নিরুদ্দেশের হাওয়ায়
যে ঘরে কান্না বসত
করে-তার পাশে একটি টইটুম্বুর ডোবা
সেখানে একটি কালো হাঁস
ঘোরাফেরা করে;
প্রতিদিন ঘরহীন ঘরে কে
ফিরিতে চায় হে; কে ফিরিতে চায়!
অতি দূর থেকে একটি চিলের
আহাজারি কানে আসে-
মেঘের ওপর ঘর বেঁধেছি
বলে- আজও ভালোবাসা খুঁজি
নিরুদ্দেশের হাওয়ায়
হাওয়ায়।
পুরানা পল্টনে এক সন্ধ্যা
জনাকীর্ণ শহর, বিচিত্র
কোলাহলে সিটিবাস আর রিক্সার দুরন্ত ছোটাছুটি;
ঘরে ফেরা লোকগুলোর দারুণ
উদ্বিগ্নতা; ‘আজাদ প্রোডাক্স-এর শেষ প্রান্তের রাস্তায় স্টাইক;
মিছিলে অনবরত শ্লোগান
চলে : অ্যাকশন, অ্যাকশন; ডাইরেক্ট আ্যাকশন...
পল্টনের মণিসিংহ ভবনের
নিচে একগুচ্ছ পুলিশ চা দিয়ে পাউরুটি খায়; সাথে সিগারেট
এপাড়ে কেএফসি’তে থোকা
থোকা খাবারের ছড়াছড়ি গন্ধে মাদকতা আনে। অনেকে এঁটো রাখে
বুবুক্ষু কুকুরের মত
দু’জন টোকাই আর একজন রিক্সাওয়ালা অপলক চেয়ে থাকে !
ক্রোধ ও একটি ভোরের
জন্মলগ্ন
আমি স্বপ্নে দেখেছি
ভোরে, সখির চুড়ির তালের মতন রূপোর বৃষ্টি ঝরে
বিন্দু বিন্দু শিশিরে-স্নাত তোমার অবাধ্য চুল, সোনালী অধর;
ডাঁসা নিতম্ব
ওগো প্রিয়া, আমাকে জাগিও
না আর, প্রভাত সূর্যের শকট দুর্ঘটনায়
হৃদয় মন্দিরে উত্তাপ
ছড়ায় আরও একবার তোমাকে দেখার লোভ।
ওগো আন্না আমার, গল্প
অথবা কাব্যের জমিনে ফুল ফসলের ধ্যান
অপ্সরা প্রেমিকা তুমি;
জ্বালিয়েছ যে আগুন বুকের কাঁটাতারে তা
দু’ফোঁটা অশ্রæতে নিভবে না; রূঢ়ক্রোধ! তারচেয়ে
বরং সবুর করো
আমাকে জাগিও না আজ,
পুড়তে দাও; সেই ভালো, খাক হোক দেহ
তুমি ভোরের-স্নিগ্ধ সমীরণে ছড়িয়ে দিও এ দেহের, ছাই ভস্মাবশেষ ।
নগরীর কোলাজ
বিমর্ষ দুপুর; লোকাল
বাসে চড়ে অফিসে যাই
রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম,
নগরীর বাতাসে যেন শিসা জ্বলছে
তখন রক্তে আগুন,
ফুলওয়ালির হাঁকডাক শোনা যায়
ভাসমান ফেরিওয়ালা, বই আর
বাহারি পণ্যের সাথে মিষ্টি
চললেট অথবা টাইগার বাম
মলমের প্রচার সমানে সমান
কোম্পানির রেট: বিশ
টাকা, বিশ টাকা, মাত্র বিশ টাকা;
আছেন কেউ! তারপর
হিজড়াদের জোরাজুড়ি, হাততালি,
ওহে হিরো, পাঁচ টাকার
মামলা, কন্টাক্টরের তাগাদা বাড়ে
ভাড়া হয়েছে মামা ? বেকার
ছেলেটি স্টুডেন্ট বলে-
হাফ দেওয়ার পাইতাড়া করে।
আজও যে তার একটা ইন্টারভিউ আছে!
কোনো এক নারী তার জন্যে
অপেক্ষায়! দুর্বিষহ জ্যাম, ঘণ্টার পর ঘণ্টা
গাড়ির নগরী বুঝি, অদ্ভুত
এক দেশ! এখানে ‘জন্মই বোধ হয় আজন্ম পাপ’!
