রেজওয়ানা ইসলাম রিমু’র ‘ভুলের পরিমাণ’ ও অন্যান্য কবিতা

'The Amount of Mistakes' and Other Poems by Rezwana Islam Rimu



তোমাদের বাবা

 

দিগন্ত পেরিয়ে উড়ছে পক্ষীকুল, ফিরতে হবে নীড়ে;

নিজেকে আবিষ্কারে ব্যর্থ, শত কোটি মানুষের ভিড়ে।

সবার মুখে মুখে সফলতার গল্প, শুনছি মুচকি হেসে;

আমার পরিশ্রম হচ্ছে ধুলো, ঘুম আসছে চোখে;

মাথায় যে দায়িত্বের মুকুট, ভারী হচ্ছে ধীরে ধীরে।

বড় করতে সন্তানদের, ছোট ছোট ইচ্ছে পূরণ ;

এক ফালি হাসির মুখটি, দেখতে যন্ত্রণা বরণ;

হাসুক তারা, দেখুক পৃথিবী, জানুক জামানা,

তাদের বাবা চেষ্টায় লুটিয়ে দিচ্ছে,

নিজের ইচ্ছে- আশা- কামনা।


হাঁটতে শিখিয়েছি একলা পথ পাড়ি দিতে নয়;

পাশে ছায়া হয়ে চলতে এসো, অহংকার করে ক্ষয়।

দায়িত্বের রাজ্যের রাজা আমি, আমি রাজ্যের বিনয়ী প্রজা;

নিজেকেই আগন্তুক ভাবা, আমি তোমাদের বাবা।

আমি কখনো নিষ্ঠুর ব্যক্তি, কখনো রঙ্গ মঞ্চের জোকার;

নিজেকেই নতুন করে করতে চাইছি আবিষ্কার।

আমি জীবন পথের একলা পথিক, 

আমি কালস্রোতের বিষন্ন এক নাবিক।

একদিন নৌকা ডুবি হবে, নাবিক নিখোঁজ হবে;

প্রিয়জনের হৃদয়কে এই সংবাদ কি আঘাত হানবে?

উৎসর্গ করে নিজেকে, সুধিবো ঐ সাগরকে,

আমার রাজ্যে কি সবাই, রাজা গণ্য করবে আমাকে?

তোমরা কি নিষ্ঠুর ভাববে তোমাদের বাবাকে ?

যে দিতে পারবে না পুরো সম্রাজ্য তোমাদেরকে।

সেদিন আমি অতি ক্লান্ত হবো মুকুটের ভারে,

আশ্রয় নেবো ঐ বিশাল আকাশে;

যদি মনে পড়ে আমায়, কোনো সন্ধ্যা বেলায়,

খোলা আকাশে চোখ রেখো, কোনো অবহেলা ছাড়ায়;

চিনবে কি তখন তোমাদের বাবাকে,

চোখের কিনারে কি জল টলমল করবে?

স্মৃতির সাগরে কি খুঁজবে আমারে,

যেথায় হারিয়ে যাবো নৌকা ডুবে।

 

 

 

আয়না

 

                   স্বচ্ছ তুমি,

                   ধারালো তুমি,

  হাস্যোজ্জ্বল মুখ দর্শন করার মাধ্যম তুমি,

        তুমিই নিজেকে চেনার উপায়।

                    এজন্য 

            মানুষের প্রতিচ্ছবি দিতে 

               দেখেছি তোমায়,

    দেখেছি মোদের আঘাতে ভাঙতে ।

 

        ভাঙ্গা গড়ার যুদ্ধে তুমি

            ক্ষুদ্র হও বটে,

          তবুও ভুলো না তুমি

       নিজের অস্তিত্ব হারাতে।

 

 

 

 

 

নীরব আর্তনাদ 

 

আসমানের বুক চিরে বৃষ্টি ঝড়ছে,

বর্ষাকে স্বাগত জানাতে;

কোনো এক রূপকথার গল্প 

উঁকি দিচ্ছে মনের কোণে

অবস্থান যখন বেলকনিতে,

নিজের অজান্তে।

বৃষ্টিতে ভেজার ইচ্ছা খুব বেড়েছে,

বিন্দু বিন্দু ফোঁটা যে মন কেড়েছে;

জমিনে জল পড়ার মুহূর্তটা ভীষণ শুধাচ্ছে,

তাদের সহিত পা মিলিয়ে মিশে যেতে।

পরোক্ষণেই উপলব্ধি করলাম 

বিধাতার অসম্ভব সুন্দর লিখনী, 

সহানুভূতি নিয়ে শ্বাস নেবো তা কখনো ভাবিনি;

