নিষ্পাপ ইশারা
রাতের সার্কাসে ডানা মেলে কে নাচে?
হদিশ না মেলা মনটা কেন পড়ে থাকে প্যান্ডেলের ফুটোপাশে?
এক
নীলবর্ণ সন্ধ্যার পর মরানদীতে বিষন্ন ঘুমের উৎপাত দেখি।
যারা সমস্ত আকাশে অন্ধকারের ভাষা বুঝতে গেছে তারা অগত্যা
সার্কাসের মৃদু আলোতে নর্তকীর ডানায় আশ্রয় মাগে।
সঙ্গমের আশায় বুনোহাঁসজোড়া বৃষ্টির বন্দনাগান গায়।
উত্তাপের আনাগোনায় এ শরীরও ঘর ছাড়তে অধীর হয়।
কফিনের পেরেকে আটকে থাকা চোখ পাশ ফিরে দেখে নিজস্ব রমণী ঘুমের
আরামে কী এক নিষ্পাপ ইশারায় আমাকে সন্তর্পণে থামিয়ে দেয়।
প্রণয় গাঁথা
ওহে তাবাসসুম, হও নির্ঘুম
সমুখে অবাক আলো
নতজানু ভোর, কাটিয়েছে ঘোর
বিরত বিষাদ কালো
নাবালক রোদ, শিরভাঙা ক্রোধ
হাওয়া তিরতির দু'জন
সোনালুর ফুল, আগুনের ভুল
প্রসন্ন উথাল এ-ক্ষণ
খোঁপাখোলা চুল, স্নিগ্ধ বকুল
গন্ধে ব্যাকুল ঘর
চিবুকের দেয়াল, প্রমত্ত খেয়াল
প্রেমানত এক স্বর
নখের আঁচড়, করতালি ঝড়
মুখর ডুমুর পাতা
ঋতুকথা ভুলে, এই ধুলোজলে
মাতাল প্রণয় গাঁথা
নিগার
নিগার কথা দেয়নি কখনো
আমাদের ফের দেখা হবে
পুরনো স্কুলগেটে অথবা
ফেরার পথে সোনালুফুল আলো করে রাখা কলাবাগিচার ধারে
ফুটফুটে চোখের ভুল ইশারায়
চেয়ে থাকি বিস্তৃত রোদের কাঁপন
বর্ষাকাল মৃদু হয়ে ফুরিয়ে যায়
গৃহস্থালি চরিত্র ছেড়ে
মায়ের স্টেথোস্কোপ হাতে
সগর্বে হেঁটে যায় নিগার
রুপোর নূপুরের শব্দ নিয়ে
তীব্র ধনুকের মতন চোখে তাকিয়ে
বুনেছিলাম আকাঙ্ক্ষার চারাগাছ
বেদনার কাঁটাকতেক নিভিয়েছে
নিভু নিভু সলতে আগুনের ভাঁজ
কখনো ভ্রান্ত হলে হাতের স্টেথোপাঠ
আমাদের বাসভূমের প্রাচীন বারান্দায়
গোলাপের পাঁপড়ি ছিটিয়ে বসে থাকা এই যুবকের দিকে বাড়িয়ে দিও
প্রেম
কথা না দিলে কি ঘর বাঁধা যায়না, নিগার?
দৌড়
বয়স হেঁটে যায় অনন্তপথ
মরাপাখির পালক মুখ থবড়ে
পড়ে থাকে সে পথের প্রান্তরে
কুড়িয়ে নেয়ার অজুহাতে
রুক্ষবাতাস তারে নিয়ে চলে
নিরুদ্দেশ
একজোড়া পা
ক্ষয়ে যাওয়া হাড় নিয়ে
তবু রেডি হয়
জানে আরো দৌড় বাকি আছে।
আড়াল
আকাশের মেঘ আড়াল করিল
রোদ নামিল না মাঠে
যত নদী ছিল চোখের মাঝেতে
আজ ভিড়িয়াছে কোন ঘাটে
ঘাটের কিনারে দাঁড়াই
সজোরে খুঁজি কোন হাওয়া
দেখি সেথায় দখিনের গান
হয়নি অবধি গাওয়া
যে গান পোড়াবে, কাঁদাবে এবেলা
তাহা যে কোথাও না পাই
আলোহীন ঢেউও ছলাৎ ছন্দে
আড়ালে রহিয়া যায়
লাল টিপখানি
ছিনতাই হয়ে যায়
একটা চাতক পাখি উড়ে এল।
আর কী নিঁখুত ছোবলে তোমার কপালের লাল টিপটাই ছিনতাই করে নিলো!
আমি বহুবার আকাশ পাহারা দিয়েছি;
ভাবিনি, যাকে পুষতে চেয়ে রোজ গম শস্য খেতে দিয়েছিলে,
সেই পাখিটাই আবেগের ফুটেজ খেয়ে কোন গোপন বাতাসে ইনকিলাবের ডানা
ভাসায়!
আমার চৈতন্য অসাড় করে দৃষ্টির বেড়া ভেঙে দেয় অধরা বাতাসের
ঝাপটা;
বর্ষার কাছে বৃষ্টির প্রার্থনা করা হাতের তালুতে আমারই দু'ফোটা
অশ্রুজল গড়ায়।
তোমার রক্তিম টিপের সাথে কল্পনার ভ্রমরযুগল প্রকাশ্য খেলা করে
গেছে কত যে দুপুরকাল!
প্রাচীন রশ্মিরেখা ধরে প্রসন্ন চোখের নাচনে হরিৎ মেঘে মেঘেই
লিখে রেখেছ ইতিহাসের ডায়েরি।
একদিন শীতের অতিথি হয়ে যদি ফিরে আসে পাখি-
ইন্দ্রিয়জুড়ে তোমার মুখখানিই সে পাখির ঠোঁটে লেগে থাকা
টিপবর্ণে
জ্বলতে থাকবে।
আমি বারংবার তোমার কপালে বিকল্প টিপের বিজ্ঞাপন সেঁটে দিতে
যাই।
অথচ এই বাণিজ্যনগরের পথে-প্রান্তরে
নীল হয়ে থাকা আকাশ কিংবা সবুজ লতার রঙ খেয়ে যায় তোমার
সম্মোহনের লাল টিপখানি।
সোহেল
ইয়াসিন
জন্ম ২ জুলাই ১৯৭৮, চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার বৈলতলী গ্রামে। বর্তমান বসতি
চট্টগ্রাম শহরের জামালখানে। তিনি সাউথ-ইস্ট ইউনিভার্সিটী (ঢাকা) থেকে এমবিএ
(এইচআরএম) সম্পন্ন করেছেন। শূন্য দশকের শুরুর দিক থেকেই লেখালেখির শুরু। প্রকাশিত
কাব্যগ্রন্থঃ একটু দাঁড়াও, রহস্য বাড়ছে (দ্বিমত, চট্টগ্রাম)।
0 Comments