কবি
আমরা কবি
আমাদের বুকেবুকে জেগে থাকে বসন্ত উদ্যান
অথবা জমে থাকে অমৃত ছলনার বিষ!
তবুও আমরা উৎসবের গান গাই
দুঃখের জাতক ভেঙ্গে পান করি সুখের সরাব।
আমরা মুক্ত মানব-মানবীর মন
কেউ বলে ফিরে আসা সুকান্ত সৈনিক
আবার কেউ বলে আমরা সাম্যপ্রাণ কবি।
অথচ সবার সব সম্ভাবনা কে উড়িয়ে দিয়ে
দ্বিধাহীন ভাবে চিৎকার করে বলি
আমরা ঝমঝম বৃষ্টিতে দিশেহারা দাঁড়কাক,
আমরা নির্ঘুম নগরীতে জেগে থাকা স্পটলাইট,
কৃষ্ণচূড়ার জ্বলজ্বলে রক্তাভা রঙের আহ্লাদ
আমরা কবি, কৃষকের বুক জুড়ে কঠিন কাস্তের ধার
আমরা কবি, আমরা হাতুড়ি শাবলের দ্রোহী আঘাত!
আমরাই রাষ্ট্রের বুকে খুঁড়ি নান্দনিক পরিসীমা
বপন করি স্বপ্নময় উদ্ভিদ বীজ
শান্তির শিকড়ে বন্দি করি সকল যুদ্ধবাজদের।
আমরা কবি
আমাদের বুকেবুকে জেগে থাকে বসন্ত উদ্যান
অথবা জমে থাকে অমৃত ছলনার বিষ!
কোথায় জুড়াতে আছে ঠাঁই
একদিন পাহাড়ের গায়ে ঠোঁট রাখলাম
পাহাড় জানিয়ে দিলো ভেতরে আগ্নেয়গিরি
পুড়ে যাবে তোমার পুরোমুখ
ঝর্ণার শরীরে ঠোঁট রাখলাম
ঝর্ণা জানিয়ে দিলো জলনয় এ অম্লধারা
এটা তোমাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিবে
অতএব মাটিতে ঠোঁট রাখলাম
মাটিও জানিয়ে দিলো ভেতরে ভূমিকম্পের ভাঙন
ধসে যাবে তোমার পুরো দেহমন
নিশ্চিহ্ন হবে তোমার পুরো অস্তিত্ব।
সেই থেকে শুকনো ঠোঁটেঘুরে বেড়াচ্ছি
জগৎ সংসারে কারো বাড়ানো ঠোঁটের অপেক্ষায়।
অভিমানী অমর একুশ
উনিশশো বাহান্নোর ফেব্রুয়ারির একুশ
স্পর্ধিত প্রতিজ্ঞা জেগে ওঠে মায়ের ভাষায়।
আমাদের মজবুত বুকের জমিন বারবার
মিছিলের রৌদ্রে বুক ভিজে যায় রক্তে
অসংখ্য আর্তের আর অকাল মৃত্যুর শিহরণে
দিক-দিগন্তে শোকবার্তা সহানুভূতি জাগায়
বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে
বলে, আ মরি বাংলা ভাষা!
ফ্যাকাশে পোস্টারে ঢাকা শোকার্ত শহরে
মানচিত্র জুড়ে আয়োজন হয় বিষন্ন প্রভাত ফেরীর
উৎকর্ষ সত্তার গান বেজে ওঠে সবার মুখে মুখে
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি?
অথচ একুশ ভুলে যায় বাইশে এসেই
কলহাস্যে মুখর হয়ে ওঠে বিষণ্ন প্রভাতফেরি
বিষাদ সিন্ধুর হাহাকার তোলে অযত্নের শহীদ মিনার!
একুশের দিন শেষ হলে প্রিয় আলোগুলো
বিষণ্নতা এড়াতে
ঘুরতে যায় দূরদেশে ভিন্ন ভাষার খোঁজে
নিয়মের খাঁচা ভেঙে আলাদা আঁধার বেছে নেয়
ভাষাঘুম যাত্রা শুরু করে নিরুদ্দেশে।
0 Comments