অমিত চক্রবর্তী’র গুচ্ছ কবিতা

Bunch of poems by Amit Chakraborty



নক্ষত্র নয়, নীলতিমি

 

একটি নক্ষত্রের জীবনী লেখার ভার পড়েছে আমার ওপর –

জীবনী মানে ঠিক রেসুমে নয়, শৈশবই বেশি,

গড়ে ওঠার দিকটা, কিভাবে ধুলোবালি, গ্যাস, কুচিপাথর নিয়ে

মহাকর্ষ তারা বানায়, নক্ষত্র তৈরী করে, অধ্যয়নে। 

আমি আকাশপাতাল ঘাঁটি,

ইন্টারভিউ করি দু’চার জন প্রবীণকে, একই গ্রামে বড় তারা,

একই রেশনের চাল, অথচ এই মেয়েটা কেন আলাদা,

কিভাবে আলাদা?

 

তখন সাইকেল চড়া ছিল অ্যাডভেঞ্চার, বকুল গাছে

ছুরি দিয়ে নাম খোদাই ছিল অ্যাডভেঞ্চার, আজকে আঁচলে

হলুদের দাগ, ব্রা নেই, ব্লাউজের হুক একটা খোলা, একটু আলুথালু,

একটু বিধ্বস্ত হয়তো, কিন্ত তাকে অবহেলা কোরো নিজের রিস্কে,

শত্রু বানিও নিজের ধ্বংস চেয়ে।

 

না, ইনি, নক্ষত্র নন, সাধারণ ঘরণী, ছদ্মবেশে,

তবে অনেক আগের কথা হলেও জন্ম, মৃত্য, স্বপ্নের সাথে

অধ্যয়নের একটা যোগ আছে দেখি, গাপ্পির ভিড়ে

নীলতিমি হয়ে বাঁচতে।  




 

সেই তুলোওঠা লেপটা


“I want to be the rough clothes, you can’t sleep in”, Ada Limon

একষট্টিতে মারা যেতে চাইনা আমি, একাত্তরেও নয়

তবু শীতল হয়ে আসে গ্রন্থি

তরল মনে শুধু সতেরোর মুখ তোমার –

একটা বানানো ব্যস্ততা, চাপা টেনশ্যন

প্রতীক্ষা বা আশার একটা বাতুল খেপামি।

ইদানীং বাঙলা সিরিয়াল, গরম রুটি নিয়ে আছ তুমি,

জৈষ্ঠ্যে বাগানের আম – পুরোপুরি

শান্তিপূর্ণ তোমার দিনরাত, পরিস্থিতি

তাই মুলতুবি রাখি আমার মনখারাপের সভা বা

একেলার ঝটিকা আক্রমণ

শুধু হতে চাই সেই তুলোওঠা লেপটা –

 

সেই খসখসে, স্বস্তিহীন লেপ

গায়ে দিলে মনে হবে কী একটা অদ্ভুত,

কী যেন একটা ঠিক নয়, ধুনুরী ডাকিয়ে

পেঁজা দরকার, পুনর্মার্জন দরকার,

আমি হতে চাই তোমার মনের ভেতর

সেই তুলোওঠা লেপটা।




 

বোধ ও বায়োলজি

 

যেহেতু বোধ ও বায়োলজি সুসঙ্গত নয়

যেহেতু একজন এলোমেলো, অন্যজন উদাসীন

তুমি খুব সহজ সমাধান চেয়ে নিতে পার –

আহারে, মরে গেলে কত ভাল হত

কোন ব্যথা নেই, একটা লম্বা অচেতন

একটা দীর্ঘ অসাড়

 

অথচ মরে গেলে ঝঙ্কারও নেই কোন

 অথচ মরে গেলে আজব সৃষ্টির

তোরণও নেই কোন

 

তাই আমরা কুঁকড়ে থাকা জীবনেও মিসফিট

তাই আমরা যন্ত্রনাকে আঁকড়ে ধরে

খামখেয়ালী, অশালীন

তাই আমরা হামাগুড়ি দিয়ে

অন্ধকূপ থেকে, মাইগ্রেন থেকে

একটু একটু করে হাতড়ে …                                    




 

মেজদার প্রেমিকা

 

পুরো ভিজে এসেছিল সেবার, মেজদার সেই

নতুন প্রেমিকা, আমি কিন্তু বৃষ্টির প্রার্থনা

করিনি, বৃষ্টি ছিল না ম্যাপে আমার,

রেন ক্যাচার পুঁতিনি, আমার

ক্রিকেট রয়েছে, বিকেলে ব্যাডমিন্টন।

 

পুরো ভিজে এসেছিল সেই সুন্দরী মেয়ে,

মুঠিস্তনা, ভেদ্য জেয়। জড়সড়

অপ্রতিভ দাঁড়িয়েছিল অসহায়।

এখনই বড় বৌদির শাড়িতে তার

প্রাণ ফিরে আসে, জড় প্রতিমা পুনরায়

সপ্রতিভ আবার –

হেসেহেসে, কী রে বাবুল, কবে খুলবে

কলেজ?




 

দেয়ালে বসা মাছি

 

দেয়ালে বসা মাছিও জানত না, সন্ধ্যেটা কি ভাবে শুরু হবে।

সম্ভাবনা অনেক।

হয়তো হতে পারত –

কেন তুমি, কেন তুমি আমাকে ছেড়ে আবার ওর কাছে

অথবা, পাল্টিয়ে

আমাকে? আমাকে, চাস তুই অরুণ, আমি না তোর থেকে বয়সে বড়

কিংবা অন্যসুরে

তাও একবার নাম ধরে ডাকলে আমায়, কি ঘোরে যে থাক

সম্ভাবনা অনেক।

কিন্তু সব শাখানদীই উপচে পড়ে মোহানায়,

দ্বিধায় বা উদ্ভাসে –

দেয়ালে বসা মাছি তাই দেখল ঝুঁকে

সব রেশ, সব দেয়ালাই শেষ হল আজ

দীর্ঘ জরিপি চুমুতে।

 





___________________














অমিত চক্রবর্তীর

    জন্ম সোনারপুর অঞ্চলের কোদালিয়া গ্রামে। ছাত্রাবস্থায় অনেক লেখা এবং ছাপানো কলকাতার নানান পত্রপত্রিকায়।  ১৯৮২ সাল থেকে আমেরিকায়, প্রথমে উচ্চশিক্ষার জন্য পরে অধ্যাপনায়। এখন ক্যানসাস স্টেট ইউনিভারসিটি তে কলেজ অফ আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সের ডিন। সম্প্রতি প্রকাশিত কবিতা – বাক, কবিতা আশ্রম, ছায়াবৃত্তবম্বে Duck, যুগসাগ্নিকঅন্যনিষাদবাতিঘর অনলাইনশারদীয়া খোঁজশব্দের মিছিলমহাভারতঅপার বাংলাউত্তর আমেরিকার পত্রিকা বাঙলা লাইভউদ্ভাস এবং আরো অনেক পত্রিকায়।  ঋক প্রকাশনী আয়োজিত বিরহের কবিতা প্রতিযোগিতায় উচ্চস্থান। উত্তর আমেরিকার নিউ জার্সি অঞ্চলের পত্রিকা অভিব্যক্তির কবিতা বিভাগের সম্পাদক।

Post a Comment

0 Comments