আসমা আফরিন
গুচ্ছ গুচ্ছ ফুল একটি
বাগানের শোভা বাড়িয়ে দেয়
মৌ মৌ গন্ধে মাতোয়ারা
চারদিক; ভ্রমরার আনাগোনা বাড়ে।
হেমন্তের বিকেলে পাখিদের
ঘরে ফেরার তাড়া নেই
শহরে নাগরিক ব্যস্ততা;
ট্রাফিক জ্যাম, স্টপওয়াচের মতন
গাড়িগুলো দাঁড়িয়ে আছে দিগন্তের পানে মুখ
তুলে; সারিবদ্ধ।
বিষণ্ন অবসাদে শরীরের তাপ- চোখ বয়ে নামে
সারা দিনের ক্লান্তি।
চাকরিজীবী দম্পতি; চোখের
পানে তাকানো যায় না। দিনের শেষে
ক্লান্ত দু’জন। সব কাজ
শেষে করে ঘরে ফেরার পালা। কোলের শিশুটি
ফিডার খায় না। মায়ের
টুপটাপ স্তনের পানে তাকিয়ে থাকে- অপলক।
আসমা আফরিন, তোমাদের সেই
ব্যস্ত দিনগুলো আজ আর নেই;
তুমিও নেই! পৃথিবীর
ওপাড়ে কী মেঘলা আকাশ আছে? যেখানে
কী ইলশেগুড়ি বৃষ্টির পর
রংধনুতে হলুদ রোদ পড়ে; অথবা অন্ধকার!
অশ্রুগাথা আমাদের ইতিহাস
সরষে ফুলের দানায় দানায়
মৌমাছির আনন্দ
তোমার খোঁপায় একগুচ্ছ
রজনীগন্ধা গুজে দিলাম
শীতের জড়তায়
পত্রপল্লবহীন বৃক্ষ খাঁ খাঁ দেখায়
তোমরা দেখে নিও একদিন
ঠিকই বসন্ত আসবে
রাহেল রাজিবের কবিতায়
অবনী নামের মেয়েটির মত
শুষ্ক, রু² চুলে কোনো এক নারী আমাদের
দায়মুক্তি কামনা করে
বিয়ের সব বন্দোবস্ত
হয়েছিল কিন্তু হানাদারেরা কুমারিত্ব হনন করে নিল
আজও নিজেকে বাঁচিয়ে
রেখেছে মেয়েটি; কালের ইতিহাস সাক্ষী করে
উত্তর প্রজন্ম আজ জানুক;
ঐ সরষে ফুলের হলুদ রং রক্ত দিয়ে কেনা
বীরের রক্তস্রােত আর
মায়ের অশ্রুগাঁথায় লেখা আমাদের করুণ ইতিহাস।
কালের কুঠার
পাতাগুলো ক্রমশ ঝরে
পড়ছে; বৃষ্টির জল ঝুপঝাপ তাল দেয়
ঝরাপাতাদের ক্ষণিক স্থান
বদল স্রােতের টানে ভেসে যায় প্রিয়তমার মুখ।
অভিমান আর অনুরাগে
বাস্তুভিটে ত্যাগ করে নিরুদ্দেশের হাওয়ায় হাওয়ায়
শালিক পাখি তার প্রিয়জন
খোঁজে। ভালোবাসা, আর বাদামী রং ধারণ করো না ।
দেয়ালের কফিনে সোনালি
রোদের ঝিলিক; এবার সব বিশেষণ বাদ দাও;
আমি কাজে বিশ্বাসী;
নীতিকথা পরে থাক ঘোলা জলে। কারণ শর্ত সাপেক্ষে-
আপেক্ষিক স্পন্দন চলে
না। ভালোবাসা ভালো থাকো; আমাকে চুরমার হতে হবে!
অনন্ত পৃথ্বীরাজ এর আরো কবিতা পড়ুন
জন্ম ১৯৮৭ সালের ৩০ অক্টোবর সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানাধীন চেংটিয়া গ্রামে। ধরইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধরইল উচ্চ বিদ্যালয়, উল্লাপাড়া বিজ্ঞান কলেজ ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর পড়াশোনা। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এড ও এম.এড সম্পন্ন করেছেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. চঞ্চল কুমার বোসের তত্ত¡াবধানে ‘সৈয়দ শামসুল হকের কথাসাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধ : নিম্নবর্গের স্বপ্ন ও সংগ্রাম’ শীর্ষক অভিসন্দর্ভের ওপর এম. ফিল করছেন। পেশায় শিক্ষক। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট গার্লস পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ-এ কর্মরত।
প্রকাশিতগ্রন্থ :
কাঠপোকা
(গল্পগ্রন্থ), বিভাস প্রকাশনী, ঢাকা, ২০১৬ ।
বিষণœ
বিকেলের গল্প (গল্পগ্রন্থ), মুর্ধন্য প্রকাশনী, ঢাকা, ২০১৭।
আরিফ নজরুলের কবিতা :
স্বপ্ন সেঁকে বাস্তবে ফেরা (গবেষণাগ্রন্থ), বাঙালি প্রকাশনী, ঢাকা, ২০১৭।
রমনা পার্কের ইতিহাস
(গবেষণাগ্রন্থ), বাঙালি প্রকাশনী, ঢাকা, ২০১৮।
0 Comments