কেউ তুমির শ্যাডোস্কোপ দৃশ্যতরঙ্গের সাংকেতিক সন্ন্যাসী (৩) __দুর্জয় খান

Kew Tumi's Shadowscope is the symbolic monk of the visual wave —Durjoy Khan 3

“অ্যান্ড্রোনাইটিস” সন্ন্যাসীর মায়িক বিকাশ। অর্থাৎ “ অ্যান্ড্রোনাইটিস” সন্ন্যাসীর প্রতিচ্ছবি বা প্রতিবিম্ব। যেমন সূর্য এক। এই জ্যোতির্ময় সূর্য যেমন বিভিন্ন জলপূর্ণ পাত্রে প্রতিফলিত হয়ে বহু সূর্যরূপে প্রতিয়মান হয়, তেমনি সন্ন্যাসীর আত্মাও এক হওয়া স্বত্তেও বিভিন্ন অন্তরকরণ বা সংবেদবাদী অনুষঙ্গে প্রতিফলিত হয়ে বহু বলে প্রতীয়মান। অর্থাৎ পাঠকের চোখে যেমন “অ্যান্ড্রোনাইটিস ” প্রতিবিম্বিত হয়, তেমনি সন্ন্যাসীর বয়ান, শব্দ ও ব্যঞ্জণ মায়াসৃষ্ট অন্তকরণে প্রতিবিম্বিত হয়। কবিতার এই মেটাফিজিক্স সন্ন্যাসীর নিজস্ব অধিক্ষেত্র। যেখানে কবিতার নন্দনচিন্তা এক আশ্চর্য সংবেদনশীল। এই সংবেদনশীল পরমতত্ত্বের স্বরূপ ইন্দ্রীয় অন্তকরণ কিংবা অনুভবের সাহায্যে উপলব্ধি করতে হয়। তবুও তর্কের খাতিরে সংবেদনশীলের চূড়ান্ত পরিণতির ভাবক্ষেত্রটি কর্ষণ করছি। সংবেদন ভাবের দু'টি ধারণার কথা কোলরিজ বলেছেন। এক, প্রাইমারী। দুই সেকেন্ডারী। প্রথমটি মানবমনের অসচেতন ক্রিয়া যার দ্বারা মন বিভিন্ন বস্তুর ইন্দ্রীয় গ্রাহ্যের জ্ঞান লাভ করে ও তার সৃজনশক্তিতে নির্মাণ করে বস্তজগতের এক নিজস্ব রূপ। অর্থাৎ মনের সক্রিয়তার ফলে সংবেদনগুলি পরিবর্তিত হয় বোধে। আর দ্বিতীয়টি প্রথমটির তীব্রতর প্রতিধ্বনি যা এক সচেতন প্রক্রিয়ায় সমস্ত ইন্দ্রিয়লব্ধ প্রতিমা ও অভিজ্ঞতাকে একীভূত করে এক নব-সৃজনে। এই “ সেকেণ্ডারি ‘’ ইমাজিনেশন- ই কবির সৃজনী কল্পনা। তবে শেষমেষ এই কোলরিজ Fancy ভাবনা থেকে ইমাজিনেশনকে পৃথক করেছিলেন। অর্থাৎ এতোক্ষণ যে এক ও অভিন্নের মাধ্যম বা পরিণতির আলোচনা করলাম তাতে স্পষ্টতই হচ্ছে যে কবিতার এরকম অবয়ী অস্তিত্ব দু'য়ে কোনো পার্থক্য না থাকলেও বিন্যাসে এদের যথেষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যা পাঠককে ভাবতে বাধ্য করবে। আসুন আরো সহজ করতে কবিতাটি পাঠ করা যাক:





“ আনাগোনা থেকে তোমাকে যদি করা যেতেই পারে - 

যেমন-


> নূহের প্লাবন হয়নি কখনো

> হিমালয়ের জন্ম হয়েছে কি হয়নি

> আদম গন্ধম খেয়েছে কি খায়নি। ইত্যাদি। 


এমন কোনো এক পক্ষ, অধিষ্ঠানে জলের শান্ত গ্লাস —

ঠোঁটে তুলতে না তুলতে একি বাষ্প একি অধিতাপ তৃষ্ণা! 


