বুদবুদ
চূড়ান্ত গঠন নিয়ে বুদবুদ
অকস্মাৎ ভেসে উঠে ভূমি হতে
অথবা আগুন মুখ আগ্নেয়গিরির কাছে
নতুবা শূন্যের কোল থেকে অসীমের দিকে...
শব্দ থেকেও হয় এমন!
শুনেছি জলের বুকে জাগে অবিরাম।
মহাবিশ্বের কোণায় জেগে উঠে বুদবুদ
জল হতে নয় শুধু
আগুন
শূন্যতা
ভূমি
শব্দ
ক্রমাগত অপসৃয়মান এসব মিলিয়ে যায়
যথাক্রমে আগুন, শুন্যতা, জল-শব্দের ক্রিয়ায়।
তুমি আর আমি
দুই বুদবুদ
পরস্পরের ক্রিয়ায়
এক হয়ে আছি।
নীরব ধনেশ
সংসারের কোলাহলে বসে আছি নীরব ধনেশ হয়ে
তীব্র মান অভি-অপ সহযোগে ধারণ করেছি ঠোঁটে
বিলুপ্তির খাতা হতে উড়ে আসি তোমাদের কাছে
খড়কুটোর সুতীব্র মায়া নিয়ে ছুটে যাই ঘরহীন বুকে
চোখে যদি সুদূর স্বপ্নের আলো করে ঝিকিমিকি
আমিও মাটির কোলে শুয়ে ঘরের মহিমা দেখি।
মনোবেদনার রস ফিনকি দেয়ার আগে সুকৌশলে
দেহের দারুণ সুধা ছলকে ছলকে উঠে গ্রন্থি ঘরে
অগ্রন্থি কষ্টের কাছে নুয়ে পড়ে সরে যাই দূরে দূরে
ভোগের বিনিদ্র তৃষ্ণা নিয়ে সাজানো মোকামে সুখ
সে তো মরীচিকা, বেড়েছে অসুখ আজ কোষে কোষে
কী জানি কেমন করে হয়েছে এমন দশা কোন দোষে।
ডোপামিনে ডুবে যাই হেসে নিজের সুরত দেখে
একে একে ভেসে যাই নিয়ত ঢলের কুটোর সাথে
এ ধার ও ধার ঘেঁষে বিস্তীর্ণ জলের বেগে মিশে
করতলে আগুন নিয়েছি তুলে তীব্র যাদুর কাক্সক্ষায়
দর্শক দেখেছে খুব দারুণ জীবন আর নানা মহরত
পুড়ে গেছে হাত দারুণ বর্ষায় আজ আসে না শরত।
পরমানন্দ
পরমানন্দের কাছে নত করে রাখি মাথা!
ভুলে চুকে থাকি আর সব।
বাম ও ডানের কথাগুলো উবে যায়
যেনো বা বুদবুদের তাড়নায় জলের অতল হতে
সবেগে বেরিয়ে আসা বায়ুর মিলন।
দারুণ ধ্যানের মাঝে উর্ধ্বে হয়ে থাকি স্থির
সুষুম্নায় বেঁধে রাখি চঞ্চল পীড়ন
পঞ্চমাত্রা হতে আহরিত দেহের ভেতর
দৈব অথবা ভৌতিক আলোড়ন চলে
অতি সাধারণ হয়ে হাঁটি চিন্ময়ী বিভায়।
এসব ক্রিয়ার সাথে পরস্পরের চেতনা ভেঙে
নিজেকে আলাদা করে রাখি
জড়জাগতিক আঁধারে ভাসা আলোর ন্যায়।
আলোর আনন্দে ভেসে ভেসে যাই
পরমানন্দের কাছে নত করে রাখি মাথা!
বৃক্ষের ভ্রমণ
বারান্দার পাশে সুস্থির দাঁড়িয়ে থাকা
আম গাছটিকে ভ্রমণের গল্প করতে করতে দেখি-
গাছের সবুজ বক্র পাতা চোখ তুলে ডাকে
অজস্র সহস্র চোখ!
বিগত বৈশাখে টক-মিষ্টি স্বাদে
দারুণ বিভোর করা, দৃষ্টি কাড়া
গাছটির খবর রাখেনি কেউ
খুব কাছে গিয়ে কানে কানে বললাম
তোমার ফলের স্বাদ লেগে আছে ঠোঁটে
স্থুল দেহে সুক্ষ্ম অংশ হয়ে
আণবিক ঘূর্ণনে রসদ হয়ে ভ্রমণ করছে
মহাজাগতিক পথে ও প্রান্তরে
এ তো তোমার ভ্রমণ!
কে বলে তুমি স্থির দাঁড়িয়ে?
গাছের পাতারা হালকা দুলে উঠলো
স্নিগ্ধ পরশে জুড়িয়ে দিল সুস্থির আমাকে!
চোখের বিজ্ঞান
অজ্ঞানতার আনন্দ থেকে উঠে এসে
নিজের সমুখে দাঁড়াতেই
আপাত বন্ধ হয়েছে চোখ।
নাসিকাগ্রে দৃষ্টি নিক্ষেপের পর
আলো নেই তব্ধুসঢ়; পষ্ট দেখা যায়
চোখ দুটি সরে যেতে থাকে
পরস্পর থেকে দূরে
অতীতের দিকে ছুটে যায় এক
অন্যটা ভবিষ্যতের অভিমুখে...
ধাবমান চোখ থেকে ঝরে পড়া আলো
কুড়াতে কুড়াতে বেড়ে যায়
অজ্ঞানতার ব্যথা ও বিবিধ অসুখ!
পালানো চোখের কথা ভেবে
তাড়াতাড়ি খুলে যায় চোখ
বর্তমান ব্যঙ্গ করে জ্বলে উঠে
অতীত-ভবিষ্যতের কথা ভুলে
হয়ে উঠি বর্তমানের মানুষ
সমগ্র ব্যথা হতে ফুটে উঠে ফুল
শেখর দেব
কবি, প্রাবন্ধিক ও সম্পাদক।মূলত কবি। দ্বিতীয় দশকের শুরুতে প্রথম কবিতার বই প্রকাশিত হয়।
জন্ম : ২১ ডিসেম্বর ১৯৮৫খ্রি.
জন্ম স্থান : শেখেরখীল, বাঁশখালি, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ।
পিতা : স্বর্গীয় শংকর কান্তি দেব
মাতা : নীলমণি দেব
পড়াশোনা : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে গণিতে স্নাতক(সম্মান) ও বিশুদ্ধ গণিতে স্নাতকোত্তর। ভারতের দিল্লি
থেকে করেছেন পাবিলিক হ্যালথ্ধসঢ়; ম্যানেজম্যান্ট বিষয়ে পোস্ট গ্রেজুয়েট ডিপ্লোমা।
চাকরি : সরকারি চাকুরে
প্রকাশিত গ্রন্থ:
কবিতাগ্রন্থ:
প্রত্নচর্চার পাঠশালা (২০১৪), বাঞ্চাকল্পতরু (২০১৬), আরাধ্য আকাশবৃত্তি (২০১৮),
পরান কথার ঘ্রাণ (২০২০), ত্রিভঙ্গ তালের নাচ (২০২৪)
প্রবন্ধগ্রন্থ:
কবিতার করিডোর (২০১৭)
কবিতা ও কথার কথকতা (২০২৪)
গল্পগ্রন্থ:
লৌকিক গল্পের বই(২০২১)
অনুবাদ গল্পগ্রন্থ:
ব্ল্যাক বার্ড (২০২৩)
0 Comments