চার্চের ঘন্টার ঢং শব্দে চোখ খুলে দেখি গির্জার মাঝখানে আমি একা বসা! যিশুর ছবির সামনে জ্বল জ্বল করে মোম জ্বলছে।যিশু ছবি থেকে জ্যান্ত হয়ে আবার ছবি হয়ে যাচ্ছে।প্রশ্নাতুর চোখে চার্চের দেওয়ালে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে দেখি যিশুর ছবি চার্চ কিছুই নেই! গাড়ির হর্ণের শব্দে চোখ খুলে দেখি পেছনের সিটে বসা ভদ্র মহিলা এবং ভদ্র লোক অনরগল ইংরেজীতে কথা বলে চলছেন। উনারা ইউ এস এ প্রবাসী। মাঝে মাঝে বাংলাদেশে আসেন।হঠাৎ করে আমার সাথে পরিচয় হয়ে যায় একটা প্রোগ্রাম থেকে। ফেরার পথ একই হওয়ায় উনাদের সাথেই রওনা হয়েছি মুন্সিগঞ্জ থেকে সাভারের উদ্দেশ্যে!
প্রথম থেকেই খটকা লাগছিল! মৃণালী নাম ভদ্র মহিলার, আর উনার স্বামীর নাম বিস্ময় রায়, অথচ ভদ্রমহিলার হাতে শাখা পলা নেই, নেই মাথায় সিঁদুর! হয়ত উনারা এসব পছন্দ করেন না। গাড়ি এগিয়ে চলছে তার আপন গতীতে। কি কারণে কেন যেন আমার মধ্যে ছটফটানি কাজ করছে! উইন্ডচাইমের শব্দেও আমার জানালা থেকে চোখ ফেরাতে ইচ্ছা করছে না সামনের দিকে, অন্য সময় কোথাও উইন্ডচাইম এর শব্দ এলেই দেখবার আগ্রহ জাগে, আজ জাগছে না। বাইরের আলো আধারী পথ আমার দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছে..! পিচঢালা রাজপথ যেন রহস্যের মলাটে আবৃত মারমারেট! আমাদের মাইক্রোটি ইউটার্ণ নিয়ে কাঞ্চন ব্রিজ পার হয়ে ডান দিকের ঢালু পথ বেয়ে উপরে উঠতেই আর সামনে যেতে পারে না। বিশাল মন্দিরে পথ আটকানো। ভক্তরা দূর্গাকে পূজো দিচ্ছে কনিষ্ঠা আর তর্জনীতে ধারালো অস্ত্রে আঘাত করে নির্গত হওয়া রক্ত তে! যতোদূর জানি রক্তে জবাফুলে কালীর পুজো হয়! একজন ভক্তের তর্জনীতে আঘাত করার পর তিনি সেন্সলেস হয়ে পরেন... তার রক্তে গড়িয়ে-গড়িয়ে যেদিকে যাচ্ছিল, আমি গাড়ি থেকে নেমে সেদিকে যেতে থাকি... একটি পুরাতন মসজিদে গিয়ে থেমে যাই। সেখানে সদর দরজায় তর্জনীর মতো দেখতে তালা ঝুলানো! তালাটা স্পর্শ করতে আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাললাহু ওহদাহু লা শারীকালাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুমাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু ধ্বনি বাজতে থাকে আর সুগন্ধ ছড়াতে থাকে! একজন শিশু আমার পিতার হাতে কনিষ্ঠা ধরে যেভাবে হেঁটেছিলাম সেভাবে কনিষ্ঠা ধরে কাঞ্চন ব্রিজ আটকে রাখা মন্দিরে নিয়ে যায়। মন্দিরের পাশে আরেকটা মন্দির। কেমন পোড়া বাড়ির ছাপ। তবে ভেতর থেকে আলো আসছে অলৌকিকভাবে! আমি ভেতরটা দেখবার জন্য যে পথে হেঁটে গেলাম ঐ পথে আলাদা আলো দেখতে পেলাম। মন্দিরের ভেতরে গিয়ে দেখি দেবীর আসনে স্বরস্বতী হয়ে হাসি মুখে বসে আছেন মৃণালী চৌধুরী।মৃণালী চৌধুরীর স্বরস্বতী রূপটা আমায় মোহিত করে খুব। আমার দুই পা আলোর শিকলে বাঁধা পরে যেতে চায়। আমি ছুটতে চাই আপ্রাণ। আমার মাথা ব্যথা শুরু হয়, দম বন্ধ হয়ে যেতে নেয়। ফাৎ করে নিঃশ্বাস ছেড়ে দেখি আমার মাথার উপরে হাই পাওয়ারে এসি চলছে! প্রচন্ড ঠান্ডা লাগছে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। কান সজাগ করে শুনতে পাই রহস্যে ঘেরা সুর গুন গুন করছেন বিস্ময় রায়... পেছনে তাকাতে যাবো যাবো অমনি চোখে পরে গাড়ির সামনে ঝোলানো ক্রুশ চিহ্ন! আমি কেমন যেন চমকে উঠি! অস্বস্তিটা আরো বাড়তে থাকে। উনারা কোন ধর্মের অনুসারী আসলে? গাড়িতে যেহেতু ক্রুশ চিহ্ন ঝুলানো তবে নিশ্চয় খৃশ্চিয়ান।কিন্তু নাম গুলো সনাতন টাইপের কেন? রহস্য!!