বরণ করেছে মোরে একাকিত্বে থাকা পঙ্গুত্ব 

ভুলতে পারি কি পূর্বের ছেড়ে আসা রঙিনত্ব।

অবিরাম ঝরেই চলেছে বর্ষার বারিশ 

হৃদয়ে নীরব আর্তনাদ,নেই চাঞ্চল্যের হদিস;

আহাজারি শেষে আর্জি খোদার দরবারে

মোরে যেনো রাখেনা ভয়ঙ্কর আঁধারে।

ঐ হুইল চেয়ারের চাকার যাত্রাপথ নয় বহুদূরে 

তেমন নয়নের অশ্রুর যাত্রা গালের উপরে;

মেঘের কান্না শেষ না হতেই যায় সে শুকিয়ে

থেকে যায় ক্লান্ত আঁখি, অনাকাঙ্ক্ষিত ইচ্ছে

যাদের ডানা খোদা অনেক আগেই কেটেছে।

হঠাৎ গগনের বুকে বজ্র গর্জে উঠে উচ্চস্বরে 

ভাবনার অবসান ঘটে মুচকি হাসি নিয়ে।

অবাধ্য মন আছে,অপরূপ চক্ষু আছে

আছে রঙিন,মনোরম , সৌরভময় প্রকৃতি;

অনুভূতিগুলো আর কি চায় জীবনের কাছে

আনন্দিত তারা জয় করে করুণ ভীতি।

আবারো বর্ষা আসবে বছর ঘুরে 

পুনরায় ব্যাকুল হবে ঘুমন্ত অনুভূতি কৌতুহলে;

ভীতি গুলো জমেই রবে হৃদয়ের কিনারে

নতুন কোনো অভিযোগের খাতা খুলে।

 

 

 

ভুলের পরিমাণ

 

জন্মের পর ভুলের ঘরে প্রবেশ

সর্বত্র বিরাজমান তার আবেশ;

চলতে ফিরতে তার সান্নিধ্য হই কত

দিবসের আলো, আঁধারে পা রাখলে;

তার পরিমাণ হয় শত

বাড়ন্ত তার, সেকেন্ড মিনিটে রূপ নিলে।

ব্যস্ত শহর, ব্যস্ত মানুষ

ব্যস্ত ঐ ঘরের দরজা-ও;

নেই যে তার বন্ধের রেশ

ক্লান্ত ঐ দাড়িয়ে থাকা চৌকাঠ-ও।

প্রতিনিয়ত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত সে 

প্রকট তার আকার;

নাগালের বাইরে থাকতে পেরেছে কি সে

যে চেনেনা তার প্রকার।

মরণের সহিত আসবে তালা 

ঝুলতে ঐ দরজার কড়ায়;

সেদিন পড়ে রবে শুধু শূণ্যঘর 

ভুলগুলি আশ্রয় নেবে সুদূর শূন্যতায়।

 

 

 

দেখতো কেমন লাগছে

 

নিস্তব্ধ গভীর রাত পেরিয়েছে,

ক্লান্তি ভরা আঁখিতে, অর্ধ পূর্ণ তন্দ্রাহীন;

সূর্যের রশ্মি কখন জানালার গ্রীল ছুঁয়েছে,

ঘুমন্ত পরি বুঝেনি, ঘুম ছিল স্বপ্নহীন।

তোমার সরু গলার আওয়াজ 

পড়লো কানে আলোর বেগে,

বলেছিলে দেখতো কেমন লাগছে আজ

কণ্ঠ মিশ্রিত ছিল শীতল আবেগে।

চক্ষু ঢাকা ছিল ঘুমের চাদরে

খুলতে পারিনি সম্পূর্ণরূপে,

আবছা ছিলে তুমি, আয়নার প্রতিচ্ছবিতে 

অভাগা আমি পড়ে রইলাম নির্বোধরূপে।

তুমি হয়তো পুনরায় কৌতূহল নিয়ে

প্রশ্ন করেছিলে আমাকে, 

কেমন লাগছে অধীর আগ্রহে জানতে;

নিদ্রার সাগর সাঁতরে হাঁপিয়ে গেছিলাম

ঐ চেনা সকাল রূপী তীরে পৌঁছাতে।

পা সাগরের বালু স্পর্শ করতেই 

মনে পড়লো,তোমার করা প্রশ্ন;

ঘরের নীরবতা দেখে বুঝলাম 

ইতোমধ্যে নিয়েছো তুমি প্রস্থান,

যা করেছে আমাকে বিষন্ন।

উড়াল দিলাম কল্পনার আকাশে

মেঘ হয়ে ভেসে যেতে;

যদি দেখা পাই তোমায় স্বল্প ক্ষণে

ফিরে এসে উত্তর জানাবো তোমার প্রশ্নের,

তোমার অতুলনীয় হাসিমাখা মুখটির দেখা পেতে।

 

 

 

অনুভূতির পরশ

 

টিনের চালে বৃষ্টির গান 

ভরে উঠে আনচান প্রাণ,

হালকা বাতাসের গতিবেগ 

আমার চুলগুলো উড়ছে 

মনে হয় কিছু বলতে চায় 

উজাড় করে সকল আবেগ।

ইচ্ছা হলো হাত ভেজাতে 

মুশুল বৃষ্টির ধারায়

হাতের মুঠে কি পানি থাকে 

যেমন থাকে কচু পাতায়!

