নুরজাহান রহমান নীরা'র তিনটি কবিতা

 

Three poems by Nurjahan Rahman Nira



সাদা নীল ইউনিফর্ম


এখনো আমি স্কুলে যাই রোজ

খাই মায়ের বকুনি ঘুম চোখে

বাবা রোজ মাঠে যায় সুপ্ত ভোরে।


কাঁচা মরিচের চাপরি পিঠা 

রোজ গন্ধ ছাড়ে এখনো।

নতুন বইএর ঘ্রাণ কেন যে

নাকে সুবাস ছড়িয়ে যায়!


পুতুলগুলো সেই ছোট্টটিই

রয়েছে আজো অপুষ্টিতে।

পিঠার ধুম পড়ে, শীতমাখা উঠোনে।


কচি তেঁতুল লবণ মরিচ চটকিয়ে 

আজো মুখে জল আনে বারংবার।

বাবার বিড়ির আগুন জ্বলে

মিটিমিটি তারার সাথে।


মায়ের সুঁচে আজো সুতা পড়াতে-

দৌড়ে আসে ছোট চাচী,

স্কুলে না যাওয়ার অজুহাতে 

সারাদিন পেটে ব্যাথা করে।


জ্বর আসার বাহানায় 

পুকুরে ডুব দেই অগণন।

মেঠো পথে আজো স্কুলে যাই

সাদা নীল ইউনিফর্মে।




নীরুবালার চা-সন্ধ্যা



আজও সন্ধ্যা নামে চুপিচুপি, চায়ের কাপে ঠোঁট ছুঁইয়ে ভাবি— তোমার অপ্রকাশ্য কথারা আমার ঠোঁটেই কেন জ্বলে-ওঠে কবি?

তুমি বসে থাকো মুঠোফোনের ওপারে, আমি এ পারে। আকাশে ধোঁয়া ওঠে, চায়ের কাপে জাগে তিয়াসা, 

আর তুমি বলো, 

“আজ নীরুবালার চোখে চা-- নাকি একটু বেশিই দুঃখ!!”

আমি হেসে ফেলি, অথচ হাসি না আসারই কথা ছিল। 


তুমি বুঝো, আমার চুপ করাটাই কবিতা। কথা না বলেই কত কথা হয়ে যায়, তোমার রোমান্টিক মন আমাকে প্রতিদিন নতুন করে আঁকে।

আমার চুলে লেগে থাকে ধুলো-বালি, তবুও আমার কালো চুলে তুমি কি জোনাকির আলো দেখো??

তোমার কবিতার প্রতিটি ছত্রে আমার নাম লেখা 

— অথচ কেউ জানে না।

চা ঠান্ডা হয়, কিন্তু মন গরম। তুমি বলো, “নীরুবালা আজও সন্ধ্যার মতোই — নরম, ধীর, অথচ ঠিক ঠিক জেগে থাকে আমার কবিতার ঘরে।”

আর কতো বন্ধ চোখে পাগলামী কবি, আর কতো??





ভালোবাসার ত্রাণ


কখনো তোমাকে ছেড়ে চলে যেতে হয়, 

তবে প্রেম ছেড়ে যাইনা কভূ!

থরে থরে রাখা ভালোবাসা গুলো

অনেক যত্নে তোমারই কাছে রেখে যাই।

আবারো কোন মন্ত্রমুগ্ধ সন্ধ্যায়

দেখা হবে তোমার নীলাভ চোখে।

তোমার বাম হাতটি তখন আমার 

ডান হাতে বন্দী করে অজানায় হাঁটবো দুজন।

আমি বানভাসি হয়ে তোমার কাছে 

চাইবো শুকনো কোন ভালোবাসার ত্রাণ।

Post a Comment

0 Comments