ইমাম মেহেদী’র গল্প ।। জাদুকরের প্রেম

The story of Imam Mehdi jadukorer prem



সেতুর সাথে জাদুকরের পরিচয় ফেসবুকে কয়েকবছর আগেই। এতদিন হায়-হ্যালোর মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকলেও ইদানিং দুজনার আলাপচারিতা ভালোই জমেছে। সেতু খুব গুছিয়ে সুন্দর করে কথা বলে আর জাদুকর কথায় কথায় কথার ফুলঝুরি ছোড়ে। সুন্দর কথার কারণেই জাদুকরের  প্রকৃত নাম পরিবর্তন হয়ে জাদুকর পরিণত হয়েছে। সেতু তাকে আদর করে জাদুকর বলেই ডাকে। সারাদিনই ম্যাসেঞ্জারে ভাবের আদান-প্রদান বিনিময় হলেও সন্ধ্যার পর থেকে রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত সেতুর সাথে  ভালো সময় কাটছে জাদুকরের। দুজনায় কয়েকবছরের পরিচিত হলেও কেউ কারো সাথে দেখা হয়নি। জাদুকর শহরের একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির কর্মকর্তা। সেতুও শহরের সরকারি কলেজের মাস্টার্সের ছাত্রী। দুজনায় কথার ছন্দে হারিয়ে যায় কারণ সেতু বাংলায় মাস্টার্সে পড়াশোনা করে অন্যদিকে জাদুকর বাংলা সাহিত্যে পড়াশোনা শেষে এখন চাকুরি করছে। জাদুকর লেখালেখি ও গবেষণা করে। 

সেতুর বিয়ে হয়েছে দুবছর হলো। স্বামীর সাথে থাকে রাজশাহীতে। হঠাৎ পরীক্ষার জন্য চুয়াডাঙ্গায় এসেছে মায়ের কাছে। টার্মপেপার জমা দেওয়ার জন্য সে চুয়াডাঙ্গা থেকে আগামীকাল কলেজে আসবে জানিয়েছে জাদুকরকে। জাদুকরের সাথে দেখা হবে।  দুপুর বারোটায় জানালো সেতু সে এখন ফ্রি। জাদুকর জানালো ৩০ মিনিটের মধ্যে কলেজের সামনে আসবে। সেতু জানিয়ে দিলো সোজা মৌবনে গিয়ে বসবো, দুপুরের খাবার খাবো একসঙ্গে এবং গল্প করবে।

জাদুকর তার বাইক হকিয়ে ১২ টা ৪০ মিনিটে কলেজের গেটে পৌঁছাতেই সামনে এসে দাড়ালো সেতু।  জাদুকর শুধু একবার তাকিয়েই বললো বাইকে ওঠো।

সেতু কোন আপত্তি না করে মিষ্টি হেসে বাইকে উঠে বসলো। জাদুকর ভেবেছিলো, হাজার হলেও প্রথম দেখা অন্যদিকে তার সঙ্গে প্রেম কিংবা বা রক্তের সম্পর্ক না। কিছুটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দুজনার। বাইকে কি উঠবে! না উঠলে তখন দেখা যাবে।

দুজন গিয়ে মৌবন রেস্টুরেন্ট বসে জাদুকর বললো, তোমাকে আমি দুপুর ২ টা পর্যন্ত সময় দিতে পারবো।অফিস থেকে আসছি তো। কী খাবা বলো?

সেতু কোন আপত্তি না করে বললো, দুপুর যেহেতু হয়ে গেছে, দুপুরের খাবার খাবো। মৌবনের কাচ্ছি আমার পছন্দ।

সেতুর মুখোমুখি বসেছে জাদুকর। কি সুন্দর পরিপাটি গোছালো মেয়ে। ছবিতে যা দেখেছি বাস্তবে তার থেকে শতগুণ সুন্দর। হাসলে গালে টোল পরে, চাপা হাসি। লাজুক চেহারা। দু হাতে গতরাতে মেহেদী দিয়েছে। নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। কালো পোশাকে সেতুকে অনেক সুন্দর লাগছে। জাদুকরকে কিছুটা আনমনে দেখে সেতু বললো, কি ভাবছেন?

