জলীয়বাষ্প
জেনেছি
১০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায়
বায়বীয় হয়ে বাতাসে মিশে থাকে জল।
তাই কখনও কখনও রেটিনাকে
আলোর আরও গভীরে গুঁজে দিয়ে
খুঁজতে নেমেছি
তা’তে মিশে থাকে কি-না
ভালুকে খাওয়া অসংখ্য কন্যার
পরিজনের উত্তপ্ত অক্ষিকোটরের জল।
শুনতে চেয়েছি
ভালুকের আঁচড়ে মৃতের সজনের অশ্রুপাত
আহাজারি করে কি-না বাতাসে
গলা ছেড়ে গেয়ে-গেয়ে হাহাকারের গান।
বুঝেছি
জঙ্গলের প্রাণীর বিচার ব্যবস্থা নেই বলে
সমস্ত বায়ুকে বোবাকান্না শিখিয়েছে খুবলানো,
ছিঁড়ে-ফুঁড়ে খাওয়া দেহের পরিজন।
তাঁরা জেনে গেছে
বিশ্বের মানচিত্রে একটা স্বাধীন দেশের পরিসীমা
আঁকতে পারার সুবিধা ছাড়া আর কোন
নিরাপত্তা অথবা অধিকার দেবে না জন্মভূমি।
সুযোগের খতিয়ানে
আশ্রয়ের অধীনে রয়েছে অর্থবলে বলিয়ান
এবং রাস্ট্র নায়কের বর্তমান ও সাবেক দল।
চরাচরের
তাবৎ কৈফিয়তকে নির্লজ্জের মুচকি হাসি দেখানো
প্রশ্ন-উত্তরের তোয়াক্কার লাগামহীন উর্ধ্বে
নাম মাত্র স্বাধীন এই-ভূমি।
১৪ মে ২০২২
পাখি কথন
আমার ছোটোবেলায় আমাদের বাড়ির ছাদে, একটা চড়ুইপাখি আসত। চিলেকোঠায় দাঁড়িয়ে আমি তার সাথে কথা বলার দৃশ্য আমার দাদি দেখে জিজ্ঞেস করেছিলো ‘চড়ুইয়ের সাথে কিসের কথা’। আমি বলেছিলাম– ওঁ রোজ আসে, আমাদের অনেক কথা। উত্তর শুনে দাদি ফ্যালফ্যাল করে আমাকে দেখতে শুরু করল, এবং প্রশ্ন করেছিল, ‘তুই কি পাগল?’
আমি কোন উত্তর দেইনি। কিছুদিন পর, চড়ুইপাখিটা আর কোনদিনই আসেনি। এরপর কতদিন চিলেকোঠায় একা-একা বসে-বসে ভেবেছি– শেষবার যাওয়ার সময়, সে আমাকে বলে যায়নি কেন আর কখনও আসবে না! তারপর একদিন বড় হতে-হতে বুঝে গেছি, পাখিরা না বলেই উড়ে যায়। একদিন আমিও পাখি হব। একটা হলুদিয়া পাখি!
১০ মার্চ ২০২২
জ্বর
মায়ের বুকে– ঘুমে কিংবা জাগরণে, স্বপ্নে অথবা প্রতহ্য কাজের মাঝে, ভারী কিছুর পারায়, তাঁর সমস্ত পাঁজর গুড়িয়ে যাওয়ার উপলব্ধির কিছুদিন পর, সন্তানের গায়ে জ্বর এলে, মা বোঝেন– বুকের পাঁজর মাড়িয়ে যাওয়া ভারী বস্তুটি আদতে, তাঁর সন্তানের গায়ে আসা হাড়পোড়ানো জ্বর।
১৬ মে ২০২২
অ্যাস্ট্রোলজির ভুল ইতিহাস
কতোবার গিয়েছি শান্ত দীঘিটার কাছে, জলে আকাশের ভেসে থাকা দেখবো ব'লে– ডুবে থাকা একপাল মেঘ নিমেষে পিয়ে ফেলার প্রজ্ঞায়, তৃষ্ণায়। তারপর পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে, খুব গোপনে মনে মনে ডুব দিয়ে চলে এসেছি নতজানু হৃদয় নিয়ে। কখনও একবিন্দু জল জিহ্বা বেয়ে আলজিভ ছুঁয়ে নেমে যায়নি তৃষিত থলায়। হাঁসের জলকেলিতে উদ্বেলিত তরঙ্গ ছুঁয়ে বহুদূর উবে গিয়েছে যে-শান্ত-হৃৎবায়ু; যেতে যেতে সিঁথি কেঁটে গেছে ঝাকড়া কেশে– বাউল টের পায়নি…
কোনোদিন কাজলরঙা রাতে, শালুক-ফুলের ডাকে ঘুম ভেঙে গেলে, মনে যদি করে শিমুলতুলো ওড়া বিকেল– ক্যানোপাস নাচবে আফিমকেশের সিঁথিপাটি জুড়ে; অতলে রচিত হবে অ্যাস্ট্রোলজির ভুল ইতিহাস।
৫ জুন ২০২২
অপ্রকাশিত কবিতা
রোদ-বৃষ্টি, আলো-বাতাস, ফল-ফুল, লতা-পাতা, পাহাড়-সমুদ্র, বন-অরণ্য, নদী-দীঘি, দুব্বা-ঘাস, ঝর্ণা-অশ্রু, কান্না-হাসি, বাতাসে ভেসে থাকা ধুলা, রেললাইনের গতি, ময়ূরের পেখম, আকাশের বিজলি, জ্যোৎস্না এবং নীরবতা– এই-সবই আমি খাই। আরও খাই শঙ্খর ডাক। ঝিঁঝিঁপোকার সুর খাই। কৃষ্ণচূড়ার লাল খাই, নন্দিনী ফুলের নীল খাই। খাই সূর্যমুখীর হলুদ আর আফিমফুলের বেগুনি রঙ। প্যাঁচার ডাক খাই, শিবরাঞ্জনি রাগ খাই; সবচেয়ে বেশি খাই অন্ধকার– সে-আমার অপ্রকাশিত কবিতা।
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২
0 Comments