মিরপুর ১০ ছাড়িয়ে আবারও পথের লোকেশন জিজ্ঞেস করেন ড্রাইভার! রাস্তা পেরুতে থাকে ছোট সাদা মাইক্রো। আমার কেন যেন বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করে খুব। কমার্স কলেজ পার হতেই বুকের মধ্যে ধুক করে ওঠে। মনে হয় এই পথ আমি আগে দেখেছিলাম। আচমকা পথের চার পাশে আলো থৈ থৈ করে ওঠে।ফুচকার দোকানে বসে আছে আমারই অনুরুপের একটি মেয়ে আর অচেনা একটি ছেলে। অবাক দৃষ্টিতে ওদের একে অপরের মুখে ফুচকা তুলে দেবার দৃশ্য দেখছি। আরেকটু এগিয়ে যাবার পরেই ঝালমুড়ির দোকানে স্কুল ব্যাগ কাধে দাঁড়িয়ে আছে আমার মতো আরেকটি মেয়ে। সাথে সমবয়সী একটা ছেলে। এই ছেলেটি ফুচকার দোকানের ছেলেটির মতোই দেখতে। আমি জানালার কাচ খুলে দিই। মাথা বের করে চেয়ে থাকি ওদের দিকে।
বিস্ময় রায় বলেন__ জান্নাত, জানালা বন্ধ করো, আমার ধুলো সহ্য হয় না।
আমি উনার শব্দ শুনতে পাই, কিন্তু আমার কি করা উচিৎ বুঝে উঠতে পারিনা
আমাদের মাইক্রোর মুখোমুখি শনশন করে ট্রাম আসছে। আমার মাথাটা ভেতরে নিতে না পারলে খারাপ কিছু হয়ে যাবে। প্রচন্ড চেষ্টা করি মাথা জানালার বাইরে থেকে ভেতরে নিতে- কিন্তু পারি না। তিনটি হাত আমার সামনে ভাসতে থাকে। একটি হাতে লাল সূতো বাঁধা এবং সিঁদুর মাখা। আরেকটি হাতের কব্জিতে ঝোলানো ক্রুশ। অন্য হাতটি সাধারণ। সাধারণ হাতটির দিকে চোখ আটকে যায়। কয়েক সেকেন্ট বাকি ট্রামের সাথে আমার খারাপ কিছু হয়ে যেতে। মাথাটা কিছুতেই ভেতরে নিতে পারছি না। চোখ বন্ধ করে আল্লাহকে স্মরতে থাকি। চোখে শ্রাবণ, সব বুঝি এই শেষ! ট্রাম আসে মাথা বরাবর, বিকট বিশাল ধাক্কা! তারপর...
কানে ভেসে আসে...
জান্নাত আমরা এসে গিয়েছি, নামতে হবে ওঠো। চোখ খুলে দেখি চোখ ভেজা, সত্যি কাঁদছিলাম? সব কি সত্যি ছিল? তাহলে এখন যা দেখছি এসব কি? কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা!
