সাহিত্য সংসার সবার সুখের হয় না। জেনেশোনে বিষ পান করার মতো অজানার পথে হাঁটতে হয়। কেউ কারো পাশে দাঁড়ায় না। কোনো ভাবে কেউ যদি আসে উপরি পাওয়া ধরে নিতে হবে।কাঁদে জোয়াল নিয়ে কৃষকের মতো একলা একা নির্জনে হাঁটতে হাঁটতে জিরিয়ে নিতে হয় সুবজ বিছানায়।কবিতা ও জীবনের যেমন সংজ্ঞা হয় না তেমনি সৃজন পথের ব্যথা অব্যাক্ত! কাগজ তো অনেক দূর!
বলা হয় শিল্প, সাহিত্য এবং মননশীল ভাবনার ধারক হচ্ছে লিটল ম্যাগাজিন।কিন্তু এই চরিত্র সবাই ধরে রাখতে পারেনা, তার মধ্যে আমি একজন। ২০০৯ থেকে ‘কালেরধ্বনি’ ছোটকাগজ প্রকাশ করি।অনেক উৎসাহ উদ্দিপনা নিয়ে এগুলেও থমকে যাই- মনে হয় পারবো না। দেখি যায় প্রায়শই সাহিত্য সৃষ্টির নামে ইয়া-বড় সাইজের সাময়িকপত্র প্রকাশ হতে দেখা যায়।সমৃদ্ধ লিটলম্যাগাজিন বলতে চরিত্রটাই উহ্যই থেকে যায়।আর যখনি দেখলাম আমি ছোটকাগজের মান আর মন রাখতে পারছি না তখনি সরে আসলাম। ২০১৩ শুরু করলাম সমাজ সংস্কৃতি ভাবনায় সাহিত্য কাগজ কালেরধ্বনি।বাংলা ভাষায় সাহিত্যের অবদানকে সমৃদ্ধ করতে নিয়মিত বিষয় ভিত্তিক প্রকাশ করছি।পাহাড়ি কবিতা ও মানুষের জীবন নিয়ে, দ্বিতীয় দশকের কবিতা ও কবিতা ভাবনা নিয়ে।তারপর ২০১৫ সালে আবুল মনসুর আহমদ সংখ্যা প্রকাশ করে সারাদেশে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। ২০১৭ সালে কবি, ছান্দসিক ও নজরুল গবেষক আবদুল কাদিরকে ‘কমচেনা বড়মানুষ আবদুল কাদির’ নিয়ে সমৃদ্ধ সংখ্যা। ২০১৯ প্রকাশ করি ‘বাংলা ও বাঙালির কবি জসীম উদদীন’।
খ
আমরা মনে করি সৃজনপথ নির্মাণের ক্ষেত্রে দুটি ধারা আগানো যেতে পারে, এক. নতুন ঘরের দরজা খোলে, দুই. অতীতের ভৌগলিক সীমারেখা বুঝে ভিত্তিভূমিতে সিঁড়ি তৈরী করে। কিন্তু পাঠাভিজ্ঞতায় দেখা যায়, সাহিত্যে এক অর্থে নতুন সৃষ্টি অসম্ভব। ফলে চিরকালের ভূমিতে নতুন সৌধ নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যা বুদ্ধি তথা দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হয়। এইভাবে দৃঢ় হয় চিরকালের সাথে সমকালের সাঁকো! আর সেই প্রেক্ষিতেই সময় ও ঐতিহ্য সচেতন সমাজ ভাবুকদের নিয়ে আলোচনা কাজের রসূত্রপাত।
চিরকালিন আবুল মনসুর আহমদ, আবদুল কাদির ও জসীম উদ্দীনের জীবন ও কর্মকে সমকালের রুচিশীল পড়ুয়া ও স্বাপ্নিকদের মধ্যে যাচাই ও ছড়িয়ে দিতে বিশেষ সংখ্যার পরিশ্রম।নতুনধারার চিন্তা ও তত্ত্ব পৌঁছাতে চেষ্টা করেছি। যাত্রায় প্রত্যাশার চেয়ে একটু বেশী সাড়া পেয়েছে আবুল মনসুর আহমদসহ বিশেষ সংখ্যায়।
সাহিত্য মানেই হচ্ছে সর্বান্ত করণে সুন্দর সৃষ্টির চেষ্টা। যারা মনে প্রাণে উদার হতে পারেন না তারা কী করে সুন্দর হবেন, আর সুন্দর কিছু সৃষ্টি করবেন।সমকাল সাহিত্যে মানবিক মূল্যবোধের ক্রমশ অনুপস্থিতি বড় হয়ে উঠছে দিনদিন। এই সংকটটি কাটিয়ে ওঠার জন্য সাহিত্য সম্পাদক দায়িদ্ব গ্রহন করতে হবে। না হলে এই পথে আসার প্রয়োজন নেই। সাহিত্য কোনো মিমাংসিত বিষয় না-চিরকাল অমিমাংসীত বিষয়ে কাজ করতে মন মনন স্বচ্ছ্বতার সাথে মা মাটি মানুষের দায় এবং দায়িত্ব বোঝে শোনে এগুতে হবে।
ইমরান মাহফুজ
কবি, গবেষক ও সম্পাদক কালেরধ্বনি।
0 Comments