নিসর্গ-প্রকৃতি আর মানব-প্রকৃতি তাদের বিচিত্র জটাজাল নিয়েই, আমার কবিতা। সংযুক্ত ও দূরবর্তী জীবন-বাস্তবতা একটি বিন্দুতে এসে মিশে নিজস্ব অনুভূতির আলোড়নময় বৈচিত্র নিয়েই যত ভাবনা। কবিতা মূলত হচ্ছে- শাশ্বত সৌন্দর্যের উপাসক। পরিপূর্ণ রোমান্টিক। এই রোমান্টিকতা ব্যক্তি-হৃদয়ের নয় কেবল, সামষ্টিক চেতনাশ্রিতও বটে। বাংলা কবিতার ঐতিহ্যকে আত্তীকৃত করেই আমার- কাব্যিক ভাবনা। নিরীক্ষা কবিতার বিষয়ের বিস্তারে, অনর্থক চমক সৃষ্টির অবান্তর প্রচেষ্টায় নয়। জীবনকে মোকাবিলার মধ্য দিয়ে অর্জিত অনুভূতি ও অভিজ্ঞতাই বাঙ্গময় হয় আমার কবিতার সর্ব অবয়বে। প্রাণপণ নিষ্ঠার চিহ্ন খচিত হয়ে থাকে কবিতা-পরম্পরায়। জীবন-নিষ্ঠ বলেই দেখার চোখ তীক্ষ্ম ও মর্মস্পর্শী। সবল একটা সরলতা আছে, যা কবিতায় প্রাকৃত রস সিঞ্চন করে। কেননা, কবিতা সময়ের কথা বলে। দেশ, মা, মাটি, মানুষ, ভালোবাসা আর কল্যাণের কথা বলে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কবিতা প্রতিবাদের হাতিয়ার। কবিতা যে কতটা প্রতিবাদের ভাষা তা আমরা কাজী নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় দেখেছি। আবার অনুরূপ রবী ঠাকুরের ‘মা’ কবিতা মায়ের প্রতি অকৃর্তিম মমতাবোধ বোঝায়। আর প্রেমের কবি জীবনানন্দ তার অসম প্রেম যেন আজো ভালোবাসার রঙিন-ধূসর কাব্য শেখায়। অতঃপর প্রেমিক হৃদয় এখনো বনলতা সেন’কে খুঁজে বেড়াই...
যদিও কবি মনের বনলতা হারিয়ে গেছে নিষ্ফল অভিমানের কাছে, অনেক আগেই! এই যে, কবিতা! এই যে, ভাবনা! তা তো তবুও কবিতা লিখতে লিখতে আজও গোপনে ভিজে যাই- নীল জোছনা, মেঘের সন্ধ্যা অথবা গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে অবিরাম।
আমার ভেতরের অতল ভাবনাগুলোই মনে হয় কবিতা! এই যে, না বলা পুড়ে যাওয়া, কখনো সখনো হারতে হারতে জিতে যাওয়া কিংবা জিততে জিততে চিরতরে হেরে যাওয়া। আবার সারানিশি নীরবে কান্না জলে ডুবে যাওয়া। আজও কবিতা ভেবে বকুল কুঁড়াই, নদীর কাছে যাই, হলুদ বিকেলের কাছে যাই, পাখির কাছে যাই। ঝরাপাতার গান শোনা, চোখের খুনসুটি, হলুদ বরণ সর্ষে ফুলের হাসি, তোকে ছুঁয়ে থাকার অজুহাত।এইসবই আমার কাছে হয়তো বা কবিতা!
আর নিজের মাঝে ডুব-সাঁতার, ঘর ছাড়া পাখির মতো যাযাবর ভাবনা- বৃষ্টি তুমি নামো, যত খুশি অঝরধারায় ঝর..., শ্রাবণের ভেজা মেঘ পাহাড় আজ আমার কাছে, আমিও কাঁদতে জানি!!! আমার কান্নার রং... তোমার কাছে গোপন- নাই বা থাকলো। বৃষ্টিতে ভিজে আজ নিজেকে- ধুয়ে নেবো। যদি চাও- তোমার জঞ্জলও ধুয়ে নিতে পারো! আমাদের চারাপশে এখন জঞ্জালের বড্ড আবাদ, এখন আমরা তা খাই...
0 Comments