মাথা মুখ ছুয়ে ছুয়ে দেখি সব ঠিক আছে। বাড়িটির দিকে তাকাতেই কেমন গা ছম ছম করে উঠলো। আশেপাশে বিশাল বিশাল গাছ। যেন একটা জঙ্গলের মধ্যে মুভি তৈরির জন্য পরিকল্পনায় বানানো হরর স্পট! প্রবেশ দ্বারেই কেমন অদ্ভুত কাঁটাযুক্ত পাতাহীন গাছে ত্রিক্ণাকৃতির হলুদ ফল ঝুলছে!
সিড়িগুলোতে লাইট নেই অন্ধকার! ফোনের টর্চ জ্বালিয়ে চার তলায় প্রবেশ করার পর ও বাড়ির রক্ষনাবেক্ষণকারী মহিলা কর্মচারী হান্না জানালো এই ফ্লোরের ৩টা রুমের ফ্যান লাইট কিছুই চলছেনা। শর্ট সার্কিট হয়েছে হয়ত। ড্রইং রুমে ঢুকেই যিশুর ছবি দেখে নিশ্চিত হোই এনারা খৃশ্চিয়ান। রাত এগারোটা ত্রিশ মিনিটে নিরিমিষ খাবারে মেনু গুলো চেয়ে চেয়ে দেখছিলাম। মৃণালী চৌধুরী জানালেন উনারা আমিষ অপছন্দ করেন। বিস্ময় রায় মৃণালী চৌধুরীকে খাবার শুরুতে বললেন বিসমিল্লাহ বলে খাবার শুরু করো!আমি আবার চমকে যাই! কি ধর্ম এদের?
খাবার শেষ করে উনারা আমাকে ঘুমাতে দেন সর্বোচ্চ আতিথীয়তায় উনার মেয়ের রুমে। ঘরে প্রবেশ করতেই কেমন গা ছমছম করে ওঠে রক্ত রক্ত গন্ধে! সাদা কাভারে ঢাকা বিছান-ছোফা! ঘরটাতে অনেক দিন কেউ থাকে নি দেখেই বোঝা যায়। হান্না যখন বিছানা থেকে কাভার সরিয়ে নিচ্ছিল কেমন রহস্যের হাসি ছিল তার মুখে! নতুন বেডশিট পেতে দিলো, বালিশ ঠিক করে দিলো। বালিশের নীচ থেকে মশারি বের হতে সেদিকে হাত বাড়ালে হান্না দ্রুত মশারি সরিয়ে নেয় কেমন আড়াল করে। সংকোচ মাখা কণ্ঠে বললো__ মশার ঔষধ স্প্রে করে দেবে। ছোটবেলায় মায়ের মুখে শুনেছিলাম বত্রিশ বান্ধন থাকলে সেখানে অশরীরি ক্ষতি করতে পারে না। হতে পারে কুসংস্কার তবে বিশ্বাস করে এসেছি এ কথা। হান্নার থেকে মশারিটা চাইতেই তাকে ডাকতে গিয়ে দেখি হান্নার বগলের চিপায়া রাখা মশারিতে রক্তের ছাপ লেগে আছে। অনায়াশে ঘামেরা আমার শরীরর লোমকূপ দখলে নেয়। জানালার পর্দাগুলো টেনে দিচ্ছিলাম। বাইরে থেকে যাতে ভেতরে না দেখা যায় ভেতর থেকে যাতে বাইরে না চোখ যায়। পর্দা লাগালেও বাইরে সব স্পষ্ট দেখাচ্ছে কেন! কি অদ্ভুত! পর্দা সরিয়ে বাইরে বুঝতে চাইছিলাম আসলে কোনো সমস্যা আছে কি না। ছায়ার মতো কি একটা দেখতে পেলাম ঝাপসা। বারান্দার লাইট অন করতে একের পর এক সুইচ অন করেই যাচ্ছি অবশিষ্ট সুইচ টা অন করতে হাত বাড়াচ্ছি... পেছন থেকে গরম শ্বাসের আভাস পেয়ে চট করে পেছন ফিরে হতবাক হয়ে যাই। কপালের মাঝখানে টকটকে লাল টিপ, সিঁথীতে মোটা সিঁদুর, ভয়ানক মুখ! দেওয়ালগুলো লাল সেখান থেকে রক্ত চুয়ে পড়ছে! থরথরিয়ে কাঁপুনীর সাথে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়... জোর করে উচ্চস্বরে বলে উঠি... আউযুবিল্লাহিমিনাস শায়তানির রাজীম, বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম আউযুবিল্লাহিমিনাস শায়তানির রাজীম, বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম।
