১.
পাড় ভেঙে ভেঙে বড় হয়ে যাচ্ছে ব্যক্তিগত নদীটা। বাড়ছে স্রোত-ঢেউ...
আমাদের কাঙ্খিত/অনাকাঙ্খিত স্বপ্নগুলোকে ছুঁড়ে দিচ্ছি নদীর দিকে-ছুঁড়ে দিচ্ছি ঘৃনা-ভালোবাসা... নদীটা আরও উত্তাল হয়ে ওঠে।প্রসারিত হতে হতে জীবনকে ছাড়িয়ে যায়। ঢুকে পড়ে সমাজ-রাষ্ট্রের মগজে। নদীটা নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখতে বসি।নদীটা আমাদের সময়-স্বপ্ন ও স্মৃতি...
নদীতে ঢেউ বাড়ে-প্লাবন আসে। নদীটা আস্তে আস্তে সমুদ্রে পরিনত হয়। আমরা ভুলে যাই নদীর মৃত্যুর গান। আমরা সমুদ্রের প্রেমে পড়ি। স্বপ্ন ও ভালোবাসা নিয়ে একদিন সমুদ্রের কাছে যাই। সমুদ্র আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে যায়। সীমাহীন সমুদ্র ভাসানে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। আমরা নদী ভিক্ষা চাই। সমুদ্র আরও উত্তাল হতে থাকে।
আমরা নদী জন্মের ইতিহাস জানতে চাই। সমুদ্র শান্ত হতে থাকে-যৌবন হারায়- চর জাগে। আমরা আবার কতিপয় নদীজন্ম দেই। স্বপ্নছুঁড়ে দেই-ঘৃনা ও ভালোবাসা ছুঁড়ে দেই। স্বপ্নের পিছু পিছু পৌছে যাই নদীর কাছে। নদীর পাড় ধরে হেঁটে চলি। সমুদ্র খুঁজতে থাকি-দাড়ি খুঁজতে থাকি।
আমরা খুঁজতে থাকি...
আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি...
কোথাও দাড়ি পড়েনা। একটা কমা নিয়ে বসে থাকি...
প্রসঙ্গগুলো শুধু পাল্টে যেতে থাকে। আমরা কোন ঘটনায়ই থিতু হতে পারি না। যেই এ্কটি ভয়াবহ তার কথা উঠে আসছে তো আর একটি মহাবিপর্যয় সামনে এসে যাচ্ছে। আমাদের চিন্তা যেহেতু ইস্যু কেন্দ্রিক সুতরাং ইস্যুর পিছনে ছুটে চলছি। একটি ইস্যু এসে পূর্ববর্তী ঘটনাকে ভুলিয়ে দিচ্ছে। আমরা একটি চলন্ত বাসের জানালায় বসে আছি যেন, যেখানে কোন দৃশ্যই পূর্ণাঙ্গ নয়। একটি দৃশ্যের ভেতরে আরেকটি দৃশ্য ঢুকে পড়ছে। আমরা তাই দৃশ্য বর্ণনা করতে না পেরে আমাদের এগিয়ে যাবার কথাবলি। আমরা বলি দৃশ্যের ভিতরে কোন মহত্ত্ব নেই, দৃশ্যগুলো তো একই বর্ণনার পূনর্বিন্যাস। পথ মানেই পথিক, দু’একটি নুলো ভিক্ষারি, সুদৃশ্য অট্টালিকা। শহর থেকে বেরিয়ে গেলে সারিসারি সবুজবৃক্ষ, কোথাও নীল জলরাশি, আর একই রঙের আকাশ। আসলে কোনদৃশ্য নয়- সময় ক্ষেপণ, আমাদের গন্তব্যে পৌছে যেতে হবে। সুতরাং আমাদের চোখ ও বিবেক ঐ দৃশ্যান্তরে আবদ্ধ হয়ে গেছে। যা ঘটছে তা নিয়ে এককাপ চায়ের ভেতরে দৃশ্যান্তর ঘটছে, আর অপেক্ষায় আছি নতুন একটি ঘটনার... বিপ্লবের মওকা নিয়ে যারা নেমে এসেছিলো পথে তারাও