সুমন শামস এর তিনটি কবিতা

Suman Shams's Kabar Eta Desh and other three poems



কবর একটা দেশ


ভালো মানুষের জায়গা পৃথিবীতে নেই। কবরে আছে কি বাবা? তোমার পাশে কবরস্থ লোকটা তার কবরের সীমানা ঠেলে তোমাকে উচ্ছেদের পায়তারা করে না তো? কবর পলিটিক্সে তোমার মতো গোবেচারার সবকিছু কেড়ে নিতে চায় না তো কেউ? সামান্য একটি চেয়ারের জন্য পৃথিবীতে যেমন দাঁতাল শুয়োরের নর্তন কুর্দন; কবরে নেই কি তেমন শুয়োরীয় আয়োজন, ইঁদুর বেড়াল সাপেনেউলে খেলা, মিছিল মিটিং আন্দোলন? কবরে কি আছে নেতাতন্ত্রের দৌরাত্ম্য, ক্ষুব্ধ খোঁচাখুঁচি, প্রাসাদ ষড়যন্ত্র, সন্ত্রাস ও ধর্ষণ; অন্ধকানুন ও আইনের মারপ্যাচ? ওখানে পরাগের শীর্ষে বিষ ঢেলে দিতে আসে না কি কোনো কীট, গোলামীনামায় ঝুলে থাকে না কি মানুষের লাশ?

কবর কি একটা দেশ? ওখানে আছে কি রক্তবর্ণ পতাকা, মানচিত্র কিংবা স্বাধীনতা? আছে কি কোনো তন্ত্র মন্ত্র মতবাদ, মানব সভ্যতার ইতিহাস? লৌহপ্রস্তর যুগ অথবা জুরাসিক যুগের বিলুপ্ত প্রাণীর কঙ্কাল? আচ্ছা বাবা, কবরে মানুষ কি বিপ্লবী স্লোগান তোলে? চে ক্যাস্ট্রো লেনিন স্টালিন ওরা কি এখনো সাম্যবাদের কথা বলে ওখানে? ফরাসি ও রুশ বিপ্লবের মতো ঘটেছিলো কি কোনো রেনেসাঁস, প্রবল পুনরুত্থান? নাকি বাজার সিন্ডিকেটে কেবল লম্বা হয়েছিলো সেখানে তৃতীয় বিশ্বের ধারণা? রেমিট্যান্স জিডিপি মুদ্রাস্ফীতি তথা বিশ্বঅর্থনীতি ওখানে কেমন?

ধর্ম দর্শন ও বিজ্ঞানের ধারণাই বা কীরূপ ওখানে? মানুষ বেঁচে থাকে প্রজ্ঞা ও চেতনায়। কবরেও কি মানুষ তেমনই থাকে? সিরাজ লালন কবিরেরা কি ওখানে বেঁচে আছেন বাবা? একটা সলজ্জ জিজ্ঞাসা তোমাকে, শুনেছি কবরেও থাকে ইন্দ্রিয় অনুভূতি। ওখানে কি নেই তবে ঘর-সংসার, প্রেম-পরকিয়া, বিয়ে ও বিচ্ছেদ? প্রেয়সীর চুলের স্তবক আলগা হলে ওখানে কি কেউ লেখে না কবিতা? গায় না কি গান?

যদি তার উত্তর হয়- না !

তাহলে কবরে তুমি কীভাবে বেঁচে থাকবে বাবা!





পুরুষের গোঁফে ঈশ্বর বসে থাকেন

পুরুষ সম্ভবত গোঁফ চেঁছেই প্রথম নিজেকে গোলামরূপে আবিষ্কার করলো। গোঁফের অত্যাশ্চর্য এক ক্ষমতা আছে। পুরুষ যখন ভ্রু বাঁকিয়ে বুড়ো ও তর্জনীর দ্রোহে ঘুরিয়ে দেয় গোঁফের উজান; পৃথিবীতে তখন নতুন সভ্যতার তোপধ্বনি হয়। পরাধীনতার সমুখে তেড়ে আসতে থাকে পুরুষের তেজোদ্দীপ্ত মুখ, প্রবল পরাক্রমে সে গিলে নেয় পৃথিবীর সব উপনিবেশ।

পুরুষ যখন প্রশান্ত হয়, গোঁফ নুয়ে আসে চিবুক ও প্রবল বুকের অভিমুখে; তখন সে ত্রিমুখ ব্রহ্মা। পুরুষের গোঁফে ঈশ্বর তখন দুই পা বাবু দিয়ে বসে থাকেন। ঈশ্বর আর পুরুষ ঠিক তখনই সমার্থক। পুরুষ তখন গোঁফের আরশে সমাসীন চির অধীশ্বর।

তারপর দেয়ালে দেয়ালে পুরুষ লিখে দেয় নারীর স্তন আর পুরুষের গোঁফে চিরদিন লেগে থাকে সাম্রাজ্যবাদের চোখ।






নিম্নবিত্তের নম্বর চার

অর্ধোলঙ্গ সভ্যতার ধ্বংসাবশেষে দাঁড়িয়ে মানুষ তৈরি করছে আরেকদল মানুষকে। ছেনে ছেনে তৈরি করছে নিটোল ছাঁচের মানুষ। কাঠামো দাঁড়িয়ে গেলে তারপর চার নম্বরের ছাপ মেরে দিচ্ছে পেছনে। ব্রাহ্মণ শূদ্রের বর্ণবাদী নম্বর এটা না। বিত্তের মানদণ্ডে মারা হচ্ছে অমোচনীয় এই ছাপ। নিম্নবিত্তের নম্বর চার। মানুষগুলোকে তারপর নিয়মানুযায়ী পোড়ানো হচ্ছে। পোড়ালে মানুষ কাঠামো ভাঙতে পারে না। বিস্তর জীবন উড়িয়ে নিষ্ফল আন্দোলন তুলে শুধু গন্তব্যে উড়ে যায়। 

এসব জানে পৃথিবীর সব অদ্ভূত সূর্যাস্তের লালরঙ আঁধারেরা। উন্মাদ ধনতন্ত্রের সবুজ বাথানে ওরা অভ্যাগত। পুঁজির আস্তাবলে নিঃশব্দে মরে যেতে হয়, ওরা জানে। মৃত্যুও একটা জীবন। কথা বলা যন্ত্রণাও জীবন। ধাবমান নিষ্পেষণ ও নিপীড়ক কাউকেই অস্বীকার করা যায় না। 

ফলে উচ্চবিত্তের গ্রাসে মাছের মতো চিরদিন নির্ধারিত তাদের পরকাল।

Post a Comment

0 Comments