কেউ তুমির শ্যাডোস্কোপ দৃশ্যতরঙ্গের সাংকেতিক সন্ন্যাসী —দুর্জয় খান

Kew Tumi's Shadowscope is the symbolic monk of the visual wave —Durjoy Khan



(১) 


কেউ তুমির শ্যাডোস্কোপ। তবে কোনো সুললিত গীতাভিনয় নয়। একটা দিন। সময়। যেমন মহান বৃহস্পতিবার। মধ্যরাত। অনুভবের ব্যারিকেডে বোকা বার্কলির ধাক্কা। চিন্তার স্ফুরণ, নামেরও নামাঙ্কন। মাথার ভেতর যে একটা স্ফুরণ ঘটছে তাকে ঠিকভাবে আয়ত্ত করার চেষ্টা করছি। চেষ্টা করছি কিভাবে বাল্মিকীর কুটিরে একটা সাইপ্রাস গাছের মতো দাড়িয়ে থাকা যায়! কিভাবে অ-স্পর্শের আনন্দ -ইন্দ্রিয়-তরঙ্গ মস্তিষ্কের নিউরোন কোষে এঁটে নেয়া যায়! যেহেতু ভাবের গন্তব্য নেই। শব্দ ও ভাষার সমীকরণ নেই। ট্রাফিক নেই। মানা- না মানার দর্শন নেই। দৌড়ানোর জৈবিক সংগঠন নেই। থিমোলজির চিহ্ন-কাঠামো নিয়ে তবুও একটা পর্যায় স্থির হলো। খুব ধীরে। স্মুথলি। আঙ্গুলের চক্রবাক বেরিয়ে যাচ্ছে একটা স্বেচ্ছাচারী কায়দায়। গোটা প্রক্রিয়াটা পেলবতার এবং মসৃণতার। স্পর্শ, আস্বাদন ও ঘ্রাণ, ভাবনামুখের উৎসের নিকট আকুল দৃষ্টি নিয়ে চেয়ে আছে। যে ব্যারিকেডে ভাবের অভিব্যক্তি - ব্যঞ্জন ফুটেছিলো তাতে একধরনের বিনির্মান নড়েচড়ে উঠে। এই নড়েচড়ে উঠা কিংবা কাঁপুনির ইতিহাসটা খুব একটা অপরিচিত নয়। ছায়াসংলাপ কিংবা দৃশ্যতরঙ্গের ধ্রুপদী স্ফুরণ ঘটলে মন ও মুখোশের গতি হয়ে উঠে তীক্ষ্ণ ও ক্ষুরধার। ঠিক তখনই কাঁপুনি ওঠে। যে কাঁপুনির ভাব কোনো গন্তব্যে পৌঁছাতে দেয় না। অনুরূপ কবিতার এই শক্তি অভিঘাত, কল্পনা ও অন্তর্বাহ যাপনের জার্নি কেউ তুমির শ্যাডোস্কোপের জন্ম দেয়। যে জন্মের উচ্চারণ কবিতার সন্ন্যাসী হয়েই বিনির্মান হয়। যেখানে যাপনের তপোবল সময়ের সাথে সাথে কবিতার ভাষা ও প্রকাশভঙ্গিতে কোথাও প্রকট আর কোথাও প্রচ্ছন্ন৷ সন্ন্যাসী আরণ্যক যেখানে স্বয়ং মাধবাচার্য। তার কেউ তুমির শ্যাডোস্কোপ ভাববাদ থেকে শূন্যবাদের দিকে ধাবিত। অথচ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। এর একটি মিথ্যা হলে অপরটি মিথ্যা হতে বাধ্য। বাধ্য কিংবা ভালোমন্দ, এর কোনোটির পক্ষে উচ্চারণের গলি পেরিয়ে কেবল মাধবাচার্যের স্থুল আত্মমুখীর ছায়াসমূহের বিপুল বিস্ময় নিয়ে বিস্তারিত বলবো। লিখবো। 


