মাহবুব সেতু 'র গ্রন্থালোচনা " পৃথিবীর সবকিছু মায়া"

Mahbub Setu's book review "Everything in the world is Maya"



‘মায়া’ বইটি পড়ে শেষ করলাম। বইটি পড়ার প্রতি আগ্রহবোধ করেছি, নামটি দেখেই। পৃথিবীর সবকিছু মায়া। আর এ মায়াকে একমলাটে লিখেছেন, নিশাত ইসলাম।

পৃথিবী এক মায়া। সেই মায়াজালে একবার ফেঁসে গেলে বের হওয়া অসম্ভব। ধীরে ধীরে মায়ায় আবদ্ধ হতে থাকি। এর যেন কোনো সমাপ্তি নেই। আদি-দিগন্ত নেই। এ রকম কাহিনিনির্ভর বইটি। 


‘...সব খুশি সেদিন ছিল-

শুধু আমাকে একাই ঘিরে!

ধীরে ধীরে শুরু হল আমার পথচলা,

কত মানুষ হাত ধরেছিল-

প্রথম যেদিন একপা দুপা করে আমার এগিয়ে চলা।

শিক্ষার আলোতে আমার চারিপাশ-

মা-বাবা আলোকিত করেছিল অনেক আদরে ভালবেসে।

জীবনের যত চাওয়া পাওয়া সব-

বন্দী তাদের কাছে,

কত আব্দার কত ভালবাসা-

সবই ছিল তাদের ঘিরে।


চলতে চলতে চলে গেল অনেক বছর,

মায়াতে বেঁধেছ আমায় তোমরা সকলে।

কত বন্ধু পরিবার পরিজন, আত্মীয় স্বজন-

তোমাদের সাথে সময় গুলো পার।

হাসি খেলা, আনন্দ বেদনা-

সব কিছু যেন এখানেই তোমাদের সাথে,

কত মায়া কত ভালবাসা তোমাদের কাছে।


বহুদিন পর আজ আমি বৃদ্ধ-

এখন বুঝি তোমাদের কাছে বোঝা হয়েছি?

সব কিছু বদলে গেছে মনে হয়!

সোনালী সেই দিন গুলো এখন আমার আর নেই।

কত অবহেলা অযতনে-

রয়েছি বন্দী অন্ধ ঘরের কোণে!...’। এটি একটি কবিতার উদ্ধৃতি। এ বইটি পড়তে পড়তে বারবার কবিতার কথাই মনে পড়ছিল। লেখকের লেখায় কাব্যিকতা রয়েছে। আলাদা ভাষাশৈলী রয়েছে। নিজস্ব স্টাইলে বই সাজিয়েছেন। তার বই বেশ। তবে আমার পড়া রয়েছে এ নিয়ে তিনটি। সময় বড় কঠিন, একে আটকে রাখা যায় না। লেখক তার সময়কে আটকে ধরে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তার লেখনীতে একবিংশ শতাব্দীর যে চিত্র, আবহ তা স্পষ্ট করে তুলে ধরা হয়। 

তার কাজ হয়তো লিখেই যাওয়া। এ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মায়া-শুভ। সমাজের ভেতরে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে চরিত্র দিয়ে চিত্রিত করেছেন তিনি- ‘দ্বিতীয় মাসের পিরিয়ডের সময় ডাক্তার বলে দিয়েছেন পাঁচ/ছয়/সাত দিনের যে কোনো এক সময় এইচজিসি নামের একটা টেস্ট করাতে হবে। এই টেস্টের মাধ্যমে জানা যাবে মায়ার জরায়ুর কি অবস্থা। এটা এক ধরনের এক্স-রে। মায়া একাই চলে এসেছে এই টেস্টটি করাতে। আগেও এক্স-রে অনেক কারণে করেছে, তাই তো ভয়ের কিছু নেই। টাকা জমা দিয়ে এক্স-রে রুমে এসে মানিরিসিট ধরিয়ে দিতেই নার্স কয়েকটা ওষুদের নাম রিখে দিয়ে নিয়ে আসতে বললেন। মায়ার মনে প্রশ্ন জন্মাল এক্স-রে করতে এসব ওষুধ তো লাগার কথা নয়, এটা কী ধরনের এক্স-রে?...’

‘মায়া’ উপন্যাসটি মূলত একজন অনাগত সন্তানের প্রতি যে মায়াবোধ তৈরি হয় তার আদলে লেখা। উপন্যাস থেকে ‘... বিয়ের পর আমার কনসিভ করেছিল। ওরা আমার...

কান্নায় আটকে গেল কথা। কথাগুলো আটকে গেলেও মায়া ঠিক বুঝতে পেরেছে ‘ওরা’ মানে ভদ্রমহিলার স্বামীর পরিবারের লোকজন হয়তো সে-সময় বাচ্চা চায়নি। আর ‘আমার’ কথার মানে হলো, আমার বাচ্চা জোর করে হত্যা করা হয়েছে। ভদ্রমহিলা স্বামীর দিকে তাকালো তার মধ্যে অনুতপ্তের লেশ লেগে আছে বোঝা গেল...’! 

নিশাত ইসলামের উপন্যাসে সবচেয়ে যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে, সেটি হলো মানবিকতার পরিচয়। তিনি একজন মানবিক মানুষ হিসেবেই নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। উপন্যাসটি পড়তে পড়তে অনেকেরই হয়তো মনে হবে, এটি আমারই জীবন। 

মানুষ যখন তার জীবনকে কোনোকিছুতে খুঁজে পায়, তখন সেটিই বড় পাওয়া। সে হিসেবে এটি একটি বড়প্রাপ্তি। অনন্যা থেকে প্রকাশিত।












মাহবুব সেতু
কবি

Post a Comment

0 Comments