ফিরোজ শাহ’র কবিতাগুচ্ছ



সাইকেল


একটা আপেল কামড় দিচ্ছি

আপেলের ভেতর থেকে ডাক দিচ্ছে মৃত দাদা
সাইকেলে চালিয়ে 
গিয়েছিল মাটির গভীরে

মূলরোমের সাহায্যে ফলে এসে ঘুমাচ্ছিল
দাঁতের স্বাদ পেয়ে

দাদার সাইকেলটি আজ আবার ঢুকে যাচ্ছে মাটির ভেতরে। 






দেবদারুগাছ 


নদীর পাশে
একটা দেবদারুগাছ 

দেখতে দেখতে
নদীর ছায়াটি ওঠে চলে আসে তার দেহে

লুকিয়ে রাখে অনেকদিন

রাত হলে 
হেঁটে চলে যায় দূর গ্রামে

মা গাছটির কাছে এলে 
ঢেলে দেয় আস্ত একটা নদী। 






বাড়ি


ক্ষুধার্ত বাড়ি

রাত গভীর হলে 
লাফিয়ে লাফিয়ে চলে যায় ঘাসের খোঁজে 

পেটভরে ঘাস খেয়ে ফের চলে আসে

ঘাস না পেলে 
একে একে খেয়ে ফেলে বাড়ির লোকজন 

জনশূন্য বাড়ি 
একদিন খেয়ে ফেলে নিজেকে ।







স্বজন 


ফ্রিজে ঘুমাচ্ছে 

হিমালয়পর্বত 
মাছদের দাপাদাপিতে

লেগে যায় শোল আর ইলিশের যুদ্ধ

সমুদ্রের আত্মীয়তা রক্ষার জন্য
ইলিশের পক্ষে 
বাঁশি বাজলে

অভিমানে লাফ দিয়ে বেরিয়ে যায় শোলমাছ । 







নোট


দুই টাকার নোটের ভেতরে
গুটিসুটি বসে আছে একটি দোয়েলপাখি

কোলাহল শূন্য সন্ধ্যায়
নীড়ের পথ  ভুলে মানুষের পকেটে ঘরহীন সন্ন্যাস 

রাতে অপর পৃষ্ঠায় জ্বলে ওঠে শহীদ মিনার

উড়ে গিয়ে 
বৃত্তের ওপরে বসলে

লাল বৃত্ত ধীরেধীরে কালো হয়ে যায়।







চশমা


চশমা জিরোচ্ছে টেবিলে

ফ্রেম থেকে 
বের হয়ে গ্লাস দুটি উড়ে যাচ্ছে বিড়ালের চোখে 

জ্বলে ওঠা অন্ধকারে

মনের আনন্দে
বিড়াল হেঁটে যাচ্ছে দোজখের দিকে। 






রাত


রাতে 
হ্যারিকেন জ্বলে

চিমনির ভেতরে কালি জমলে 
নেমে আসে আরেকটা রাত

নিচে নেমে ডীম আলোয় 
জ্বলে ওঠে দুই রাতের এক চাঁদ

জোনাকিরা উড়ে যাচ্ছে ভেতরের রাতের দিকে। 









পেঁয়াজ


পেঁয়াজের 

প্রথম শাড়িটা রংচটা

দ্বিতীয় শাড়িটা খুললে চোখে ঝাঁঝ আসে
ক্রমিক শাড়ি খোলা শেষে

মুছে যায় দ্রাঘিমারেখায়। 









এপিডেমিক ট্রি 


ঝুনানারিকেলের ভেতরে মৃত্যু

মিষ্টি পানি খেয়ে বেড়ে ওঠা শ্বাসে
গজিয়ে ওঠে চারাগাছ

মানুষের লাশ খেয়ে বেড়ে ওঠে ছায়া

মৃত্যুগাছ
ছুঁয়ে ফেলে সূর্যকে 

ছোঁয়াচে অন্ধকারে মুখে মাস্ক পরে বসে থাকে সূর্য।









ভিজিটিং কার্ড


মানিব্যাগের ভেতরে

গর্ভমেন্ট অফিসার পুলিশ কর্মকর্তা সাংবাদিক মুদি দোকানদার
একত্রে বাস করে অনেকদিন 

পরস্পর আলিঙ্গন
দুঃখসুখের আলাপ 

চুমু খেয়ে একজন লাল করে দেয়  আরেকজনের ঠোঁট

কৃষ্ণাঙ্গ শেতাঙ্গের ঘরে ভাত খেয়ে
হাত মুছে মালো পাড়ায়  

মানিব্যাগের ভেতরে 
এভাবে গড়ে ওঠে ভিজিটিং কার্ডের শান্ত পৃথিবী  । 

Post a Comment

5 Comments

  1. অনেক ধন্যবাদ।

    ReplyDelete
  2. মাসুদার রহমান ভাইয়ের কবিতার মতো লাগে।

    ReplyDelete
  3. পড়লাম। ভালো লাগল।

    ReplyDelete
  4. সুন্দর সব কবিতা। শুভেচ্ছা, প্রিয় কবি।

    ReplyDelete