বামিহাল
বামিহাল, আমি তো বেহাল
আছি ৷ নামী নই মোটে ৷
স্মৃতিধন্য ওই পার —
পূর্বদেশ — আলোকিত নদী...
মনমেঘ উড়ে যায় ৷
পক্ষীডানা, স্বপ্নে নিরবধি
সীমানা পেরিয়ে সেকি
আস্থা রাখে সম্পর্কের ঠৌঁটে ?
দীর্ঘায়িত রাস্থা,
দিঘি, ডিঙিনৌকো, কত-কত মন
নীরবে অধির হয় —
বর্ণমালা — আমি সেই সাঁকো
দু-চোখে নিবিড় করি ৷
বামিহাল, হাতে-হাত রাখো ৷
দ্যাখো এ-কবিতাখানি,
তোমার শরীরে শিহরন
আনে কিনা, বাংলাদেশ,
আমি আর কতটুকু বুঝি !
মুকুরে দেখিনি মুখ —
প্রেম যেন ঝাপসা,বিধুর...
লতাময় কথা দোলে ৷
খুকুমণি আলতা-সিঁদুর
কী গহন, মায়াময় ! মননের
এইটুকু পুঁজি
তাতে কি কবিতা হয় ? বলো
তুমি, প্রিয় বামিহাল ?
আমিত্ব ভুলেছি ৷ রামী,
চণ্ডীদাসে জাগে মহাকাল...
সন্ধ্যামণি শিরোনাম
কী এক নেশায় উলটে-পালটে
দেখি তার নাম ৷
কতবার খাতায় এঁকেছি তার
মায়াবী শরীর
ঘুমের আবেশে, স্বপ্নে ৷
মধ্যরাতে সেই নীলপরী
আমাকে দিয়েছে
ফুল,ভালোবেসে —প্রাণের আরাম ৷
সে আসে নিঝুম পথে —
চুপিচুপি কবিতা খাতায়
হানা দেয় অন্ত্যমিলে —
ডানা মেলে স্তবকে-স্তবকে...
এইরূপে রূপ তার গড়ে ওঠে
ভাবের আলোকে
নিগূঢ় বন্ধন — সেই
চিরায়িত নকশিকাঁথায়
ফুল-পাখি-চাঁদ-নদী...
প্রকৃতির আশ্চর্য বুনন
সময়ের অভিঘাতে এখনও
মননশীল, ক্রিয়া...
কত গ্রীষ্ম, বর্ষা
গেল—তবু কি ফুরোয় শারদীয়া ?
কাশে, নীলাকাশে তার
অলৌকিক রহস্য-ভ্রমণ
শস্যের অধিক কৃপা,
দরদিয়া, প্রাণ থেকে প্রাণে
সন্ধ্যামণি শিরোনাম,
শিরীষের ডালপালা জানে ৷
চাঁদের-ওপিঠ
স্মৃতির পাতায় তুমি,
সাদামাঠা, নিরুদ্বেগ ঢেউ
শ্যামল রঙের এক
মায়াভূমি — বিজন পুকুর
তোমাকে মিলিয়ে দিতে
একবার নাম নেব খুকু
অধিবাসে, নদীপাশে যদি
না দাঁড়িয়ে থাকে কেউ ৷
আঁধার-জীবন,রূপ —
লাড়া-মাঠে অস্থির বাতাস
ব্রেইলে লিখিত মন —
ভাষাহারা, রুদ্ধশ্বাস জয়...
বিশুদ্ধ আগুনে
"আমি" গুণহীন,ব্যর্থ পরিচয়
দগ্ধ করে বেঁচে আছি
৷দীর্ঘশ্বাসে যত হা-হুতাশ
ছাইভস্ম উড়ে যায় —
ততোধিক প্রাণিত নূপুর
শ্রাবণের মেঘভারে —
বিন্দু বিন্দু সুর, জলকণা
তাপিত হৃদয়ে যেন
পিপাসার্ত, ক্ষুধার কল্পনা
জাঁ-পল সার্ত্রের মতো —
কামরাঙা-বিষণ্ন দুপুর ৷
স্মৃতির পাতায় তুমি,
মুকুলিত, স্পর্শের অতীত
দিয়েছিলে পূর্বাকাশ —
অন্যপূর্ব চাঁদের-ওপিঠ...
