সিয়াম আল জাকি’র গল্প # কেচ্ছা

 

The story of Siam Al Zaki

একটা বৃত্তকে এতো ভাগ করা যায় জানা ছিলো না। সেই বৃত্তের ভেতরে একটু ঘোরাঘুরি শুরু করছিলাম মাত্র। পরে দেখতে পাইলাম যে বৃত্তের সীমানায় ধারালো ছুরি পাহাড়া দিচ্ছে দিনরাত এক করে৷ ট্রাভেল ব্লগ বানানোর স্বপ্নটা তাই ভুলে যেতে হলো। বৃত্তের মধ্যে বর্তমানে ৪৩০০ এর মতো ভাগ আছে। একটা না একটার মধ্যে ‘আধুনিক’ শব্দটারে খুঁজে পেলাম। মুক্তি বোধহয় একেই বলা হয়!
*
মাটি কামড়ে টিকে থাকার সময় শুধুমাত্র সেই সবুজ রঙের সন্ধার কথা চিন্তা করে একটা দিন বরবাদ করে দেওয়া যায়। হাঙর মাছের কাবাব ও হয় এই তথ্য জানার পর টাইগারপাস এর ব্রিজ থেকে একটা সাদা ডোরাকাটা বাঘ লাফ দিয়ে পরে যায়। ব্রিজের নিচে বড় বড় কুমির থাকে এখন। তাদের খাদ্য হওয়ার আগে বাঘ তার দূর সম্পর্কের আত্মীয় বিড়ালের কাছে এই বলে বিচার দেয় যে পানির রঙটা আজকাল তার ভালো লাগে না। ঘোলাটে পানিতে মৃত অবস্থায় ভাসতে থাকাটা তার কাছে অপছন্দের বিষয়। কিন্তু, এখন কিছু করার নাই আর।
*
সকালে শীতল পাটির উপর নিজেকে আবিষ্কার করার পর মাটির সোঁদা গন্ধে নিজেকে আরো বেশী ডুবিয়ে দেওয়া শুরু হলো। পুকুরের সবুজ রঙের ভেতর ব্যাঙের নড়াচড়া উপলব্ধির করার সময় ঘুম ভেঙে যায়। চারপাশে খেজুরের রস এর মিষ্টি সুঘ্রাণ কোনো এক আশি বছরের মানুষকে নিজের সেই সময়ে নিয়ে যায় যেখানে যাওয়া উচিত নয়। আবার যদি চলেও যায় তবে কোনোভাবেই যেন আর সে ফিরে না আসে। ফিরে আসলে তার জন্য আবার অপেক্ষা করছে সেই একই স্মৃতি রোগের সকাল।
*
‘শহরের এককোণে’ বেঁচে থাকা প্রাণ এতোকিছুর পরেও জানেনা কীভাবে বাঁচতে হয়। ধুলোর পথে নিজেকে বিলীন করে দিয়ে অবশেষে তাকে প্রমাণ করতে হয় এখনো একটা মানুষ বেঁচে আছে। এ খবরে কারো কিছু এসে যায়? নেতিবাচক উত্তরের আশায় থেকে তুমি ঘুমাবে আজ। এ ঘুম ভাঙতে পারে সেই ডাকে যে ডাক দেওয়ার ক্ষমতা সবার আগে এক অতিথি নিয়ে বসে আছে। তুমি হয়তো তারই অপেক্ষায়।
*
ঝড়ের রাতে দুজনের হাটা শুরু হয়। বৃষ্টির আবেগে তোমার চোখের বিপন্নতায় আমি হারিয়ে যায়। কতো দেয়াল চারদিকে! তবুও শুধু আমি তোমাকেই বারবার টপকে যায়। সেই চিরচেনা মলিন হাসি উপহার পাই আমি। সেই অচেনা জায়গায় আমরা চলে যায় যেখানে লুকিয়ে লুকিয়ে মৃত্যু দেখতাম আমরা। পরে জেনেছিলাম ওখানে আমাদেরও একবার না একবার যেতে হবে। তুমি ভয় পেতে। অথচ তোমার ভয় পাওয়ার কোনো কারণ ছিলো না। কারণ ঐতিহ্য রক্ষা করার দায়িত্ব ছিলো আমার উপরে।
*
একদিন সকালে মেঠোপথে সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম। কুয়াশা ভেদ করে বহুল আলোচিত বিষয় খেজুরের রস নিয়ে নিজেকে দেখতে পেয়েছিলাম সেই বিন্দুতে যেখানে পৌছাতে পারলে নিজেকে সফল বলা যায় । তবে সেইদিন বুঝতে পারি নি যে কুয়াশা হলো সবচেয়ে বড় সফলতার প্রতীক কারণ তা এমন এক অদ্ভুত ঘোরলাগা ধোঁয়াশার মতো কিছু নিজের চারপাশে তৈরী করে যার মাঝখানে মানুষ হয়তো নিজেকে খুঁজে পায় সবচেয়ে বেশী। এতসব আয়োজন এর পরে-ও বাস্তবে আমি শুধুমাত্র প্যাডেল মেরেই জীবনটাকে দেখতে থাকলাম।

