মানুষ নিজেই একটি বিয়োগচিহ্ন থেকে ১৫ কবিতা #ফিরোজ শাহ

 

Man himself is a minus sign 15 poems #Firoze Shah


আনন্দবৃক্ষ


পয়সার

ভেতরে একটি আনন্দবৃক্ষ


প্রতিবার
হাত বদলে

একটি করে ফুল ফুটে

ছড়িয়ে পড়ে শাদা ঘ্রাণ।  




















উত্তরাধিকার



বাবার প্লেটে আলুভর্তার পাশে আস্ত একটা চাঁদ

জোছনা খেতে খেতে বাবা একদিন জোনাকি হয়ে যায়

পোড়ামরিচের অন্ধকারে দৌড়ে 
আয়ুরেখা অতিক্রম করেছিল মা

পান্তাভাত আর কাঁচামরিচের পাশে উৎপন্ন শীতকাল

আমার উত্তরাধিকার। 





মায়া


রেললাইন থেকে 

একটি পাথর নিয়ে আসি ঘরে
ট্রেনের শব্দ পেয়ে 

পাথরটি 

দরজা খুলে চলে যাচ্ছে রেললাইনে । 





পেঁয়াজ

পেঁয়াজের

প্রথম শাড়িটা রংচটা

দ্বিতীয় শাড়িটা খুললে 
চোখে ঝাঁঝ আসে

ক্রমিক শাড়ি খোলা শেষে মুছে যায় দ্রাঘিমারেখায়।





মুক্তি

আকাশ ছেড়ে 

কলাপাতার ওপরে বসে একটি শালিক
ক্লান্ত ঠোঁটে 
খুলে ফেলছে নিজের ডানা

কলাগাছ 
শালিকের ডানা লাগিয়ে উড়ে যাচ্ছে আকাশে।





বোন

কার্তিকের চাঁদটা ছিঁড়ে

ডেকচিতে রান্না করে
পাড়ায় পাড়ায় বন্টন করা হলো মাংস

মাংসের হলুদ ঘ্রাণে
বোনকে খুঁজতে

বনের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে একটি নীল হরিণ।





মানুষ

মানুষ নিজেই একটি বিয়োগচিহ্ন

ট্রেনের বগির মত
জোড়া লেগে পালিয়ে যাচ্ছে স্টেশন থেকে... 




দেবদারুগাছ

নদীর পাশে

একটা দেবদারুগাছ

দেখতে দেখতে
নদীর ছায়াটি উঠে আসে দেহে

লুকিয়ে রাখে অনেকদিন

রাত হলে
হেঁটে যায় দূর গ্রামে

মা গাছটির কাছে এলে 
ঢেলে দেয় আস্ত একটা নদী।





চক্র

একটি কালো ছাগল

ঘাস খেতে খেতে পুরা বিকেলটাই খেয়ে বসে আছে
পাকস্থলীতে 
সন্ধ্যা নেমে রাত আসে

পরদিন
মলদ্বার দিয়ে বের হওয়া উজ্জ্বল ভোরের ঘ্রাণে

দুপুরের পেটে ঢুকে যাচ্ছে কালো ছাগল ।





সংহার

দেয়ালঘড়ির

ভেতরে বাস করে তিনজন
ক্রমিক সঙ্গমে প্রেগন্যান্ট ঘন্টার কাঁটা

প্রসবের পর 
বৃত্তঘর থেকে বেরিয়ে এসে

চারজনে 

ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে সূর্যের পোড়া মাংস।





সমুদ্র

বাটিতে করে

সমুদ্র নিয়ে আসি ঘরে

লাফ দেয় ইলিশমাছ
বটি দিয়ে মাছ কাটতে গিয়ে দেখি-

সমুদ্রটা

মাঝ বরাবর দুভাগ হয়ে যাচ্ছে...





চশমা

চশমা জিরোচ্ছে টেবিলে

ফ্রেম থেকে বের হয়ে 
গ্লাস দুটো উড়ে যাচ্ছে বিড়ালের চোখে

জ্বলে ওঠা অন্ধকারে
মনের আনন্দে

বিড়াল হেঁটে যাচ্ছে দোজখের দিকে।





জংশন

বরফ কেটে বানানো কুকুর

বিষদাঁত জমা রেখে

লাফিয়ে পড়ে জলের জংশনে  
সমুদ্রের ট্রেন মিস করে

জোছনার তাড়া খেয়ে চলে আসে চাঁদের কাছে।




দুঃখ

ওয়েটমেশিনের ওপরে দাঁড়িয়ে আছি

আমার ওজন শূন্য দেখাচ্ছে। ব্যাটারি মেশিন সবই
ঠিকঠাক 

মাটি থেকে ধীরেধীরে উপরে উঠে যাচ্ছি। 





আপেল

ঝরেপড়া আপেল 

গড়িয়ে পড়ে
মাটিচাপা দেয় নিজেকে

ভাই আপেল বোন আপেল

নিরাপদ দূরত্বে
দাঁড়িয়ে দেখে

জীবনের দিকে হেঁটে চলে যাচ্ছে স্বজন।




[মানুষ নিজেই একটি বিয়োগচিহ্ন (২০২১) খসড়া খাতা,  ভারত।  চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন (২০২৪) বাংংলাদেশ ]

Post a Comment

0 Comments