ওয়াহিদুর রহমান শিপু'র অনুবাদ কবিতা

Wahidur Rahman Shipu' translated poetry



আমার বিষণ্ন মানস

আ্যলেন গিন্সবার্গ 


কখনো কোন সময় আমার চোখ রক্তিম হয়ে এলে

আরসিএ ভবনের একেবারে চূড়ায় উঠে যাই,

আমার পৃথিবীর দিকে তন্ময় হয়ে চেয়ে থাকি, ম্যানহাটান —

ভবনগুলো, সড়কগুলো, যেখানে নিহিত রয়েছে আমার সাফাল্যগাথা।

ছাদের ঘর, বিছানাপত্র, ঠান্ডা জলের ফ্ল্যাট।

— ফিফথ এভিন্যু, যার নিচে মনে হয়

পিঁপড়ের সারির মতো গাড়ী, ছোট ছোট হলুদ ট্যাক্সিক্যাব, মানুষের সারবন্দি

উলের ফুটকির মতো চলমান—

সেতুর দৃশ্যকাব্য, ব্রুকলীন-মেশিনের ওপরের উদিয়মান সূর্য।

সূর্য প্রদক্ষিণ করতে করতে চলে যায় নিউ জার্সির অলিন্দে যেখানে জন্মেছি আমি।

প্যাটারসনে, যেখানে খেলেছি পিঁপড়ের সাথে আমি—

পরবর্তী ভালবাসা ফিফটিন স্ট্রীট,

লোয়ার ইস্ট সাইড,

একসময় ব্রংসের দুরের পথের কল্পকাহিনীর মতো টানতো আমাকে।

পথগুলো এই সড়কের গভীরে সিঁটিয়ে সংক্ষেপ করেছে আমার ইতিহাস, অনুপস্থিতি

এবং হারলেমে আমার সোল্লাস —

সূর্য আলো ছড়ায় আমার প্রতিটি জিনিসের ওপর

নিমেষেই সরে যায় দিগন্তে

আমার শেষ অনন্তের মধ্যে—

যার উপাদন হল জল।

বিষণ্ন মনে,

এলিভেটরে উঠি, চলে যাই

নিচে, চিন্তাগ্রস্থ,

ফুটপাত দিয়ে হাঁটি সব মানুষের

বায়োফোকাল চশমার তলে চেহারার দিকে তাকিয়ে,

প্রশ্ন ক’রে ক’রে কার আছে ভালবাসা

এবং থেমে যাই হতবাক হয়ে,

মোটরগাড়ীর ঘুলঘুলির সামনে

দাঁড়িয়ে যাই নিস্তব্ধ ভাবনায়

ফিফথ এভিন্যু বরাবর গাড়ীর কাফেলা আসে-যায় পেছন রোধ ক’রে

দাঁড়িয়ে যাই মুহূর্তের নিমিত্তে যখন…

সময় ঘরে ফেরার, দুপুরের রান্নার, বেতারে রোমাঞ্চকর যুদ্ধের খবর শোনার;

সব চঞ্চলতা স্থবির হয়ে যায়

হেঁটে চলি অস্তিত্বের নিদারুণ সংকটে

দালানের মাঝামাঝি দিয়ে ব’য়ে যায় কোমলতা। 

বাস্তবতার শরীর স্পর্শ করে আমার আঙুলের ডগা,

কান্নার দাগের আস্তরণে আবৃত পুরো মুখায়বব,কিছু বাতায়নের আয়নায়— সন্ধ্যায়—

যেখানে আকাঙ্খা নেই কোনো—

বনবন মিষ্টির জন্য— কিংবা পোশাক পরিচ্ছদসমূহ পাবার বা জাপানী

বোধের বাতির ঢাকনায় —

চারপাশের চশমায় দ্বিধাগ্রস্থ আমি,

সড়কে সংগ্রাম ক’রে চলে পুরুষেরা

ব্যাগ, সংবাদপত্র,

টাই, সুন্দর সব স্যুট নিয়ে

আকাঙ্খার দিকে.....