সন্ন্যাসী আরণ্যক সময়ের দাবীর গোপন  আকাঙ্খা উপেক্ষা করে কবিতার যে এপিক কেউ তুমির শ্যাডোস্কোপ তৈয়ার করে নিজস্ব মিথস্ক্রিয়া ছায়াসংলাপে ঝুলিয়ে দৃশ্যতরঙ্গের সৃষ্টি করেছে তা জুলিয়াস মিথেলটার সুন্দরের হেঁয়ালি ( The Enigma of the beautiful) এর  মতন। এইসব এপিকলয় কবিতার পঙ্ক থেকে গড়ে ওঠে ক্রিয়া, চিন্তা, চরিত্র ও সাংগীতিক ব্যাকরণ। যে ব্যাকরণের ছায়াসমূহ কিংবা শব্দানুষঙ্গের সাথে সন্ন্যাসী একজন দক্ষ ড্রামবাদক। কবিতার দৃশ্যের কাঠামো সময়ের বিরাজমান সকল ‘সমূহ’ উপেক্ষিত কোলাজ এই ‘কেউ তুমির শ্যাডোস্কোপ’। ফলে দৃশ্যের বহিঃপ্রকাশ চিন্তন শিল্পকে ভাষা ও ভাবনার সংযোগে স্থাপন করে বয়ানকে করে তুলেছে বিপুল বিস্ময়! এ বিস্ময়ের আনন্দ আপাতদৃষ্টিতে শিল্পজাত অনুভূতিরই অনুরূপ। আমি ও তুমির সমমাত্রিক কাঠামোস্থিত বিষয় যেখানে অর্থ বা শব্দের সাথে সম্পর্কহীন। ফলে এই ভাষার মাঝেই সন্ন্যাসীর সত্তা বিজড়িত। এহেন ভাষাকে সত্তার কবিতা হিসেবে বর্ণনা করে ভাষাতাত্ত্বিক হাইডেগার বলছেন, “ Language is the primordial poetry in which a people speaks being. Conversely, the great poetry in which a people enters into history initiates the moulding of its language. The Greeks created and experienced this poetry thought Homer. Language was made manifest to their being - there ( Dasein)  as departure into being there ( Dasein)  as departure into being, as a configuration disclosing the essent. ‘’ 


অপরপক্ষে, ভাষার যুক্তি ও ব্যাখ্যা দিয়ে বিশ্লেষণ করা বাস্তবে অসম্ভব। এজন্য ভাষার প্রকৃত রূপ ও স্বরূপ বুঝতে হলে মৌলিক সত্তা-ধ্বনি বা ভাবধ্বনিকে কবিতার দিকে ফেরাতে হয়। আসুন পাঠ করি কেউ তুমির শ্যাডোস্কোপ থেকে দৈনন্দিন রিভার্সসমূহের “রাতবিষয়ক সন্দর্ভ” কবিতাটি:


‘ তোমাদের অংশ থেকে তুলে রাখতেই পারো

      ___রাত __

তা এমন কোনো সত্য,মিথ্যা কিংবা পক্ষহীনতা নয়


ধরা যাক, রাত একটা দাবুড়ে ঘোড়া 

 খুরে আঁকা স্বাস্থ্যবান সঙ্গমের ধ্বনিচক্র

ধরা যাক, রাত একটা মোলায়েম চেঞ্জেবল মখমল

 অনুকূল থেকে নিয়ে রং

 — বেঁধে রাখা রহস্য!


