মাংসাশী চোখ আগে ফুলচাষী হোক
যে ফুল ছিড়ে তুমি গুঁজে দিলে প্রেমিকার চুলে—
আজ সন্ধ্যায় সে ফুলের গায়ে হলুদ ছিল
রাতে বিবাহ; ভোর হতে-হতে সংসার
এভাবে আরও অসংখ্য কলির—
ফুটে ওঠার সুবর্ণ সুযোগ ধ্বংস করে
বলো কী এমন সুখ তুমি পেলে?
আজ সন্ধ্যায় যে ফুলের গায়ে হলুদ ছিল
সে ফুল গুঁজে দিয়ে প্রেমিকার চুলে
জানি ফুল ছেড়ার অপরাধে—
কারও হয়নি সাজা কোনো কালে।
তবু তুমি ছিড়ো নাকো ফুল
ফুল ফোটাও— ফুল ভালোবেসে
ওই মাংসাশী চোখ আগে ফুলচাষী হোক
তারপর খুঁজে নিও প্রেম—
খোলা চুলে গুঁজে দিও ঘাসফুলের ঘ্রাণ...
মাদকীয় নারী
মদের সাথে তোমার মিল ও অমিল খুঁজতে গেলে
হারিয়ে ফেলি নিজেকেই। ডুবে যাই—
কখনো মদের গ্লাসে কখনো তোমার নাভীতে—
নিপল চুয়ে নেমে আসা ঘামে।
সারারাত সাঁতরে কোনোভাবে উঠে এসে
হেলান দিয়ে বসি রঙচটা দেয়ালের পিঠে।
মদের ফাঁকা বোতলে—
জড়ো করে রাখি তোমার দীর্ঘশ্বাস
উষ্ণ কার্বনডাইঅক্সাইড
দুই উরুর ভাঁজে উৎপন্ন পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে—
নিজেই নিজেকে ঘোষণা করি মৃত
তোমার বুকফুলের গন্ধে জেগে উঠি ফের
হাত বুলাই স্মৃতিগন্ধের গায়ে।
মুখের ভিতর ফুলের বোটা নিয়ে দাঁত ব্রাশ করি
কুলকুচি করে খেয়ে নিই অমৃত ঘুম—
তোমার শিমুল তুলোর মতো ঠোঁটে
আমার কালো ঠোঁট রাখতেই কেটে যায় মদের নেশা।
আমি ঘোষণা করি পৃথিবীতে তোমার উপরে কোনো মদ নাই
কোনো নেশা নাই
তুমি অনন্য মাদকতায় গড়া এক– মাদকীয় নারী!
প্রেম কিংবা প্রলোভন
সুবর্ণা, মফস্বলের রোদে বেড়ে ওঠা প্রিয় গৃহবন্দী জোছনা।
একদিন রবীন্দ্রসরোবরে নিয়ে যাবো তোমায়।
সেদিন পুরো রাজধানী জুড়ে কারফিউ জারি করা হবে।
শুধু পথশিশুরা— যারা বহুরুপ ফুল ফেরী করে তারা থাকবে আমাদের ঘিরে। আর কেউ নয়। কুকুর, কাক কিংবা কালো কাফেলা কেউ থাকবে না কাছে। আমাদের আকাশ আমরাই সাজাবো ইচ্ছেমতো তারা ও পূর্ণাঙ্গ চাঁদের সংমিশ্রণে। চাঁদের বুড়িকে ডেকে নেবো কোনো এক ফাঁকে; শতাব্দীর সেরা প্রেমিকের গল্প শোনাবে তোমায়।
সারারাত গল্প শুনেশুনে ভোরবেলা জল হয়ে মিশে যাবো ধানমণ্ডির লেকে।
সুবর্ণা,
একদিন তোমায় নিয়ে যাবো আমাদের গ্রামে।
মেঠো আলপথ বেয়ে হেঁটে বেড়াবো শিশির ও স্বপ্নময় শস্যক্ষেত ছুঁয়ে। সবুজ ঘাসের মোলায়েম চাদরে শুয়ে— শোনাব তোমায় জোনাকি পোকার গান; দেখাবো পিঁপড়ের পাহারায় বিলের জলে ফুটে থাকা অজস্র জাতীয় ফুল ও ভ্রমরের প্রেম। আহা! কত সুন্দর তাদের জলজ সংসার।
সুবর্ণা,
একবার ভালোবেসে দ্যাখো— একবার কাছে এসে দ্যাখো— আমিই হবো পৃথিবীর দ্বিতীয় শাহাজাহান আর প্রেমহীন পৃথিবীর বুকে নির্মাণ করবো প্রেমের আরেক নিদর্শন অর্থাৎ দ্বিতীয় তাজমহল।
অহেতুক অপেক্ষা
এইতো ক'দিন আগে
সামান্য বৃষ্টি হলেই—
ঘুমের চিঠি জড়ো হত আমার চোখে
কোথা থেকে একটা কাফনের মতো সাদা কাঁথা এসে
মুড়িয়ে দিত আমার গা
আমি ঘুমিয়ে যেতামৃ
আমি ঘুমিয়ে যেতাম মৃত মানুষের মতো অনড়
কোনো শব্দ নেই, কোনো স্বপ্ন নেই
শুধু ঘুম আর ঘুম, ঘুম আর ঘুম
সেই আমি তোমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজবো বলে
আস্ত একটা বর্ষাকাল— ঘনকালো মেঘ
ও ফ্লাস্ক ভর্তি চা নিয়ে আকাশ বরাবর হাঁটছি
হেঁটেহেঁটে এগিয়ে নিচ্ছি দূরে যাবার পথ
আমার বুক পকেটে কদম ফুলের গাছ
সকালবিকাল ফুটছে ফুল; ছুটছে তোমার পথে
যে পথে তোমার হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকার কথা।
আর চোখের ভিতর শাপলা ফুলের বিল
সেখানেই ঝরে পড়ে মেঘ
তোমার নামে বৃষ্টি নামে— প্রশ্ন করে,
কোথায় তুমি?
আমার মতো বর্ষাকালও তোমার অপেক্ষায়
বিড়ালতান্ত্রিক প্রেম
কখনো কখনো প্রেমিকার চোখের দিকে তাকালে
আস্ত একটা মাছ দেখতে পাই
মাছের আঁশটে গন্ধ আমাকে বিড়াল করে তোলে!
আমি বিড়ালের মতোই ওঁৎ পেতে থাকি
বিড়াল যেভাবে মালিকের চোখ ফাঁকি দিয়ে—
মাছ নিয়ে পালিয়ে যায় গোপনে
আমিও গোপন কোন জায়গায় চিন্তা করি পালানোর।
যেখানে সমাজের চোখকে ফাঁকি দিয়ে—
আগাগোড়া খেতে পারবো সেই কাঁটাবিহীন মাছ
[কেউ একজন বলেছিল—
যে বিড়াল মাছ খায় না; সে বিড়াল চরিত্রহীন]
0 Comments