জানালার পর্দাগুলো খুব জোরে দুলতে থাকে, কাচগুলো কাপতে থাকে পেছন দিকে কে যেন আমাকে টেনে নিয়ে যেতে নেয়। গলায় অস্পষ্ট হাতের মতো লাল রঙের কি একটা দেখছি... হাত দিয়ে অনেক চেষ্টায় গলার লাল অস্পষ্ট জিনিসটাকে ধরতে নিলে সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়। হান্না চোখের সামনে লাল হিট ধরে ছিল। পোকা মাকড় মারার স্প্রে। গলায় কেমন ব্যথা অনুভব করছি। চিপ চুয়ে ঘাম পরছে আমার।হান্না জানায় পোকা মাকড় দেখলে স্প্রে করলে কিচ্ছু থাকবে না। এই স্প্রে খেয়ে সব শান্ত হয়ে যাবে। খটকা লাগে স্প্রে খেয়ে শান্ত হবে শব্দটায়। হান্না যাবার সময় অদ্ভুত রহস্যে হাসি হাসে দাঁতগুলো রক্তের মতো লাল! কান্না আসে খুব এই একা ঘরে এমন পরিস্থিতে থাকব কিভাবে! বেঁচে ফিরতে পারব তো?
বিছানায় শুতেও ইচ্ছে করে না, ঘুম আসবে না। ঘুমালে অকারেন্স হতে কতোক্ষণ! ব্যাগ থেকে ফোনটা হাতে নেবার জন্য ব্যাগে হাত দিই। ওমা!!
গা মাথা ঝিম ঝিম করে গরম ভাপ ছুটতে থাকে! আমার ব্যাগের মতোই দেখতে আমার কোনো জিনিস নেই! ব্যাগের মধ্যে ধারালো ছুড়ি কাচি আর একটা মধ্যমা আঙুলের অংশ! এরা কি খুনী? নাকি মানব শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পাচারকারী! আল্লাহ রক্ষা করো। উফফফ! বড্ডো ভুল করেফেলেছি এখানে এসে!
দরজার ওপাশ থেকে ‘ভুল’ মানে ভুল করে জান্নাত তোমার ব্যাগটা আমাদের ব্যাগের সাথে চেঞ্জ হয়ে গিয়েছে। বিস্ময় রায় ব্যাগটা আমার হাতে দিতে দিতে জানালেন। বিস্ময় রায়ের মধ্যমা আঙ্গুলে ব্যান্ডেজ লাগানো। তবে কি উনার হাতের আঙুল এক্সিডেন্টলি কেটে গিয়েছে? নাহ, না জেনে মানুষ কে এত ভুল বোঝা ঠিক না! উনাদের ব্যাগটা উনাদের হাতে ফিরেয়ে দিতে অবাক হোই ব্যাগের চেইনে তালা ঝুলানো দেখে! তখনতো আমি ঠিকঠাক ব্যাগের চেইন খোলা দেখলাম!
বিস্ময় রায় যাবার সময় বলেন__
চা্লই তুমি দরজা দিয়ে ঘুমাতে পারো, খোলাও রাখতে পারো, কোনো সমস্যা নেই। ভয় পেলে লাইট অন রাখতে পারো। শুভ রাত জান্নাত।
লোকগুলোকে এখন আবার বিশ্বাস কেন করতে ইচ্ছে করছে? হতে পারে এরাই সব রহস্যের মূল বা, অশরীরির থেকে ভয়ানক। কিন্তু বিশ্বাস কেন করতে ইচ্ছে করছে!
মেঝেতে তেলাপোকা আর মাকড়ের ছড়াছড়ি হয়ে যায়! লাল হিট স্প্রে করি। লাল হিট স্প্রে করার সাথে সাথেই অন্য স্প্রে যেমন অদৃশ্য হয় এটা অদৃশ্য হয় না! স্প্রের লাল টকটকে কণা হয়ে ওঠে একেকটি নবজাতক! মাকড়, তেলাপোকা অন্যান্ন পোকা নিমিষে খেয়ে ফেলে নবজাকগুলোকে চোখের পলকে। আমি বিছানায় জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকি। আমার বন্ধ দরজায় কড়া নাড়ে ৩টা হাত একত্রে..!