সেতুর প্রশ্নে অবচেতন মন ফিরে এলো খাবার টেবিলে। জাদুকর এবার মিষ্টি হেসে বললো, সেতু তোমাকে একটা কথা বলতে চাই-
তুমি বাস্তবে অনেক সুন্দরী। মিষ্টি চেহারার মেয়ে। তোমার আন্তরিকতা, রুপ-লাবন্য দুটোই মুগ্ধ করেছে আমাকে। এই শহরে তোমাকে কেন যে আগে দেখলাম না, পেলাম না। তোমার মত একটা মেয়ে আমার জীবনে বড্ড বেশি প্রয়োজন ছিলো, বলতে পারো এখনো আছে।

সেতু প্রতি উত্তরে জানালো আপনিও অনেক সুন্দর মনের পজেটিভ মানুষ। আমি আপনার লেখা ও কথার ভক্ত। আপনার একটা দারুণ প্লাটফর্ম আছে। ফেসবুকে আপনার কর্মকান্ড দেখি। আপনি এতদিন কোথায় ছিলেন, কোথায় ছিলেন আমার বিয়ের আগে?

ইতোমধ্যে খাবার এসেছে টেবিলে। সেতু মেহেদী রাঙানো সুন্দর হাতে টিসু দিয়ে চামচগুলো পরিস্কার করে দিলো। পানির বোতলের মুখ খুলে সামনে গ্লাসে দিলো। প্লেটের খাবার থেকে সুন্দর করে ঝালমশলা সরিয়ে সামনে এগিয়ে বললো খেতে থাকেন।

সেতুর মধ্যে লাজুকতা আছে কিন্তু কোন সংকোচ নেই। মনে হচ্ছে বহুবছরের পরিচিত। মেহেদী রাঙানো সুন্দর হাতের প্রেমেও পরে গেলো জাদুকর। মুখোমুখি বসে সেতুকে দেখছে আর ভাবছে এই তো আমার সেই স্বপ্নময়ী নারী। এইতো সেই কল্পকথনের মানুষ। যতোই দেখছি ততোই মুগ্ধ হচ্ছি। আমি কি সেতুর প্রতি দূর্বল হয়ে যাচ্ছি! আর হলেই সমস্যা কি, আমি কবি, আমি কথার জাদুকর, আমি প্রেমিক। আমি কবিতা ভালোবাসি, আমার কবিতার বিপরীত শব্দ হলো প্রেম। তাহলে সমস্যা কোথায়! 

হঠাৎ জাদুকরের মাথা গরম হয়। জাদুকর ভাবে আমি এসব কি ভাবছি! সেতুর সঙ্গে প্রথম দেখা। যেমন সুন্দরী তেমনি মিষ্টি ব্যববহার। তাছাড়া সেতু বিবাহীত। আমি তার প্রেমে কিভাবে পরি! কিসব ভাবছি এসব। আমার মাথায় এসব কেন আসছে! না এসব ভাবনা ভাবা যাবে না। জাদুকর খাবারে মনোযোগ দেয়।

আবার জাদুকরকে সারপ্রাইজ দিলো সেতুর ব্যবহার। তার কোমল হাতের সুন্দর আঙুলে ছড়ানো মাংশের টুকরো ছোট ছোট করে উঠিয়ে দিচ্ছে জাদুকরের প্লেটে। জাদুকর খাচ্ছে আর ভাবছে, সেতু এসব কি করছে, আমাকে এত টানছে কেন, আমি যা পছন্দ করি, যা ভালোবাসি সবগুলো ব্যবহারই মনে হচ্ছে সেতুর আছে, আমাকে এত মুগ্ধ কেন করছে সে! সেতুর ডান হাতের সোনালি ব্যসলেটাও ইতোমধ্যে নজর কেরেছে। পায়ে পায়েল দিয়েছে।

ঘড়ির কাটা ইতোমধ্যে দুইটার কাছাকাছি। জাদুকরের অফিসে যেতে হবে। বেশি সময় তো থাকতে পারবে না। অন্যদিকে সেতু চুয়াডাঙ্গা ফিরে যাবে। দুজনায় খাবারের পর্বশেষ করে বিদায় নিবে। জাদুকর বললো বাইকে উঠো তোমাকে বাসস্ট্যান্ডে দিয়ে আসি। সেতুও মিষ্টি হেসে মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো। 

বাসস্ট্যান্ডে বাইক থেকে নামিয়ে দিয়ে সেতুকে সামনে দাড় করিয়ে জাদুকর  বললো, তুমি এসেছো আমি অনেক খুশি হয়েছি। তোমার সঙ্গে এই স্বল্প সময়টুকু আমার আজীবন স্মৃতি হয়ে থাকবে। তুমি অনেক ভালো থাকবা। দোয়া রেখো আমার জন্য। শোন- তুমি সত্যিই অনেক সুন্দরী। 

সেতু এবার গালভরা হাসি দিয়ে বললো, যান যান, অফিসে যান, লেট হয়ে যাচ্ছে। ভালো থাকবেন বলে কয়েক পা এগিয়েই পেছন ফিরে বললো, শোনেন, আপনার সঙ্গে যখন প্রথম পরিচয় হয়, তখন কিন্তু আমি সিঙ্গেল ছিলাম...


Post a Comment

0 Comments