মাহফুজ মুজাহিদ এর ‘কান্নার চাঁদরে ভিজে প্রেম-চাঁদ’ ও অন্যান্য কবিতা

 

Mahfuz Mujahid's 'The Moon of Love Wet in the Moonlight of Tears' and other poems

কান্নার চাঁদরে ভিজে প্রেম-চাঁদ


এক জীবনে হয়তো

প্রেম খুঁজে পাওয়া যায় না

পরাগায়ন সুখের আগমনে

বায়বীয় সুখ হঠাৎ উধাও

হতে পারে নক্ষত্র টানে

তবুও জীবনের রংধনুটানা

আকাশের বুক তোমার মুখ

বেদনার তীব্র শোকে নীল-কালো

সাদা সাদা মেঘের নির্লজ্জ কোষ

প্রবাহিত হয়নি স্পর্শের ভুল আঙ্গুলে

অথচ

রাত বয়ে সকালের স্নিগ্ধ আলোয়

নতুন করে আবিস্কৃত পৃথিবীর সুঘ্রাণে

অতৃপ্ত ক্যানভাসে চিত্রিত ছিলো

অব্যাক্ত অজস্র প্রেমের গল্প

তবুও প্রেয়সী রতিকামে খোঁজে

প্রেমিকের নির্লোভ প্রেম

 

 

 

এক ও একাকিত্বের গান


বড় অদ্ভুত এই জীবনের স‚রে

বেজে যাওয়া মৃত্যুর গান

রাতগুলো প্রয়াত হতে হতে

সকালের বিচিত্র মৃদু আলোয়

চোখ ঢেকে দিয়ে ছুট তীব্র রোদ

অথচ করুণ অন্ধকার চারপাশ

মৃতরোদ খেয়ে নেয় দারুণ আক্রোশে

রাত নাকি দিন, আলো নাকি অন্ধকার

কে কার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো জন্মপ্রাচুর্যে

তার কোনো লিপিবদ্ধ ইতিহাস নেই

তবুও জীবন পাঠে ব্ল্যাকহোলে থেমে

মটিদেহ ভেঙে মনের অস্তিত্ব খোঁজে

মস্তিস্কপ্রভাবে ফুলেফেপে হৃদপিন্ডে

ঝড়ের নামতা শিখে রক্তে বাজায়

পরিচিত সুর, মৃত্যুর অবাঞ্চিত গান

অন্তিম পাঠ জপে মাটি-মাংসল শরীর

নিশ্চুপে ঘুমায় একা

নিউরনজুড়ে ছন্দ-তালে বারবার

বেজে ওঠে--

তুমিই তো তোমার,

জীবনের ঘরে বন্দি

আর কেউ নেই সঙ্গী

মানুষের ঘন বসতি

নিঃসঙ্গ ঘরে একা

এক মানুষে তুমি এক,

দুই মানুষে তুমি এক

বসতিজুড়ে তুমি এক

তুমি একা, তুমি একা...

 

 

 

 

গোরস্থান বিলাপ


তোমার হাতে পরিপাটি গুচ্ছ ফুল

বেদনায় রূপান্তরিত কালো মেঘ

কখন শীতল উন্মাদনা হতে হতে

উড়ে গেছে লোনা বাতাসের টানে

গোরস্থান ঘিরে শবের মিছিল

গোরখোদক হাঁপিয়ে ওঠে

কিঞ্চিৎ বিভ্রম অথবা আশ্চর্য ভয়ে

বেলা গড়িয়ে ঢের রোদ

সাড়ে তিনহাত দৈর্ঘ্যে

অর্ধেক তার গভীর

শবের বাসস্থান হবে

মিছিলে অগণিত সাদামোরা

কাটাকুটি চিহ্ন দেহের শব

অপেক্ষার ডালি ছুঁড়ে ধেয়ে আসছে

গোরখোদকের শান্ত হৃদয়ের ক্লান্ত শরীর

তবুও একটি শবের বাসস্থান রূপে

নেভাতে পারেনি স‚র্যালোকের তীব্র আক্রোশ

গোলাপী আগুনে পুড়ে, আঘাতে জর্জরিত বিচ্ছিন্ন হাতের আঙ্গুলবিহীন কব্জিতে-- একে একে তুলে দিলো আটাশ-বসন্ত গোলাপ। চৌদ্দে ফোঁটা রজনীগন্ধার সাথে তিনটি বকুলমালা।

মগজ ক্ষয়ে যাওয়া খুলির কিয়দাংশে তখনো একটি মাথাল; জানিয়ে দিচ্ছে-- তীব্র রোদ-জলসায় পুড়ে, লাঙ্গলের ফলায় পরিমাপিত ভ‚মি চষে, রোপিত শস্যে-স্বপ্নে ভেসেছিলো-- যুবতীর কাজলা চোখে আঁকা, চাষার বলিষ্ট বাহুতে ভাসমান সুদৃশ্য মাংসল ভাঁজ।

রৌদ্রআঁধারে একদিন ভরা জমিনে পাকা ধানের মায়া ফেলে ছোটে জোড়া-জোড়া পা। পেছনের শকুনবহরে রক্তের নেশা; ক্রমশঃ সোনারঙ ধান মাড়িয়ে নেমে আসে তীরে। বিষাক্ত ঝোঁপ-কাঁটায় ঝরানো রক্তে নেশাতুর শকুনের সম্মিলিত ক্রোধে, প্রতি নিঃশ্বাসে ঝরে বিষ।

