কুকুর
শরীর থেকে
বের হয়ে
চুঁইয়ে পড়া
গরম ভাতের ফেন খেয়ে
আমার ছায়ার ওপরে জিরোচ্ছে একটা কুকুর।
মন
লাল দরজা
পুড়ে
ধোঁয়া হচ্ছে
ঢুকে যাচ্ছে সাদা দরজায়....
দ্বন্দ্ব
ড্রেসিংটেবিলে
রাখা সেপটিপিন
আলনায় ঝুলে থাকা ব্লাউজের সামনে
এসে
ছিঁড়ে ফেলে
প্রতিদ্বন্দ্বী সব বোতাম।
চূড়া
মানুষ
জুতার উচ্চতায়ও বড় হয়।
দর্জি
চার্চের পাশে দর্জির দোকান
মৃত্যুর মাপে
জামা সেলাই করে ঝুলিয়ে রাখি
বিক্রয় বাড়ে
আর দীর্ঘ হয় আদমশুমারির নিখোঁজ তালিকা।
বৃষ্টিপাত
চোখে
মজুত আছে
স্থায়ী
কালো মেঘ
সব ঋতুতে বৃষ্টি হচ্ছে..
লন্ড্রি
ঢেউগুলো
ইস্ত্রি করলে শান্ত হয়ে যায় নদী
পরিপাটি জলে
ভেসে উঠে মাছের কান্না।
বিবাহ
সুঁই বিদ্ধ
দু'টি কাপড়
ভাগ্যদোষে পরস্পর আত্মীয়।
বসবাস
জলের
কয়েন জমে জমে
চোখের নিচে
বেড়ে ওঠা কালো পাহাড়ে
গড়ে উঠেছে
আমার বসতি।
ঘন্টা
হেমন্তের মাঠ
একটা পিতলের বাসন
শালিকের ঠোঁটের মতো পাকা ধান
টোকা দিয়ে উড়ে যাচ্ছে
ঘণ্টা বাজে....
মেঘদূত
জলের
ভীষণ জ্বর
বকের পা দু'টি থার্মোমিটার
তাপমাত্রা
নিয়ে উড়ে যাচ্ছে মেঘের কাছে।
বিপণন
বেগুন ক্ষেতে
চাষ হচ্ছে আমার ছায়া
বড় হয়ে
চলে যাচ্ছি
সবজি বাজারে।
রঙ
সূর্যের
রক্ত নিয়ে বেড়ে ওঠে লাল শাক
রঙ মেশানো শাদা ভাত
ধীরেধীরে
গরম হচ্ছে বিধবার শরীর।
কলঙ্ক
লাঙলের
ফলায় উঠে যাচ্ছে মাটির শরম
গমখেতে
বড় হচ্ছে ক্ষুধা
ফ্রাই প্যানে
ভাজা হচ্ছে পরোটা
পোড়া দাগ লেগে যাচ্ছে পৃথিবীর গায়ে।
জামা
প্রচণ্ড ঠাণ্ডা
ফ্যানের সুইচ অন করে
পাঁচ বছরের
মেয়েটি বলল
বাবা, "আমি তোমার জামা হই"
বললাম, হও
তারপর
চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ল আমার নগ্নতার ওপর।
‘আমার ছায়ার ওপরে জিরোচ্ছে একটা কুকুর’ কবিতাবই সম্পর্কে এই মুহূর্তের প্রতিক্রিয়া
অলোক বিশ্বাস
২০০ মাইল পথকে ২ মাইল পথে পরিণত করেন ফিরোজ শাহ, কবিতায়। অর্থ আর অর্থহীনতার মাঝখানে, আবার কখনো সেসবের অন্তিমে, জোছনাময় হাওয়ায় অদৃশ্য হ্যাঙ্গারে দুলতে থাকে ওঁর কবিতা। অর্থের মধ্যে অর্থহীনতা আর অর্থহীনতার মধ্যে আপেক্ষিক অর্থ বাজে, কেবল বেজে যায়, ওঁর কবিতায়। ওঁর কবিতায় কোনো দীর্ঘ পংক্তি নেই, একটা, দুটো বা তিনটে শব্দের প্রভাবে কতগুলো চলমান ছবি, কখনো কেবল মনস্তাত্ত্বিক ছবি। পাঠককে ফিরোজ কোনো সম্পূর্ণ কবিতা দিচ্ছেন না, কোনো কথন দিচ্ছেন না, কবিতার জন্য মিনিমাম কিছু স্ট্রাকচার দিচ্ছেন দৃশ্যভাবনায় ভিজিয়ে রেখে। ওঁর কবিতা পাঠের পর পাঠককে তাঁর মতো কবিতা নির্মাণ ক'রে নিতে হয়। হয়তো প্রথম পাঠে পাঠক বলে উঠবে 'প্রলাপ'। দ্বিতীয় পাঠে 'প্র' বিয়োগ হয়ে থাকবে 'লাপ'। 'লাপ' হলো আলাপ। নিউক্লিয়ার আলাপের কবিতা লেখেন ফিরোজ শাহ। 'আমার ছায়ার ওপরে জিরোচ্ছে একটা কুকুর'--- একটা আপাত ছবি। মূলত একটা ভাবনা। মানুষের ছায়া কখনো আপেক্ষিক। আপেক্ষিকতায় অন্য একটা প্রাণীর জিরোনোও আপেক্ষিক। তো বলা যেতে পারে ফিরোজের এই বইয়ের কবিতাগুলোও আপেক্ষিক। ফিরোজ ভাবনার অবকাশ দিচ্ছেন মাত্র। বর্ণনা দিচ্ছেন না। বোঝাচ্ছেন না। আরোপ করছেন না। মুহূর্ত লিখছেন। মুহূর্ত আপেক্ষিক। ভাবতে পারলে পরিপার্শ্বের অনেক পরিসর উঠে আসে। ভাবনা স্টার্ট না দিলে এসব কবিতা কিছুই না। তাহলে থাকলো কী ? থাকলো আপেক্ষিক অর্থহীনতা। নাথিংনেসকে বাজতে বলছেন ফিরোজ। কবিতার শুরুতে একটা বা দুটো শব্দ লিখে স্পেস দিচ্ছেন। স্পেসটা কতোটা প্রসারিত করবেন পাঠক, তার উপাদান দেওয়া আছে পরের এবং তারপরের মুহূর্তে। পাঠক নিশ্চিত বুঝবেন যে সবটাই আপেক্ষিক। কবি যে-যে চিহ্ন আঁকছেন সেগুলো কবিতার প্রতীকচিহ্ন মাত্র। সেখান থেকেই পাঠকের ভাবনা শুরু হলো তো হলো, না হলে মনে হবে, অর্থহীনতা কেবলই অর্থহীনতা। তাহলে, এক একজন পাঠক, এক একরকম ভাববে ? হ্যাঁ, কারণ আপেক্ষিকতা। আপেক্ষিকতাকে স্বাধীনতা দিলে, ফিরোজ শাহর এইসব কবিতা শব্দকবিতা বলে মনে হবে না।
অলোক বিশ্বাস
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
২৩/০১/২০২৪
0 Comments