যায়দিন ভালো
পেটভর্তি হলুদাভ
ডিমওয়ালা চিংড়ি মাছ
এখন আর খেলা করেনা
কার্তিকের ধানক্ষেতে
সাদাবক ওড়েনা
ঝর্ণাভাঙার বিলে,
উন্নয়নের জলে ভাসে
অসংখ্য বন্দীশালা- আয়নাঘর
দুর্বৃত্তের দাপটে
বাতাস হারায় নিজস্ব গতিপথ।
মানুষ ভুলে গেছে
শেরেবাংলার উজ্জ্বল নির্মাণ
ভুলে গেছে ক্ষমতাবিমুখ
ভাসানীর প্রতিবাদী সুর।
নেই নজরুল সুকান্ত-
একাত্তরের বীর বীরাঙ্গনা
প্রান্তর থেকে সত্যের
নক্ষত্রগুলো সরে যাবার পর
হায়েনার মুল্লুকে সতেরো
কোটি বাঙালি নির্বাক পাথর।
দাদী ময়ফুলনেছা প্রায়শই
বলত...
যায়দিন ভালো, আসবে দিন
স্বপ্নের উল্টোরথে
রক্তের বন্ধন ছিঁড়ে
মানুষ আপনজনকেই গিলে খাবে
মনোতন্ত্রের দাপটে ঝরে
যাবে সহস্র প্রাণ।
আজ সেটাই হল...
মাধবীবনে কিলবিল করে
শকুন শ্বাপদ বিষাক্ত ভেঙ্গুর।
শ্যামল মেয়ের ডাগর চোখ
লাউয়ের ডগার মতো লতিয়ে
ওঠা
এক কিশোরীকে দেখেছি
আড়িয়ালখাঁ নদীর পাড়ে
যেখানে ইস্টিমার এসে
শিস দিত সকাল দশটায়
বাতাসি মাছের নৃত্য
দেখে মুগ্ধ হতো পরদেশি পর্যটক।
নদীর ওপাড়ে আমার সবুজ
ঘাসের জাজিম,
সাদামাটা গৃহস্থালী,
মারবেল খেলার শুভ্র বুনোপথ,
কে জানতো! না চাঁদ না
ওই পাড়ার দুষ্টু বালক
তার সঙ্গেই হবে আমার
প্রথম জীবনের প্রণয়, পাশা খেলা!
অতপর ঘূর্ণিঝড় এলো
বসন্ত বাগানে
বৃন্তহারা কুসুম,
ডানাভাঙা প্রজাপতির মতো জীবন
শুরু ঠিকানা ভুলে
বাতাসের কানে কথা বলার সময়,
কল্পলোকের বিবর্ণ
উদ্যানে আজও ভাসে
সেই শ্যামল মেয়ের
স্বপ্নবিধৌত ডাগর কালো চোখ।
নদীও আনন্দে নাচে
পনেরো বছর একটানা
স্বদেশটা মগেদের দখলে ছিল
চাঁদের শরীর থেকে
লাবণ্য ঝরে গেলে
চোখের আলোয়ে কোনো
স্বপ্ন থাকেনা, থাকেনা জল
বুনো শুয়োর, শুয়োরের
দুষ্ট শাবকদের বিচরণ দেখে
হরিণ হরিণী পথ ভুলে
ঝাঁপ ছিল সমুদ্রজলে।
আমিতো এমনটাই দেখেছি
দুর্বৃত্তেরা
গণতন্ত্রের গলায় ছুরি বসিয়ে উল্লাস করেছিল
মানুষরূপী এক দেশদ্রোহী
বাঘিনীর ভয়ে
বনের বাঘ নির্জলা দুপুরে নীরব ছিল, হা করেনি কখনও।
আশ্চর্যের আশ্চর্য নূর
হোসেন নূর, তার ফলোয়ার
অমিয় প্রতিবাদী
রুদ্ররসে ভিজিয়েছিল রাজপথ
যাদের আহ্বানে পাখি
ছাড়ে বাসা, মানুষ ছাড়ে প্রাণে মায়া।
শুধু আমি একা নই,
সতেরো কোটি মানুষ নেচে
ওঠে বাঘিনীর পরাজয়ে
পাঁচ আগস্টের বিকেলে
নদীও নেচে ওঠে আনন্দে,
জানিনা এখন আমরা কোন
পথে হাঁটছি
আমাদের স্বপ্নের দেশটা
কি আবার বেছে নেবে ভুলপথ!
0 Comments