প্রাণজি বসাক এর কবিতা

Poems by Pranji Basak


পুনরায়

এখানকার সবকিছুই কেমন যেন ভাসা ভাসা চেনা চেনা লাগে তাহলে কি মনে হয় গতজন্মের প্রশাখায়

বসে আছি। অচেনা অক্ষরগুলো বেশ চোখে ফুটে উঠছে নতুনভাবে নতুন ভাষায়। তাল মিলিয়ে বুঝে উঠতে পারি সে ভাষা আর আজকের আলাপচারিতার চেতনাময় আপন ভাষা। 

বসবাসের আসবাবপত্রে গঠিত সাংসারিক কামনা সমৃদ্ধি মানুষের চাহত-আকাঙ্খা বেশ পরিচিত লাগে। 

কিছুটা হলেও মিলিয়ে নিতে পারি কলোনির সমবয়সী শর্মিমালাদের আবহ যারা বেমালুম ভুলে আছে জন্মান্তরীণ গল্পগুচ্ছ। তাদের ডেকে ডেকে বলি নয়নতারা আর টগরের কথাৃ গলে পড়া জোছনার কথাৃ ভাদরের ঘোলাটে জলে ভেসে ওঠা ঝাঁকঝাঁক পুটিমাছধরা খেলার কথা। তারা কেউই মনে করতে পারলো না। ঠোঁট উল্টে ফিরে যায় যে যার মতো। 

যতই চোখে ভাসে ঢেউ ততই আক্ষেপ বড়ো হয়। মনে হয় দৌড়ে চলে যাই সেই জীবন জমানায় পুনরায়। 



কথাগুলো সব স্বাভাবিক

অবশেষে উচ্চারণ করতেই হলো। সচারাচর এসব উচ্চারিত হয় না আমার মুখ থেকে। সাদা সাদা অক্ষরগুলো কালো কালো অক্ষরবৃন্দকে সরাসরি ধাক্কা মেরে রাজি করায়। একরকমের উল্লাসে অনায়াসে ঢুকছিল মর্মর ধ্বণি। উঠবেই। চিরকাল থাকবে এবং থাকার প্রয়োজনে থাকবেই জগাই-মাধাই সংলাপ। 

হরেকৃষ্ণ - বলে পাড় হয়ে যায় মঠপ্রদত্ত সংকীর্তন শোভাযাত্রা। আলিঙ্গনে মত্ত শোভাযাত্রায় সামিল ভক্তবৃন্দগন। আমাদের আর কিছুই মনে পড়ে না।আমরা গদগদ হয়ে গৃহে ফিরি। মধ্যাহ্নে প্রসাদ যেন অমৃত। 

এখন সমস্ত উচ্চারণ যেন অমৃতবাণী আকাশবাণী।সহজ সরল স্বভাবের শব্দরা একজোট হয়ে পাড়াময় উচ্চকণ্ঠে উচ্চারিত। সার্বিক শব্দকূল হয়ে ওঠে স্বাভাবিক। আর কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়।



সমান সমান 

সমান সমান হলেও 

কেউ ছোটো কেউ বড়ো

কেউ নারী কেউ পুরুষ 

সকালের লম্বাটে ছায়া 

কি আর সমান হতে পারে 

বিকেলের ঘন দীর্ঘ ছায়া 

যা তুমি বুঝে নিলে এবেলা

তাও কি সমান থাকে 

ওবেলার অবুঝ ভালোবাসা


সত্যটুকু সমান থাকে না 

বিচারের আওতায় 

মিথ্যে বলে খুব রঙ চড়ে 


কেউ যদি বুঝে নেয় 

সমান সমান সময় -

তবুও অসমান থাকে 

নির্মিত আঁধারে কোণটুকু



ঘুম ভেঙে আসে

কেন যে তুমি উত্তর করো না 

সাড়াও দেও না — একদিন

ওপিঠের পৃথিবী থেকে অঙ্গীকার নিয়ে

দূর নয় অথচ দূরের যাত্রায় ফিরে গেলে


কখনো রাতের ঘুম ভেঙে আসে দীর্ঘশ্বাস

ছোটো ছোটো স্বপ্ন জড়ো করে উঠে বসি

কবিতার খাতা খুলে লিখতে বসি সেদিনের

কথপোকথন আর নদীর অনন্ত প্রবাহের মগ্নতা


সবুজ সংকেতে ওড়ালে আগামী সংকল্প আরও

ব্যবধানে রচিত পাতার পর পাতা উপন্যাসখন্ড

এভাবেই শহরের শরীরে যেন আগুন খেলে যায়

এক কবি আগুনে পোড়ে আর নদীর কাছে যায়


সে আর ফিরে আসেনি সময়ের কাছে কখনোই




বৃত্ত 

আধখানা আপেলে মুগ্ধ হয়ে আছো

আধখানা চাঁদের আলোয় ভেজা অনুভব 

আধখানা আয়ু ঢলে মোহে


সবেতেই বাকি আধখানা পড়ে আছেৃ 

চোখ তুলে দেখ আধেক পৃথিবীর মোহন মায়াখেলা 

রাতের ঘুমচোখে ওড়াউড়ি করে আধেক ঢেউ লহমা




ব্যাসার্ধ 


হাহাকার বৃত্তে আটকে আছে তাবৎ 

বর্ণমালা শব্দমালা

ঘুরে ঘুরে উঠে আসছে নগদ সংখ্যা মেলা


সরল মোহ আজীবন নিঃশব্দে প্ররোচিত —


বৃত্তের ব্যাসার্ধ ছোটো হতে হতে 

ঘন হয় অক্ষরমালা

ডিজিটাল ফরম্যাটে আমাদের বেঁচে থাকা 


শব্দ আর শব্দার্থ মর্মার্থ বিকেলের রোদে নরম হয়

হাঁটাহাঁটির পরিসর কম হয় 

ঈশ্বরের অফুরন্ত বর্ণমালা ঝরে পড়ে জ্যোৎস্না শরীরে

Post a Comment

0 Comments