কিংবা ধরো রাত একজন কর্কটরোগী

যার সারাদেহে আর্তনাদের মর্মঘাতী স্মারক 


বহু বহু ধরার অবকাশ উত্তরে-দক্ষিণে রেখে

কোলের অতি নিকট ঘেঁষে আসো, 

রেখে আসো পুরোনো টেপরেকর্ডার 

কানেমুখে মৃদু করে শোনো, 

তোমরা যারা উনপাঁজুরে __ অধিকতর নতশির

তোমাদের সেজদার সত্য –

কোনো ঋতুতেই ফলবান নয় ”


সন্ন্যাসী খুব সচেতনভাবে পাঠককে অনভ্যস্ত যাত্রাপথের দিকে নিচ্ছে। কিন্তু তার চিন্তনের সাথে বয়ানের মর্ম খুব স্বভাবতই ক্রিয়াশীল সিদ্ধান্ত। যে ছত্রগুলো উলম্ব পঙ্কের গায়ে ছিটিয়ে রাখতে চাইছে তা নিছক শ্বাপদ নয়। প্রাথমিক বয়ানের পাওয়ার কিংবা Electric light যে প্রকাশে জাগিয়ে তুলে আলো আঁধারির উন্মুক্ত প্রান্তরে, চোখে আঁকে তীব্র মায়াজাল বা ছায়াসমূহের দৃশ্যতরঙ্গ তাতে যেকোনো পাঠক বয়ানের ভাষাকে স্থির চোখে রাখবে সন্তর্পণে। যেহেতু শিরোনামেই কবি স্বীকার করে নিচ্ছে যে এটা একটা ‘সন্দর্ভ “ সেহেতু সেখানে প্রশ্ন তুলছি না। শব্দ নিয়ে কাজ করা, বিষয়ের বিষয়ী নির্মাণ করা সীমাহীনভাবে ব্যক্তিগত। ফলে কবি এখানে যেটা অর্জন করছে কিংবা পাঠকের কাছে রেখে যাচ্ছে তা মিল, যতি, অনুপ্রাস, চিত্রকল্প, শৈলি, অভিঘাত, অন্তর্লেখন, শিরোনাম, সিদ্ধান্ত ও মুদ্রিত রূপ। যেখানে শব্দভ্রুণ ক্রমশঃ একটা গাঢ়তা গভীর করে পাঠককে সময়ের স্থির / অস্থির/ - পরিস্থিতির বিচ্ছুরণ সম্পর্কে ধারণা প্রদান করছে। এ ধরনের কবিতা লেখা হয় অর্থাৎ এমন বয়ানধর্মী কবিতা লেখা হয় নতুন, ভাবদ্যোতক ও সর্বজনবোধ্য শব্দ দিয়ে। কোমলমতি প্রেমিকারে দিয়ে। পুরোনো ঘ্যানর ঘ্যান টেপরেকর্ডারকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে চলমান ক্রিয়াশীল আত্তীকরণের পথের কথা বলা।  প্রকাশভঙ্গী বা নির্মাণের জায়গা নয় বরং ভাবের অনুপুঙ্খগুলি খুব সচেতনভাবে বলা। অর্থাৎ নিউটনের সামনে গাছ থেকে আপেল পড়লো। 


কবিতার ধ্বনি সুর উত্তুঙ্গ ফুল ফল বীজ রোপণ যার হাতে নির্মেদ শব্দক্ষেপন চিন্তার বিস্ফোরণে জন্মমৃত্যু তার আদিপ্রেরণা ও আদর্শ। এই নারকীয় বাতাবরণ বুনো সন্ধের নির্বিকার আলোয় ঠিকরে পড়ে। কবিত্বের অতিলৌলিক অনিবার্যতার সৃষ্টি সঞ্চালনক্ষম নিগূঢ় রহস্যের বিমূর্ত প্রকাশে যেনো এক রহোনামহল। সন্ন্যাসীর শব্দব্যবহার ও প্রয়োগে, বিন্যাস ও প্রতিন্যাসে তার স্বাক্ষর উজ্জ্বল। যেখানে তার pervading tone দৃশ্যতরঙ্গকে অবচয়িত স্মৃতির মেলবন্ধনে আকৃষ্ট করে। ফলে তার এই “ রাতবিষয়ক সন্দর্ভ ” এর বয়ানের ভূগোল আত্ম দ্বারা পরিকল্পিত। যেখানে আমরা কেবল পর্যটকের মতো ভ্রমণ করতে পারি। বিপুল বিস্ময়ে বুঝে উঠতে পারি আমরা পৌঁছে গেছি তার বয়ানে অথচ সেখানে কিছুই চলে না। ঘটে না। আরো স্পষ্টত হই দৈনন্দিন রিভার্সসমূহের “ নিক্রোফিলিয়া ” কবিতায়…….


