জাকির তালুকদার যে কারণে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ফেরত দিলেন

Zakir Talukdar returned the Bangla Academy Award


গত ২৮ জানুয়ারী ২০২৪ তারিখ রোববার তিনি এই পুরস্কারের অর্থর সমপরিমান টাকার চেক এবং সম্মাননার স্মারক ও একটি আবেদনপত্রসহ কুরিয়ারের মাধ্যমে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বরাবর ফেরত পাঠিয়েছেন বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার। কথাসাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৪ সালে এ পুরস্কার গ্রহন করেছিলেন।

জাকির তালুকদার সাংবাদিকদের দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন- “বাংলা একাডেমি তার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য পথ থেকে সরে গিয়ে সেচ্ছাচারিতামূলক কার্যক্রম দ্বারা প্রতিষ্ঠানের মান ধরে রাখতে পারেনি। বাংলা একাডেমির মধ্যে গণতন্ত্রহীনতা, আমলাতান্ত্রিকতা, সেই সাথে ২৫ বছর ধরে কার্যনির্বাহী পরিষদের কোন ধরনের নির্বাচনের ব্যবস্থা না করে নিজেদের ইচ্ছেমতো প্রতিষ্ঠানটি চালিয়ে যাচ্ছেন। দেশের সচেতন নাগরিকের কাছে এই একাডেমি তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। 

যেখানে এই প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব কমে গেছে, সেখানে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে দেওয়া পুরস্কার আমার কাছে শোভা পায় না। এ পুরস্কার আমার কাছে রাখা সম্ভব নয়। বর্তমানে এ পুরস্কার ফেরত দেওয়ার অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন । সংযুক্ত চিঠির মধ্যে তিনি তার পুরস্কার ফেরত দেওয়া কারণ বিস্তারিত লিখেছেন বলে জানান।

জাকির তালুকদারের বাংলা একাডেমি পুরস্কার ফেরত দেওয়ার প্রসঙ্গে একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদা প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন- আমরা এখনো অফিসিয়ালি কিছুই জানি না। জাকির সাহেবের ফেরত দেওয়া পুরস্কারের অর্থ ও সম্মাননার স্মারক আমার কাছে এখনো এসে পৌঁছায়নি। এতদিন পর পুরস্কার ফেরত দেওয়া যায় কি না আমি ঠিক জানি না।

উল্লেক্ষ্য_ বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ফিরিয়ে দিলেন কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার। ১০ বছর পর তিনি এ  পুরস্কার ফেরত পাঠিয়েছেন রবিবার নিজের ভেরিফাইয়েড ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। পোস্টে জাকির তালুকদার লিখেছেন, ‘পাঠিয়ে দিলাম। খুব ভারমুক্ত লাগছে।’ সঙ্গে পুরস্কার ফেরত দেওয়ার আবেদন ফর্মের একটি ছবি এবং একটি চেকের পাতা সংযুক্ত করেছেন জাকির তালুকদার।

কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার ইতোমথ্যেই সুপ্রতিষ্ঠিত আসন তৈরি করেনিয়েছেন। তিনি নাটোরে ১৯৬৫ সালে ২০ শে জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। জাকির তালুকদার বেড়ে উঠেছেন নাটোরে। তিনি চিকিৎসাবিজ্ঞানে স্নাতক এবং স্বাস্থ্যঅর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। কর্মজীবনে তিনি একজন চিকিৎসক। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসা ও গবেষণা বিভাগে কাজ করছেন।

এক সময় প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতিতে সরাসরি জড়িত জাকির তালুকদার বরাবর সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সাংস্কৃতিক ও সামাজিক আন্দোলনে যুক্ত থাকায় তার গদ্যে সমাজ বাস্তবতার সঙ্গে রাজনীতি ও ইতিহাসচেতনা এসেছে ভিন্ন মাত্রা নিয়ে। লেখালেখির শুরু থেকেই তিনি আলাদা এক পথ নির্মাণে সচেষ্ট ছিলেন।

জাকির তালুকদারের লেখায় ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে পুরাণের সংমিশ্রণ সম্পূর্ণ ভিন্ন এক মাত্রা নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। তার মহাকাব্যিক উপন্যাস ‘পিতৃগণ’ সমকালীন কথাসাহিত্যে একটি মৌলিক সংযোজন। ‘পিতৃগণ’ ছাড়া কুরসিনামা, মুসলমানমঙ্গল, কবি ও কামিনী, ছায়াবাস্তব, কল্পনা চাকমা ও রাজার সেপাই প্রতিপাঠ,  মায়ের জন্য ভালবাসা, বাংলাদেশের গল্প, হাঁটতে থাকা মানুষের গল্প, চলনবিলের রূপকথা, যোজনগন্ধা, পিচ্চিভূতের কাণ্ড, গল্পপাঠ, হা-ভাতভুমি, দূরদিগন্তে উঁকি, মেয়েটি কেবল নিয়তির কাছে হেরেছিল, তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।


Post a Comment

0 Comments