সংখ্যাতত্ত্ব
একদিন যে-চোখের অবারিত দিগন্ত ও দৃশ্যপট সোনালী ফসলের মতো শোভা ও স্বাস্থ্যে ভ'রে উঠেছিলে অনন্ত কল্যানে,
সে চোখ আজ নীল মাছি;
স্বপ্নহীন বিরামহীন অনন্ত মৃত্যুর প্লীহায় সেখানে বিরান নিস্তব্ধতা-
গভীর অন্ধকার!
যে-বুকে একদিন অমিত সম্ভবনা নিয়ে জেগে উঠেছিলে ঘাস হয়ে
আর আমি ভুলেছিলাম গোটা জীবনের সবকটা ভুল,
কদর্য ছেলেবেলার উপোস বিকেল,
ভুলেছিলাম বাবার মদ-চোখ শাসনে কেঁপে ওঠা হৃদয়ের গোলযোগ!
যে বুকে একদিন পালকের মতো ভেসে-ভেসে নেমে এসেছিলে অন্যলোক হতে,
সে-বুকের এধার থেকে ওধারে
ভিতর থেকে বাহিরে
এখন বিহ্বল হরিণেরা দাপিয়ে বেড়ায়!
কতটা অসহায় হলে আত্মহত্যা চিন্তা হয়ে ওঠে ফুল?
আমার আঙুল গুলোকে আমি কখনোই ভালোবেসে যত্ন নিতাম না,
সম্ভবত চোখে পড়তো না কিংবা আমি অন্ধ ছিলাম কিংবা আঙুলহীন বিকলাঙ্গ ছিলাম!
যেদিন তুমি স্পর্শ করলে আমার আঙুল-
তখন মনে হলো আমার আঙুল আছে,
আঙুল বেয়ে নিচে নেমে গেলেই সেখানে আয়ুরেখা আছে।
সম্ভবত সেদিন ই আমার মনে হয়েছিলো-
আমি বেঁচে আছি,
আমার অস্তিত্ব সমান গুরুত্বপূর্ণ ও সুখকর হয়ে উঠেছিলো দশটি আঙুল, হাতের তালু, আয়ুরেখা!
বহুদিন তোমার স্পর্শহীন আঙুলে ফুলের পরাগায়ন ব্যর্থ,
সেখানে আজ উপজীবী ছত্রাক;
হাতের তালুতে সরকারি খাদ্য গুদামের একযুগ ধরে নষ্ট হতে থাকা চালের মতো অন্তঃসারশূন্য , মূল্যহীন কদর্য আয়ুরেখা।
এভাবেও মানুষ বাঁচে বয়সের সংখ্যায়
কান্নার মতো টলমল!
সম্মোহন
সেগুন কাঠের মিহি গুড়োর মতো আমাদের সেই একান্ত বিকেল,
নরম জলে বৃষ্টির সিম্ফনি মাখা দু'পাড়ের প্রতিশ্রুতি;
ইথারে ভেসে যাওয়া জলজ জীবন
আর মখমল খোয়াবে আছন্ন দু'টি পৃথক জানালার অভিন্ন আকাশ!
একবছর বা বলা ভালো
অর্ধেক শীত আর অর্ধেক বর্ষা
আমরা হেঁটে গেছিলাম একসাথে বহুদূর-
সাভানা থেকে টাইগ্রিস
টম হ্যাঙ্ক্যস থেকে প্রিসলি
শেষের কবিতা থেকে মাধবীলতা।
হেঁটে যেতে-যেতে মনে হয়েছে
কয়েক লক্ষ জনম কেটে যাচ্ছে নিমিষে!
উজ্জ্বল জন্ম আর সোনালী সুখকর মৃত্যুর ভিতর দিয়ে যেতে ও আসতে
আমরা জিরান দিয়েছিলাম অনন্য মুগ্ধকর দেরিদা,
জয় গোস্বামী, র্যাবো এবং জীবনানন্দে!
ঠোঁটের কোলাজে গান ও নীরবতা নিয়ে আসতেন রবীন্দ্রনাথ,
আর এভাবেই মেগাবাইট পুড়িয়ে আমরা উজ্জ্বল করতাম রাতের অন্ধকার,
ইথারে ভেসে-ভেসে মিশে যেতাম শরীরে, শোভায়।
মাত্র অর্ধেক বর্ষা পেয়েছিলাম তোমায়
আর তুমিও আমাকে পেয়েছিলে মাত্র অর্ধেক শীত
অথচ ঐ সামান্য সময়কে তুমি অনন্ত বিস্তৃত করে আমাকে দিয়েছিলে
পায়রার নরম শরীরের মতো রাশি-রাশি স্বপ্ন ও সম্ভাবনা,
দিয়েছিলে করতলে গোলাপের অপরাধ কাটিয়ে স্তনের বিনয়!
আর আমিও অর্ধেক শীত জুড়ে তোমাকে দিয়েছিলাম শীততাপ নিয়ন্ত্রণের প্রপঞ্চ কাটিয়ে
মাংসের বিদ্যুতে ফুটে ওঠা ঘামের কলরব!