*
কতোকালের তৃষ্ণা জমিয়ে রেখেছি সেই সবুজ চোখে! অরণ্যে আচ্ছাদিত দৃঢ় বিশ্বাসে নিজেকে করে ফেলেছি বিষন্ন কাক। যে কাক বৃষ্টিতে ভিজতে কোনোদিন আপত্তি করে না। সবুজ রঙের চোখ এর বর্ণনা দেওয়ার সময় আমার মনে হয় আমি সেই রেললাইন এর উপর দিয়ে হাটছি যেখানে এখনো পরে আছে তোমার শেষ চিহ্ন! অবাক হওয়ার কিছু নেই। এরকম হরহামেশাই ঘটে। কেউ মনে রাখে না বেশীদিন। তুমি বাসায় জানিয়ে এসেছ তো যে দূর-দূরান্ত থেকে তোমার জন্য ভেসে এসেছে শত আয়ুর প্রার্থনা?

*

লাশের ঘরে একজনকে দেখা যায়। কেউ একজন বলে এই বেটা খুনী। এই মৃতদের শহরে খুনীও আছে? বিস্ময় প্রকাশ করে জনৈক সুদক্ষ অভিনেতা। মানুষ হেটে হেটে বাড়ি ফেরে নিজেদের চোখের নিচের ক্লান্তিকে সাথে নিয়ে। এরাই একসময় নিজেদের সাথে কয়েকটা বাক্য বিনিময় করে স্রেফ ভদ্রতার খাতিরে। আকাশের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টির অপেক্ষা করে। বৃষ্টি পড়লে কাল বন্ধ থাকবে শহর। নদী নেমে আসবে রাস্তায়। বন্ধ হয়ে যাবে সকল ওভারটাইম। এদের মাঝেও কিছু বেকার থাকবে। যারা সেই সকল খুনীদের খুন করতেই ব্যস্ত থাকে সবচেয়ে বেশী।
*

সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে একটা ঝামেলা চলছিলো মাঠের ঠিক মাঝখানে। মুখস্ত করে ফেলা জালের ভেতর একজন আরেকজনকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করছিলো। মাঠে দর্শকের উপস্থিতিও ছিলো লক্ষ্য করার মতো। একজন ছিলো এসবের রেফারির ভূমিকায়। আরেকজন ছিলো শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা করার ভূমিকায়। আর সবাই নিরীহ দর্শক। নিয়ন্ত্রণ কিন্তু ছিলো সেই নির্বাচিত ঈশ্বরদের কাছে। তার গল্পও শোনানে হবে সকলকে সবকিছু গুছিয়ে ফেলার পর।
*

অনেক গল্পই শুরু হয় শেষ না হওয়ার জন্য। আমরা তাকে বলি কেচ্ছা। রটানো ঘটনা কতটুকু ঘটেছে তার কৈফিয়ত চাওয়া যেতে পারে সমস্যা নাই। তবে খেয়াল রাখা উচিত সেই ঘটনায় আমাদের নিজেদের দখল আছে কিনা। অনেক কিছুই শুরু হয় আমাদের অনুমতি না নিয়ে। ‘জনগণ আমাদের সাথে আছে’ এরকম মিথ্যা কথা সবাই প্রচার করতে চায় নিয়মিত। বছরে বছরে তাদের মিথ্যা আনন্দ ধরা পড়ে যায়। বিনা অনুমতিতে আমরা তবুও প্রেমিক হয়ে বেঁচে থাকি। কোনো গল্পের ক্লাইমেক্স এর শেষে নিজেদের হিরো রুপে আবিষ্কার করার নেশায় আমরা ভুলে যায় যে গল্প শেষ হয়ে গেলে সবাই হয়ে যায় চিরকালের মতো মৃত। নিজের গল্পে সবাই আসলে চিরস্থায়ী বন্দীর মতো বসবাস করে। সবাই চায় নিয়মিত এই বন্দীত্ব বরণ করে নিক অন্যরাও। 



সিয়াম আল জাকি

উত্তরা আবাসিক, আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম। 


 

Post a Comment

0 Comments