ব্যাকগ্রাউন্ড / কালো পর্দা স্কুলপথ/ দৃশ্য-শ্রাব্য-হাততালি/ ঘুটঘুটে বাবলার বন/ হাত বুলাও মা / কান পাততে বলো বাবাকে/ ফান্দের বহু উর্ধ্ব/ তিরিশ বছরের পথ পশ্চিমে প্রমিত সন্ধ্যা/ উদ্যানে ছায়ার আড়াল/ এই তো চোখবাড়ি/ আমিই গৌতম বুদ্ধ/ আমিই হেরা গুহা!


দৃশ্যের পর দৃশ্যে আসা যাওয়ার মাঝে চিন্তনের গাঢ় ইমেজারের দ্রবণে দ্রবীভূত হয় পাঠক। সময় যে প্রবাহহীন, সময়ের সরল জটিল অনুনাংক ভিজিয়ে দিয়েছে সব মাধ্যম। এন্টি - বাস্তবতার সব উপাদান যার নখদর্পনে। মন ও মননে বাগর্থাতীত বিমূর্ত কল্পনা রূপ পরিগ্রহ করে এক বস্তু নিরপেক্ষ অনির্বচনীয়তায়। বয়ানের যুক্তিশৃঙ্খলা অন্তত সেরকমই ইঙ্গিত করছে। যেখানে শব্দ ও রূপের অতীত অনুরূপ বিমূর্ততায় জ্যোতির্ময়। আত্ম-মননের মিহি মৌল স্বর লুকানো উলম্বের নির্মাণ। যেখানে স্বজাত্য স্মৃতির মন্থন Divine commands থেকে উঠে আসে। যার টোটালিটি,ফিউশন,অঙ্গসজ্জা, বিন্যাস, প্রতিন্যাস সময়ের পেন্ডুলামের সাথে টের পাইয়ে দিচ্ছে। শব্দের স্থানিক অবস্থানের বিপরীতে গঠনের বৃন্ত থেকে বৃত্তে টেনে নিচ্ছে আভিধানিক কায়দায়। 


(২) 


