তিনটি কবিতা ।। নজর উল ইসলাম

Three poems. Nazr ul Islam



সাধক 

চাঁদ কারও সাথে থাকে না, তা বলে চাঁদের গায়ে হাত দেব না
এমনটা নয়, বরাবরই সোহাগি আলো ছুঁয়ে হাঁটছি এতদিন যে কী ছলনায় ফুলমোহে স্বপ্ন দেখেছি 
সব সাধনা ঢেলে, আঁকড়ে একগাছি রূপকথাম অনন্তে শিমুল তুলোয় উড়ে হারিয়ে গেছি তোমার অরণ্যে মাঝখানে প্রত্যাশার অন্তহীন একরাশ ফুটন্ত দিনমণি কত আনন্দ মেঘপুঞ্জের বিনোদ ঘরে দিশেহারা আত্মায় খুঁজি কথার ভাষ্য ওপিঠ ওপিঠ অনালোক প্রেমচিহ্ন ছবির পর ছবি আসে বিকুলি নন্দিত অপূরক অলেখা শুধু বেবাক থাকি বিলাসী দুঃখের উঠোন জুড়ে কথকতায়...





শিল্পলোক 

মেঘের বাইরেও কত মেঘ পোষা থাকে ঘুমন্ত শিয়রে নিছক চাম বাদুড়ের মত ঝুলন্ত এক নিশি পাখি 
বুঝিনা রক্ত-সন্ধির বিভ্রম — দর্শকের সাজ নিতে হয় অভিনয় মুচমুচে খোরাকি মনোহারী যেন শিল্পরূপ পুতুলনাচের মত দূর থেকে লুকিয়ে টানাটানি করে ছোঁয়া লাগা প্রজাপতির প্রতিফলন বুকে ধরে হাঁটি কখনও বন্য হাওয়া আসে উড়ি রোমান্টিক অনুভবে বিমূর্ত প্রচ্ছদ সাঁতরে কবিতার মলাটে একান্ত অন্তরালে মনে পড়ে কালিদাসের ইতিকথা সাধনায় উপুড় ...





ঢেউকথা

মন্ত্রমুগ্ধ শুভেচ্ছায় বুক ভরে নিই ঢেউকথা 
এত কাছাকাছি রোদ এল ঝুরঝুরে হাওয়া বিনত বোধ পাখির গায়ের ওম সম্পর্কিত মায়া নিরীহ জীবন 
তাও দূরের অতিথি সুবাসের অপেক্ষায় মর্মাহত 
উৎসর্গ করেছি মন- অনুরণন গা-ভাসা অন্তকথন 
সব জলজ প্রকরণ শৈলীর সুবাদী মাঠময় শস্য আগুনের পাখিরা জানে ভ্রমরের বাগান আশ্রিত 
পুরনো স্থাপত্যের মত আপন গড়ে স্বীকার করি 
বেদনার স্থিতিশীল দুরালোক করে গলে গেছে আঙুলের ফাঁকে 
মোহনশীল মাছির কায়দায় বসে আছি এক চাঁদে...





কবি পরিচিতি:

কবিতা এবং কবিতাকেই আঁকড়ে বাঁচতে চেয়েছেন নয়ের দশকের কবি নজর উল ইসলাম।১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর বসিরহাটের পশ্চিম বিবিপুর গ্রামে জন্ম। হাদরিদ্র পরিবারে প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছেন নজর উল কবিতার হাত ধরেই।
দারিদ্র্যের কারণেই উচ্চ মাধ্যমিকের পর উচ্চশিক্ষার কৌলিন্য অর্জন না-করলেও নজর উল ইসলাম নিরন্তর কবিতাচর্চার কবি হিসেবে সমুজ্জ্বল দু-বাংলায়। তাঁর ক্রমান্বয়ে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলি হল ‘নদী এলেই তুমি এসে যাও’, ‘রাতপাখির দেহলি’, ‘আমিই সেই পথ’, ‘ ও বৃষ্টির মেঘ’, ‘মুখ লুকনো হৃদযমুনা’, ‘ মেঘপাখির আগুনলিপি’ প্রভৃতি। বাংলা সাহিত্যের প্রাতিষ্ঠানিক ও অসংখ্য লিটল ম্যাগাজিনে প্রবহমান তাঁর সৃজনশীল কাব্যকৃতির জন্য নজর উল ইসলাম পেয়েছেন চন্দ্রকেতুগড়, রিয়া ইন্ডিয়া এবং এখন বঙ্গদেশ সন্মাননা। 





Post a Comment

0 Comments