দেখলাম—শ্যাকরার দোকান, একা এক স্বর্ণকার ঠুক ঠাক হাতুড়ি চালাচ্ছে, আর অনিচ্ছাসত্ত্বেও স্বর্ণের দলাটি রূপ নিচ্ছে গহনায়। গ্রামের অন্য মেরুতে আরেকজন নারী আছে—চরকায় সুতা কাটছে, তাঁতে বুনছে বাহারী রঙের শাড়ী। একটার পর একটা। পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত কেউ থেমে নেই। হাত চলছে, মুখ বলছে—তৈরি হচ্ছে নিত্য নতুন ব্যাবহার্য, পাঁচন ও দাওয়াই।
বুঝলাম—তারা যা গড়ছে, কোনটাই মনমতো হচ্ছে না। তাই—প্রতিদিন নতুন করে যুদ্ধ চলছে, নতুনটি বানাচ্ছে, আগেরটির চেয়ে ভাল বানাবে এই প্রত্যয়ে।
শুধু—ধাঁধাগ্রস্থ, একা আমি থেমে আছি। হন্যে হয়ে খুঁজছি একটি চলনসই পা, বলনসই মুখ, বলশালী হাত আর ঘুমন্ত উদর। এইসব খোঁজাখুঁজি শেষে গিয়ে খোঁড়াখুঁড়ির খেয়াঘাটে থামে। খুঁড়ে দেখি নিজের ভেতরে শুধুই পরিশুদ্ধ অন্ধকার—মন আজও বর্ণমালা শিখছে। খুঁড়তে খুঁড়তে গলগল করে নেমে এলো—রক্ত তো নয়ই, আলো-আন্ধারের মিশেলে এক অনন্য ও অন্তহীন স্রোত। কবিতার ছাঁকনিতে ছেঁকে দেখি ওইটুকু জীবনের কলতানি।
তারপর—কবিতা, একটি নির্জন নাগরদোলা—দিনভর রাতভর দোলাচ্ছে। দুলছি ভিন্ন ভিন্ন দোলনকাল অনুসরন করে। শ্যাকরার রোগে গেল অর্ধেক, অর্ধেক খেলো তাঁতীবউ—কোন কবিতাই যেন মনমতো হলো না। তাই নিত্যই কবিতাযাপনের দূরারোগ্য রোগে নিজেই খুঁড়ছি নিজের বুক। নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া হলো না আজও।
শেষে—কবিতা একটি লাল আপেল, পড়ে রইলো টেবিলের কোণে—কোনদিন খাওয়াই হলো না...
0 Comments