নারী-পুরুষ ছুটে চলে ফুটপাতের ওপরে,

লালবাতি ঘড়িতে গতি আনে আর

সচলতা রোধের 

এইসব সড়কগুলো চলে গেছে

আড়াআড়ি, ভেঁপুর আওয়াজে ম্রিয়মান,বিস্তৃত এভিন্যু দিয়ে

উঁচু উঁচু ভবনে আঁটসাঁট কিংবা  বস্তিতে ঠাসাঠাসি 

থমকে থাকা জ্যাম বরাবর

গাড়ী আর ইঞ্জিনের গোঁ গোঁ শব্দে

নিদারুণ বেদানাহত হয়ে

গ্রামাঞ্চলে, এই সমাধিস্থলে

এই নির্জনতায়

মৃত্যু- বিছানায় অথবা পাহাড়ে

দেখেছি একদিন,

কখনও পাইনি ফিরে বা চাইনি

স্মরণে আনবার— 

যেখানে আমার দেখা ম্যানহাটান হারিয়ে যাবে সুনিশ্চিত।

 

 

বুড়ো হাবড়াদের হৃদঅলিন্দে থিতু

মূল গুল্টার গ্রাস

 

নব্বুইয়ে থিতু হয়ে কি করে তারা অদ্যাবধি মিথ্যা বলে

এবং তাদের আয়ুকে স্থগিত রাখে

আজও এটা একটা পৌরণিক কথকতা

পাখির কলতানের ভেজা ভোরে জাগরুক বুড়োর 

রাঙা হাতে

তাবৎ ধরণী স্থানু ছিল।

 

বহুবার তাদের সঞ্চ‌িত শক্তি

এবং পক্ক চামড়ার ভাঁজগুলো

মসৃণতাকে ফুৎকার দিয়ে উড়িয়ে

 

বুড়ো হাবড়াদের পাঁজরের মধ্যে থিতু হওয়া

যতক্ষন ওদের পাওয়া যায়, আমরা আমাদের নখ দাঁতে খুঁটে থাকি

আমরা নতুন প্রবৃদ্ধির জন্ম দিতে না জানা অথর্ব।

কাঠিন্য ,প্রাজ্ঞ এবং দয়ার শরীরে

ওরা বেঁচে থাকে কর্মিষ্ঠ সাধনার জোরে

এবং ওরাই ক্ষিপ্র রেশে আমাদের থেকে ঢের কাল বাঁচে।.

 

 

রবীন্দ্রনাথের প্রতি

আন্তেনিও মাচাদো (স্পেনের কবি)

 

ভাঙাচুরা অস্থি নিয়ে রক্তে তুফান তোলা

পৃথিবীতে যু্দ্ধাক্রান্ত য়্যুরোপ পার হয়ে

শাহাজাদা, কবিকুল পদ্ম পবিত্র গঙ্গার দেশ থেকে

প্রাচ্যের পুরোহিত ,প্রাচ্যের সাধক পুরুষ

তরঙ্গায়িত হয়ে তোমার সংগীত আসে

আমাদের মাঝে;

ও রবি ঠাকুর?

পশ্চিমের এই দিকে

তোমার হৃদস্পন্দন শোনা যায়।

শরতের সান্ধ্যকালিন বৃষ্টি ঝম্পক তাল তোলে বাঁশ বনে

আর তোমার বাংলার সপ্ত আসমান ভেঙে নামে ঝুম বৃষ্টি

তখন য়্যুরোপে বাজে রণদামামা

তার জীবন নদীতে ওঠে সোমত্ত ঝঞ্ঝার ঊর্মীমালা

যখন রক্তক্ষরিত য়্যুরোপ

যুদ্ধ সৈন্য সমাবেশ নিয়ে মগ্নবিলাসে মত্ত

তখন তোমার গ্রন্থ

দরজায় দাঁড়ায় এসে তার যেমন এসেছিল এই য়্যুরোপে গৌতম কাহন

আজ দেখো

ধবল বৃষপৃষ্ঠে চড়ে এসেছে 

স্বয়ম্ভু ভগবান

যুদ্ধখেতাব, শিরস্ত্রাণ সবই সভ্যতা বিবর্জিত বর্বর মনে হয়

সাত সমুদ্র জুড়ে শুধু রণদামামা ছড়ায়।

 

 

Post a Comment

0 Comments