মগজে ওড়ার স্মৃতি
(মহাজন্ম আর কবর ঘুরে-ঘুরে কুড়োচ্ছি মড়ার মাথার খুলি, হস্তরেখা-ভবিতব্য! অতনু-যে'বার তুমি আমায় আস্ত একটা সমুদ্র এনে দেবে বললে, সেবার থেকেই এই আমার মাথায় অপচ্ছায়া...)
প্রত্নবাক্স
একদিন-
কঙ্কালভর্তি পানা-পুকুরটির পাশ পেরুতেই বাতাস
কেটে যাওয়ার মতো শব্দে কেউ একজন যেন আমায় বলছে- শুনতে
পাচ্ছো? দমকা বাতাসে
তখন শরীরশূন্য অশব্দের দূর'ছায়া। অন্যদিকে কী হুলুস্থুল একটি পরিত্যক্ত ঘুড়ি উড়ছে
আপনমনে আকাশের ফ্যাকাসে আলোর কাগজে!
আর তার অ-নে-ক নিচে
বিনুনির মতো লম্বা
ট্রেন চলে যাচ্ছে ঝিকঝিক শব্দ
তুলে।
আমার মাথার ভেতরে
তখন ভেসে উঠছে
একটি অদেখা মৃত্যুর রাজ্য
আর তার সাদা চর। চমক ভাঙলো বসন্তবৌরির ডাকে! উৎস পাতের অচেনা
আলোয় তখন মরা-রোদেরা অলস বসেছিল -যেন দুই হাঁটুর ভাঁজে মাথা গুঁজে রাখা
অচল বৃদ্ধ ; যার লিচুফল দুই চোখ আর শুকনো হরতুকির মতো শুকিয়ে যাওয়া ঠোঁট।
টের পেলাম আমি এখন "নিরন্তর" নামক এক জলহীন সরোবরে দাঁড়িয়ে আছি; যেখানে- অনুতাপের গ্রহান্তরিত বীজেরা এখনও জলের অস্তিত্ব খোঁজে।
প্রগাঢ়তা প্রমাণ করতে
তুমিও শেষ অবধি
একখণ্ড "অন্ধকার" তুলে ছুঁড়ে মারলে আমার জন্মান্তর লক্ষ্য করে। কালো-বেড়ালের সবুজাভ চোখের
মতো চূর্ণ-চূর্ণ
ব্রহ্মাণ্ড পুড়ছে মৌসুমি-বনের ভিতর...
ভেবে দেখো অতনু-
হাসিমুখে আনন্দ-যাতনার ফুলগুলো দ্বিগুণ রাঙিয়ে-মাতিয়ে দেবার কথা ছিল আমাদের চোখ-কান বুঁজে! আমরা
এখনও নাবালের দেশে
সিঁদুরে-বটফলে কোঁচড়
ভরে তুলি আগুনের রঙে। মহাজন্ম আর কবর ঘুরে-ঘুরে
কুড়োচ্ছি মড়ার মাথার
খুলি, হস্তরেখা -ভবিতব্য!
অতনু- যে'বার তুমি আমায় আস্ত
একটা সমুদ্র এনে দেবে বললে, সেবার
থেকেই আমার মাথায়
অপচ্ছায়া।
আরেক কৃষ্ণপক্ষে তুমি আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে দৌড়ুলে আর উৎসুক এক অস্থিরতায় তোমার দৃঢ়"
সে টান ক্রমাগত বাড়ছে -আমিও প্রাণপণ দৌড়ুচ্ছি- দৌড়ুচ্ছি লুপ্ত এক নগরীর দিকে,
তুমি তোমার টান আরও দ্বিগুণ- চতুর্গুণ- লক্ষ'গুণ বাড়িয়ে জানতে চাইলে- অদিতি,
শুনতে পাচ্ছিস সমুদ্র?