প্রতিটা ফোঁটা উপলব্ধি করছি

যেনো তারা দিচ্ছে অসীম পথ পাড়ি 

রকেট যেমন চলে সকল সীমা ছাড়ি 

ভাবতে ভাবতে জাগলো

অনবদ্য ইচ্ছা শক্তি

ভিজতে যে হবে তাদের দ্বারায় 

পেতে মনে শান্তি।

এতো সুন্দর পরশ

কে উপেক্ষা করে,

আমার মতো কি সব মানুষ

একাই জিনিস উপভোগ করে!

 

 

 

আবার সূর্যোদয়!

 

রাত শেষে দিন হবে ,

অন্ধকার রুম আলোকিত হবে,

বন্দি অবস্থার নিরাশ হবে 

মুক্ত বাতাসে শ্বাস নেবে।

 

দিনের আলোয় আলোকিত হবে

লোকের ভিড়ে হারিয়ে যাবে

গায়ের সুগন্ধি দূর হবে

রয়ে যাবে চোখের কিনারায় 

কিছু ক্লান্তির ছাপ।

 

মাথার উপর সূর্য আসবে

গলা শুকিয়ে যাবে

ঠোঁটে মরুভূমি দেখা দেবে

সৃষ্টি হবে মরিচীকার অদ্ভুদ দৃশ্য।

 

পড়ন্ত বিকেলে পাখিরা উড়বে

শিশুরা খেলাধুলায় মেতে উঠবে

গগনে ভিন্ন ধাঁচের আকৃতি মিলবে

বৃদ্ধরা বসে শৈশবকাল স্মরণ করবে

কেউ জীবনের শেষ মুহূর্ত উপভোগ করবে।

 

সন্ধ্যা হবে

মানুষ-পক্ষিকুল নীড়ে ফিরবে

পড়াশুনার আওয়াজ শুনবে

ঝিঁঝিঁ পোকার চলার পথ খুঁজে পাবে 

চাঁদও আনাগোনা করবে বিশাল আকাশে।

 

নিঝুম রাত হবে

কেউ ঘুমাবে শান্তি নিয়ে

কেউ তাঁরা দেখবে হাসি মুখে

কেউ কাঁদবে নিশ্চুপে 

কেউ একবুক হতাশা নিয়ে চিন্তায় বিভোর হবে

সাথে শুনতে পাবে পেঁচার হাকডাক।

 

আবারো সূর্য উদয় হবে

পূর্বের দিবসের মত 

একই কার্যক্রম জারি রবে

জীবন নদীর স্রোতের মতো চলতে থাকবে

কারো শেষ হবে তো কারোর শুরু হবে।

 

 

 

 সুখী তারা

 

উড়ন্ত ফড়িং মুক্ত পথে চলে

চলে তারা অতি ব্যাকুলে;

দুই ডানা বড্ড হালকা যে

অতৃপ্তি নেই তাদের মনে ।

 

নীল আকাশে সাদা কালো মেঘ ভাসে 

চেয়ে দেখে তারা মোদের পানে;

বিশাল জগৎ গাল ফুলিয়ে হাসে

সুখ তো তারাই বয়ে আনে।

 

কচুরিপানা স্বাচ্ছন্দ্যে ভাসে নদীর স্রোতে 

কাশফুল তার ঘর সাজায় শরতে;

পুকুরের পানির ঢেউ গুলো অবিরাম বয়

শীতল বাতাসের স্পর্শ যাতে রয়।

 

প্রাণবন্ত সবুজ ক্ষেত অসীম প্রান্ত যেথায়

পাখি গুলো এগিয়ে আসে বিনম্র শ্রদ্ধায়;

বৃষ্টির ফোঁটা অঝোরে ঝরে জমিনে

জমিন স্বস্তি খুঁজে পায় ধূলাবালির পতনে।

 

অদ্ভুত দর্শন গোধূলি বেলায়

আকাশ বহু রঙে সজ্জিত হয় 

রংহীন বদনে রঙের আভাস দিয়ে যায়

মোদের মুগ্ধ করে তারাও সুখ খুঁজে পায়।

 

 

রেজওয়ানা ইসলাম রিমু 
ঠিকানা- চিরিরবন্দর, দিনাজপুর, রংপুর
বই - প্রথম যৌথ কাব্যগ্রন্থ ‘হৃদরোহীনি’

 


Post a Comment

0 Comments