সবকে উহ্য। এবার তাকে চেনা যেতে পারে -

নাম: সান্ধ্য 

বয়স: কেন্দ্র থেকে পরিধি 


এরচেয়ে বেশি গেলে শিউলি ঝরে। পাখিরা ভুল করে সন্ধ্যা সরণি। 

শিশুর জননীরা যায় ভুলে আধো দাঁতের নরম দংশন

বলুন মাহফিল, কোন মল্লারে তাকে খুব করে ভেজানো যেত! ”




এ প্রসঙ্গে শেলি’র একটা কথা মনে পড়ছে, তিনি বলছেন, “poetry redeems from decay the visitation of the divinity in man” এমনভাবে দেখলে শুধু কবি নবী হয়ে ওঠেন না,কবিতাও হয়ে ওঠে মানুষের সকল প্রজ্ঞার আঁধার,সবরকম জ্ঞান ও বিদ্যার পরাকাষ্ঠা। অর্থাৎ কবিতার অ্যালজেবরা হয়ে ওঠে ভ্যানিশিং ফ্যাক্টর। যেখানে মানুষের মনকে প্রচণ্ডভাবে গতিশীল ও মন নামক মনের স্ফুরণকে অচেতন করে ভাবতে শেখায়। তদুপরি প্রশ্ন উঠে, আমাদের চিন্তার তো কোনো স্বতঃস্ফূর্ত প্রবাহ নেই। অচেতন স্তরে অবদমনকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয় এক ধরনের বিপরীতমুখী ধ্রবক,বিরোধ ও বাঁধার। যেমনটি সন্ন্যাসী দু’টি পরিচয় দেবার পর অর্থাৎ “ নাম: সান্ধ্য / বয়স: কেন্দ্র থেকে পরিধি ” প্রকাশ করার পরই দ্বিবিধ আচরণে সহসাই পথ পাল্টে পরিণাম ও পরিণতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। যেখানে কবির মনকে তৃপ্ত করতে পারছে না সামাজিক নিয়ম-কানুন। তবে পরবর্তী দৃশ্যকল্পের এহেন আকৃতির স্বাধিনতায় হচ্ছে কবিতার সৌন্দর্য। এই সৌন্দর্যের ভেতর বিভিন্নমুখী ঘাত-প্রতিঘাতের ব্যাপার সহসাই ওঠে আসে। তবে আমার মতে, কবিতাশিল্প তো মানুষ ও জীবনের সাথে অভিন্ন। যেখানে কবিতাশিল্পের মাধ্যমে চিন্তার স্ফুরণকে ভেঙে ভেঙে গড়ে এক অনুপম শিল্পের জন্ম হয়। বাস্তবক্ষেত্রে সর্বদা সম্ভব না হলেও আদর্শক্ষেত্রে সম্ভব। যে আদর্শের প্রতিফল মানুষ থেকে মানুষে, সর্বমানব থেকে জীবনে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে পড়ে। তদুপরি, সন্ন্যাসীর ভেতরে যে দৃশ্য রয়েছে কোনো সমালোচনায় হয়তো তৃপ্তি দিতে অক্ষম। ফলে প্রশ্নের ব্যবচ্ছেদ না করে সংবেদনশীল হয়ে  জন্ম হতে পারে যে, এমনও চিত্রকর আছে যে যিনি একটি বিষণ্ণ ছায়া আঁকতেও সক্ষম। 





চলবে……..



 এখানে ক্লিক করে [কেউ তুমির শ্যাডোস্কোপ  দৃশ্যতরঙ্গের সাংকেতিক সন্ন্যাসী  (১ ও ২)] পড়ুন



দুর্জয় খান, কবি ও প্রাবন্ধিক 

Post a Comment

0 Comments