তৃণলতা কুরচি’র সার্কাজম ও অন্যান্য পাঁচটি কবিতা

Sarcasm and five other poems by Trinalata Kurchi




সার্কাজম 


প্রতিদিন পার হওয়া পথচারীর রাস্তার মোড়ে 

অর্ধেক-লোমশ-শ্রীহীন কুকুর

কখনও শুয়ে থাকে

কখনও হাঁটে

আবার পেছন পেছন যায় মাঝেসাঝে। এরা পথচারীর

অধিকারের অধীনস্থ সব অবস্থাতেই–চাইলে একটা

লাথি তো দিতেই পারে। কারণ কুকুর তো কুত্তা, তার

আবার ব্যথা কী! 

তাছাড়া মানুষের ইচ্ছার তো একটা দাম আছে না-কি? 


কিন্তু  ফলপ্রসূ পথচারীকে উল্টো ঘেউঘেউ করা

যাবে না। দৌড়ে কামড়ানোর উদ্রেক হওয়া যাবে না। 

ক্যান যাবে, মানুষ তো বড়মাপের জিনিস–

তাঁদের একটা মান-ইজ্জত-সম্মান আছে, না!




ততদিন অপেক্ষা


ব্যথাটা অস্বচ্ছ, ধীরে বইছে ধমনীতে

তবুও আমূল ছড়িয়ে পড়া টের পাচ্ছি।


একটা একটা পাপড়ি ছুঁয়ে দেখতে না-পারার 

অপূর্ণতায়, বাঁহাতের অনামিকাটাও 

ক্রমশ কুঁকড়ে যাচ্ছে,

লাল পলাশ ছোঁয়ার সীমানা ছাড়িয়ে 

সুদূর গাছে ঝুলছে।


ব্যথাটা স্বচ্ছতা পেলে: 

তুমুল সংঘাত ঘটাবে দুই মেরুর মেঘ


আকাশ ভাঙা বৃষ্টি-মিছিল হবে

শ্লোগান তড়পাবে

অজানিত ভাষার সঙ্গমগীত;

ততদিন অপেক্ষা





নিধিবন


কেমন আছে, নিধিবন?


নিধির গভীর অরণ্য জুড়ে কোন পাখি ওড়ে

কোন পাখি ডানা ঝাপটায় পূর্ণিমায়, বসন্তে

বুকের চূড়ায়!


পলাশের পাপড়িতে ঢাকে কোন

পাখির পালক?


এখন দোলে রঙিন হয়–

আবীরের তিলক নেয় ভরদুপুরে?


কোন পক্ষী ডানা মেলে দেয় রাতে

তারা গুনে গুনে


নিধিবনে, চাঁদের নিচে

একটি তারা–

টিপ হয়, ১৬১০৮টি বৃক্ষের কোনটির

কপাল জুড়ে?


গোপিনীদের কার তৃষ্ণা মেটাতে

নিধিবনের বাঁশি বানায়

বিশাখা কুণ্ডু!


শত সহস্র কুসুমরেণু গায়ে মেখে মেখে

নিধিবন, কোন ফোয়ারায় ভেজে…






মেটে ঝুঁটি সারস 


খুব বেশি কিছু নয়

ছোট্টো ফোয়ারা থাকা অরব-বন


নিমগাছের ডালে দড়িতে বাঁধা

পাটাতনের দোলনা, আর


হঠাৎ বইয়ের ভাঁজে একটা শব্দ অথবা 

বাক্যে যদি মনে ভেসে ওঠে মুখ

তবে যেন, ডেকে ওঠে মেটে ঝুঁটি সারস


চাওয়ার এই অনুষঙ্গটুকু-ই ছিলো


কিন্তু এই-জন্মে তা আর হলো কই, ঈশ্বর?





অন্যকোনো ডাইমেনশনে 


ঘড়ির কাঁটা ফুটে গেলে সময়ের গায়

সকল প্রেম অসুখে ভোগে


সুখকে পরিমাপযোগ্য করায়

অসুখে পিষা প্রেম, সুপ্ত যা-কিছু ঢেকে 

ভারী প্রলেপ দেয় আকাঙ্ক্ষার শরীরে 


আরোগ্য পিপাসায়

ফুরিয়ে যাওয়ার ভান নিয়ে 

মাহাত্ম্য আঁকে পৃথিবীর পৃষ্ঠায়


তবুও কালের দ্রাঘিমা সাক্ষী

নিঃশেষ ব'লে কিছু নেই কোথাও


ঠিক যেমন দেহ থেকে প্রাণ বেরিয়ে 

অন্যকোনো ডাইমেনশনে

ভিন্ন রূপান্তরে বহাল তবিয়তে রয়


Post a Comment

1 Comments

  1. ভালো লাগলো।

    অজানিত ভাষার সঙ্গমগীত;
    ততদিন অপেক্ষা

    কিংবা

    হঠাৎ বইয়ের ভাঁজে একটা শব্দ অথবা

    বাক্যে যদি মনে ভেসে ওঠে মুখ

    তবে যেন, ডেকে ওঠে মেটে ঝুঁটি সারস


    চাওয়ার এই অনুষঙ্গটুকু-ই ছিলো


    কিন্তু এই-জন্মে তা আর হলো কই, ঈশ্বর?

    ReplyDelete