প্রতিমুহূর্তে পাল্টে নিচ্ছে শ্লোগানের ভাষা। খেই হারিয়ে অনেকেই ফিরে গেছে ঘরে। আর যারা এখনো টিকে আছে পথে, তাচ্ছিল্যে তাঁরা একটি সার্কাসদলে পরিনত হয়েছে। নানাবিধ ইস্যুকেন্দ্রিক জটিলতায় জনগণ শোক ও সংশয়ের পরিবর্তে বিনোদিত হচ্ছে! আর যেহেতু তাদের বিনোদনের অনেক মাধ্যম তাই চ্যানেল বদলে তারা সিরিয়াল দেখতে বসে গেছে। অভিনয় দেখতে দেখতে তারাও রপ্ত করে নিয়েছে শিল্প। তাই শোকে বুক চেপে কান্নার ঢেকুর তুলছে, পরক্ষণেই দৃশ্য বদলে ক্লোজআপ হাসির বিজ্ঞাপন।
এইসব ঘটনা অঘটন হয়ে যখন ক্ষতের সৃষ্টি করে কবিতার কাছে পরিত্রাণ চেয়েছি। কবিতা আমাকে মুক্তি দেয়নি তবে এইসব ক্ষতগুলো ছড়িয়ে দিতে পেরেছি আমার পাঠকের মাঝে। আমার কবিতাবই ‘আমি আর পাপ করবো না’ এবং ‘মুখোশের রঙ’এইসব ক্ষতের বিন্যাস মাত্র।
কবিতা ভাবনা লিখতে এসে আসলে কতিপয় কেন্দ্রহীন আমার্জিত বাক্য ব্যায়... আমি আসলে কবিতা লিখতে চাইনি কখনো বা এখনো লিখছি না। কবিতা ভাবনার নামে যে মার্জিন টেনে কবিতা গন্তব্য লিখবো এমন ভাবনা আমার নেই, কবিতার নামে আসলে খিস্তিখেউড়...
যেমনটা পাঠক জানেন-
“কথার বিপরীতে তর্করা দাড়িয়ে থাকে
বেড়ে যায় শক্র ও শঙ্কা
চুপচাপ, রপ্ত করে নিয়েছি
বোকাসোকা বধিরতা।
সবকিছু দেখে অন্ধ হয়ে গেছি।
বোনের সম্ভ্রম লুটেনিক,
চলে যাক ভাইয়ের জীবন,
লুট হয়ে যাক স্বপ্নসব।
ওরা সব সোনার ছেলে
একদিন দেখ মা সোনা ফলাবে।
আমরা বোকাচোদা, সোনা চিনি না।
বেহুদা বাক্য ব্যয়, খিস্তিখেউর
২.
আড়াল চাইনি তবু আয়নার সামনে দাঁড়ালে মুখের বদলে মুখোশ ফুটে ওঠে। শয়তান না ভগবানের মুখচ্ছবি এই দ্বন্দ্বে পালাতে থাকি...
নিজের ভেতরে যে চিৎকার শুনতে পাই, কোনো সুরেই বাঁধতে পারি না জন্মগান- একটি ছায়ার ভেতরে নিজেকে লুকাতে গিয়ে ছায়াছবি হয়েযাই।
দেয়ালে টাঙিয়ে ফুলের মালা পরিয়ে দিলে তোমাদের শান্তি কামনায় যে গান বাঁধি তার নাম প্রেম। প্রেমের কোন ব্যাকরণ নাই। নিপাতনে সিদ্ধ দেহ। সুতরাং এইসব ফাঁপা বুলির অন্তরালে জমা হয় হাহাকার-
সুর করে কাঁদতে বসি...
এইসব সরল স্বীকারোক্তি আমার প্রতিনিধিত্ব করে না। বরং কবিতার কাছে ফিরে যাওয়া ভালো।
কি লিখেছি আমি! বাৎসায়ণ আমি লিখি নি। প্রাচীন শাস্ত্রের আধুনিকায়নে জেনেছি মতি ও গতি নেই। আমি আমার ভাষায় ও ভঙ্গিতে লিখেছি ‘দেহ পাঠের ব্যাকরণ’ । ‘দেহ পাঠের ব্যাকরণ’ কাব্যে কোন কোটেশন নেই, আওড়ানোর মতো পঙক্তি নেই। আমি টোটাল কবিতা লিখতে চেয়েছি।
আমার কবিতা কি আমার প্রতিনিধিত্ব করে?

0 Comments