পরিযায়ী পাখি ও উষ্ণতার গান
তোমার আঁচল ধরে কুয়াশা নামে রোজ
তোমার চোখের তারায় শিশিরের ভোর
হিম হিম সকালের সারি সারি খেজুরগাছ
টুপটুপ করে রস জমে হাঁড়িতে
এই শীতেও তোমার বুকে উষ্ণতা বেঁচে আছে
নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া তোমার উঠোনে উঠোনে...
অথচ আমার এখানে সাইবেরিয়ার আকাশ বাতাস
হিমাঙ্কের নিচে হাসফাঁস করছে অক্সিমিটার
রক্তকণিকায় কেবল মৃত্যুর তসবিহ জপা চলে!
এই শীতে আমি অন্ততঃ পরিযায়ী পাখি হতে চাই
একটুকুন উষ্ণতা দিবে?
ডাকনাম
তারপর অনেকদিন আমাদের দেখা হবে না
হঠাৎ এক সন্ধ্যায় আমি তোমাকে ভড়কে দেবো
গোপন সেই নামে ডাক দেবো
তারপর খুব সংগোপনে পালিয়ে যাবো
অথবা মানুষের ভিড়ে হারিয়ে যাবো।
সেইদিন তুমি সত্যি সত্যি ভড়কে যাবে
হন্যে হয়ে আমাকে খুঁজবে তুমি,
আজিজ সুপার মার্কেটের পরিচিত সেই বইয়ের দোকানে
পাবলিক লাইব্রেরির টেবিলে; যেখানে আমরা বসতাম।
অথবা ছবির হাটের পুরোনো আড্ডা গানে;
কার্যতই আমাকে আর পাবে না কোথাও।
এই শহরের ঘূর্ণি বাতাসে তুমি কান পেতো;
শুনবে- আমি তোমাকে সেই ডাকনামেই ডাকছি।
সূর্যস্নান
স্যাঁতস্যাঁতে অন্ধকার
নোনা দুঃখের কারাগারের কয়েদীর মত
আমার সম্মুখভাগ- পলেস্তারা খসা ইট ও চুনসুরকি
অনতিদূর থেকে ইশারায় ডাকছে উন্মুক্ত ফাঁসির মঞ্চ
আমি দেখছি টিকটিকি খসে পড়া লেজের লাফালাফি
জানালার পাশে ঝরে পড়া শিউলিফুলের বোটা দিয়ে
আমি রঙ করে যাচ্ছি অন্ধকারের দুর্ভেদ্য প্রাচীর; কালো!
আহা! আমাকে একঝলক আলো দাও, অরণী।
অতঃপর তোমাকে আমি সূর্যস্নানে নিয়ে যাবো...
মানুষ এক পরিযায়ী পাখির নাম
একদিন কৃষগহ্বর পেরিয়ে এখানে মানুষেরা আসে
সূর্যের আহ্বানে মাটিতে ছড়িয়ে পড়ে শস্যদানার মত
তারপর একদিন অন্ধকার গিলে খায় শেষ বিকেলের ছায়া।
মানুষ শরীরের জন্মঘ্রাণ নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে এখানে ওখানে
এই সবুজ প্রান্তরে নতুন মানুষগুলো হেঁটে যায় ধীর পায়,
মায়ার সংসারে মানুষ আসে- ফের মানুষ একাই চলে যায়।
শীতে যেমন এখানে পাখিরা আসে- ফাগুনে চলে যায়
মানুষ এক পরিযায়ী পাখির নাম; মনে রাখা কার দায়!
0 Comments