চৈত্র মাসের প্রথম বৃষ্টি। বৃষ্টিরও প্রথম দিন বলা যেতে পারে। কারণ শীত পেরিয়ে বৃষ্টির মৌসুম শুরু হলো। অবশ্য গত দুদিন ধরেই মেঘলা আকাশ। রাস্তাঘাটে হাল্কা পানি জমেছে। ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতেই একজোড়া পা নজর কাড়লো শুভর। এক পায়ে কালো পায়েল। রাস্তা পার হতে হাত দিয়ে খানিকটা বোরকা উচু করতেই পু্রো একজোড়া নগ্ন পায়ের সাথে চোখের মিলন হলো শুভর। সাদা ফর্সা রঙের মেয়েটির মুখে মাস্ক। বোরকা পরা মুখখোলা মাথায় হিজাব বয়স হবে বাইশ কিংবা তেইশ। চোখ আর হাত, পা, ছাড়া বলা যায় পু্রো শরীর ঢাকা।
রাস্তা পার শেষে ক্যাম্পাসের গেট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো মেয়েটি। শুভর দৃষ্টি কোনমতেই এড়ায় না। শুভ মেয়েটির পিঁছু পিঁছু হাঁটছে আর ভাবছে, একটি মেয়ের পা এতো সুন্দর হতে পারে! দুটি পায়ের মেলবন্ধন এত দৃষ্টিনন্দন হতে পারে! আহ! এত জাদুকরী পা। মেয়েটি তার প্রতিটি পা ফেলছে আর শুভ দেখছে। এ যেন সৌন্দর্যের বৃষ্টি আকাশ থেকে নয় জমিন দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে স্বর্গরাজ্যের দিকে।
শুভর পিঁছু পিঁছু হাঁটতে দেখে মেয়েটি একবার পেছন ফিরে তাকায়, আবার সামনে চলতে থাকে। শুভর দৃষ্টি এড়ায় না ক্যাম্পাসের শত শত মেয়ের মধ্যেও । মেয়েটির শারীরিব উচ্চতা, গঠন-গড়ন, বয়স, সৌন্দর্য কোনকিছুই শুভকে আকৃষ্ট করে না কিন্তু একজোড়া পায়ের নেশায় মগ্ন হয়ে ছুঁটতে থাকে।
মেয়েটি এবার একাডেমিক ভবনের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে থাকে। শুভ পিছু ছাড়ে না। মেয়েটি ডানে বাঁয়ে না তাকিয়ে সোজা তৃতীয় তলায় ৩০১ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করে। শুভর গন্তব্য এবার থেমে যায়। শুভ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে বেলা ১২ টা বাজে। বুঝতে পারে এখন ক্লাসের সময়। এবার তার হাঁটা থামায় শুভ। সিঁড়িতে দাড়িয়ে কি যেন বিড়বিড় করে বলে আর ভাবে-কেন ছুঁটছি, কার জন্যে ছুঁটছি, মেয়েটি কে, কোন কিছুই তো জানি না, তাহলে কেন আমি ভাবছি! শুভ নিচে নেমে এসে দাড়ায়।
নানান শিহরণ শুভর ভিতর মাথাচাড়া দেয় কিন্তু একজোড়া পা শুভ ভুলতে পারে না। বাঁ পায়ের পায়েল আর খালি ডান পা শুভর চোখে ভাসে। ভেসে ওঠে অবিরাম বৃষ্টির রাশি রাশি জলের সঙ্গে দুটি পা যেন মৃদু নন্দতত্বে এগিয়ে যাচ্ছে।
শুভ এবার একাডেমিক ভবনের সামনে অবস্থান নেই। আবার ফিরে তো আসবে মেয়েটি। নিশ্চয় আসবে, এই পথ ধরেই সে হেঁটে যাবে। মাত্র ৪৫ মিনিট ক্লাস, দেখতে দেখতে চলে যাবে।
অপেক্ষার সময় এবার যন্ত্রণাদায়ক হয়। বার বার ঘড়ি দেখে কিন্তু সময় শেষ হয় না শুভর। প্রতিটা মিনিট যেন ঘন্টার মত লম্বা হতে থাকে। মাত্র ৪৫ মিনিট সময় শুভর কাছে এখন ৪৫ ঘন্টা মনে হয়। বারোটা ৪৫ বেজে গেছে কিন্তু মেয়েটি এখনও বের হয় না কেন। তাহলে কি অন্যপাশ দিয়ে চলে গেছে! নাহ! তা কি করে হয়। যাবার পথ তো একটায়। ক্লাস থেকে বের হওয়া প্রতিটি মেয়েদের মুখ ও পায়ের দিকে এমনভাবে তাকায় শুভ, যেন বন্দুকের গুলি মিস হলেও তার দৃষ্টি না এড়ায়।
অবশেষে মেয়েটি এবার হাঁটতে হাঁটতে বের হয়। শুভর ভিত্তর অপেক্ষার প্রহর শেষে বিশ্বজয়ের উত্তেজনার শিহরণ জাগে। হাঁটতে থাকে মেয়েটি। শুভ একজোড়া পায়ের পিছু হাঁটতে থাকে। চোখ তার ঐকজোড়া জাদুকরী পায়ের দিকে।
মেয়েটি এবার রিক্সার জন্য দাড়ায়। শুভ হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করে- শোনেন?
মেয়েটি এবার মিষ্টি হেসে রিক্সায় উঠতে উঠতে বলে আপনি আমার না আমার পায়ের প্রেমে পড়েছেন!
লেখক ও কর্মকর্তা
রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়
কুষ্টিয়া।
0 Comments