মাহমুদ নজির এর ‘শনির আখড়া’ ও অন্যান্য কবিতা

Mahmud Nazir's 'Shanir Akhra' and other poems



এই পথ আমাদের চেনা

এই পথ আমাদের চেনা-
মায়া জড়ানো, সবুজে সবুজময়।
পাখির কুজন আর বহতা নদীর
 
চঞ্চল কলতানে মুখরিত ছিলো এই পথ।
 
পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র
কর্ণফুলী, তিস্তা, সুরমা, পশুর, কুশিয়ারা
ভৈরব, সাঙ্গু, কপোতাক্ষ, আড়িয়ালখাঁ
মধুমতি, ইছামতি, রূপসা, আত্রাই
চিত্রা, মহানন্দা, ঘাঘট, টাঙ্গন
কালনী, গোয়ালন্দ, করতোয়া, বুড়িগঙ্গা
তুরাগ, পুনর্ভবা, বংশাই, লৌহজং, ঝিনাই
 
ধলেশ্বরীর উত্তাল বাঁকে বাঁকে
মাথা উঁচু করে আনন্দে হাওয়া খেতো
 
সারি সারি শাদা কাশফুল ।
 
এই গাঙ্গেয় বদ্বীপ উপত্যকা, নদীবিধৌত পথ
আমাদের বহুদিনের মায়ায় লালিত
প্রাগৈতিহাসিক স্মৃতির অন্বেষণে আাঁকা।
 
এখানে লালন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল
জীবনানন্দ, জসীমউদ্দীন, মধুসূদন
হাসান রাজা,মজনু শাহ, আলাউদ্দিন খাঁ
আব্দুল লতিফ,আববাসউদ্দীন
আব্দুল আলীম, রুনা লায়লা, বশীর আহমেদ
 
আব্দুল জব্বার, সাবিনা ইয়াসমিন
ফরিদা পারভীন, কনকচাঁপা
সুবীর নন্দী, এন্ড্রু কিশোর, খুরশিদ আলম
নীনা হামিদ, আব্দুল হাই আল হাদী
বেবী নাজনীন, মনির খান, আবুবকর সিদ্দিকী
বারী সিদ্দিকী, ফিরোজা বেগম
 
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, পাপিয়া সরোয়ার
 
সাদি মোহাম্মদ, কাদেরী কিবরিয়া
শবনম মোশতারি, সোহরাব হোসেন
 
শাহনাজ রাহমাতুল্লাহ, শেফালি ঘোষ
আজম খান, জেমস, আইয়ুব বাচ্চু
তপন চৌধুরী, খালিদ হাসান মিলু
ঈব্রাহীম, মুজিব পরদেশি, জহির খান
হাসান মতিউর, শাহ আব্দুল করিম
রহমান বয়াতি, আলেয়া বেগম
মমতাজ বেগম, আবুল সরকার
মায়া রানী আরো অনেকই বেঁধেছেন সুর
 
জারিসারি, ছন্দ, কথা, কবিতা গান।
 
চেনাজানা ভালোলাগার এই পথ
 
এসো যত্নে সাজাই গীতিময় প্রীতিময়
 
ছন্দময় ভালোবাসা দিয়ে।
 
সকলেই মিলে প্রাণ খুলে গাই
‘আমার সোনার বাংলা
 
আমি তোমায় ভালোবাসি।’
 

 

 

তবু তোমার অপেক্ষায়


বিপুল সন্দেহ চারিদিকে
সকলেই মেলে আছে তীক্ষ্ণ সজাগ দৃষ্টি!
 
মিথ্যা অহংকারে ভেসে যায়
নেই কোনো নতুন সৃ‌ষ্টি।
 

সরব নগ্নতা চারিদিকে
সকলেই আনন্দ পায় নেচে গেয়ে
দেখতে চায় ভিতর বাহির,
 
তারাভরা নীলাকাশ মেঘে মেঘে যায় ছেয়ে।
 

অচল মুর্খতা চারিদিকে
সকলেই বলতে চায় ব্যাকুল জমানো কথা-
কেউ কেউ বৈষম্যবিরোধী সেজে
ভাঙে বুক, ভালোলাগা নিয়ম কানুন, প্রথা।
 

ঘোর অন্ধকার চারিদিকে
সকলেই নেভাতে চায় আলো,

জীবনযাপনের শত সুর বদলে দিয়ে
সুন্দরে ছুঁড়ে দ্যায় ঝিমকালো।
 

আমি তবু অপেক্ষায় তোমার
 
ব্যাকুল ব্যস্ততায় আগামীর পথ চেয়ে।
 
আসুক ফিরে, আলোকজ্জল স্বপ্নের দিন-
নিজেকেই জয়যুক্ত করি প্রিয় গান গেয়ে।
 

 

 

 

হাত ধরো হাত

খামোখা
 
অপরকে বোকা বানিয়ে কি লাভ?
 
গলা বাড়িয়ে অহেতুক
 
তর্কবিতর্কের কি আছে প্রয়োজন,
 
বুদ্ধ পণ্ডিত সেজে অপরের বদনামী করা
কী এমন জরুরী বলো?
 

দিন দিন
 
নিজেই যেখানে বোকা বনে যাচ্ছো
নিজেই যখন ভুল অক্ষরে লিখছো নিজের নাম
 
সেখানে মিথ্যা অহমিকা পুরোটাই মূল্যহীন-
অকার্যকর, অপাংক্তেয়!

এই ভূ-সংসারে
ভালোবাসার চেয়ে কোনোকিছুই নয় দামি
মানুষের চেয়ে কিছু নেই সত্য আর।
 

যেখানেই থাকো যেভাবে
মানুষ ধরো, মানুষের কাছে যাও,
 
মিলেমিশে হও একাকার।
 

হাত ধরো, হাত ধরো, হাতে রাখো হাত
নিঃসংকোচে ভুলে যাও সব দ্বিধা।

ছিটকে পড়া মানুষগুলো
 
টেনে তোলো অনেক উপরে।
 


 

 

 

শনির আখড়া

অনাকাঙ্ক্ষিত স্বপ্নগুলো
 
কেবল ঘিরে ধরে।
তাকালেই চোখের সামনে
 
কিলবিল করে ইবলিশ
বিষধর সাপ, হায়েনা ও ভয়ানক শকুন!
 

যে মানুষগুলো প্রতিদিন দেখি
 
কথা বলি চলার পথে
 
হাত বাড়াই, করি কুশল বিনিময় হেসে হেসে
 
সে মানুষগুলো মূলত মানুষ নয়।
 
মানুষ নামের অন্য কেউ,
 
অন্য কোনো গ্রহের জীব।
 
 
দলবেঁধে সামনে পিছনে
 
ডানে ও বামে প্রতিদিন ঘুরছে,
 
চোখ মেলে তাকালেই
 
মহাঝামেলা, বিপদ! বিপদ!
 

কবিতা নিয়ে থাকা
 
শৈল্পিক মানুষগুলোও
আজকাল বড় ভয়ঙ্কর, ভীষণ অচেনা।
 
উদ্ভট আকাঙ্ক্ষার মোহে
ছুটতে ছুটতে শুধু হয়রান।

কোথায় গন্তব্য আর কোথায় ঠিকানা
কেউ কিছু বলছে না,
 
শুধুই ছুটছে, দলে দলে শনির আখড়ায়।
 
.......................................................


মাহমুদ নজির
বারজুমান, দুবাই
সংযুক্ত আরব আমিরাত
ইমেইল :
 nojir34@gmail.com

 


Post a Comment

0 Comments