মনজুর রহমান এর কবিতা

Manjur Rahman's poetry মনজুর রহমান এর কবিতা



শরৎ নগর

এখানে জনারণ্যের কোলাহল নেই কোনো
নির্জনতার স্বরে- সবুজের চিত্রল শরীর ঝুলে থাকে অশ্বত্থের ডালে
নিসর্গের মোমমায়ায়-পরিশীলিত নীলে তাকে আঁকেনি কেউ
মাঘের রাতে- লাল টিনশেড থেকে গড়িয়ে পড়া শিশিরের হিমে
ফোঁটা ফোঁটা শূন্যতার অতিলৌকিক স্বর মিশে যায় উত্তরের হাওয়ায়
নৈঃশব্দ্যের মালা থেকে অশ্বত্থের হলুদ পাতারা 
বোঁটা খুলে নিঃশব্দে শুয়ে পড়ে ঘাসের চাদরে
তারপর, শিশিরের মত নীরবতা!

এ নির্জনতার ভীড়ে সচারাচর আসে না কেউ
এখানে দূর যাত্রার অপেক্ষা নেই 
অপেক্ষার সমাপ্তিও নেই
গন্তব্য মেনে কেউ আসে না এখানে;
এখানে বড়জোর যাত্রাবিরতি আছে।
তবু কার অপেক্ষায়! 
অসহ্য সবুজের- নিসর্গ নির্জনতায়-
দুবাহু প্রসারিত করে, নামের ফলক দুটি আছে দাঁড়িয়ে?
কখনো ক্রসিংয়ের বাঁকে-
হয়তো কোনো প্রেমিক- একদিন,
তার ঘোর লাগা চোখ ফেলে গেছে!

থেকে থেকে দূরগামী ট্রেনের আগমন সংকেতে 
ঘন্টাধ্বনি বাজে ঢং... ঢং...
মিলনের ক্ষণ অতিদীর্ঘ নয় এখানে 
বিচ্ছেদের ভায়োলিন বাজিয়ে
দু’ভুবন দুইদিকে চলে গেলে
ফুরোনো কথার মত 
পথ দুটি পাশাপাশি পড়ে থাকে নিথর!
ভাঙা বাতিস্তম্ভে সন্ধ্যার অন্ধকার গাঢ় হয়ে এলে
ঘরে ফেরা পাখিদের কলরবে জেগে ওঠে রাত
 
আর, কার যেন দীর্ঘশ্বাসে-
অশ্বত্থের পাতারা- অহেতুক অভিমানে-
বোঁটা খুলে খসে পড়ে ঘাসের উপর!
২১.০৭.২২
 


কবি

যতদূর দৃষ্টি যায় 
যতদূর মানুষী হৃদয় 
তারও দূর, আরো দূর 
আমাদের অদেখা সময়।
যতদূর দ্রাবিড় আঁধার
যতদূর পলির প্রবাহ
কবি চোখ নিঃশ্চুপ 
তারও দূর, যেতে চায় আরো।

যতদিন পূণ্যস্নান
শব্দহীন শিশির পতন
যতদিন পুষ্পলতা
শ্রদ্ধার্ঘ করে তর্পণ
ততদিন মৃত্যুঞ্জয়
অমৃতস্য পুত্রের কথন!

এ প্রেমতীর্থ তটে
দ্রাবিড় জন্ম যার
তাকে তুমি কতদূর
দিতে পারো ঠেলে?
আজ এই কুক্ষণে
জেনে নাও সজ্ঞানে
কবি'র প্রস্থান নেই।
কবি বাঁচে সহমরণে।
১৯.০৮.২০২২
 