আমি বিহ্বল তাকালাম তোমার চোখের শূন্যে।
আরেক-দিন_
তোমার মনে আছে অতনু? "আমাদের বাড়ির দক্ষিণের গোয়ালঘরের পেছনে তুমি
সেদিন "কী একটা" দেখে, এক'ছিটকে এসে আমার হাত ধরে হাঁপাতে-হাঁপাতে আমাকে
বললে -- এই জানিস? জুলেখা'বুড়ির বেড়ালটা বোধহয় আর নেই-
মরে গেছে! দেখলাম তোমার দু'চোখ ভর্তি টলটলে জল!
"আমি চুপিচুপি গিয়ে
দেখতে পেলাম - জুলেখা'বুড়ি ঘুমপাড়ানি গানের সুরে কাঁদছে - আর তার কান্নার অনুষঙ্গ গুলো একটা-একটা
করে তার "প্রত্নবাক্সে" যত্ন
করে তুলে রাখছে
_
তার অন্নপ্রাশন্নের দিন থেকে শুরু করে তার তখনকার মেঘস্পর্সী স-ব অশ্রু
চক্রহীন এক নালার
পানিতে ভাসিয়ে দিচ্ছে!
"আমি সেদিন তোমার চোখে স্নেহগ্রস্ত এক মিনার গড়তে
দেখেছিলাম- আর দেখেছিলাম পার্থিব বিচ্ছেদ ও মৃত্যুর বিরুদ্ধে অপার ক্রোধ আর আজন্ম
ঘৃণার অস্ত্রাগার।
অতনু- "তুমি আবার তোমার
হাতের টান বাড়িয়ে দিলে আমার আজন্ম
লক্ষ্য করে।
রক্তদ্রোণ
বহুকাল;
ভালোবেসে-মন্দবেসে
জীবন জেনেছে মানুষ-
জেনেছে আসা-যাওয়া-
অচেনা অনুরণন ;
জন্মের নিকট যার মৃত্যুর বীজ ;
এ ভবিতব্য জেনেও
ফুল বুনে-বুনে
মৃতপ্রায় গাছ; বুকের
মধ্যে
যার ফুল ফোটাবার বাসনা- জমিয়ে রাখা
অপূর্ব রক্তদ্রোণ,
বহুকাল-বহু-বহুকাল!
অনুভব
এই-সব কালে
হিসেবী হতে চেয়ে
কী নিদারুণ প্রত্যাহার ভিতরে-ভিতরে!
আবিষ্ট অনুভব ছিঁড়ে
খায় গোপন'পাখি।
হৃদয়ের লৌহদলে স্থির হয় রাত,
বাইরে তখন চাঁদের ফুলঝুরি-
পুকুরের জলে ভাসন্ত আলোর মালা,
"কার যেন ছায়াপড়া চোখে-
অধরে নামে শ্রান্ত অভিজ্ঞান,
জগৎ ঘুমিয়ে থাকে-
জেগে থাকে আদিগন্ত দীর্ঘায়ু প্রাণ।
বিন্দু কবিতা
১.
এই পৃথিবীতে প্রতিদিন
জোড়াখুন হয়-
আত্মঘাতী হয় কেউ-কেউ,
জাগতিক নথিপত্র যার কোনও পরিসংখ্যান
একেবারেই রাখেনা।
২.
প্রতিনিয়ত কী সুন্দর করে
আমরা অভ্যাস-অনভ্যাস খেলি!
৩.
পাখি মরে গেলে
তাকে খুব ভয়ঙ্কর মনে হয়
কেননা- তার ওড়ার
স্মৃতি আমাদের মগজে।
৪.
বাতাসে উবে যায় কর্পূর উবে যাই তুমি-আমি
৫.
মানুষের মৃত্যু থাকে
তার পায়ের পাতায়-
ধূলায়,
আর পথের মোড়ে-মোড়ে ঝরা ফুলের
মায়া।
3 Comments
অসাধারণ অনুভূতি। ভাল লাগলো। আমি থাকবো সেখানে যেখানে আপনার স্থান।।
ReplyDeleteঅশেষ ধন্যবাদ আপনাকে।
ReplyDeleteদারুণ
ReplyDelete