মাহফুল আখতার এর গুচ্ছ কবিতা

A collection of poems by Mahful Akhtar


ব্যারাকে যাবোনা ফিরি


জলদি জনাব, হুকুমের নকর আমি 

দ্যাশটাক  সকাল সন্ধ্য নমঃস্য  মানি;

আজ বডড শান্তিতে আচি

জনাব, পাইচি ঐশী বাণী! 


বাপে চাষে ভূই, মাথায় শক্ত আকাশ থুই

“আপনে কেনে বাহে, গাঁও থাকি শওরে আলিন।

গাড়ি নাই চড়ছিন্? গতরে ঝিলিক নাই

প্যাটে ক্ষিদে খাই খাই, মনেত শান্তি নাই।”


এতোডি নাই লিয়ে কোটার লড়াই?

বাপ পাছে বেটা পাবি, নাতি-পুতি-জ্ঞাতি পাবি

বাহে কেন নোজ আসি বেহুদা মিটিং এ দাঁড়ান!


আপনার ছাতিখানার রোশনাই চান?

“ওসব হবিনা বাপু বাড়িত ফিরি যান,

 ভূইটুই চষি এবারের মঙা তাড়ান!


বাড়িত যাবেন না, বুক করিচিন টানটান”

হামিতো ব্যারাকে যাবোনা ফিরি 

আপনার বুকটা না চিড়ি!!




কতো কিছু ছিল তার


কত কিছু ছিল তার-

আকাশের পাল্কিতে ছিল 

নীলরঙা ঠোঁটে হলুদ ডানার চিল

ছিল সবুজে সরব বনভূমি।


অচেনা পথে হাঁটার মোহন ক্লান্তি  

 হাওয়ার হাপড়ে ঠেলে দিয়ে, ছিল  

অপেক্ষা প্রহর, বাড়ি ফিরতি মানুষের ভিড়ে

বাহনের উত্তাপে মুঠোফোনে দাঁড়ানো কথন!

 

মৃদু ছায়া বকুল বিকেলের কোলে

তালুমন্থনে ছিল কমলারং ফলের দৃশ্য,

দৃষ্টান্তরে শ্রাবণ ধারায় ভেজার আক্ষেপে

 ছিল একাকী জলডিঙি, বৃষ্টি নুপুর! 


 ছড়ার জলের দুস্প্রাপ্য নুড়ির কাঁকন হাতে

পাহাড়ি ঝর্ণার মতো ছিল কথার নহর!


শীতের শুনশান রাতে ছুটে চলা ট্রেন 

শব্দের নিগুঢ়ে বাজিয়ে নিশুতি সুরের গুঞ্জন;

কুসুমের খলে চৈতন্য রোদে জ্বলে - 

সেগুলো মৃতপ্রায় প্রত্নতত্ত্ব ফসিল এখন।


যাপিত জীবন যেন ঝড়ের যাতনা সঙ্গীত!




মূর্ত হয়ে উঠেছে সকাল 


‘ফিরে এসে কথা হবে’

নীরব কথনে কেটে গেছে প্রত্যাশার

প্রত্যাগত দু:সময়, দু’একটা বর্নে বর্ণিলও  

 ছিলনা যে মুঠোবন্দী আয়নার নিস্পৃহ কাল।


চোখ হতে সরে গেছে স্মৃতিদের সারি

একদা ময়রার মাছির মতো ঘিরে ছিল

কীর্ণ কথার মায়াজালে ভরা মিষ্টান্ন বাড়ি।

চোখভরা উম্মুখ ব্যস্ততা তার।


কংকরসজ্জিত পথে হেঁটে নাকাল যখন

মধ্য রাত্রির খামে ঝিনুক আঁধার যামে 

দেখিনাই কখন মূর্ত হয়ে উঠেছে সকাল।




ভিজে যাক মান্যবরের পাদপিঠ


কষ্টধুপগুলো তার পুড়ছে গন্ধবহ 

চক্ষুবারান্দা নিষ্ঠার নিমিত্তে নিকষ নামায়

একাকি হালে ছেঁড়াপাল গৈরিক যাপনে কাঁপে,

বান্ধব উপেক্ষায় থমকে দাঁড়ায় সান্ধ্য কোলাহল।


প্রত্যাবর্তনের পথে ছড়ানো বহু বিদ্বেষ নুন,

নামুক আবার প্রার্থনাকাতর সুবহে সাদিক;

এবার প্রকৃষ্ট প্রণামে ভিজে যাক মান্যবরের পাদপিঠ। 



কষ্টজ্বরের শেয়াল পুষোনা


ভালোবেসে কষ্ট পেয়ে 

একটা কালো বিড়াল পুষো 

ভালোবেসে কষ্ট পেলে 

একটা ইঁদুর পুষে নিও 

 অবহেলার মানুষ পুষিওনা!


ভালোবেসে একটা চারাকে 

বৃক্ষ করে নিয়ো.... 

গতিহীন নদীগুলোকে...

গতিবেগে খরস্রোতা করে দিও 

তবু কষ্টজ্বরের শেয়াল পুষোনা।

Post a Comment

0 Comments