হিরণ্য হারুন এর কবিতা ভাবনা

Hiranya Harun's Poetry Thoughts



যাপিত জীবনে পাঠিত কবিতা মননে

জলের শব্দে কবিতা রপ্ত হয় মিশে যায় রঙহীন, শব্দে শব্দে নীল হয়ে ওঠে আকাশ। কবিতা মানবধর্মের অথবা মানুষের রঙহীন রঙিন─ভায়োলিন শব্দ।

কবিতা নিয়ে আমার নিজেস্ব কোন ভাবনা নেই, সংজ্ঞা নেই, সংখ্যা নেই, অংক নেই কবিতা জুড়ে আছে আমার অনুভূতি, শব্দ। কবিতা যেন গণিত হারিয়ে পাড়াগাঁয়ের চঞ্চল কিশোরী─ সে নূপুরে পায়ে কাদাজল ভিজিয়ে যাবে গ্রাম্যমেলায়।
তার কোন কলংক নেই, নেই সাতপ্যাঁচ─নেই প্রতিবেশী কথার খোঁচা। সে আপনাকে খুঁজতে খুঁজতে নদীর পাড় ভেঙে চলে।
একজন কবি নিরবচ্ছিন্নভাবে যাপন করেন কবিতায়। আলো যেমন চোখে নীরবচ্ছিন্ন ঠিক তেমন আবার কোয়ান্টামে সে বিছিন্ন কণা। আলোর মত দ্বৈত ধর্ম অনুভূতি আর শব্দের চালে কবিতা দাবা খেলে হারিয়ে দেয় চতুরঙ্গ শব্দের ব্যবচ্ছেদ করে।

প্রতিদিনের নিজস্ব যন্ত্রণা, মগ্নতা এবং ধারণার ভেতর কবিতার বিবর্তন চলতে থাকে,
চিন্তার বিবর্তনে জন্ম নেয় কবিতা─মুক্ত হয় দর্শন, মানবপ্রেম, অনুভূতি, প্রজ্ঞা। এই মিশ্র বিবর্তনে কবিতার ভাবনা হয়ে ওঠে পরাবাস্তববাদ। তখন পাঠক, সমালোচক, চিন্তক উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হন কবি মন এবং কবিতার গভীরতা।
তাদের এইসব ব্যর্থতা কবিতা দেয় নতুন রূপ-রস, তৈরি করে নতুন অনুভূতি। পবিবর্তন হয় মনোবিন্যাস, মনোবিকার ও আধ্যাত্মিক স্তরের─এই পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে কবিতা হারিয়ে দেয় ফ্রয়েডকে আর বোধগম্য হয় পাড়াগাঁয়ের কোন কিশোরীর যে আজ প্রথম কবিতা পাঠ করছে।

কবিতার জটিলতম অংশ কল্পনা। দুর্বোধ্যতা কবিতার কোন প্রাণ নয়। প্রাণ কি? জীব ও জড়ের পার্থক্য কি? জীবনবিজ্ঞান এসব তত্ত্ব ও পার্থক্যকে গণিতে হত্যা করেছে। কবিতা এই পার্থক্যের অনুভূতি নিজের ভেতর ধারণ করে। একসময় কবি সাধারণ পাঠক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেও পাঠক এবং কবি'র মধ্যবর্তী শূন্যস্থান পূরণ করে কল্পনা। যে রাজ্য সবাই কবি।
কিন্তু সব ভাষাই কবিতা নয়, কবিতা শব্দের খেলা, ধ্বনির চাল।
শব্দ ও ধ্বনির সুর মিশে চলমান নদীর ধারায় তৈরি হয় কবিতা।
‘যেতে পারি
যে-কোন দিকেই আমি চলে যেতে পারি
কিন্তু, কেন যাবো?’ শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের এই বাক্যটি সহজ অথচ কত জটিল অথবা কত কল্পনা।
কবিতা জন্ম হলে একসময় কবির ভেতর জয়লাভ করে মানবতার ভালোবাসা, রিরহ অথবা কান্না।

একটা শব্দের পাশে আর একটা শব্দ যোগ করলেই কবিতা হয়! হয় বটে। কবিতা তো এমনই─ শব্দের যোগই কবিতা। কবিতার কোন সংজ্ঞা নেই তবু মস্তিকে এর একটা রূপ আছে, বৈশিষ্ট্য আছে, বৈচিত্র্য আছে, ঐতিহ্য আছে ─আছে রঙে মিশানো তুলিতে আঁকা কারুকাজ। এই অনন্য সত্তা নিয়ে কবিতা মৌলিক অনুভূতি। কত কথা বলে মানুষ, কত অনুভূতি, কত বাক্য, কত ভাষা, কত সংখ্যা তবু কবিতা অনন্য। কবিতাকে অনন্য করে তুলতে হয় শব্দ সাজিয়ে
সৃজিত কল্পনার ভেতর মাটির ঘরের দেয়ালের মত শব্দ হয়ে ওঠে এক একটা ঘর, যার কারিগর একজন চিহ্নিত স্বর। লক্ষকোটি সংখ্যার ভেতর আপনার শব্দগুচ্ছ পৃথক করাই কবিতার মৌলিক বৈশিষ্ট্য।

কবিতার থিম সুনির্দিষ্ট হওয়ার দরকার নাই। কোন বার্তা ছাড়াও কবিতা হতে পারে। ছককাটা, ছকে আঁকা কবিতার বৈশিষ্ট নাও হতে পারে। কবিতা একটা বিহঙ্গ
─কোন কারণ ছাড়াই সে উড়তে পারে, ছাড়তে পারে ঘর।
প্রকৃতি ভালো লাগলে কবিতা হোক প্রকৃতির, প্রেম ভালো লাগলে কবিতা হোক প্রেম, বিদ্রোহ ভালো লাগলে কবিতা হোক দ্রোহ। যার যেমন খুশি, সে কবি হয়ে যাক, মানুষ মাত্রই কবি
কবি ছাড়া কেউ মানুষ নয়, সে প্রাণী।
জগৎ সংসারের এই খেলায় ছলে-বলে-কৌশলে দিন যায় যাপনে,
কবিতা আমাদের খোরাক হয়ে আসে মননে। মন চর্চায় গণিত বুঝে কবিতা পাঠ হয় মস্তিকে।

যাপিত জীবনে পাঠিত গরলে কবিতা তৈরি হয় চর্চা ও বোধে।
বোধকে যথেষ্ট চর্চা বা অনুশীলন করলে তা কবিতাতে পরিবর্তিত হয়। ব্যক্তিগত, পরিবেশগত ও প্রাকৃতিক নিয়ামক কবিকে নিমন্ত্রণ করে কবিতা লেখতে─
ভাবনাচিন্তার সংজ্ঞাকে অসংজ্ঞায়িত করে লেখে ফেলি কবিতা।

Post a Comment

0 Comments