সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘মোহাম্মদ নাসিম স্মৃতি সম্মাননা-২০২৪’ পেয়েছেন কথাসাহিত্যিক রিপন আহসান ঋতু। কাজিপুর পাবলিক লাইব্রেরির আয়োজনে এই সম্মাননা দেওয়া হলো সাহিত্যের এই গুণীজনকে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিমের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ১৩ জুন ২০২৪ তারিখে কাজিপুরের শহীদ এম মনসুর আলী আধুনিক অডিটরিয়ামে আয়োজিত আলোচনা সভা ও মোহাম্মদ নাসিম স্মৃতি সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে তাঁকে এ সম্মাননা প্রদান করা হবে। অনুষ্ঠানে সম্মাননা পদক তুলে দিবেন সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিমের সুযোগ্য সন্তান প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয়।
সম্মাননা পাওয়ার অনুভূতি ব্যক্ত করে রিপন আহসান ঋতু বলেন, মোহাম্মদ নাসিম ভাই বাংলাদেশের রাজনীতিতে একজন মহিরুহ। বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদের নামে সম্মাননা পাওয়া আমার জন্য সত্যিই বিস্ময়কর এবং অভূতপূর্ব। এটি এমন একটি সম্মাননা যা আমার জীবনে ভীষণ ঘটনাবহুল এক হিরন্ময় স্মৃতি হয়ে থাকবে। আমি মনে করি এই সম্মাননা আমার লেখালেখিতে একটি বড় উৎসাহ জোগাবে।
তিনি আরো বলেন, আমি যে মাটি ও মানুষদের সাথে বেড়ে উঠেছি, তারাই যখন আমার শিল্পসম্মত জীবনের খোঁজ রাখেন, আমার লেখালেখি নিয়ে আগ্রহ দেখান, তখন আমি দ্বিধাহীন ভাবে বলি আমি কৃতজ্ঞ আপনাদের কাছে।
উল্লেখ্য, রিপন আহসান ঋতু, কবি ও কথাসাহিত্যিক। শিল্প সাহিত্যাঙ্গনে একজন সাহিত্য অন্তপ্রাণ হিসেবেই পরিচিত। জন্ম ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৭ সালে সিরাজগঞ্জ জেলার, কাজিপুর উপজেলার ছালাভরা গ্রামে। শৈশব, কৈশোরে যমুনার নদীর তীরে এক সর্বগ্রাসী হাঁ-করা চোখ নিয়ে বেড়ে ওঠা তার। শৈশবে বাবার আকস্মিক মৃত্যুই মূলত তাকে লেখক বানিয়েছে। প্রয়াত বাবার স্মৃতিচারণ লিখতে গিয়েই লেখার পুঁজির ভান্ডার তিলতিল করে সমৃদ্ধ করেছেন।
বর্তমান সময়ে যে ক’জন প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ লেখক সাধারণ পাঠকমহলে দ্রুত প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হচ্ছেন, রিপন আহসান ঋতু তাদের মধ্যে অন্যতম। তার লেখালেখির ভাষা আলাদা, প্লটও ভিন্ন। গল্পের গাঁথুনীতে সাবলীল সুর আর স্বকীয় বৈশিষ্টের কারণেই দ্রত ছড়িয়ে পড়েছে তার লেখক-খ্যাতি।
পড়াশোনা দর্শনে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। আমাদের কাহিনি-সর্বস্ব কথাশিল্পের যুগে তিনি দার্শনিকতায় ঋদ্ধ একজন লেখক। গদ্যকার হিসেবেও বেশ উজ্জ্বল তিনি। নিয়মিত লেখেন বিভিন্ন ছোটকাগজ, প্রথম সারির জাতীয় পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালে।
এ পর্যন্ত তার বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো উপন্যাস: ‘গল্পের মোড়কে মানুষ’। গল্পগ্রন্থ: সংসার থেকে লুকিয়ে, যাদুর নীল বেলুন। প্রবন্ধগ্রন্থ: অতঃপর প্রহসন। কাব্যগ্রন্থ: ভাঙনের উৎসব। এ ছাড়াও তিনি ‘ঠোঁট’ নামের একটি আদুরে ভাঁজপত্র সম্পাদনা করেন। রিপন আহসান ঋতু দেশের বিভিন্ন জায়গাতে বঙ্গবন্ধু পাঠচক্র প্রতিষ্ঠা করে প্রশংসিত হয়েছেন। তার ‘বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সুপারি অতঃপর আমার বাবা’ শিরোনামের গল্প অবলম্বনে নির্মিত হচ্ছে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘পিতা ও পুত্র’। লেখালেখির জন্য তিনি পেয়েছেন ‘বামিহাল তরুণ কথাসাহিত্য পুরস্কার-২০২২, ফ্রেন্ডস পদক-২০১৯, পাঠকপণ্য পাঠশালা পুরস্কার-২০১২।
রিপন আহসান ঋতু বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কর্মরত। শিক্ষক স্ত্রী নাজমুন্নাহার ও সন্তান রাফসান আল জারিরকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করেন।
অনুষ্ঠান আয়োজন বিষয়ে কাজিপুর পাবলিক লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠাতা আল মাহমুদ সরকার জুয়েল বলেন, এবারের ‘মোহাম্মদ নাসিম স্মৃতি সম্মাননা-২০২৪’ পেয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ চাঁদ মিয়া, রাজনীতিতে প্রয়াত ইসমাইল হোসেন সরকার (মরণোত্তর), সংস্কৃতিতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠশিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলী সরকার (মরণোত্তর), সাহিত্যে রিপন আহসান ঋতু চিকিৎসা সেবায় ডা. মোঃ সাইদুল ইসলাম, শিক্ষায় প্রফেসর মোঃ রেজাউল করিম রাঙ্গা, কৃষিতে কৃষিবিদ মোঃ রফিকুল ইসলাম, সমাজ সেবায় প্রফেসর শ্রী পরিমল কুমার তরফদার ও আবদুর রাজ্জাক এবং উদ্যোক্তা হিসেবে পেয়েছে সাধক কিংবদন্তি ফুলেয়ারা খাতুন।
অনুষ্ঠানে উপজেলা চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান সিরাজী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সোহরাব হোসেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ কাজিপুর উপজেলা শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রেফাজ উদ্দিন মাষ্টার, কাজিপুর পৌর মেয়র মো: আব্দুল হান্নান তালুকদার, সরকারি বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ, ভয়েস অব কাজিপুরের সভাপতি, এলএস ফ্যাশন লিমিটেডের ব্যবস্থপনা পরিচালক, চ্যালেঞ্জার সুইং সেন্টারের প্রোপ্রাইটরসহ বীরমুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, সাংবাদিক, কবি-সাহিত্যিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার ব্যক্তিবর্গকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
0 Comments