মোহাম্মদ হোসাইন এর ‘কালিক সন্ধ্যার মেটাফ’ ও অন্যান্য কবিতা

Poetry of Mohammad Hossain



কালিক সন্ধ্যার মেটাফর



সূর্য রেগে আছে, রেগে আছে মেঘও
মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে স্বদেশের হাওয়া
শিশু গাছ কাঁদছে, কাঁদছে লোকালয়

তেতে আছে মাটি, রোদের বল্লম এসে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিচ্ছে প্রকৃতির বুক
হাওয়া নেই, জল নেই, মাছেরা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ছুটে যাচ্ছে একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত--

একফোঁটা স্বস্তির আশায়!

ভীষণ রকম ছটকে আছে পিচঢালা পথ

বৃষ্টিহীন এ প্রান্তর বুনোষাঁড়,
  কালিক সন্ধ্যার মেটাফর।
২৪/০৬/২০১৯.





বল্লাল সেনের হাতি



কথা রেখে দেই

অলক্ষ্যে, তবু কত কথা পড়ে যায় ভাঁজের আড়াল

মাটি চিনে নিতে গিয়ে পেয়ে যাই পুরনো নূড়ি

মানুষ এলে মানুষের কথারাও আসে
আসে স্মৃতিদগ্ধ চিল, খনি

মাঝে মাঝে বখতিয়ারের ঘোড়ারা আসে
আসে বল্লাল সেনের হাতি

অতীত মুছে দিচ্ছি
সবখানে আকুল করা গীত, সত্যজিৎ
নেড়েচেড়ে দেখি তবু নিভে যাওয়া ছাই, ফুলকি

ভালো লাগে না...

ভালো লাগা ‘দূরের সাইকেল...’





মৃত্যু


অবশেষে কিছুই থাকেনা
না নারী, না প্রেম

অথচ, পাঁজর থেকে উড়ে যায়
হাজার ডানা, অসমাপ্ত পঙক্তির নম্র পালক, দ্বিধা ও রাত্রির মুখচ্ছবি...

কালেভদ্রে আমারও খসে পড়ে অবাধ্য খোলস
আমারও শরীর থেকে ঝরে যায় পলল মাটির ঘ্রাণ
নদী এসে জড়িয়ে ধরে গ্রীবা

ইতিহাস ফিরিয়ে দেবে বলে, শূন্যহাতে ইতিহাসের দিকেই চেয়ে থাকি
কতকিছু কেড়ে নেয় সময়, কত ক্রুর নখর তার!

অথচ, বিঁধে নেওয়া তীর, খুলে নেওয়া হাড়, পৃথিবীকে নিঃসঙ্গতার গানই শোনালো

অপ্রকৃত ছায়া যেমন উড়ে যায় দিগন্ত শেষে

প্রকৃত মানব যেমন রাখেনা কিছুই অবশেষ
রোপে দিয়ে যায়, শস্য ও শতাব্দীর সীমাহীন চারুময়তা

তেমনি, মৃত্যু এক অপরাজিত সত্তার নাম যাকে অমরত্ব দেয়া যায়, অস্বীকার করা
  যায় না...

২৪/০৬/২০২০




একটি রাতের আত্মকথা


জাগতে জাগতে একটা সময় আর জাগতেও ভালো লাগে না। রাতের পা টিপে টিপে, সময়ের গাল টিপে টিপে অবশেষে মাথা যখন অবশ হতে থাকে এবং হাত বিকল হওয়ার মতো করে দেখাতে চায় তখন রক্ত জবার মতো হতে থাকে চোখ। আমি এসবই রাতব্যাপী পর্যবেক্ষণ করতে থাকি। আর কখন যে রাতের কালি মুছে গিয়ে ফর্সা হতে থাকে উঠোন, ঘর, চৌকাঠ এবং ঘরের ভেতরের পানির গ্লাস, খাবার প্লেট অথবা বসার চেয়ার - কিংবা বিছানা বালিশও বেশ মন মরা মন মরা দেখায় অথবা দেখাবার ছল করে...

অথচ, একটা সঙ্গম দৃশ্যের জন্য উদগ্রীব ছিল একজোড়া সরীসৃপ। ততক্ষণে রিভিউ লিখে নিয়েছে দূরের আকাশ কিংবা রাতের তারা, উপোসী শৃঙ্গার!

শব্দের পাঠ নিতে নিতে যারা যারা অকূল হয়েছে, অনামিকা থেকে খুলে নিয়েছে প্রবল বর্ষার প্রতিশ্রুতি
  অথচ, আজ তারা চলনবিলের গল্প জানেনা৷। জানে না
পৃথিবীর দুগ্ধখামারিরা প্রতিদিন কতবার আঙুল ভেজায় দুগ্ধজলে - অথচ, নিজে খেতে পারে না হাতির
  দাঁতের মতো নিপুণ নিপাট দুগ্ধ কিংবা তার শাদা দাঁত!

বেঁচে থাকার জন্য কতকিছু জড়ো করে মানুষ। অথচ,
মানুষের খুলি, পুরনো দলিল, চিঠির ভাঁজ আখোলা দীর্ঘশ্বাস - এসবই প্রভাতের অপার্থিব আলোর মতো, গানের মতো উড়ে যেতে থাকে প্রায়শ...
২৫/০৬/২০২৪.



মোহাম্মদ হোসাইন
৭/৩ বি, তরঙ্গ, খাসদবীর, সিলেট সিটি করপোরেশন।

 


Post a Comment

0 Comments