নিয়ন সাইনের সন্ধ্যায় আমরা হেঁটে গেছিলাম স্ট্রিট লাইটের ছায়া গুনে,
লোকের চোখ ও ঈর্ষার পাশ কেটে তোমার ঠোঁট,
তোমার আধোবুলি আর আমার স্পর্শের স্পর্ধা শরীরে মেখে কতযুগ যেনো চলে গেছে ফাঁক গলে!
কত যুগ? একলক্ষ বছর বা তারও বেশি
মৃত্যুর মত অনন্ত অচৈতন্য মহাকাল?
তোমার তালুতে নিভেছিলো একটি শীত বা কয়েকটি কবি জীবন বা শত জন্ম ধরে যুবকের আয়ু?
বহু বিগব্যাং, বহু জন্ম আর সহজ সরল বহু ছোট-ছোট মৃত্যু পান করে
বহু জন্মান্তর আমরা একসাথে ছিলাম?
মানুষের ভিতরে আজও প্রেম দেখি,
নগরের রাস্তায় পায়ে-পায়ে প্রতিশ্রুতি ও বিভ্রমে ঠাসা সময়, রক্তের প্রবাহ;
যেমন আমরাও সেইসব দুপুরের রোদ মেখে চুলের অন্ধকার দিয়ে বানাতাম মেঘফুল!
রাত ঘন হয়ে এলে মেগাবাইট স্কাইলিফ্টে করে চলে যেতাম চ্যাটবক্সের গভীরে, আরও গভীরে...
তোমার আধেক ইশারায় বখতিয়ারের বাদামী ঘোড়া জেগে উঠতো কবর ও নিরবতা খান-খান করে,
আর আমার ব্ল্যাক ম্যাজিকে তুমি হতে পরমা আফ্রোদিতি!
সবুজ বাতি নিভিয়ে, আড়ালে;
দূরবীন দূরে যার-যার পৃথক যাপনে থেকেও রাতের গভীর অন্ধকারে ছয় ইঞ্চি ডিসপ্লেতে গোটা জীবন!
লো'ব্রাইটনেস চোখে সয়ে আবেগের সংসার,
অনাগত স্বপ্ন টেনে নামিয়ে রক্ত মাংসের বদলে বিভ্রম ও আবেগ দিয়ে তৈরি বাচ্চার ডাক নাম নিয়ে
বাচালতা,
দীর্ঘ অপচয়!
এমন অপচয় বা স্বপ্নে-
হেসে, কেঁদে, সুখে, অসুখে, অভিমানে
জলে,অনলে, নাভীতে, চুম্বনে
শরীরে, গভীরে,ঘুমে ও তন্দ্রায়,স্বপ্ন এবং স্বপ্নদোষে কেটেছিলো গোটা মায়ান ক্যালেন্ডার
অথবা জন্ম-মৃত্যু- জন্মান্তর!
অথচ মাত্র কয়েকটি মাস,
অর্ধেক শীত আর আর অর্ধেক বর্ষা!
হঠাৎ একদিন কোনো এক দুপুরের রোদ নিভে যাবার প্রারম্ভে তোমাকে আবিষ্কার করি মাধুর্যহীন,
নিউমার্কেটে অবিক্রিত তাৎপর্যহীন সস্তা বই যেনো,
পড়া হয়ে গেলে হৃদয় ও শরীরে ফুটে না জুঁইফুল!
কী আশ্চর্য্য! তুমিও সেদিন ভাস্কো দা গামা
আমাকে আবিষ্কার করলে মানুষের মজলিসে খুব সাধারণ!
যেনো আমি বহুবার পড়া শ্লোক
ন হন্যতে হন্যমানে শরীরেঃ
তারপর আমরা টের পাই বিবিধ নিরর্থকতা,
বহু তুচ্ছতায় শীত ও বর্ষার বিভ্রম কাটিয়ে দৈন্য ও সত্য হয়ে উঠে ডিএনএ'র প্যাঁচানো সিঁড়ি,
সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠেন মহামান্য ফ্রয়েড!
সবুজ বাতি জ্বালিয়ে দেখি ঘরময় অন্ধকার,
যেনো রাতের মহাকাশ!
বহুদূরে.. নক্ষত্রের মতো নিভে যায় শরীর;
রূপকথা নিভে যায়।
নিভে যায় জন্ম-মৃত্যুর ঘোর,
কথা ও আবেগের কৌতুক ম্লান হয়ে আসে দৃশ্য ও দৃশ্যহীনতায়!
শীতের কথা ও বর্ষার কৌতুকপ্রবণ ছবি'র জঞ্জালে ভরা ফোল্ডারে নিদারুন স্টোরেজের অপচয়,
সাশ্রয়ী হয়ে উঠলে-
রিসাইকেল বিন-এ
অন্তঃসারশূন্য আকাশ, অন্ধকার, মিথ্যা, বর্ষা, শীত, মুঠোফোন, কথোপকথন, নাভী, দুধ ও মদের কোলাহল!
এবং তারপর
সুস্থ্য হয়ে উঠে সমস্ত অসুখ
বিভ্রম কেটে রুগ্নতা ভ'রে আসে স্বাস্থ্য
ফুটে চন্দ্রমল্লিকা!
0 Comments