কুমকুম দত্ত’র ১০ কবিতা ও কবিতা যাপনের অভিজ্ঞতা

Kumkum Dutta's 10 poems





একটা মানুষ


একটা মানুষ বানিয়ে নিও গায়েবি

সমান অন্তরাত্মা আকাশ পরিধি

আবর্তিত সূর্যের আকর;

কালান্তরে মহাশূন্যে বহুবছর

আড়ালে প্রতীক্ষায়;

হাহাকার বুকের নৈঃশব্দ্য জুড়ে...




দুঃখ দিনের অন্ধকার


আমারে প্রেম দিয়া বাঁধো

দরদী প্রাণের মুর্শিদ;

প্রেমে পার হয়ে যাই দরিয়ায়

পাখির চোখ জল ছলছল গভীর

স্পর্শে প্লাবিত আবৃত দেহের শহর;

আড়ালে দুঃখ দিনের অন্ধকার

উড়ে প্রজাপতি মন ঘ্রাণে;

বসন্তে ব্যাকুল ঝরাপাতা নির্জনে।




যতিচিহ্ন প্রেম


মন তোমার ঝরনার জল ঝিরিঝিরি

দেহ গভীর পুড়ে আগুনে ঘ্রাণ আস্বাদন;

ফোটে ফুল নিয়মে প্রেম প্রত্যাশিত

স্পর্শে স্তুতি গান মন সন্ধিক্ষণে

শস্য সমৃদ্ধ ফলিত বীজ অঙ্কুরোদগম;

কামনা-বাসনা মেলামেশা সুখ পরিপাটি

নিঃশব্দ আকুল ভালোবাসায় বাঁচে মানুষ

যতিচিহ্ন প্রেম হৃদয়হারা;

শরীর সম্পর্ক প্রিয় বিরহে ক্ষতি 




চাঁদের বিপরীতে


দুঃখ মাঝে মাঝে অ্যালকোহলে ডুবে যায়

রাত্রি গাঢ় হলে চাঁদের বিপরীতে;

রঙ মাখে সুধা পৃথিবীর

বাঁকে বাঁকে অমৃত জীবনের।




মন ও নদী


জলে ডুবে যায় বুক অতল

মন অন্তর্দাহ বেদনায়;

নদী ফুঁসে ওঠে স্রোতে

প্রহর পূর্ণিমা প্রতীক্ষায়।

মন ও নদীর মতন 

সম্পর্কের বুক উঁচু ;

জাগে ঢেউ মৃত্যু মোহনায়।




রাত্রির রঙ


রাত্রির রঙ গাঢ় হয়ে আলো হয়

মুখ মানুষের জন্মের কুয়াশা;

আদিগন্ত হেঁটে যায় পথ অন্ধকার

রাঙানো সিঁদুর কপালে তোমার

খসে পড়ে আড়ালে সন্ধ্যাতারা।

প্রেম পৃথিবীর পথ পুরাতন

বিশুদ্ধ জন্ম-মৃত্যুর ঘ্রাণ;

মানুষ নিদারুণ হেঁটে যায় 

অগ্নি আলোর পিপাসায়।




এক দুঃখবাহী নদী


এই সেই দুঃখবাহী নদী

যে নদীতে সাঁতরে ছিলো আহ্লাদি ব্যাকুল শরীর

সলজ্জ রূপালি স্নানে, মোহিনী ভঙ্গিতে, 

বিষণ্ন বালুচর মুখরিত ছিলো রোদের নাচনে

আমাদের অবাধ্য আয়োজনে

দুঃখবাহী নদী নিংড়ে দিলো পূর্ণাঙ্গ প্লাবনে

উদাসীন প্রহর ডানা ঝাঁপটায় নদীর রাঙা মৈথুনে

নদীর অকাল বোধনে নিঃশেষ হয় জীবন পদ্য

এক দুঃখবাহী নদীর নাম কুমকুম দত্ত।





যোগফল শুন্য


জন্ম মানে মৃত্যু

মৃত্যু মানে অন্ধকার আদিম

অন্ধকার মানে,

কেবল শূন্য

মনে হয় জন্ম-মৃত্যুর যোগফল শুন্য।





কেবলই ভাঙছি


অন্ধকারের ভেতর কেবলই ভাঙছি

হাত পা ছুড়ছি

অন্ধকারের ভেতর

সে একদা মাতৃ জরায়ু থেকে কাঁদতে

ভুলে ছিলাম

কখন, কিভাবে অবলীলায় অর্থহীন বিস্তার,

কতবার ভুল উৎসে ফিরে যাওয়া

নিরর্থক জ্বলতে চেয়েছি অন্ধকারে আগুন।

মানুষের বিশ্বাস ভাঙে দীর্ঘ ভাঙনে,

স্বপ্নে, মৃত্যুতে

এই আমি, আজন্ম কেবলই ভাঙছি...

আমার ভেতর ছিলো নিষিদ্ধ সুন্দরের আয়োজন।





প্রতিবিম্ব


কেন হরিণী চোখ তুলে

অবাক অরণ্যে ডাক পাড়ে;

আছি সর্বদা জলমগ্ন কালে

পুড়ে প্রতিবিম্ব জলের উপরিতলে।







Kumkum Dutta's experience of living poetry



কবিতা যাপন:

বিগত কবিতা যাপনের কথা লিখতে গিয়ে অনেক কিছুই মনে পড়ছে। আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর আগে কবিতা লেখার সংগ্রাম শুরু করেছিলাম। যদিও কবিদের জন্য প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ কবিতা যাপন।

তবু ৩০ বছর পিছনে ফিরে তাকালে দেখতে পাই এই পথ খুব একটা মসৃণ ছিল না। অনেক কিছুর বিনিময়ে আজকের এই নগণ্য অর্জন।

যদ্দুর মনে পড়ে ৩০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে আমার কবিতা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ পেতে শুরু করে। তখনকার সময়ে ডাকযোগে লেখা পাঠানো হতো। লেখা পাঠিয়ে তারপর অজস্র প্রতীক্ষার প্রহর বুনন। শুক্রবার আসলে সাহিত্য পাতাগুলো নিবিড় চোখের পর্যবেক্ষণ। যদি আমার কবিতার দেখা মেলে কোনো সাহিত্য পাতার কবিতা পাড়ায় বুক ফাটিয়ে চিৎকার করে বলতাম বন্ধুদের। আহা! সেই সব দিনগুলির কথা মনে পড়লে ভীষণ নস্টালজিক হয়ে যাই। এখনো সমানভাবে কোন পত্রিকায় কবিতা প্রকাশ পেলে একই রকম অনুভূতি লাগে। এখনও সারাদিন কাজের ভিতর লেখালেখির নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকি। হোক না কিছু ক্ষতি জীবনের...

একজন সৃষ্টিশীলতা মানুষের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি পাঠকের ভালোবাসা। হাজার প্রতিকূলতার মাঝেও সৃষ্টি সুখের উল্লাসে ভরপুর জীবন। এরই নাম সৃষ্টিশীলতা নামান্তর কবি নামে বেঁচে থাকা।

.






কবি পরিচিতি:
কুমকুম দত্ত, 
জন্ম- ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলায়। পড়াশোনা- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। স্কুল জীবন থেকে হাতেখড়ি লেখা-লেখির। চট্টগ্রামের বিভিন্ন দৈনিক ও জাতীয় পত্রিকায় লিখে আসছেন নিয়মিত।

প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: পরানছায়া- ২০২১

Post a Comment

0 Comments