ভাঁজখোলা আপন

তুমি আমার কোনো গল্প হলে না! 
কিশোর বয়সে মায়ের চোখ লুকিয়ে
নভেল পড়ার মত গল্প।
নিষিদ্ধ গন্ধের মতো 
নিষেধের দেয়াল ঘিরে 
অপাপবিদ্ধ সুন্দরের গল্প।
হলুদ বিকেলে ঠিকানা হারানো পথে আমরা কতবার হেঁটেছি
তবু কোনোদিন দেখিনি ছুঁয়ে পাঁচ তারে বেজে ওঠে কী বাঁশির সুর
আমাকে প্রলুব্ধ করেছিলো সন্ধ্যার শাঁখ
প্রলুব্ধ করেছিলো তারাখসা রাত
আমাকে প্রলুব্ধ করেছিলো গমরঙা হাত
তবু বালক তো তখন জেনেছে সদ্য 
প্রেমিকের ঠোঁট আজন্ম সংকোচে কাঁপে থরো থরো 
একটা সুগন্ধের মোহে পড়ে
কিছু প্রিয় অনুভব বুকে করে
মৌনতার কাটাকুটি খেলায় 
কেটে গেছে  রাত
ম্রিয়মান স্বপ্নে ভারী উঠেছে 
প্রতিদিন ভোরের বাতাস
তবু পুরোনো বইয়ের ভাঁজে গোপন সুগন্ধে-
কখনো অম্লান ফোটনি তুমি!
অথচ,আজ এই বিস্রস্ত সময়ে
দূরতম শহরের জানালায় 
যখন রাতগুলো হয়ে গেছে নদী
তখন পুরোনো বইয়ের ভাঁজ খুলে দেখি
কী অম্লান সুগন্ধে ফুটে আছো তুমি!

৪.১০.১৯
 


পুরোনো বাইসাইকেল

একটা আড়াই পৃষ্ঠার চিঠি 
রোজ লিখি, বিস্মৃত ঠিকানায়।
একটা দু'চাকার সাইকেল 
প্রতিদিন গড়িয়ে যায় প্রিয়তম রাস্তায়
ডাকপিয়ন এপাড়ায় আসে না আর
তবু তার আসা যাওয়ার টুংটাং
ধ্বনি শোনা যায়...
ঢলে পড়া রোদের আলপনা
ভাঙা দেয়ালের ইটগুলোকে 
গুডবাই বলে ওপাশের রাস্তায় চলে গেলে
এধারের বারান্দাটা তখন আধোঘুমে আড়মোড়া ভাঙে
হাওয়ায় পুরোনো কাগজ উড়ে যায় ফরফর শব্দে 
ওধারের বারান্দায় বছর জুড়েই চৈত্রমাস
খোলাচুলে কেউ আর আসে না ছাদে 

একটা আড়াই পৃষ্ঠার চিঠি, রোজ লিখি...
একটা দু'চাকার সাইকেল গড়াতে গড়াতে
প্রতিদিন চেন পড়ে যায় প্রিয়তম রাস্তায়...

৮.৪.২২
 


পত্রালীপুরাণ
                     
আসি আসি সময়ের সাদাভোর
সবুজ পাতার গায়ে লিখেছিলো, স্বাগতবেলা।
এখন উত্তরের হাওয়া
নিপুণ বিন্যাসে শুয়ে আছে অবসন্ন বিকেলের রোদ
পাতাদের হলুদ শিরায় শূন্যতার বিলাপ
প্রশ্বাসের আয়ুর সাথে খসে যাচ্ছে বৃক্ষের পত্রালীপুরাণ--অনুমতিহীন;
দ্বিধায় পুড়ছে মন, পুড়ে যাচ্ছে আয়ুর কুসুম
এমন নিদানের কালে কেউ কী ফিরে আসে আর? 
একবার ফিরে চলে গেলে!
হয়তো পাতারা ফিরে আসে বৃক্ষের আহবানে
ফিরে আসে ঋতুবতী শস্যের ভ্রুণ 
ঋতুস্বরে ফিরে আসে হলুদ নদী!
ডানা থেকে খসে গেলে সবুজ পালক
পাখিরাও ফিরে আসে ঘরে
শুধু আমরাই ফিরি না। 

২২.০৯.২২


 
  
মনজুর রহমান
জন্ম সাল: ৯জুলাই ১৯৬৬
গ্রন্থসংখ্যা: ২টি (কাব্যগ্রন্থ) ১.ডাকবাক্সে জল ২.ত্রিমাত্রিক অন্ধকার
সম্পাদনা:নির্বাহী সম্পাদক-মৃদঙ্গ

Post a Comment

0 Comments