কবিতায় যেকোনো দৃশ্যকল্প তার প্যাটার্ন অনুযায়ী মূলত ধ্বনি বা অর্থগত প্রভাব ফেলে। যেখানে একটা সম্মোহনী মস্তিষ্ক চূড়ান্তভাবে কানেক্ট করে বাস্তব বা পরাবাস্তব। শব্দবুননও  সেখানে চূড়ান্ত রূপ নিয়ে পাঠকের মননে তৈরি করে আভ্যন্তরীণ অনুরণন। ক্রিয়া বিক্রিয়া। এফেক্ট করে সেই কবি ও কবিতার নিদানকাল। অনুরণীত ধ্বনিরূপ সৃষ্টি করে ক্রিয়াশীল সাজুয্য! কেউ তুমির শ্যাডোস্কোপের দৈনন্দিন রিভার্সসমূহ পর্বের কবিতাগুলো শব্দ ও ভাব দ্বারা নির্মিত কোনো দৃশ্যকল্প এবং তার একটা ডিকনস্ট্রাকশন দাঁড় করানো হয়েছে। যেখানে সন্ন্যাসীর জমা খোলো বিদুষী রাতের থেকে উৎসারিত এক ভিন্ন প্যাটার্ন। অর্থাৎ জামা খোলো বিদুষী রাত যেখানে সৃষ্টির দ্যোতনা কেউ তুমির শ্যাডোস্কোপ সেখানে কাঠামোবাদী বিনির্মান! শব্দ যেখানে মূল অর্থ থেকে সরে গিয়ে আলটিমেটলি তৈয়ার করে একই অর্থের ভিন্ন অর্থ। অর্থাৎ কেউ তুমির শ্যাডোস্কোপে সন্ন্যাসীর শব্দবুনন অসীম অভিমুখী। সসীমে যার অবস্থান হয়েও অসীমকে আকর্ষণ করছে শব্দ ধ্বনির দৃশ্যসমষ্টি, অক্ষরসমষ্টি। যেখানে চিহ্নগত একটা প্রশ্নের উদাহরণ দিয়ে বোঝায়, মানুষ বা শয়তানকে পাপ করতে উদ্ধুদ্ধ করেছিলো কোন সত্তা? এখানে  বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তৈয়ার কাঠামোবাদী বিনির্মান। অর্থাৎ চিহ্নগত একটা দৃশ্যকল্প আকাশের চেয়েও বড়ো তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ধরনের কবিতায় ধ্রুব সত্তাকে খুঁজে পাওয়া মুখ্য নয়। চিন্তার স্ফুরণ ও ধারণার ধরণকে ছায়াতরঙ্গে অনুভব করতে হয়৷ অর্থাৎ দৃশ্যের সামনে দাঁড়িয়ে অবজেক্ট ও সাবজেক্টের স্বরূপকে নিজের ভেতরে জিজ্ঞাসার তীর ছুঁড়ে দেয়া। যেটার প্রয়োগ সন্ন্যাসী এই শূন্য দশকে এসে কবিতায় প্রয়োজনীয় করে তুলেছে। গোপন শব্দগুলোর থিসিস ইন্টারসেকশন কিংবা শব্দশৃঙ্খলের অধিতাত্ত্বিক উপলব্ধি মূলতই সত্তাকেন্দ্রিক। ফলে মনে হতে পারে সম্পর্কহীন,স্পর্শহীন ভাবনারে ছোঁয়া যেনো এক অচেনা উত্তাপ। সন্ন্যাসীর মূল যে কন্টেন্টটা তা থেকে ঠিকরে পড়ে শূন্যাঙ্ক কেন্দ্রের ফটোম্যাগনেটিক এফেক্ট! ধরণ ও ধারণার শূন্য সরণ ধ্বনিবৃত্তীয় পর্দার অভিযোজনে এসে পাঠকের তেজস্ক্রিয়তার অলীক দূরত্বে সংকেতের প্লাজমা ধরা দেয়। ধরা দেয় ঋতুগুচ্ছের প্ল্যানচেট। অথচ, সবই নির্দিষ্ট কেন্দ্র অভিমুখী। কিন্তু প্রতিসরণ তার যোগ-বিয়োগের দোলাচলে পরম্পরায় জেব্রাক্রসিং তৈয়ার করে। ধ্বনি ও শব্দতরঙ্গের চেয়ে ধ্রবক চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এসব ভাষাচিহ্নের দ্যোতক ও দ্যোতনা চরম স্বেচ্ছাচারী। প্রলাপের বিলাপ বোঝে উঠার আগেই ভাবনার আয়নাকোনের বিপ্রতীপ দূরত্ব বাড়ে। ফলে শ্যাডো বা ছায়া প্যারাডক্স ঘটিত চিন্তার কুমেরু ভেঙে চুরমার করে ফেলে। ফলে এর উভয়মুখী প্রতাপের সৃষ্টি হয়। গ্রাহ্য-অগ্রাহ্যের সমীকরণে এসে প্রশ্নের প্রশ্ন তোলে৷  যেমন প্রশ্নের প্রশ্ন তুলছে দৈনন্দিন রিভার্সসমূহের ‘ আমপারা ’ কবিতাটি….


দাঁড়ালে প্রায় 

পশ্চিম ঝুঁকে বুক — ব্লোজব ঢঙে সূর্যাস্ত 

ওড়ে গাঞ্জার নরম, ওড়ে আলগা নদী, বয় তরল আকাশ

এমন ভাটেল বেলায় তোমার কেন স্ট্রোবেরি চাইতে নাই!


