শামীম রেজার কবিতা : নদীময় আত্মিক আলেখ্য #এমরান কবির

Poetry of Shamim Reza: Nadimay Atmik Alekhya #Emran Kabir


কবিতায় শামীম রেজা যাপিত জগতের ভেতরেই নির্মাণ করেন অন্য এক অনুভ’তিময় আত্মিক জগত। ওই জগৎ দিবালোকের মতো স্পষ্ট নয় কিংবা অন্ধকারের মতো দুর্ভেদ্যও। আধো আলো আধো আঁধারি। যেন দিনরাত্রির সংযোগস্থলে সংগটিত কোনো এক লৌকিক-অলৌকিক সত্তা। কিন্তু ওই সত্তা কেবল মস্তিষ্ক উদ্ভূত নয়। আমাদের বৈশ্বিক মিথ, লোকজীবন এবং এগুলোর রসায়নে সংশ্লেষিত অন্যরকম এক প্রাগইতিহাসিকতা। যে অনুভূতির আলেখ্য তিনি নির্মাণ করেন তা আমাদের সচেতন জানাশোনা ও অভিজ্ঞতার ফসল নয় আবার খুব দূরবর্তী কোনো রেখা থেকেও সংশ্লেষিত নয়। ফলে তা একরৈকিক চিন্তার উৎক্ষেপণ না-হয়ে, হযে ওঠে বহুরৈখিক শিল্পের বিচ্ছুরণ।

এই নির্মিতির শিল্পী হতে গিয়ে তিনি কবিতায় উপস্থিত করেন বিভিন্ন মাত্রিকতার নদী। বোধকরি শামীম রেজার কবিতায়ই সবচেয়ে বেশি নদীর উপস্থিতি। তবে নদী যে কারণে নদী, কিংবা যে জন্য নদীটি নদী, তা ছাপিয়ে শামীম রেজার কবিতায় নদীগুলো হয়ে ওঠে নদীর অধিক। নিছক নদীর নাম ছাপিয়ে তা হয়ে ওঠে সুগভীর চিত্রকল্পবাহিত। নদীগুলো যেন চলিঞ্চু গূঢ়তার প্রতিনিধি, প্রতীকের আধার, ভিন্ন ভিন্ন বিভঙ্গের সূচক, ভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতের গুপ্ত স্মারক- স্তরে স্তর যার বিন্যাসিত রহস্য, আর তার পললে যেন স্বাতন্ত্রিক উজ্জ্বলতার উদ্ভাস। তাঁর নদীগুলো ভিন্ন পরিপ্রেক্ষিত ও ভাবনার প্রতিনিধি কিন্তু একক ও অনন্য। এখানেই তাঁর কৃতিত্ব। একই শব্দ যা আভিধানিক অর্থে একই কিন্তু কবিতায় অভিধানিকতাকে অতিক্রম করে অন্যকিছুর প্রতিনিধি করে তোলা নিশ্চয় শক্তিমত্তার পরিচয় বহন করে। কবি শামীম রেজা সে-কাজটি অনায়াসে করেন তাঁর কবিতায়।

শামীম রেজার চূড়ান্ত গন্তব্যও যেন ওই নদী। তাঁর কাছে নদীবাহিত প্রতিটি ঢেউ যেন কবিতা এমনকি বাক্যবাহিত প্রতিটি অনুষঙ্গ, প্রতিটি চিত্রকল্প যে শিল্প ধারণ করে তাও হয়ে ওঠে কোনো না কোনো নদ্।ী কবিতা ও নদী। নদী ও কবিত্ া। এই দুই সত্তার দ্বি-মূখী ক্রিয়া বিক্রিয়াই তাঁর কবিতার প্রাণ ভোমরা। 


মাঝে মাঝে ভাবি আমি কি সার্কাসের নিরীহ কোনো ঘোড়া?

যার চাপা গোঙানিতে হিমালয় জল হয়া গলে;

আর তুমি গভীর অরণ্যে বইয়া যাওয়া অন্য কোনো নদী

পর্বতের মাসিক বেদনায় জন্ম যার: দূর বায়ুস্তর থেকে

আরো কিছুদূরে আমার খুরের শব্দে ঢেউ ওঠে তোমার মোহনায়’


বর্তমান থেকে দূর অতীত হয়ে প্রাগৈতিহাসিককালে হেঁটেছেন তিনি। জীবনানন্দের কথা মনে পড়ে। তিনি ইতিহাসচেতনার ভেতরে দেখেছিলেন রহস্য। শামীম রেজা দেখেন রহস্য ও ধ্বংসের মাঝে অন্যরকম ইতিহাস, ইতিহাসের সংবেদন ও প্রত্নবাংলার আলেখ্য। ফলে সৌন্দর্যের অবগাহনই তাঁর কবিতার মূখ্য বিষয় ও উদ্দেশ্য নয়। ব্যক্তি, পরিপার্শ¦, ইতিহাস ও কাল চেতনার অনুষঙ্গে ওই কালের সম্ভাবনা ও সঙ্কট নির্ধারণই যেন তার বিধেয়। এভাবে তাঁর কবিতা হয়ে ওঠে মূর্ত-বিমুর্তর যৌথ রসায়নে নির্মিত অনরকম বিভঙ্গের সুচক। যা এই অঞ্চলের হাজার বছরের ইতিহাসযাপনের এক পরিপূর্ণ চিত্র।

আজ ০৮ মার্চ শক্তিমান এই কবির জন্মদিন। জন্মদিনে তাঁকে প্রণতি জানাই।


Shamim Reza:


Post a Comment

0 Comments