নবজাতকগুলোকে খেয়ে ফেলা পোকামাকড় ধবধবে সাদামানুষ হয়ে যায়। কি ভয়ানক কণ্ঠে বলে ওঠে_ পাপ! সব পাপ! পাপগুলোকে খেয়েফেলতে পারলাম শুধু তোর জন্য! ভয় পাস না। আমরা তোর ক্ষতি করব না... এবাড়িটা একটা জাহান্নাম, পাপপুরী। তুই এসে সব পাপের অবসান ঘটিয়ে দিলি! মানুষগুলো গলে গিয়ে পানি হয়ে যায়। রুমের মধ্যে থৈ থৈ পানি। বিছানায় পানি ওঠে, গলা পর্যন্ত ডুবে যায়... ফুসফুসে জ্বালা শুরু হয় দম বন্ধ হয়ে চোখে মায়ের ছবি ভেসে ওঠে! জলের তলায় আগুন জ্বলে ওঠে!! উত্তাপ জল সব কিছু একাকার। তাপ বাড়ছে আলো বাড়ছে, বাড়ছেতো বাড়ছেই...
আপা ওঠেন! নতুন আপা ওঠেন!
হান্নার ডাক শুনে জেগে দেখি মাথা মুড়িয়ে শাদা কাভারের লেপে ঢেকে রেখেছিলাম নিজেকে। তীব্র শীতের দিনেও আমার সারা শরীর ঘেমে বিছানা ভিজে গিয়েছে। বাইরের সকাল মাখা সূর্য তাপ ছড়াচ্ছে নিজেস্বতায়!
তারাতারি সব গুছিয়ে ফ্রেশ হতে ওয়াশ রুমে যাই!
ওয়াশরুমে কাজ শেষে ফ্ল্যাশ ব্যবহার করার জন্য বাটন প্রেস করতেই ফিনকি দিয়ে কমোড ভরে যায় রক্তে!ভেসে ওঠে কাটা আঙুল, চোখ, কান ও মেয়েদের কাটা স্তন!
আমি হাউমাউ করে কেঁদে উঠি! বিস্ময় রায় আর মৃণালী চৌধুরী দরজা ধাক্কান। কোনো মতে বাইরে বেড়িয়েই বলতে থাকি__
আমি বাড়ি যাব, এখনি আমি বাড়ি যাব। আমার থরথরিয়ে কাঁপুনী দেখে মৃনালী চৌধুরী খানিকটা মায়ার মুখে বলেন_
কি হয়েছে? কি হয়েছে জান্নাত। কোনো সমস্যা?
আমি কি বলব! বুঝতে পারছিনা!
চট করে বলি_ আমি পড়ে গিয়েছিলাম, মাকে খুব মনে পড়ছে। আমি বাড়ি যাব প্লিজ, আমাকে বাড়ি যেতে দিন।
শত চেষ্টাতেও উনারা আমাকে সকালের খাবার খাওয়াতে পারেন নি। সিঁড়ি মাড়িয়ে নামবার সময় ৩ তলার বন্ধ রুমের কাছে দূর্গন্ধ পাই বাসিপঁচা রক্তের! কাচের জানালার পর্দার ফাঁকে দেখি শাদা কাপড়ে মর্গে যেভাবে লাশ ঢেকে রাখে ওভাবে লম্বালম্বি বেশ কয়েকটা বেডে কিছু ঢাকা। খোলা রিকশায় আমি কলমা রোডের দিকে ফিরছি! পেছন পেছন ধেয়ে আসছে অসংখ্য লাল চোখ, আঙুল আর কাটা স্তন!
এসব কিছু একত্রে বিস্ময় রায় আর মনালী চৌধুরীর রূপ নিয়ে প্রচন্ড ছুটতে থাকে পেছন পেছন! রিকশাওয়ালাকে বলতে থাকি, মামা দ্রুত চালান। মামা দ্রুত চালান দয়াকরে। চোখ আটকে যায় ভয়ানক ভূতুরে পরিত্যাক্ত চার্চে চোখ পরে। যাবার দিন রাত ছিল তাই হয়তো চোখে পরে নি। কোনোমতে পরিত্যাক্ত চার্চ পার হয়ে আসবার সাথে সাথে সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়।
0 Comments