দগদগে কশ নিয়ে ছটপটাই শিশু আম

চেনা জল থেকে ডাঙায় উঠি পুঁটি

শরীরভর্তি তাপ নিয়ে হই বর্ণচোর ফ্রিজ!


যিনি বাতাস — বহন করে বৈশাখের বৈকালিক

কবরের পুরোনো শূন্যতা, পরিত্যক্ত ছেঁড়া পলিথিন

আমি স্বীকার করি তার - আমার কার্যকরণ!


অধিক স্বীকার করি তোমার লাল, ও

লালের অধিক নিশান —- কী শুক্ল কী কৃষ্ণ —

যেকোনো পক্ষ্যেই যা অনবরত পতপত!


তার আগে,

উক্ত কবিতা সম্পর্কে কবি ফারহান ইশরাকের মন্তব্যটিতে চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক:


”পশ্চিম ঝুঁকে বুক—ব্লোজব ঢংয়ে সূর্যাস্ত” “ব্লোজব ঢংয়ে সূর্যাস্ত’ কথাটা সব্জিকাটা বটির মুখে তাজা গন্ধের মতো খুব টাটকা বোধ হলো। আর হ্যাঁ, অরবিন্দ, এই কবিতা আমাকে ভীষণ স্পর্শ করেছে, বলতে কি, ছুরি দিয়ে কেটে দেয়ার মতো এই সেন্সেশন! কিন্তু যেখানে শিল্প তার প্রবোধ নিয়ে সোজা দাঁড়িয়ে যায়, সেখানে যাকে বলে হাত কাটার কষ্ট, তাতেই আবার ব্লোজবেরও পুলক। সেই জিনিসটে এখানে খুব করে মর্মে প্রবেশ করতে চাইলো, বস্তুতপক্ষে প্রবেশই করলো। কবিকে নস্কার”।


ডায়াফ্রেম ধ্রবক। বলয়মুখী দ্রবণ। সব্জিকাটা বটির মুখে তাজা গন্ধের মতো খুব টাটকা মনে হলো, যেখানে “ মনে হলো ” শব্দটিই স্ট্যাটিক জানলা! যার দৃশ্য এপাশে-ওপাশে। আবর্তনের এই ঘোর, শব্দের জাফরানি জামা গায়ে বালিদ্বীপ করছে মন ও মনন। যেসব ধ্রুবক,দ্রবণ, বিপ্রতীপ,দ্যোতক,দ্যোতনার কথা পূর্বে আলাপ করলাম তার ননস্টপ বেজ বা টুংটাং আওয়াজ সন্ধিবিচ্ছেদ করে দেখুন তো! ফারহান ইশরাক বাঁশিওয়ালা। স্বপ্নফেরীর ভবিষ্যৎ নস্ত্রাদামুস। তার চোখের ভুগোল আর মননের আহ্লাদ কবিতা প্রকরণের চিন্তাকে চুরচুর করে ঘনত্ব বাড়ায়। অর্থাৎ সন্ন্যাসীর যে বিটেক্স মলম শব্দ ও ধ্বনির ভেতর লেপন করে তার আদিম বিন্দু, অলীক সরলরেখা, তাপ,চাপ, গর্ত,ত্রিভূজ সবকে সব পোলকে পোলকে ঢোলকে ঢোলকে আড়াআড়িভাবে প্রতীকি-শৃঙ্খলাকে ছেদন করে বুনন করে চলে। অর্থাৎ তার এই দ্যোতনার যাত্রাপথের প্রথম ভিত্তিই ছিলো জামা খোলো বিদুষী রাত কাব্যগ্রন্থে। সেখান থেকে আমি কবিতা অবশ্যই তুলে ধরবো তবে সেটা আরো পরে। পাঠকের ফলক নাড়িয়ে তারপর আমি জামা খুলবো বিদুষী রাতের যাতে করে বিসর্জনের ইঙ্গিত সহজবোধ্য হয়ে উঠে। 


চলবে………



দুর্জয় খান, কবি ও প্রাবন্ধিক 

Post a Comment

0 Comments