স্পর্শে তোমার শুদ্ধতা
যেখানে তোমার হাত পড়ে সেখানেই আশ্চর্য সুভাস
তোমার হাত কি তবে পদ্মফুল, আঙুলগুলো পদ্মপাপড়ি?
তোমার স্পর্শ পাওয়া শুকনো পাতা ঘিরে উড়ে বেড়ায় এক ঝাঁক ভ্রমর।
অমল ধবল হাতের ছোঁয়ায় তোমার,
প্রজাপতি হয়ে যায় ঝালমুড়ির ঠোঙা, পাখি হয়ে যায় লেখার কাগজ, কবিতার বই
পরশ পেয়ে হাতের- মুমূর্ষু ফুল মুখ তুলে চায় নতুন করে, নুড়িও হয়ে যায় সোনা।
একদিন, বৈশাখী মেলা থেকে কিনে এক গোছা চুড়ি হাত গলিয়ে পড়লে তুমি,
রবিশংকরের সেতার হয়ে বাজলো চুড়িগুলো, গান শুনালো মাটির পাখি,
তোমার স্পর্শ পেয়ে নেড়ি কুকুর হ্রিংসতা ভুলে টিএসসির মোড়ে প্রেমের গান গায়।
যেটুকু ছুঁও তুমি, সেটুকুতে আলোর রোশনাই, গুচ্ছ গুচ্ছ গোলাপফুল,
যেভাবে স্পর্শ করো তুমি, সেভাবে উম পায় পক্ষীছানা, পক্ষীর চোখে মুগ্ধতা
নিরাশ্রয় পাঁচটি আঙ্গুলকে তাই আশ্রয় দিও নগ্ন করপুটে-- স্পর্শে তোমার শুদ্ধতা।
আমি অনাহারী
ভালোবাসতে বাসতে কেউ ফতুর হয়ে যায়, কেউ হয় বিবাগিকিন্তু বুকে যার বরফ পাহাড় জমলো
আজও পেলো না সে হৃদয়ের উত্তাপ,
পাঁজরের নিচে তার
কেউ কোনোদিন কান পাতলো না।
একা জেগে জেগে রাত্রিও বুঝে গেলো নিঃসঙ্গতা ঘুচে না শুধু নক্ষত্র গোনায়
তবু দিনের আলো নির্লজ্জের মতো দিনেই ফুটে…
শুয়ে থাকা পথের বুকে পদাঘাতে ভুলে যাও সে তোমারই জন্য বুক পেতে থাকে
তবু চলেছো বলে হয়ে গেলে পথিক,
ভুলেছো বলে হয়ে গেলে আজ অন্য নারী।
রাণী,
তোমার রাজ্যে মহাভোজ; আমি অনাহারী।
কাজলমেয়ে
“হাঁটতে হাঁটতে থেমে যাবো, থামার জন্যই হাঁটাপথেই পেলাম কুসুম কমল, পথেই থাকে কাঁটা
কুসুমগুলো আঁচলভরে, কাঁটা পথে ছড়িয়ে দেবে?
কাজলমেয়ে, চলতে পথে আমার তুমি সঙ্গী হবে?”
সমর্পিত
রাত্রির চাদর জড়িয়ে আসমানে ঝুলছে চাঁদের লকেটচুইয়ে পরা দুধ জ্যোৎস্না পান করে নীল হয়ে যাই
হিম হাওয়ার কলরোল ছাপিয়ে ভেসে আসে নিশির ডাক
আমি কান পাতি, বিষণ্ণ সুন্দরের কাছে আমি সমর্পিত হই!
শুনেছি, সমর্পিতরা যতটুকু পায় তারচে’ অধিক হারায়
তবু জীবনভর মানুষতো নিজকে সমর্পণ করে যায়।
যৌবন গিলে খায় শৈশবেরে, তাকে গলাধঃকরণ করে বৃদ্ধ,
মাঝে প্রেম খায় প্রেমিকেরে, মরণ দেয় টান জীবনশুদ্ধো
নগ্ন করপুটে রাখা বিনমিত পাললিক প্রেমে আঘাত হানো যদি
আড়ষ্ট বুকে এই প্রতিভাস, নারী, তবে কি তুমি খরস্রোতা নদী?
সাফোকেইটেড
দীর্ঘশ্বাসটুকু লুকোনো বিষলতাকেবলই বড় হয়ে যায়
এ শহরে দীর্ঘশ্বাস ফেলার মতো
আমার কোনো স্পেস নাই।
গর্ত সিরিজ
১.আমার পিতামহ একবার মস্তবড় একটা গর্ত খুঁড়লেন।
তারপর আম্মাকে তার বাড়ি থেকে নিয়ে এসে তাকেসহ
আব্বাকে সে গর্তে রেখে আসলেন। গর্তটা এতো বড় ছিলো যে,
আব্বা-আম্মা সে গর্ত থেকে কোনোদিন আর বের হতে পারলেন না।
তারপর আমরা হলাম। কিন্তু বিশাল গর্তের কারণে আমরা বুঝতেই
পারলাম না যে- আমরা গর্তে বড় হচ্ছি। কিন্তু পিতার এতো বড় শাস্তি
আব্বা ভুলতে পারলেন না। তিনি তার উপর শোধ নিতে না পেরে
পণ করলেন আমাদেরকেও গর্তে ফেলবেন। তারপর একদিন-
আমাকে আমার বউসহ বিয়েরদিনই একটা মস্ত বড় গর্তে ফেলে আসলেন।
ভাবছি, এর প্রতিশোধ আমাকে নিতেই হবে। তাই
আমি আমার সন্তানের বড় হওয়ার অপেক্ষায় আছি।
২.
আমাদের ঘরের মেজেতে একটা ছোট গর্ত ছিলো।
গর্তটা এতো ভয়ানক যে, এটা বাবার শার্ট, মায়ের কানের দুল,
পরনের শাড়ি, বোনের জামা, আমার স্কুল ড্রেস সব কেড়ে নিতো।
বাবা শত চেষ্টা করেও গর্তটা বন্ধ করতে পারেননি।
শেষে গর্তটা আমার পাঠ্যবই ধরে টান দিলো। তারপর বাবা
এই ভয়ানক গর্ত থেকে বাঁচাতে আমাকে পাঠ্যবইসহ বাড়ির বাইরে
পাঠিয়ে দিলেন।
তারপর থেকে কোনোদিন আর গর্তটার খোঁজ নেইনি।
গতকাল শুনলাম, গর্তটা আম্মার একটা চোখ নিয়ে নিয়েছে।
৩.
বড় গর্তটা থেকে বের হতে না পেরে, ছোট গর্তটা বন্ধ করতে না পেরে
আমার বাবা নিজেই একটা গর্ত খুঁড়লেন। মাকে বললেন, “চললুম“
মা সজল চোখে তাকালেন, দেখতে পেলেন না। মা এখন অন্ধ।
অতঃপর বাবাকে আমরা একটা সাড়ে তিনহাত গর্তে রেখে আসলাম।
0 Comments