শাওন মুতাইত এর কবিতা

Poems by Shawn Mutait



আমাদের বাসায় এসে ফিরে গেছে বনলতা 

রোম,নিরু,বাঁশি, বাঁশ
একই অঙ্গে কত রূপ দেখিয়ে গেলেন
নাটোরের বনলতা সেন।
কাঁচাগোল্লার মত দেখছি,চেখেছি
যে পেয়েছে, সে খেয়েছে,
যে পায়নি সে চেটেছে
ঘুমে অথবা মনে।



যাদুর মতো সংসার

মনে পড়ে শৈশবের  নওশের আলীর মজমা। বেচতেন বাতের বড়ি, শারীরিক দূর্বলতার বড়ি, সাপের তাবিজ। তাবু খাটিয়ে যাদুর খেলা দেখিয়ে লোক জড়ো করতেন। কিচ্ছা কাহিনী বলতেন। মজমায় হাসির রোল পড়ে যেত। হাটের দিন স্কুল পালাতাম। নওশের আলীর মজমা আমায় টানতো। 

একদিন নওশের আলী বুড়ো  হয়ে যান। আর তার কোনদিন মজমায় ফেরা হয়না। নওশের আলী স্মৃতিময় এখনও এক রসিক ক্যানভাসারের নাম। আমি নওশের আলীর মতো যাদু দেখাতে চাই, বেচতে চাই বাতের বড়ি সাপের তাবিজ, মন্ত্রমুগ্ধ বশিকরন কিন্তু আমার আর নওশের আলীর মতো জীবনের মজমা জমে ওঠেনা।



একদিন রূপার সাথে


জলমাখা চুল আটপৌঢ়ে শাড়ি যায় ভিজে
আয়নায় দেখা হয়েছিলো যৌবন সম্ভার,
কতদিন আগে ভরা চাঁদ উঠেছিল লাবণ্যের দেশে, কোস্তুরী ভঙ্গিমায়,

বলগাছাড়া তুলকালাম উঠেছিল ভিনবুকের পান পাতায় ৷

স্থির চোখে দু’দন্ড অনন্ত মুগ্ধতা ভুলিয়ে দিয়ে গেছিল ফেরার ঠিকানা,


হিংসুটে হাওয়া আর চুটকি রোদে বেসামল আঁচল সরেছিলো কর্ডিয়াল কেসমেন্টের কোঠরে! বুকে রাখা কারনে শনের দ্যূতি, চোখে পড়ল লজ্জা, যেন শানের মেঝেতে কাঁসার থালা ঝনঝনিয়ে বেজে উঠল আচমকা হার্দিক সিম্ফনি


হাঁপিয়ে ওঠা বুক জুড়ে সেদিন ছিল জলতরঙ্গের জলসা


কে যেন বাজিয়ে গেল বিউগ্যাল, অথবা পাইপারস্...... 
সপ্তসুরের অসহজপাঠ, প্রথম হাতে খড়ি তারপর শ্লেটে চোখ আঁকা, পাশে নতুন নকশায় নাম লিখে রাখা অপটু প্রেমের পর্যায়সরনী৷ 


ভাবনায় বয়স বেঁধে আবার ঝাঁপ দেয়া হাত তুলে আনে বৈকুন্ঠের পান্ডুলিপি
তখন স্বচ্ছতা ভুলে গেছে চোখ
শুধু ম্রিয়মান অপেক্ষার দলিলে আক্ষেপের পরিসীমা কষে জল- বিভাজিকা, পুরনো দস্তাবেজ ৷
তবু অমলিন প্রেম শিখিয়ে গেছে আড় বাঁশীতেও রাগ বাজে যখন শরীর জুড়ে ভাটা পরে, গড়ে ওঠে বালুচর 




নগদ লাভ


আমি ভাই আদার বেপারী

শহর জুড়ে ঘটে যাওয়া ক্লান্ত খবরে আমার কোন দরকার নেই। শংকর কে বললাম, নে বাপু আধা বোতল কেরুজের ব্রান্ডি আছে জল মিশিয়ে ঝটপট দু'চার পেগ বানা টকাশ করে মেরে দেই।

খরগোশ আর কচ্ছপের দৌড় যারা চালিয়ে যাচ্ছে তারা চালাক, আমারা বোকা বলেই ধারে মাল খাই, পুজোপার্বন দেখি, বৌয়ের ভয়ে পরকীয়া এমন কি পরকালের নাম নিতেও ভয় পাই।



শোক চিহ্ন


তোমার বাম হাতে কাটা দাগ,
তুমি আমার মৃত্যুর গল্প লিখছো!
যেখানে ঘাসদের শরীর লীন হয়ে গেছে,
সেখানে আমার কবর, তুমি কবরের গল্প লিখছো।
বাঁশ, চাটাই মাটিদের গল্প লেখা হলে 
এবার আতর, লোবানের গল্প লিখে ফেলো,
খুব বেশী সময় নেই আর।
বসন্তের ফুলেদের ডাক এসে গেছে,
তারা ফুঁটে সয়লাব,
আমার কবরের উপর প্রতিদিন ঝরে পরবে
এমনই কথা হয়েছিল গত বসন্তে।

তুমি একটা সমাপ্তির গল্প লিখছো
তোমার হাত ঠিকরে বেড়িয়ে আসছে নীল আলো!
তুমি আমার কথা লিখছো,
তুমি একটা জীবন লিখছো,
লেখা শেষ হলে বিচারকের মত কলমটি ভেঙে দিও,
না হয় বিরহ গুলোর  যীশুর মতো
পুনরুত্থানের গল্প রটে যাবে।

Post a Comment

0 Comments