জাগরূক
প্রমাণে নিপুণ তুমি ৷
কালো পিঁপড়ের মতো সারি-
সারি অক্ষরের দিকে আমার
প্রণাম তথাগত...
অংকুরে মনোনিবেশ ৷
কমলিকা দত্ত সহজাত
কেমন এগিয়ে এসে
হাসিমুখে হল ঘরবাড়ি !
অংকুরে মনোনিবেশ
৷কমলিকা দত্ত সহজাত
কেমন এগিয়ে এসে
হাসিমুখে হল ঘরবাড়ি ৷
আলোকচিত্রের প্রতি
আমাদের দুর্বলতা, সুখ
হয়ত আকাশ জানে !
রাধামণি... রাহি প্রকাশন...
উদয়-অস্তের মাঝে
দিব্যরূপে ওই সংশোধন
কিভাবে বিভাব হয়ে আচমকা
হল জাগরূক !
পার্থজিৎ জানে, ও যে মাটির অতল,
কালোসোনা...
একবার তাকালেই ধ্যান হয়
যেন রক্তজবা
সবুজেই কী অবুঝ...মায়ের
চরণে এত প্রভা ?
কবিতা কোথায় যায় !
পল্লবিত, সূর্য-আলোচনা
প্রতিটি ভোরের বুকে
এঁকে দেয় রাঙা-তরবারি ৷
প্রমাণে নিপুণ তুমি,
জাগরূক ৷ শুক আর শারি...
বিশেষ দ্রষ্টব্য
নিদ্রাহীন মধ্যরাত ৷
বিশেষ দ্রষ্টব্য সুনসান ৷
অদ্বৈত আলমে মেলা অবিকল্প কল্পনার
চাঁদ...
দুর্মর কবিতা টানে
দু-একটা অক্ষর প্রমাদ
ডেকে নেবে নিশাজল ৷
চোখের কাজলে মেঘটান ৷
স্বপ্নডানা মারুতের ৷
তুচ্ছজ্ঞানে উচ্চতার চূড়া
ছুঁয়ে দেবে দেবদারু,
শিরীষের যত ডালাপালা...
সান্ধ্যরাগে
তন্দ্রাচ্ছন্ন -- ঝিঁঝিদের মহা-যাত্রাপালা
আকর্ণ পীড়িত, মধু,
উদাসীন, গ্লাসভর্তি সুরা
নেশায় স্ফূরিত, বাক্য,
টলোমলো, ছলচ্ছল ঢেউ —
দেবতা নির্মিত নহে ৷
বনমধ্যে নিরুদ্দেশ পথ...
ভক্তজন আসে যায় ৷
বটবৃক্ষে কত যে মানত
ঘুনসি-সুতোয় বাঁধা
--জানে সে তো প্রাচীন দেউল ৷
সত্য সেই বিবেচনা ৷
মধ্যরাতে, সনেটের ঘরে
চুপচাপ বসে থাকি ৷ লেখাহারা, রিক্ত, অনাদরে...
-----------------------------------------------------------------
শঙ্খশুভ্র পাত্র
জন্ম ১৯৬৩ সালের ১৮ অক্টোবর পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহানগর গ্রামে, মামাবাড়িতে ৷ পৈতৃক নিবাস উক্ত জেলার মোটাঘাট গ্রামে ৷ পেশা- শিক্ষকতা ৷ প্রকাশিত কবিতার বই : সাদা পাতার শোলোক [পত্রলেখা, ২০০৫], নিজের ফুলের নামে [আলো,২০১২], আত্মার সাক্ষাৎকার [সিগনেট প্রেস, ২০১৭], দেখা হবে, দেখা হলে [বোধিসত্ত্ব, বাতায়ন,২০১৮] পেয়েছেন নয়ন, সৃজন, কথাসাহিত্যিক অনিল ঘড়াই স্মৃতি পুরস্কার।
0 Comments