সেই যে শকুন থাবায় ক্ষয়ে যাওয়া আঙ্গুলবিহীন খÐিত হাতটি-- খুঁজেছিলো সারা দেহে কাটাকুটি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটি শব। সাদা-আবৃত মিছিলের প্রতিটির আবরণ খুলে অবশেষে একটি জমিন পেয়েছিলো সে।

ঠিক মাঝ বরাবর হিংস্র নখের আঘাতে উঠে এসেছিলো সমস্ত ফসলের শেকড়। মৃত জমিনে আর কোনো শস্য ঘুমে নেই-- জেগে ওঠার অপেক্ষাতে।

বসন্ত-উদ্যান হতে নিঃসৃত গোলাপী আগুন থেকে-- উঠে আসে গোলাপ, রজনীগন্ধা আর বকুলের ডালা। মোহনীয় দৃশ্যে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই; বায়বীয় বর্ষণের অপেক্ষায় কিংবা শবের মিছিলে গোরখোদক আদতে কার কবর খুঁড়তে এসেছে-- তখনো ভাবছে নিজমনে।

কোনো এক গ্রামের পৌরানিক ভ্রমে একমাত্র জীবিত প্রাণরূপে যে; গল্পের অগণিত শবের মিছিল শান্ত করতে ঠিক কতোটি কবর খুঁড়তে হবে তখনও জানে না সে।

আদি, অন্তে কিংবা গল্পের মধ্যমাংসে বর্ণনার কোথাও জানে না, ঔরসজাত চঞ্চলা হরিণী চোখের সুদর্শনার প্রেমবিলাপে রচিত এই শবের মিছিল অথবা গোরখোদকের করুণ উপাখ্যান...

 

 

 

 

রূপকথা সত্যি ভেবে ভেবে


অনেকদিন পর মনে হলো

বহুদিন কারো মিথ্যে বাহানা

সত্যি ভেবে কষ্ট পাওয়া হয়না

কি সুন্দর মিথ্যেগুলো!

নিখুঁত গল্পে মিথ্যা বর্ণনায়

জিভের ডগায় উঠে আসতো

কতো করুণ অশ্রুপাতে ভেসে

বোকার মতোন সেসব গিলে

অহেতুক কান্না-জলে ডুব-সাঁতার

দৌঁড়ে যেতাম এখানে সেখানে

হঠাৎ কোনো অচিন বাঁকে থেমে

জেনেই যেতাম মিথ্যেগুলো সব

হয়তো কারো কারো প্রিয়জন

হয়তো কারো হিংসুটেজন সেজে

আজ অনেকদিন পর মনে হলো

কতোদিন মিথ্যা গল্পের মিথ শুনিনি

কতোদিন হয়তো বহুদিন কারো অবয়বে

কেউ গল্প শোনাতে আসে না

অনেকদিন ঠকায়নি কেউ

ইশকুলে নতুন কিছু আর শিখিনি

 

 

 

 

 

অদ্ভুত প্রেম ছিলো ডালে ডালে


কাছে এলে দ‚রে যায়

দ‚রে গেলে কাছে পায়

গোলক ধাঁধাঁয় আটকে আছে

জী ব ন...

সুখের খোঁজে উদ্ভট উচাটন

ম ন...

পৃথিবীর পথে পথে দুঃখ

বা গা ন...

মানুষের জীবনে অদ্ভুতুড়ে ঘটন

সঙ্কিত জীবনে

তবুও

মানুষ খোঁজে

মা নু ষে র ম ন...

 

 

 

 

নাগরিক নগরের ব্যস্ততা অথবা তুমি


প্রত্যেকেই একটা ব্যস্ত নগরী

তার ভেতর বাহিরে কতো শতো

কংক্রিট দেয়াল গড়ে তোলে

তার মাঝেও সুশোভিত বাগান

অসংখ্য ফুলে রঙে উচ্ছাসে

বসতি গড়ে ওঠে আনাচে কানাচে

সেইসব কংক্রিট দেয়ালকে আঁড়াল ভেবে

কেউ লুকোতে চায় পরাজয়ের গ্লানিতে

কেউ সবটা হাতিয়ে নেবার লোভে

ব্যস্ত শহরের কে কখন কার হয়ে

ফুল চুরি করে খালি করে বাগান

কে সর্বস্ব নিয়ে লুকোয় অন্য শহরে

কার দূরভিসন্ধিমনে বিষাদের অন্ধকার

কার ইচ্ছেতে ছিলো প্রকৃত আশ্রয়

এসব জানতে চেয়ে শহরের শাসক

প্রিয়তম কারিগরের খোঁজ হারিয়ে

একা একাই গড়ে তোলে প্রচ্ছন্ন দেয়াল

শহরজুড়ে শত শব ছড়িয়ে ছিটিয়ে

কংক্রিট দেয়াল ভেঙে ফুলেল মধু খেতে

কেউ নিজেকে আঁড়ালে রাখতে

আর কেউ প্রকৃত সেজে

বাগানে নতুন ফুল চাষে উদ্যত হয়ে

অথচ-- দীর্ঘদিন ফুল-গন্ধে কারফিউ

সব বাগান পুড়ে গেছে প্রতিহিংসার ঝড়ে

ক্ষরণের দাগ এখনো লেগে আছে পথে

আর সেখানে ভালোবাসার উচ্চারণ

স্বভাবসুলভ প্রশ্নবিদ্ধ!

 

মাহফুজ মুজাহিদ এর আরও কবিতা পড়ুন


Post a Comment

0 Comments