কাজী লাবণ্য’র পাাঁচটি কবিতা~ হৃদয় পুড়বে বলে, অপারগতা ও অন্যান্য

Kazi Lavanya's five poems ~  Hridyo Purbe Say, Aparagata and others




অপারগতা


ডিমের কুসুম থেকে তিন চিমটি অধিক উজ্জ্বলতা নিয়ে সূর্য আসে, হাতে আস্ত একটা

‘দিন’ নিয়ে। চোখ না খুলেই আমি দিনটাকে একটা স্বচ্ছ কাঁচের শিশিতে ভরে ফেলি।

এরপর প্রাচীন ধন্বন্তরি বৈদ্যের মতো শিশির গায়ে দাগ কাটি-

ভোর, সকাল, দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যা, নামে মেপে মেপে লাল নীল খোপ বানাই। লালের পরে

নীল, নীলের পরে লাল এমনিভাবে। একে একে খোপগুলো খরচ করতে করতে, সর্বশেষ

খোপ সন্ধ্যা মিলিয়ে গেলে, বাদুরের ডানায় চেপে রাত্রি নামে। তাকেও আমি আরেকটা

কাঁচের শিশিতে ভরতে যাই। রাত্রীর জন্য খুব বেশি খোপের দরকার হয় না। মোটামুটি

মধ্যযাম পর্যন্ত একটা খোপ খরচ করার পর, ‘নিদ্রা’ নামের দীর্ঘ একটা খোপ করতে

পারলে রাত্রিটাকেও এই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে, একটি সর্বোচ্চ মূল্যমানের

কাগুজে নোটের মতো, নিমেষে খরচ করা যায়।

কিন্তু রাত্রি নামক তীরন্দাজ দৈত্যকে শিশিতে ঢোকানোর

তান্ত্রিক মন্ত্র জানা না থাকায়, তা হয়ে ওঠে অসাধ্য কর্ম।




হৃদয় পুড়বে বলে


অবশেষে হার মানলাম

হার মানলাম পাথুরে কাঠিন্যের কাছে

আগ্রাসী কষ্টের থাবার কাছে।

শুধু তোমার কাছে ফিরে যাবার

নিটোল প্রত্যাশা ছিল

সে প্রত্যাশায় ফেলে দিলাম

ভাগারের নিষ্ঠুর অভিশাপ।

কবিদের কষ্টের চেয়ে আর

ভারী কোনো পদার্থ নাই

তারা কথার মালায়

সেই কষ্টকে উপহারের ডালায়

সাজাতে চায় বারংবার।

নির্মোহ ফুল হয়ে ফোটে

রূপকে, ছন্দে, গানে, বীনায়,

এস্রাজের তারে

যুগ যুগ বেঁচে থাকে

মনে মননে, অজস্র জটিলতায়।

তুমি তারার আলোয় জেগে থাকা

অন্ধকারের জোনাক

ধরতে চাইনি

হৃদয় পুড়বে বলে।।




সবুজ আলো


পিলসুজের পান্না বিন্দুটা তোমার চঞ্চল উপস্থিতি

আর অচঞ্চল আচরণবিধির আলপনা আঁকে

এই বুঝতে পারি, আবার দেখি ধোঁয়াশা মেঘ

কোথায় থাকো? কোন ভাষান্তর নেশার ঘোরে?

কল্পনাতে কতরকম চিত্র ভাসে

যায় না যে হায় কাউকে বলা

আরুসি আয়না ছুঁতে হলে, মান-অভিমান ছাড়তে হবে

চোখের তারায় চাইতে হবে, ঠোঁট পুকুরে নাইতে হবে

আমার আঁধার রাতের দীপাবলি,

হালকা হাওয়ার পলকা ঘায়ে নিভবে কেন প্রাণের শিখা?

পিউপথের মোহনটানে জীবন আমার জড়িয়ে গেছে

ফেরাব তা কেমন করে

মরমে যে প্রশ্ন আমার...


১২-১১-২৩





অপেক্ষা


অপেক্ষায় থাকতে থাকতে হয়ে উঠেছি একজন নিগুর সত্যদ্রষ্টা। এখন ষ্টেশনে না

গিয়েও বলতে পারি প্রতীক্ষার ট্রেন কখনও অপেক্ষা অবসানের হুইসেল বাজায় না।

ঘড়ি না দেখে সময় নির্ধারনে আজ পানকৌড়ি পারদর্শী। ঘরে না ফিরে নিজের অভাব

বোঝানোর চেষ্টায় কত বিনিদ্র রজনী পার করেছি প্রভাত ফেরির ছাদে। এ্যাকুরিয়ামের

রঙ্গিন মাছ তোলা খাবারেই নধরকান্তি। অপেক্ষায় থাকতে থাকতে শিখে গেছি কিভাবে

বীজ ফাটিয়ে শষ্য ফলাতে হয়, কিভাবে টেনে নামাতে হয় সিডেটিভ নিদ্রার স্বপন,

কিভাবে মরে গিয়ে মুখোশ পরে বেঁচে উঠতে হয় প্রতিটি আঁতুড় সকালে।

বিস্মিত কেন?

হ্যাঁ,

তোমার অপেক্ষায় থেকে থেকেই আমি কালি বিহীন কলমে লিখে ফেলেছি আঙ্গুর লতার

বৃক্ষ হয়ে উঠার কাহিনী।





নীপবিথী


আজ এখানে সন্ধ্যাটি কি আলাদা ছিল?

নাকি, তোমার পাইনবনের সকালটা?

সেই অর্থে প্রতিটি মুহুর্তই একেবারে আলাদা, অন্যরকম

আষাঢ় আসার আগেই এসেছে আশ্চর্য পবিত্র ফুল

‘মোরা’র তাণ্ডব ঝরছে বাদলধারা

প্রাইমারি না পেরুতেই মস্তিষ্ক কোষে গিয়েছিল ঢুকে

বিরিশিরি, লালমাটি, টিলা আর অমীমাংসিত সফেদ মানুষগুলি

যান্ত্রিক কণ্ঠস্বরে বাতাসের ফিসফিস-

সংসারে অসুখি হলে শেকল ছেড়া যায় বা উচিতও

কিন্তু সুখি হলে !

প্রিয় রোবট, সুখের সংজ্ঞা আমার অজানা

পাহাড়ের আগুন বেগুনি -

পুড়ছে বসত জ্বলছে পবিত্র গ্রন্থ পরিধেয় থামি আর জুম

ওরা পালিয়ে গেল দলে দলে, জলের ঝোড়া পেরিয়ে গেল নগ্ন পায়ে

আজ কি কোথাও কোনো সুর বাজেনি! নাকি বুকের গহীনে বাজছে-

খুনসুটিতে প্রবাসীর ফাগুন বারোমাস, হরিণগন্ধ কাব্যকলায় বন্যর সর্বনাস

নীলখামে ভুল চিঠি ঈশ্বরও হয় কালারব্লাইন্ড।


Post a Comment

0 Comments