ্যরাত ৷ বিশেষ দ্রষ্টব্য সুনসান 

অদ্বৈত আলমে মেলা  অবিকল্প কল্পনার চাঁদ...

দুর্মর কবিতা টানে দু-একটা অক্ষর প্রমাদ

ডেকে নেবে নিশাজল ৷ চোখের কাজলে মেঘটান ৷

 

স্বপ্নডানা মারুতের ৷ তুচ্ছজ্ঞানে উচ্চতার চূড়া

ছুঁয়ে দেবে দেবদারু, শিরীষের যত ডালাপালা...

সান্ধ্যরাগে তন্দ্রাচ্ছন্ন -- ঝিঁঝিদের  মহা-যাত্রাপালা

আকর্ণ পীড়িত, মধু, উদাসীন, গ্লাসভর্তি সুরা

 

নেশায় স্ফূরিত, বাক্য, টলোমলো, ছলচ্ছল ঢেউ —

দেবতা নির্মিত নহে ৷ বনমধ্যে নিরুদ্দেশ পথ...

ভক্তজন আসে যায় ৷ বটবৃক্ষে কত যে মানত 

ঘুনসি-সুতোয় বাঁধা --জানে সে তো প্রাচীন দেউল ৷

 

সত্য সেই বিবেচনা ৷ মধ্যরাতে, সনেটের ঘরে

চুপচাপ বসে থাকি ৷  লেখাহারা, রিক্ত, অনাদরে...

 

-----------------------------------------------------------------

শঙ্খশুভ্র পাত্র

জন্ম ১৯৬৩ সালের  ১৮ অক্টোবর পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহানগর গ্রামে, মামাবাড়িতে ৷ পৈতৃক নিবাস উক্ত জেলার মোটাঘাট গ্রামে ৷ পেশা- শিক্ষকতা ৷ প্রকাশিত কবিতার বই : সাদা পাতার শোলোক  [পত্রলেখা, ২০০৫], নিজের ফুলের নামে [আলো,২০১২], আত্মার সাক্ষাৎকার [সিগনেট প্রেস, ২০১৭], দেখা হবে, দেখা হলে [বোধিসত্ত্ব, বাতায়ন,২০১৮] পেয়েছেন নয়ন, সৃজন, কথাসাহিত্যিক অনিল ঘড়াই স্মৃতি পুরস্কার।

Post a Comment

0 Comments